এশিয়া কাপ না ইন্ডিয়া কাপ?

দুবাই শহরে সকাল ১০টার রোদ মানেই ঝাঁঝালো গরম। আগুনে ঝাঁপ দিলেও মনে হয় তার কাছাকাছি তাপ পাওয়া যেত। এখানে নরম রোদ বলতে কিছুই নেই। বুধবার এমনই কড়া চোখ রাঙানো সকালে আইসিসি একাডেমি মাঠে অনুশীলনে নামে বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান। অথচ এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের তরফ থেকে ভোররাতে পাঠানো ই-মেইল যেন দুবাইয়ের এই তাপকেও হার মানিয়ে দিল। এরপরের ঘণ্টা কয়েক হতবাক হয়ে সবার আলাপ, এটা কি হলো? এটা কি এশিয়া কাপ নাকি হয়ে গেছে ইন্ডিয়া কাপ?
Mashrafee Mortaza in Asia Cup Cricket 2018
বুধবার অনুশীলনের ফাঁকে আফগানিস্তান কোচ ফিল সিমন্সের সঙ্গে মজা করছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি মর্তুজ। তার আগেই অবশ্য সূচি বদল নিয়ে শুনিয়ে গেছে কড়া কড়া কথা। ছবি: বিসিবি

দুবাই শহরে সকাল ১০টার রোদ মানেই ঝাঁঝালো গরম। আগুনে ঝাঁপ দিলেও মনে হয় তার কাছাকাছি তাপ পাওয়া যেত। এখানে নরম রোদ বলতে কিছুই নেই। বুধবার এমনই কড়া চোখ রাঙানো সকালে আইসিসি একাডেমি মাঠে অনুশীলনে নামে বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান। অথচ এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের তরফ থেকে ভোররাতে পাঠানো ই-মেইল যেন দুবাইয়ের এই তাপকেও হার মানিয়ে দিল। এরপরের ঘণ্টা কয়েক হতবাক হয়ে সবার আলাপ, এটা কি হলো? এটা কি এশিয়া কাপ নাকি হয়ে গেছে ইন্ডিয়া কাপ?

দুবাই স্পোর্টস সিটি মূল শহরের খানিকটা বাইরে। ওখানকার ভেতরেই আইসিসি ক্রিকেট একাডেমি। এশিয়া কাপের দলগুলোর অনুশীলনের জন্য বরাদ্দ এখানকারই মাঠ। বাংলাদেশ-আফগানিস্তানের গ্রুপ সেরা নির্ধারণী ম্যাচের আগের দিন বলে অনুশীলনে হাজির বহু সাংবাদিক। খানিকপর ওই অনুশীলন পড়ে গেল আড়ালে। যে ম্যাচের জন্য অনুশীলন সেই ম্যাচটাই যে হুট করে অর্থহীন বানিয়ে দিয়েছে এসিসি। মাঠে এসে নতুন সূচির খবর শুনে স্তব্ধ হয়েছেন ক্রিকেটাররা। তপ্ত গরমে কেন শেষ ম্যাচটা খেলবেন, এই প্রশ্ন তাদের মনে।  ওখানে ছিলেন ভারতীয় সাংবাদিকরাও। ভারতকে সুবিধা দিয়ে করা এমন সিদ্ধান্তে তারাও বিব্রত।

আরও পড়ুন- ভারতকে 'সুবিধা দিতে' খেলার আগেই গ্রুপে দ্বিতীয় বাংলাদেশ

গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে যাই হোক না কেন বাংলাদেশ আর পাকিস্তান থাকছে নিজ নিজ গ্রুপে দ্বিতীয়। খেলার আগেই ভারত ও আফগানিস্তানকে গ্রুপের এক নম্বর দল ধরে সুপার ফোরের সূচি চূড়ান্ত। গ্রুপ পর্বে সেরা হলে বাড়তি পয়েন্ট নিয়ে যাওয়ার ব্যাপার নেই অবশ্য। বাড়তি কোন পয়েন্ট পাচ্ছে না ভারত, আফগানিস্তান। তবে সমস্যা অন্য জায়গায়। আগেই গ্রুপ সেরা ঠিক করে সূচি করায় এসিসি আসলে মিটিয়েছে ভারতের আবদার। দেওয়া হয়েছে ভারতকে দুবাইতে খেলার নিশ্চয়তা প্রদান। খেলার মূল্যবোধের সঙ্গে এই সিদ্ধান্তের সাংঘর্ষিক হওয়ার প্রশ্ন এখন চাউর। 

