ভালোবেসে বাংলা ভাষা শিখছেন বিদেশিরা

‘লার্ন বাংলা’ নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে বাংলা শিখছেন বিদেশি নাগরিকরা

নান কারণে বিদেশিরা বাংলাদেশে আসেন। কেউ আসেন এর সবুজ প্রকৃতির টানে আবার কেউবা ঐতিহাসিক স্থান ও সমৃদ্ধ লোক ঐতিহ্য দেখতে বাংলাদেশে আসেন। শুধুমাত্র কাজের জন্য বাংলাদেশে আসা বিদেশির সংখ্যাও কম নয়।

কিন্তু রোমানিয়ার নাগরিক অক্টেভিয়ান রিটিগানের বাংলাদেশে আসার কারণ সম্পূর্ণ ভিন্ন। ৩২ বছরের এই যুবক স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে বাংলাদেশে এসেছেন বাংলা ভাষা শিখতে। এই ভাষার প্রতি ভালোবাসা তাকে বাংলাদেশে টেনে এনেছে।

রিটিগান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, “আমি গত দেড় বছর ধরে বাংলা শিখছি। বাংলা আমার জীবনের একটা অংশে পরিণত হয়েছে। এই ভাষা আমার এতো ভালো লেগেছে যে নিয়মিত প্রার্থনায় আমি বাংলায় অনুবাদ করা বাইবেল পড়ি।”

‘লার্ন বাংলা’ নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ভাষা শিক্ষার পাঠ নিচ্ছেন তিনি। প্রাথমিক কোর্সগুলো শেষ করে এখন উচ্চতর পর্যায়ে বাংলা শিখছেন রিটিগান। তিনি এখন বাংলা কবিতা, সাহিত্য ও বাংলা গান গাইতে পারেন।

রিটিগান বলেন, “বাংলা ভাষার ইতিহাস ও সংগ্রামের কথা জানতে পেরে আমি খুব অবাক হয়েছিলাম। সারা পৃথিবীতে এটা বিরল। আমি মনে করি এই জাতির ঐতিহাসিক ঘটনাগুলো গর্ব করার মত।”

গত সাত বছরে রিটিগানের মত আরও প্রায় ৫০০ বিদেশি শিক্ষার্থী ‘লার্ন বাংলা’ থেকে বাংলা শিখেছে। এছাড়াও ঢাকায় বিভিন্ন বিদেশি দূতাবাস ও আন্তর্জাতিক সংগঠনে কাজ করতে আসা আরও প্রায় ৫০০ জনকে বাংলা শিখিয়েছে এই প্রতিষ্ঠানটি।

রাজধানীর বনানীতে ২০১০ সালের ১৪ এপ্রিল বাংলাদেশে কর্মরত একজন আমেরিকান শিক্ষার্থীকে নিয়ে লার্ন বাংলার যাত্রা শুরু হয়। প্রতিষ্ঠানটিতে এখন ৪৫ জন বাংলা শিখছেন। এদের মধ্যে আবার ৩৫ জনই ছাত্র।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধিত এই প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশ অবস্থানরত বিদেশি ও অনাবাসীদের বাংলায় দক্ষতা বাড়ানোর জন্য প্রাথমিক কোর্সগুলো করিয়ে থাকে।

প্রতিষ্ঠানের পরিচালক দিল আরা লিনা জানান, বাংলা শেখার জন্য তিন স্তরে —প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চতর কোর্স করান তার। যেভাবে পাঠ্যক্রম সাজানো হয়েছে তাতে প্রাথমিক স্তর তিন মাসের, মাধ্যমিক স্তর ছয় মাসের ও উচ্চতর স্তর শেষ করতে আট মাস সময় লাগে। প্রত্যেক স্তরেই বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় উৎসবকে সংযুক্ত রাখা হয়েছে।

পরিচালক জানা, লার্ন বাংলায় সপ্তাহে পাঁচ দিন একটি করে দুই ঘণ্টার ক্লাস নেওয়া হয়। তবে কেউ চাইলে তার জন্য অতিরিক্ত ক্লাস নেওয়া হয়। এর পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটি বিশেষ ও সংক্ষিপ্ত কোর্সেও বাংলা শিখিয়ে থাকে।

লার্ন বাংলা শুধুমাত্র বাংলা শেখায় তাই নয়, এখানকার শিক্ষার্থীদের বাঙালি সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও সাহিত্যের সঙ্গেও পরিচয় করানো হয়।

মূলত যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন ও কানাডা থেকে লোকজন এখানে বাংলা শিখতে আসেন। প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরতরা জানান, ছাত্র-ছাত্রী বাদেও বিভিন্ন এনজিওতে কর্মরত যাদের দীর্ঘ সময় বাংলাদেশে থাকার পরিকল্পনা নিয়ে আসেন, ঢাকার কূটনৈতিক মিশন ও দূতাবাসে কর্মরত বিদেশিরা এখানে এসে বাংলা শিখেন।

সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটিতে সরেজমিনে এই প্রতিবেদকরা দেখেন ভাষা আন্দোলন নিয়ে লেখা ঐতিহাসিক গান “আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি” গানের অনুশীলন করছেন এখানকার শিক্ষার্থীরা। তাদের মধ্যে কেউ কেউ আবার নিজের ভাষায় এই গানটি গাইছিলেন।

তারা বলেন, শুরুতে বাংলা নিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়েছিল তাদের। যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে আসা ইনসকিপ জানান “দুই বছর আগে আমরা যখন বাংলাদেশে আসি তখন লোকজনের সঙ্গে সহজে কথা বলতে পারতাম না। এই কোর্স করার পর আমরা বিনা বাধায় কথা বলতে পারি।”

ইনসকিপ তার স্বামীকেও সাথে করে বাংলাদেশে এনেছেন। সম্প্রতি মা হয়েছেন তিনি। সন্তানকেও বাংলা শেখানোর কথা ভাবছেন এই দম্পতি। সে জন্য বাচ্চার সঙ্গে বাংলাতে কথা বলতে শুরু করেছেন তারা। বাড়ির গৃহকর্মীকেও তারা বাচ্চার সঙ্গে বাংলায় কথা বলার জন্য বলে রেখেছেন। বাংলাদেশে সুবিধাবঞ্চিত লোকদের জন্য কাজ করতে দীর্ঘ সময় বাংলাদেশে থাকবেন বলে জানান এই দম্পতি।

তারদের মতই চীনা নাগরিক সান হেইলং ও তার স্ত্রী গুও হুইতিং দীর্ঘ সময়ের জন্য বাংলাদেশে থাকতে চান। তার ভাষায়, “আমরা বাংলাকে ভালোবাসি এবং এই দেশে থাকতে চাই।”

Click here to read the English version of this news

Comments

The Daily Star  | English
Tarique Rahman on interim government

Interim govt must not be allowed to fail: Tarique addresses BNP rally

Thousands join BNP rally from Nayapaltan to Manik Mia Avenue

8h ago