সাকিব-তামিমের কাছে পাত্তাই পেল না জিম্বাবুয়ে

ঘরের মাঠে প্রায় ১৫ মাস ওয়ানডে খেলতে নেমে ৮ উইকেটের বড় জয় পেয়েছে মাশরাফি বিন মর্তুজার দল।
Tamim-Mushfiq
ছবি: ফিরোজ আহমেদ

কাজটা বল হাতেই সেরে রেখেছিল বাংলাদেশ। সাকিব আল হাসান, মোস্তাফিজুর রহমানদের এনে দেওয়া ছোট লক্ষ্য তাড়ায় পা হড়কাননি তামিম ইকবালরা। ঘরের মাঠে প্রায় ১৫ মাস ওয়ানডে খেলতে নেমে  ৮ উইকেটের বড় জয় পেয়েছে মাশরাফি বিন মর্তুজার দল। 

সোমবার মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে আগে ব্যাট করে মাত্র ১৭০ রানে গুটিয়ে যায় জিম্বাবুয়ে। ওই রান তাড়ায় বাংলাদেশকে হারাতে হয়নি  ২ উইকেটের বেশি উইকেট। খেলতে হয়নি  ২৮  ওভারের বেশি। ত্রিদেশীয় সিরিজের প্রথম ম্যাচ জিতে টুর্নামেন্টে স্বস্তির সূচনাও হয়ে গেল মাশরাফির দলের।

নিজেদের মাঠে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশের জয়ের পাল্লাই ছিল ভারি। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে উঠার পথে নিউজিল্যান্ডকে হারানোর পর আর জেতা হচ্ছিল না বাংলাদেশের। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিতে ভারতের সঙ্গে হার ও দুঃস্বপ্নের দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে হোয়াইট ওয়াশের পর অবশেষে জয়ে ফিরল টাইগাররা।

Tamim-Mushfiq
১৭১ রানের লক্ষ্যটা হেসেখেলেই  হওয়ার মতো। বাংলাদেশের শুরুটাও হলো ঝড়ো। প্রায় তিন বছর পর দলে এসে চনমনে ছিলেন এনামুল হক বিজয়। মুখোমুখি প্রথম চার বলের তিনটাকেই পাঠিয়েছিলেন বাউন্ডারিতে। পরে মেরেছেন আরেকটি। ড্রেসিং রুম থেকে হয়ত নির্ভার ব্যাট চালানোর লাইসেন্স দেওয়া ছিল তাকে। জিম্বাবুয়ের দুই পেসার কাইল জার্ভিস ও টেন্ডাই চাতারাকে খেলছিলেন স্বস্তিতে। তবে তালগোল পাকালেন স্পিনারদের বলে। অফ স্পিনার সিকান্দার রাজাকে উড়াতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দেন ডিপ স্কয়ার লেগে।

৩০ রানে প্রথম উইকেট পড়ার পর ক্রিজে এসেছিলেন সাকিব। তিন নম্বর পজিশনে তার নতুন শুরুটা মাঝারি মানের। শুরু থেকেই ফুরফুরে মেজাজে ব্যাট করেছেন। ব্লেসিং মুজারব্বানিকে টানা তিন চারে দেখিয়েছেন আগ্রাসন। তামিমের সঙ্গে ৭৮ রানের জুটিতে এগিয়ে যাচ্ছিলেন ফিফটির দিকে। রিভিউ নিয়ে তাকে ফিরিয়েছেন সিকান্দার রাজা। রাজার বলে আড়াআড়ি খেলতে গিয়ে লাইন মিস করেছিলেন। পায়ে লাগলে মাঠের আম্পায়ার সাড়া দেননি, রিভিউ নিয়ে সাকিবকে ফেরায় জিম্বাবুয়ে। ১০৮ রানের মাথায় বাংলাদেশ হারায় দ্বিতীয় উইকেট। 

ওদিকে ছোট লক্ষ্যে পেয়ে চাপহীন ব্যাট করেছেন তামিম। বলের মান বুঝে ব্যাট চালিয়ে পেয়ে যান ক্যারিয়ারের ৩৯তম অর্ধশতক। তামিম শুরু থেকেই ছিলেন ধীরস্থির।  উইকেটে থিতু হতে এক-দুই রান করে এগিয়েছেন। নাগালে মারার বল পেলে আবার ঠিকই পাঠিয়েছেন সীমানার বাইরে। পাঁচ বাউন্ডারিতে তামিম ফিফটিতে পৌঁছান ৬৮ বলে।

মুশফিক যখন ব্যাট করতে নামেন, বাংলাদেশের চাই কেবল ৬৩ রান। খেলার জন্য পড়ে ছিল অর্ধেকেরও বেশি বল। তামিমকে সঙ্গ দিয়ে পরে জয় নিয়েই মাঠ ছেড়েছেন তিনি।  