আরও পড়ুন- এমনকি পাগলেও ভালো প্রতিক্রিয়া দেবে না: মাশরাফি

ভারতের আবদার মেটানো শুরু টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই। সব দলের থাকার জায়গা করা হয় দুবাইর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে। ভারত এখানে থাকতে চায় না বলে তাদের দেওয়া হয় আলাদা হোটেল। কিন্তু টুর্নামেন্টের মাঝপথে সূচি বদলের আবদার মেটানো ছাড়িয়ে গেছে বাকি সব কিছুকে।

প্রথম সূচিতে ‘এ’ গ্রুপে সেরা দলের সব খেলাই ফেলা হয় দুবাইতে। ধরে নেওয়া হয় ভারতই হচ্ছে গ্রুপ সেরা। কিন্তু পাকিস্তানের বিপক্ষে শেষ ম্যাচের আগে আরও নিশ্চয়তা দরকার ছিল ভারতের। তাই খেলার ফল যাইহোক ভারতের সব ম্যাচ যাতে দুবাইতেই থাকে সেভাবেই করে ফেলা হয় সূচি। শেষ ম্যাচে ভারত জিতেছে, হারলেও কিছু আসত যেত না। একই অবস্থা বাংলাদেশ-আফগানিস্তান ম্যাচের। কোন আয়োজক দুটো ম্যাচকে অর্থহীন বানিয়ে দিয়েছে কেবল একটা দলের কথা মাথায় রেখে। এমন ঘটনা কোন আন্তর্জাতিক খেলায় আগে কবে হয়েছে, গবেষণার দাবি রাখে।

এশিয়া কাপের সবদলই থাকছে দুবাইতে। ১৪০ কিলোমিটার দূরের আবুধাবিতে খেলা থাকলে,  ওখানে খেলে দলগুলো মাঝরাত পেরিয়ে ফিরছে হোটেলে। পরদিনই থাকছে আরেক ম্যাচ।  একের পর এক খেলা, এইসব ভ্রমণ ঝক্কির জন্য টুর্নামেন্ট শুরুর আগে থেকেই সমালোচনা ছিল। এসিসি তা কানে নেয়নি। কেবল কানে নিয়েছে ভারতের সুবিধার কথা।

আগের সূচি অনুযায়ী গ্রুপ সেরা হলে চার দিনে আবুধাবিতে গিয়ে তিন ম্যাচ খেলতে হতো বাংলাদেশকে। নতুন সূচিতে বাংলাদেশের আবুধাবি ভ্রমণ একদিন কমেছে। কিন্তু তবু এমন উলট-পালটে ক্ষোভ জানিয়েছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি মর্তুজা। তার মতে, ‘হারি বা জিতি আমরা গ্রুপে দ্বিতীয় হয়ে গেছি। এটা তো নিয়মের বাইরে চলে গেল। নিয়মের বাইরে যাওয়া হতাশাজনক। এই অদল বদলে পাগলেও ভাল প্রতিক্রিয়া দেখাবে না।’

নিজেরা কিছুটা সুবিধা পাওয়ার পরও মাশরাফি কেন ক্ষুব্ধ? এখানেই প্রশ্নটা আসে নৈতিকতার। আপনি টুর্নামেন্টের মাঝপথে কোন সূচি বদল করতে পারেন না। সূচি কোন কারণে বদলাতে হলে সব দলের মতামতেরও দরকার। কোন অলিগলি পাড়ার টুর্নামেন্টেও আজকাল এমনটা হলে লঙ্কাকাণ্ড বেধে যেত।

ক্রিকেট বিশ্বে ভারতের দাদাগিরি নতুন না। ক্রিকেটের সবচেয়ে বেশি ভক্ত সমর্থকের বাস ভারতে। এই কারণে বাণিজ্যের দিক থেকে ভারতই সোনার ডিম পাড়া হাঁস। ভারতের ক্রিকেট বোর্ডই দুনিয়ার সবচেয়ে ধনী। সবচেয়ে প্রভাবশালী। কোন টুর্নামেন্টে ভারত খেললে ফুলে-ফেঁপে উঠার সুযোগ আয়োজকদের ব্যাংক একাউন্ট। সংযুক্ত আরব আমিরাতেও সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ ভারতের। গ্যালারিতেও তাদের দাপট থাকবে।  বাণিজ্যের দিক থেকে হয়ত বাড়তি কদর তাদের প্রাপ্যও। কিন্তু সেটা কতটা নিয়মের বাইরে গিয়ে হতে পারে?

এসিসির সিদ্ধান্তে মাঠের খেলাতেও প্রভাব পড়তে পারে। আয়োজকদের কাছেই টুর্নামেন্টের সিরিয়াসনেস যেখানে প্রশ্নবিদ্ধ। বাতাসে যেখানে ঘুরছে ভারতকে সুবিধা দেওয়ার কথা। খেলার রোমাঞ্চ থেকে মানুষের মন যদি উঠে যায়, এসিসি কি নেবে সেই দায়?

Comments