কম খরচে সাগর দর্শন, ঘুরে আসুন কুয়াকাটা

কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত। ছবি: সোহরাব হোসেন/স্টার
কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত। ছবি: সোহরাব হোসেন/স্টার

আগামী সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হতে যাচ্ছে পর্যটন মৌসুম। আকর্ষণীয় সৈকত হিসেবে খ্যাতি আছে 'সাগরকন্যা' কুয়াকাটার। তাই অনেকে ভাবেন—'একবার হলেও যদি ঘুরে আসা যায়'! কিন্তু, কোথাও ঘুরতে যাওয়া মানেই তো 'পকেট কাটা'। অর্থাৎ, ভ্রমণের ক্ষেত্রে খরচের কথাই আগে ভাবেন পর্যটকরা।

তবে পকেট 'বাঁচিয়েও' তো চলা যায়! মানে, কম খরচে ঘুরে আসা যায় দর্শনীয় স্থানগুলো। আসা যাক কুয়াকাটা প্রসঙ্গে। প্রায় ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সমুদ্র সৈকত থেকে একই সঙ্গে উপভোগ করা যায় সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের নয়নাভিরাম দৃশ্য। কুয়াকাটার খ্যাতি মূলত এখানেই। কেননা, পৃথিবীর খুব কম জায়গা থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের দৃশ্য দেখা যায়। এই বৈশিষ্ট্য কুয়াকাটাকে আর সব সাগর সৈকত থেকে অনন্য করেছে। তাই পর্যটকদের কাছে কুয়াকাটার পরিচয় 'সাগরকন্যা' হিসেবে।

ঢাকা থেকে কুয়াকাটা কীভাবে যাবেন, কোথায় থাকবেন, কোথায় খাবেন, আশপাশের দর্শনীয় স্থানগুলো কীভাবে ঘুরে দেখবেন—এ নিয়ে সংক্ষিপ্ত কিছু তথ্য দেওয়া হলো এই প্রতিবেদনে। 

যাবেন কীভাবে?

• বাস

ঢাকা থেকে কুয়াকাটার দূরত্ব প্রায় ৩০০ কিলোমিটার। বাসে যেতে সময় লাগবে প্রায় ৬-৭ ঘণ্টা। ঢাকার সায়েদাবাদ, আবদুল্লাপুর, আরামবাগ অথবা গাবতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে সাকুরা পরিবহন, শ্যামলী, গ্রিনলাইনসহ অনেক পরিবহনের বাসে কুয়াকাটা যাতায়াত করে। ভাড়া পড়বে ৭৫০-৯০০ টাকা (নন-এসি বাস) ও ১১০০-১৬০০ টাকা (এসি বাস)।

কুয়াকাটা বিচ। ছবি: সোহরাব হোসেন/স্টার
কুয়াকাটা বিচ। ছবি: সোহরাব হোসেন/স্টার

• লঞ্চ

ঢাকার সদরঘাট থেকে লঞ্চে পটুয়াখালী যাওয়া যায়। প্রতিদিন সন্ধ্যায় লঞ্চ ছেড়ে পরদিন সকাল ৭টার দিকে পটুয়াখালী পৌঁছায়। লঞ্চ ভাড়া ৪০০-৫০০ টাকা (ডেক), ১,৩০০ টাকা (সিঙ্গেল কেবিন), ২,৪০০ টাকা (ডাবল কেবিন) ও ৫,০০০-৭,০০০ টাকা (ভিআইপি কেবিন)।

পটুয়াখালী লঞ্চঘাট থেকে অটোরিকশায় বাসস্ট্যান্ড গিয়ে সেখান থেকে লোকাল বাসে কুয়াকাটা যেতে হয়। এতে সময় লাগবে ২ ঘণ্টার মতো। বাস ভাড়া ১৬০-১৮০ টাকা।

কোথায় থাকবেন?

কুয়াকাটায় মোটামুটি বাজেটের হোটেলে থাকতে আপনার খরচ হবে ২,০০০-৩,০০০ টাকা। কম বাজেটে থাকার জন্য দুজন থাকার রুম পাওয়া যাবে ১,০০০-২,০০০ টাকায়। জিরো পয়েন্ট বা এর পাশেই পর্যটক মার্কেটের গলিতে মোটামুটি মানের কিছু সি-ভিউ হোটেল পাওয়া যায়। থাকতে খরচ হবে মৌসুম অনুযায়ী ১,৫০০-৩,০০০ টাকা।

ছুটির দিনগুলোতে হোটেল রুম পেতে সমস্যা হলেও বাকি সময় কুয়াকাটায় হোটেল রুম সেখানে গিয়েই যাচাই করে নেওয়া যেতে পারে। তবে পরিবার নিয়ে গেলে আগে থেকেই বুকিং করে যাওয়া ভালো।

কোথায় খাবেন?

