নবজাতকের মৃত্যু

অনুমতি ছাড়াই অ্যাম্বুলেন্স ব্যবসা চালাতেন শরীয়তপুরের সিভিল সার্জনের গাড়িচালক

শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে দাঁড়ানো একটি অ্যাম্বুলেন্স। ছবি: স্টার

শরীয়তপুরে এক নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের করা মামলার আসামি জেলা সিভিল সার্জনের গাড়িচালক আবু তাহের দেওয়ান দীর্ঘদিন ধরে অনুমতি ছাড়াই অ্যাম্বুলেন্স ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিলেন।

সিন্ডিকেটের বাধার কারণে গত ১৪ আগস্ট অ্যাম্বুলেন্সের ভেতর নবজাতক শিশুর মত্যুর ঘটনায় ৩ সদস্য কমিটি গঠন করেছে শরীয়তপুর সিভিল সার্জন অফিস।

আবু তাহেরের ছেলে জেলার অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেটের 'মূল হোতা' সবুজ দেওয়ানকে (২৮) ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব।

সিভিল সার্জন ডা. মো. রেহানউদ্দিনের দাবি, তার গাড়িচালক তাহের ১৪ আগস্ট থেকে ৫ দিনের ছুটি নিয়েছিলেন। 

গত ১৪ আগস্ট সন্ধ্যায় ঢাকাগামী একটি রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্সের গতিরোধ করে দীর্ঘসময় আটকে রাখা হয় একটি নবজাতক শিশুকে। প্রায় ৩০ মিনিট আটকে রাখায় অ্যাম্বুলেন্সের ভেতরে প্রচণ্ড গরমে ও শ্বাসকষ্টজনিত কারণে শিশুটি মারা যায়।

সিন্ডিকেটকে না জানিয়ে অল্প টাকায় অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করার কারণে অ্যাম্বুলেন্সটি আটকে রাখা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।

এ ঘটনায় শিশুটির বাবা নূর হোসেন গতকাল বাদী হয়ে মামলা করেছেন। মামলার এজাহার নামীয় আসামিরা হলেন—আবু তাহের দেওয়ান (৫৫), তার ছেলে সবুজ দেওয়ান (২৮), মো. বিল্লাল (৪৫) ও আব্দুল হাই।

সিভিল সার্জন বলেন, 'বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম থেকে জানতে পেরেছি যে, ডামুড্যা উপজেলার কনেশ্বর এলাকার নূর হোসেন তার নবজাতক সন্তানকে চিকিৎসার জন্য ঢাকা নিতে ১৪ আগস্ট সন্ধ্যার দিকে শরীয়তপুরের চৌরঙ্গী এলাকায় নিউ মেট্রো ক্লিনিকের সামনে ঢাকা থেকে আসা একটি অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করেন ৫ হাজার টাকায়।'

'এ সময় আমার চালক আবু তাহের দেওয়ান, তার ছেলে সবুজ দেওয়ান ও সদর হাসপাতালের সরকারি অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার জাহাঙ্গীর হোসেনসহ ১০-১১ জন গাড়িটি আটকে দেয় এবং জোর করে শরীয়তপুরের স্থানীয় একটি অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া নেওয়ার জন্য চাপ দেয়। তারা বেশ কিছুক্ষণ ওই অ্যাম্বুলেন্সটি আটকে রেখেছিল এবং এই সময়ক্ষেপণের কারণে শিশুটি সন্ধ্যা সোয়া ৭টায় মারা যায় বলেও জানতে পেরেছি,' বলেন তিনি।

এসব তথ্যের ভিত্তিতে ঘটনা তদন্তে আজ রোববার সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আল বিধান মো. সানাউল্লাহকে প্রধান করে ৩ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানান সিভিল সার্জন। কমিটিকে ৫ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

সিভিল সার্জন ডা. রেহান বলেন, 'আবু তাহের ও জাহাঙ্গীর হোসেন সরকারি কর্মচারী। তাদের বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণিত হলে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

আবু তাহের এখন অফিস করছেন কি না, জানতে চাইলে সিভিল সার্জন বলেন, 'আবু তাহের ১৪ আগস্ট লিখিতভাবে ৫ দিনের ছুটির দরখাস্ত আবেদন করেছেন। হৃদরোগের চিকিৎসার জন্য তিনি এই ছুটির আবেদন করেছেন, যা মঞ্জুর হয়েছিল।'

সরকারি কর্মচারী হিসেবে তাহের ব্যবসায় যুক্ত থাকতে পারেন কি না, জানতে চাইলে ডা. রেহান বলেন, 'কোনো সরকারি কর্মচারী কোনো ব্যবসায়ের সঙ্গে বা অন্য কোনো আর্থিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারেন না। ব্যবসা করতে চাইলে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে।'

'শুনেছি আবু তাহের ও জাহাঙ্গীর অ্যাম্বুলেন্স ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তারা আমাদের কাছ থেকে অন্য ব্যবসা পরিচালনার জন্য কোনো অনুমতি নেননি,' বলেন সিভিল সার্জন।

যোগাযোগ করা হলে পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হেলাল উদ্দিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অ্যাম্বুলেন্স আটকে দেওয়ার কারণে নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনায় যাওয়ার শিশুটির বাবার করা মামলায় সবুজকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।'


 

Comments

The Daily Star  | English

Money laundering: NBR traces Tk 40,000cr in assets abroad

The National Board of Revenue has found assets worth nearly Tk 40,000 crore in five countries which it believes were bought with money laundered from Bangladesh, said the Chief Adviser’s Office yesterday.

5h ago