দেশের ইতিহাসে আলুর উৎপাদন সর্বোচ্চ, উদ্বৃত্ত নিয়ে দুশ্চিন্তা

দেশে গত মৌসুমে এক কোটি ১৫ লাখ টন আলু উৎপাদিত হয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) পরিসংখ্যান অনুসারে, এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ উৎপাদনের মাইলফলক।

তবে এর বিপরীতে চাহিদা অনেক কম থাকায় এবার উল্লেখযোগ্য পরিমাণ আলু উদ্বৃত্ত থেকে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

চলতি মাসের শুরুতে প্রকাশিত বিবিএসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চাষের জমি বৃদ্ধি এবং অনুকূল আবহাওয়ার কারণে জনপ্রিয় এই সবজিটির উৎপাদন বেড়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে চার লাখ ৯২ হাজার হেক্টর জমিতে আলুর চাষ হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় আট শতাংশ বেশি। এতে মোট উৎপাদন আগের বছরের তুলনায় নয় শতাংশ বেড়ে এক কোটি ১৫ লাখ টনে পৌঁছেছে। সে বছর এক কোটি ছয় লাখ টন আলু উৎপাদিত হয়েছিল।

কন্দাল ফসল গবেষণা কেন্দ্রের (টিআরসি) পরিচালক ড. মো. মতিয়ার রহমান বলেন, 'চলতি বছরে উদ্বৃত্ত উৎপাদন দেখা দেবে।'

টিআরসি ও বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএসএ) হিসাব অনুযায়ী, প্রায় ১০ লাখ টন আলু বীজ হিসেবে ব্যবহৃত হবে। সেই পরিমাণসহ ৯০ লাখ টনের সামান্য বেশি দেশীয় চাহিদা রয়েছে।

এর মধ্যে প্রায় ৮০ লাখ টন আলুর ভোক্তা চাহিদা রয়েছে, যার একটি অংশ প্রক্রিয়াজাত করে চিপস ও ক্র্যাকার্স তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এর বাইরে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৬২ হাজার টনের কিছু বেশি আলু রপ্তানি হয়েছে।

মতিয়ার বলেন, 'বছরের শেষে অনেকেই আলু কিনতে আগ্রহী হবেন না, ফলে কৃষকেরা ক্ষতির মুখে পড়বেন।'

প্রতি বছর সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত আলু রোপণ করা হয়। জানুয়ারির মাঝামাঝি থেকে মার্চ পর্যন্ত মূল মৌসুমে আলু তোলা হয়। তবে শীতকালীন সবজির সঙ্গে ডিসেম্বর থেকে নতুন আলু বাজারে আসতে শুরু করে এবং পুরোনো আলুর চাহিদা কমে যায়।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত তোলা আলু এ বছরের সাড়ে তিন মাসে খাওয়া হবে।

বিসিএসএ সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু জানান, কোল্ড স্টোরেজগুলোতে এখনো ২৯ লাখ টন আলু রয়েছে। এখন পর্যন্ত মাত্র চার লাখ টন আলু বের হয়েছে।

'কৃষকের কাছে এখন আর কোনো আলু নেই,' বলেন তিনি।

বাবু আরও বলেন, 'আমাদের হাতে মাত্র সাড়ে তিন মাস সময় আছে, তাই উল্লেখযোগ্য পরিমাণ আলু উদ্বৃত্ত থেকে যাবে। আলুর দাম এখনো উৎপাদন খরচের তুলনায় অনেক কম।'

তিনি জানান, প্রতি কেজি আলু ১৪-১৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে, অথচ উৎপাদন ও অন্যান্য খরচ দাঁড়াচ্ছে ২৫-২৭ টাকা।

বাংলাদেশ ট্রেডিং করপোরেশনের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, ঢাকায় খুচরা বাজারে আলুর দাম প্রতি কেজি ২৫-৩০ টাকা, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪৮ শতাংশ কম।

তিনি বলেন, 'রপ্তানির পরিমাণ উল্লেখযোগ্য না।'

ভোক্তা বাড়াতে বিসিএসএ খাদ্যবান্ধব এবং সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে প্রতিটি পরিবারের জন্য ১০ কেজি করে আলু অন্তর্ভুক্ত করতে সরকারকে প্রস্তাব দিয়েছিল।

তার মতে, মূলত কৃষকেরাই কোল্ড স্টোরেজে আলু রেখেছেন। সরকার যদি সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় আলু বিতরণের উদ্যোগ নেয়, তাহলে কৃষকেরা ক্ষতি থেকে রক্ষা পাবেন।

'আমরা সরকারের কোনো সিদ্ধান্ত এখনো দেখিনি,' যোগ করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Distressed loans surge to Tk 7.56 lakh cr

Distressed loans at banks soared 59 percent to a record Tk 756,526 crore in 2024, laying bare the fragile state of the country’s financial sector.

5h ago