কুয়াকাটায় বেশিরভাগ হোটেলের নিজস্ব রেস্তোরাঁ থাকায় সেখানে অতিথিদের খাবারের ব্যবস্থাও আছে। এ ছাড়াও, এখানকার স্থানীয় রেস্তোরাঁগুলোয় নানা রকম দেশীয় খাবার পাওয়া যায়। কুয়াকাটা জিরো পয়েন্টের আশপাশেই অনেক খাবার হোটেল পেয়ে যাবেন।

কুয়াকাটা রাখাইন মন্দির। ছবি: সোহরাব হোসেন/স্টার
কুয়াকাটা রাখাইন মন্দির। ছবি: সোহরাব হোসেন/স্টার

কুয়াকাটায় গেলে ফিশ বারবিকিউয়ের স্বাদ নেওয়ার চেষ্টা করা যেতে পারে। জিরো পয়েন্টের পাশেই 'ফিশ ফ্রাই' মার্কেট। দরদাম করে পছন্দমতো সাগরের তাজা মাছ কিনে দিলে আপনার সামনেই বারবিকিউ করে দেবেন তারা। আশা করা যায়, এক পাশে সাগরের ঢেউ আর অন্য পাশে খোলা জায়গায় ফিশ বারবিকিউয়ের স্বাদ জিভের সঙ্গে মনেও লেগে থাকবে আপনার।

কুয়াকাটার দর্শনীয় স্থান

কুয়াকাটায় শুধু সমুদ্র সৈকতই নয়, এখানে দেখার মতো আছে আরও কয়েকটি দর্শনীয় স্থান। পূর্ব ও পশ্চিমের ঝাউবন, তিন নদীর মোহনা, লেবুর চর, গঙ্গামতির জঙ্গল, লাল কাঁকড়ার দ্বীপ ও সবুজ অরণ্যের পাশাপাশি পাওয়া যাবে সুন্দরবনের একাংশ দেখার সুযোগ। কিংবা কুয়াকাটার ঐতিহাসিক কুয়া, বৌদ্ধমন্দির কিংবা দুর্গম চর বিজয় যাওয়ার জন্যেও কুয়াকাটা যেতে পারেন।

• শুঁটকি পল্লী:

কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের পশ্চিম প্রান্তে আছে জেলেপল্লী। এখানে মূলত নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত শুঁটকি প্রক্রিয়ার মৌসুম চলে। সাগর থেকে মাছ ধরে সৈকতের পাশেই শুঁটকি তৈরি করা হয়। জিরো পয়েন্ট এলাকায় আছে শুঁটকি মার্কেট। কম দামে কেনা যাবে শুঁটকি।

• লাল কাঁকড়ার চর:

কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত ধরে পূর্ব দিকে অনেকটা দূর পর্যন্ত এগিয়ে গেলে লাল কাঁকড়ার চর। সেখানে নির্জন সৈকতে ঘুরে বেড়ায় অগণিত লাল কাঁকড়া। অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত থেকে লাল কাঁকড়ার চরে যাওয়ার স্পিড বোট পাওয়া যায়।

লাল কাঁকড়ার চর। ছবি: সোহরাব হোসেন/স্টার
লাল কাঁকড়ার চর। ছবি: সোহরাব হোসেন/স্টার

• গঙ্গামতির জঙ্গল:

পূর্ব দিকে গঙ্গামতির খাল পর্যন্ত এসে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত শেষ হয়েছে। এই জায়গা থেকেই গঙ্গামতির জঙ্গল শুরু। নানান প্রজাতির গাছপালা ছাড়াও এই জঙ্গলে দেখা যায় নানান রকম পাখি, বন মোরগ, বানর ইত্যাদি। অনেকের কাছে এটি গজমতির জঙ্গল হিসেবেও পরিচিত।

• ফাতরার বন:

সমুদ্র সৈকতের পশ্চিম দিকে নদীর অন্য পাড় থেকে ফাতরার বন শুরু। এই বনের আছে সুন্দরবনের প্রায় সব বৈশিষ্ট্য। এখানেও বন মোরগ, বানর, বুনো শুকর ও নানান প্রজাতির পাখি দেখা যায়। কুয়াকাটা থেকে ফাতরার বনে যেতে হলে ইঞ্জিন নৌকা ভাড়া করতে হবে।

