‘পাতানো ম্যাচ’ জিতে ইতিহাসে ইমরান

Imran Khan
সাবেক ক্রিকেটার ও পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ এর প্রধান ইমরান খান। ছবি: রয়টার্স

ক্রিকেট মাঠে ইমরান খানের অনেক সতীর্থ ‘পাতানো’ খেলায় যুক্ত ছিলেন। কেউ কেউ নিষিদ্ধও হয়েছেন। ইমরানের বিরুদ্ধে এমন কোন প্রমাণিত অভিযোগ নেই। তবে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের বিশ্লেষণ বলছে এবার ‘পাতানো ম্যাচ’ খেলেছেন ইমরান। আর সেটা রাজনীতির মাঠে। পাকিস্তানের নির্বাচনে সেনাবাহিনীর সঙ্গে সব ‘ফিক্সড’ করে মসনদে বসার খবর চাউর হয়েছে তার বিরুদ্ধে। তবে এই নির্বাচনী ‘খেলা’ পাতানো হলেও তিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হয়ে রচনা করতে যাচ্ছেন নতুন ইতিহাস। এই প্রথম কোন টেস্ট ক্রিকেটার কোন এক দেশের প্রধানমন্ত্রীর মতো পদে বসবেন।

পাকিস্তানের রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর প্রভাব এতটাই বিস্তৃত যে, তা নিয়ে অনেক রসিকতার গল্প প্রচলিত আছে। বলা হয়, পৃথিবীর প্রায় সব দেশেরই সেনাবাহিনী আছে, কিন্তু পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর একটি দেশ আছে। তাদের খেয়াল খুশি মতোই চলে সেদেশের সব হালচাল। তাই ইমরান প্রধানমন্ত্রী হলেও গুটি থাকছে সেনাবাহিনীর হাতেই। ভেতরে ভেতরে সেটা থাকলেও প্রকাশ্যে তার নামের পাশে কিন্তু পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীই লেখা থাকবে।

১৯৯৬ সালে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ গঠন করার পর দুই যুগের মধ্যে নির্বাচনে জিতে এলেন ইমরান। সতীর্থদের কেউ কেউ একদিন তাকে এমন ‘উচ্চতায়’ দেখার আশা দেখছিলেন। রাজনীতিবিদের কেউ কেউ আবার তার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে হাসি-তামাশাও করেছিলেন। মসনদে বসা যদি রাজনীতির খেলার চূড়ান্ত সফলতা ধরা হয়, তাহলে যে উপায়েই হোক- নানান হার্ডলস পেরিয়ে ইমরান আপাতত সফল।

ইমরানের খেলোয়াড়ি জীবন একই সঙ্গে বর্ণাঢ্য আর ঘটনাবহুল। তবে তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারকে কেবল ঘটনাবহুলই বলা যায়। ১৯৮০-৯০ এর দশকে ক্রিকেটে দুনিয়া দাপিয়ে বেড়ানো শীর্ষ অলরাউন্ডারদের একজন ছিলেন তিনি। দলের নেতৃত্বে ছিলেন আরও তুখোড়। ব্যাট-বলের কারিশমা ছাপিয়ে গেছে তার নেতৃত্বের কারিশমায়। ১৯৯২ সালে অবসর ভেঙে বিপর্যস্ত এক দলকে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন বানিয়ে দিয়েছিলেন। মনে করা হয় সেবার পাকিস্তানের বিশ্বকাপ জেতা ছিল বিস্ময়কর, আর সেটা হয়েছে আরও বিস্ময়কর ইমরান খানের কারণে।

কুশলী খেলোয়াড় ইমরান নিজের জৌলুসময় চেহারা দিয়ে উপমহাদেশের তো বটেই, ব্রিটিশ তরুণীদের মনও দ্রবীভূত করেছেন। নামডাক আর ‘চেহারার’ ফায়দা নিয়ে ‘অন্য খেলাতে’ও তিনি ছিলেন পটু। একাধিক বিয়ে তো আছেই, জড়িয়েছেন বহু সম্পর্কেও। তার সাবেক স্ত্রী রেহাম খান সেসব ইতিহাস টেনে এবার রাজনীতির মাঠও ঘোলা করেছেন। বিছানায় না গেলে নাকি দলের নারী কর্মীদের পদ দেন না- এমন গুরুতর অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। এতসব নিয়েও আপাতত খবর, যে উপায়েই হোক পাকিস্তানের নির্বাচনে তিনি জিততে যাচ্ছেন। বারবার সেনা-শাসনে জর্জরিত দেশটিতে নিয়মতান্ত্রিক নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা বদলের মাত্র দ্বিতীয় ঘটনার মূল চরিত্র হতে যাচ্ছেন ইমরানই।

ক্রিকেট মাঠের সব্যসাচী খেলোয়াড় ইমরান জীবন-যাপনের এক পর্যায়ে পশ্চিমারীতিতে চললেও  রাজনীতিতে এসে আশ্রয় নেন ধর্মের। উপমহাদেশের আরও অনেক রাজনীতিবিদের মতো নিজের আখের গোছাতে ব্যবহার করেছেন ধর্ম। পাকিস্তান তো বটেই উপমহাদেশের দক্ষিণপন্থি রাজনীতিতে ইমরান এখন বড় এক চরিত্রই বনে গেছেন। তা এতটাই যে, এবার পাকিস্তানের নির্বাচনে ‘গণতন্ত্র বিরোধী’ জঙ্গিগোষ্ঠিরাও তার প্রতি প্রকাশ্যে সহমর্মিতা দেখিয়েছে।

বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থি রাজনীতিরও বড় সমর্থক ইমরান। এই খেলুড়ে নেতা বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিরোধিতা করে বিবৃতি দিয়েছিলেন। যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার সর্বোচ্চ দণ্ডের পর বিবৃতি দিয়ে তাকে নির্দোষ দাবিও করেছিলেন তিনি।

ইমরানের রাজনৈতিক উত্থান উপমহাদেশের দক্ষিণপন্থি রাজনীতির জন্য আনন্দের খবর হতে পারে। তাই যে ইমরান ক্রিকেট মাঠের মুন্সিয়ানার জন্যে সর্বমহলে সমাদর পেতেন, রাজনীতির মাঠে যে সেটা পাওয়া সম্ভব নয় তা সহজেই অনুমেয়।

যে ধারার রাজনীতির প্রতিনিধিত্বই করুন না কেন ইমরানের সামনেও অপেক্ষা করছে কঠিন চ্যালেঞ্জ। পাকিস্তানের রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর ব্যাকআপ নিয়ে মসনদে বসা রাজনীতিবিদদের পরিণতির ইতিহাস কিন্তু সুখকর নয়। নিজেদের স্বার্থে সেদেশের সেনাবাহিনীই ব্যবহার করে রাজনীতিবিদের। ইমরান মসনদ টিকিয়ে সফল হওয়ার খেলায় কতটা পারদর্শিতা দেখাতে পারেন তা বলে দেবে সময়।

Comments

The Daily Star  | English

No price too high for mass deportations

US President-elect Donald Trump has doubled down on his campaign promise of the mass deportation of illegal immigrants, saying the cost of doing so will not be a deterrent.

5h ago