এর আগে টস জেতা বাংলাদেশের দাপট ছিল বোলিং-ফিল্ডিংয়ে । মিরপুরে জানুয়ারি মাসে হওয়া শেষ ১০ ওয়ানডেতেই আগে ফিল্ডিং করা দল জিতেছে। শিশিরের কথা মাথায় রেখে পরে ব্যাট করতে চাওয়াই স্বস্তির। টস জিতলে ব্যাটিং না বোলিং? কি নেবেন আগের দিনও ধন্দে ছিলেন অধিনায়ক। তবে শেষ পর্যন্ত  সাতপাঁচ না ভেবে ফিল্ডিং নিয়ে নেন মাশরাফি মর্তুজা।

বাংলাদেশের বাঁহাতি স্পিনের বিরুদ্ধে বরাবরই নড়বড়ে জিম্বাবুয়ে। তা বুঝে শুরুই হয়েছে স্পিন দিয়ে। সাকিবের করা প্রথম ওভারেই নেই দুই উইকেট। সাকিবের টার্নে বোকা বনে স্টাম্পিং হন সোলেমান মিরে। ওয়ানডাউনে নামা বাঁহাতি ক্রেইগ আরভিন সোজা ক্যাচ তুলে দেন সাব্বির রহমানের হাতে।

দুই রানে দুই উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকা জিম্বাবুয়েকে টানতে পারেননি মাসাকাদজা। মাশরাফির অনেক বাইরের বল তাড়া করতে দিয়ে ক্যাচ দেন উইকেটের পেছনে। ৩০ রানে তিন টপ অর্ডারকে হারানোর পর প্রতিরোধের চেষ্টায় ছিলেন ব্র্যান্ডন টেইলর আর সিকান্দার রাজা। তবে তাদের নাজেহাল করে ছেড়েছেন মোস্তাফিজুর রহমান। একের পর এক কাটার দিয়ে ভুগাতে ভুগাতে ২৪ রান করা টেইলরকে আউট করেন মোস্তাফিজ।

সানজামুল ফিরিয়ে দেন ওলারকে। তবু এসবের মধ্যেই টিকে ছিলেন সিকান্দার রাজা। বিপিএলে খেলে বাংলাদেশের উইকেটে ধাতস্থ এই ব্যাটসম্যানই যা একটু জিম্বাবুয়ের ইনিংসকে তিনিই টেনে নিয়ে যান। দারুণ এক থ্রোতে রাজার ইনিংস থামান সাকিব। ৯৯ বলে দুটি করে চার-ছক্কায় ৫২ রান করে ফেরেন তিনি। শেষ দিকে বলার মত রান পেয়েছেন পিটার মুর। রুবেলের বলে বোল্ড হওয়ার আগে করতে পেরেছেন ৩৩ রান।

বাংলাদেশের ইনিংসের সেরা বোলার সাকিবই। ৪৩ রান খরচায় তার পকেটে গেছে তিন উইকেট। পরপর দুই বলে দুই বোল্ড করে ২৪ রানে দুই উইকেট নেওয়া রুবেল দেখিয়েছেন ঝাঁজ, তবে একদম চেনা ছন্দে ছিলেন কাটার মাস্টার মোস্তাফিজ। ১০ ওভারের কোটা পূরণ করে ২৯ রানে নিয়েছেন দুই উইকেট। সবচেয়ে বড় কথা কাটারের পশরা সাজিয়ে পুরো স্পেল জুড়ে ভুগিয়েছেন ব্যাটসম্যানদের। শ্রীলঙ্কা ম্যাচের আগে মোস্তাফিজের সেরা ছন্দে থাকাও চাঙা রাখবে বাংলাদেশকে।  

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

জিম্বাবুয়ে:  ১৭০/১০   (৪৯)  (মাসাকাদজা ১৫, মিরে ০, আরভিন ০, টেইলর ২৪ , রাজা  ৫২, ওলার ১৩, মুর ৩৩, ক্রেমার ১২, জার্ভিস ৪*, চাতারা ০, মুজারাব্বানি ১  ; সাকিব ৩/৪৩, সানজামুল ১/২৯, মাশরাফি ১/২৫, মোস্তাফিজ ২/২৯ , রুবেল ২/২৪, নাসির ০/১৫ )

বাংলাদেশ: ১৭১/২ (২৮.৩) (তামিম ৮৪*, এনামুল ১৯, সাকিব ৩৭, মুশফিক ১৪* ;    জার্ভিস ০/১৫ , চাতারা ০/২৬, রাজা ২/৫৩,  মুজারাব্বানি ০/৩১, ক্রেমার ০/৪৬)  

ফল: বাংলাদেশ ৮ উইকেটে জয়ী। 

Comments

The Daily Star  | English
Dhaka luxury hotels see decline in clients

Luxury hotels fall silent as business travellers fade away

Luxury hotels in Dhaka are yet to resume normal business activities as foreign and local clients do not feel confident in travelling to the country given that the overall situation is still unstable.

17h ago