• কুয়াকাটার কুয়া:

কুয়াকাটা নামকরণের পেছনে যে ইতিহাস আছে, সেই ইতিহাসের সাক্ষী কুয়াটি এখনো আছে। এই কুয়াটি দেখতে হলে যেতে হবে রাখাইনদের কেরানিপাড়ায়। সেখানেই প্রাচীন কুয়াটি দেখতে পাবেন। কথিত আছে, ১৭৮৪ সালে মাতৃভূমি থেকে বিতাড়িত হয়ে রাখাইনরা বঙ্গোপসাগরের তীরে রাঙ্গাবালি দ্বীপে এসে আশ্রয় নেয়। সাগরের লোনা জল ব্যবহারের অনুপযোগী হওয়ায় তারা এখানে মিঠা পানির জন্য কূপ খনন করে। সে থেকে জায়গাটি ধীরে ধীরে 'কুয়াকাটা' নামে পরিচিত হয়ে ওঠে।

• সীমা বৌদ্ধ মন্দির:

কুয়াকাটার প্রাচীন কুয়ার একটু সামনেই সীমা বৌদ্ধ মন্দির। কয়েক বছর আগে কাঠের তৈরি মন্দিরটি ভেঙে নান্দনিক ভবন করা হয়েছে। মন্দিরের মধ্যে প্রায় ৩৭ মন ওজনের অষ্টধাতুর বৌদ্ধ মূর্তি আছে।

• কেরানিপাড়া:

সীমা বৌদ্ধ মন্দিরের রাস্তা ধরে একটু এগিয়ে গেলেই রাখাইনদের আবাসস্থল কেরানিপাড়া। রাখাইন নারীরা কাপড় বুননে বেশ দক্ষ। তাদের তৈরি শীতের চাদর অনেক আকর্ষণীয়।

• মিশ্রিপাড়া বৌদ্ধ মন্দির:

কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দূরে রাখাইনদের গ্রাম মিশ্রিপাড়ায় বড় বৌদ্ধ মন্দির আছে।

কুয়াকাটার মিস্ত্রীপাড়া রাখাইন মন্দির। ছবি: সোহরাব হোসেন/স্টার
কুয়াকাটার মিস্ত্রীপাড়া রাখাইন মন্দির। ছবি: সোহরাব হোসেন/স্টার

• গঙ্গামতি চরে সূর্যোদয়:

সূর্যোদয় দেখার সবচেয়ে ভালো স্থান কুয়াকাটার পূর্ব প্রান্তে গঙ্গামতি চর। তাই সকালটা রাখুন পূর্ব সৈকত ঘুরে আসার জন্য। আর বিকেলের সময়টুকু রাখুন পশ্চিম সৈকত।

এখানে ঘুরে দেখার বাহন হচ্ছে মোটরসাইকেল, ইজিবাইক অথবা ভ্যানগাড়ি। জিরো পয়েন্টের আশপাশেই পেয়ে যাবেন। আপনি কোন কোন জায়গা ঘুরে দেখবেন, তার ওপর নির্ভর করে ভাড়া ঠিক করে নিতে হবে। মোটামুটি সবগুলো জায়গা ঘুরে দেখতে ১,৫০০-২,০০০ টাকার মতো খরচ হবে। বাইকচালকরা বেশি টাকা চাইতে পারে, তাই দরদাম করে নিন। বিকালে লেবুর বন, ফিশ মার্কেট, শুঁটকিপল্লী, ঝাউবন ও তিন নদীর মোহনা দেখতে যেতে পারেন।

কুয়াকাটা রাখাইন মন্দির। ছবি: সোহরাব হোসেন/স্টার
কুয়াকাটা রাখাইন মন্দির। ছবি: সোহরাব হোসেন/স্টার

ট্যুরিস্ট পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. হাবিবুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কুয়াকাটার যেসব জায়গায় পর্যটকরা যান, সেসব এলাকায় আমরা নিরাপত্তা দিয়ে থাকি। বিশেষ করে সূর্যোদয় দেখতে অধিকাংশ পর্যটক চর গঙ্গামতি ও সূর্যাস্ত উপভোগ করতে লেম্বুর চর যান। এসব জায়গায় আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে।'

Comments

The Daily Star  | English
5G network services in Bangladesh

Bangladesh enters 5G era with limited rollout

Bangladesh has finally entered the 5G era, as the country’s top two mobile operators yesterday announced the limited launch of the technology, aiming to provide ultra-fast internet, low latency, improved connectivity, and support for smart services and digital innovation..Unlike previous g

2h ago