চবির প্রক্টরিয়াল বডি পদত্যাগ না করলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি 

চবির প্রক্টর অফিসের সামনে অধিকার সচেতন শিক্ষার্থীদের সংবাদ সম্মেলন। ছবি: স্টার

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) শিক্ষার্থীদের ওপর স্থানীয় সন্ত্রাসীদের হামলা ও পরবর্তী সংঘর্ষের ঘটনায় প্রক্টরিয়াল বডির পদত্যাগসহ সাত দফা দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

দাবি না মানা হলে আগামীকাল শনিবার থেকে কঠোর আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছেন তারা।

আজ শুক্রবার বিকেল ৫টায় প্রক্টর অফিসের সামনে অধিকার সচেতন শিক্ষার্থীদের সংবাদ সম্মেলন থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।

এসময় শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, গত ৩০ আগস্ট রাতে স্থানীয় সন্ত্রাসীদের হামলায় রক্তাক্ত হন বহু শিক্ষার্থী। পরদিন সকালেও শিক্ষার্থীদের হুমকি দেওয়া হয়, এমনকি নারী শিক্ষার্থীদের ধর্ষণের ভয় দেখানো হয়। অথচ প্রশাসন দায়িত্বশীল পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়। এর ফলে দ্বিতীয় দফায় সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে এবং প্রায় দেড় হাজার শিক্ষার্থী আহত হন।

তাদের অভিযোগ, সংঘর্ষের সময় প্রক্টরিয়াল বডিকে একাধিকবার ফোন দেওয়ার পরও ঘটনাস্থলে আসতে তারা দেরি করে। এমনকি পর্যাপ্ত পুলিশ, অ্যাম্বুলেন্স ও অক্সিজেনের ব্যবস্থা না থাকায় আহত শিক্ষার্থীরা চরম দুর্ভোগে পড়েন। সেনাবাহিনী পাঠাতেও দেরি করে প্রশাসন।

শিক্ষার্থীরা আরও অভিযোগ করেন, প্রক্টরিয়াল বডি নিজেদের ব্যর্থতা আড়াল করতে উল্টো শিক্ষার্থীদের 'সন্ত্রাসী' আখ্যা দেয়। অনলাইনে মিথ্যা প্রচার চালিয়ে শিক্ষার্থীদের দোষারোপ করা হচ্ছে, যা প্রকৃত হামলাকারীদের আড়াল করে দিচ্ছে।

শিক্ষার্থীদের সাত দফা দাবি হলো- আহত শিক্ষার্থীদের মানসম্মত চিকিৎসা নিশ্চিত ও পূর্ণ তালিকা প্রকাশ, শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ আবাসনের ব্যবস্থা, হামলার ছবি-ভিডিও প্রচারকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত, প্রকৃত সন্ত্রাসীদের বিচার, তবে নিরপরাধ এলাকাবাসীকে হয়রানি না করা, কার্যকর সমন্বয় কমিটি গঠন ও সংলাপের উদ্যোগ, সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন ও নিরাপদ ক্যাম্পাসের রোডম্যাপ প্রকাশ, প্রক্টরিয়াল বডির পদত্যাগ ও নতুন দায়িত্বশীল প্রক্টর নিয়োগ।

শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, আহত সহপাঠীরা মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছে, অথচ প্রশাসন ক্লাস-পরীক্ষা চালিয়ে পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক দেখানোর চেষ্টা করছে। 

মামলাকেও তারা 'প্রহসন' উল্লেখ করে বলেন, এতে প্রকৃত অপরাধীরা আড়ালে থেকে যাচ্ছে, নিরীহ মানুষ হয়রানির শিকার হচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা স্পষ্ট করে বলেন, আগামীকালের মধ্যে প্রক্টরিয়াল বডি পদত্যাগ না করলে এবং সাত দফা দাবি বাস্তবায়ন না হলে তারা কঠোরতম কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবেন।

২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, 'এই প্রক্টরিয়াল বডি অযোগ্য, আনফিট এবং ব্যর্থ। তাদের কাছ থেকে দায়িত্বশীল আচরণ প্রত্যাশা করাই হাস্যকর। জবাবদিহিতা চাইতে গেলে হার্টের রোগ সামনে আনে। ২৭ হাজার শিক্ষার্থীর নিরাপত্তার দায়িত্বে একজন হার্টের রোগীকে বসিয়ে আমাদের অনিরাপদ করে রাখার কোনো যৌক্তিকতা থাকে না।'

২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ওমর সমুদ্র বলেন, 'প্রক্টরিয়াল বডির এই ধারাবাহিক ব্যর্থতা, দায়িত্বহীনতা ও অযোগ্যতাই ৩০ ও ৩১ আগস্ট চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দাঁড় করিয়ে দিয়েছে প্রাণঘাতী হামলার মুখে, যার ফলশ্রুতিতে প্রায় সহস্রাধিক শিক্ষার্থী আহত ও দুজন শিক্ষার্থী এখনো মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। প্রক্টরিয়াল বডির এমন হীন কর্মকাণ্ডকে কেবল ব্যর্থতা, অযোগ্যতা, দায়িত্বহীনতা এই তিন শব্দ দিয়ে প্রকাশের সুযোগ নেই। কার্যত ২৭ হাজার শিক্ষার্থীর নিরাপত্তার দায়িত্বে আসীন হয়েও শিক্ষার্থীদের এমন দিনে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ ও অনিচ্ছুক প্রক্টরিয়াল বডির এটা মূলত গর্হিত অপরাধ।'

Comments

The Daily Star  | English
RMG violence

Violence in Bangladesh’s RMG sector: Disposable lives, dispensable labour

Can we imagine and construct a political system that refuses to subordinate human dignity to the demands of global accumulation?

10h ago