‘গান করতে গিয়ে প্রতারণার শিকারও হয়েছিলাম’

এক যুগেরও আগের কথা। তখন একটি বহুজাতিক কোম্পানির আয়োজনে দেশজুড়ে চলছিলো ‘স্টার সার্চ’ প্রতিযোগিতা। এর অংশ হিসেবে চট্টগ্রামেও চলছিল বিভাগীয় অডিশন। আইয়ুব বাচ্চু চট্টগ্রামের ছেলে। তিনি ছিলেন বিচারক। সঙ্গে ছিলেন কুমার বিশ্বজিৎ। তিনিও চট্টগ্রামের মানুষ। তারা দুজনে যখন কথা বলতেন তখন চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষা ব্যবহার করতেন।
সংগীত শিল্পী আইয়ুব বাচ্চু। ছবি: আমিরুল রাজীব

এক যুগেরও আগের কথা। তখন একটি বহুজাতিক কোম্পানির আয়োজনে দেশজুড়ে চলছিলো ‘স্টার সার্চ’ প্রতিযোগিতা। এর অংশ হিসেবে চট্টগ্রামেও চলছিল বিভাগীয় অডিশন। আইয়ুব বাচ্চু চট্টগ্রামের ছেলে। তিনি ছিলেন বিচারক। সঙ্গে ছিলেন কুমার বিশ্বজিৎ। তিনিও চট্টগ্রামের মানুষ। তারা দুজনে যখন কথা বলতেন তখন চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষা ব্যবহার করতেন। তাদের কথার মাঝখানে আমরা কয়েকজন তরুণ যারা ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে গিয়েছিলাম অনুষ্ঠানের সংবাদ সংগ্রহ করতে তারা চুপচাপ বসে শুনতাম আর তাদের কথা বোঝার চেষ্টা করতাম।

অনুষ্ঠানের এক ফাঁকে আমরা বাংলাদেশের ব্যান্ডসংগীতের এই মহারথীকে পেয়ে যাই খোশ গল্পে মশগুল অবস্থায়। আমাদেরকে তথা কয়েকজন তরুণ ও নতুন সাংবাদিককে তিনি কাছে গিয়ে বসতে বললেন। আমরাও আগ্রহ নিয়ে আসন খুঁজে নিলাম।

বাচ্চু ভাই কোন ভূমিকা না দিয়ে আমাদের উদ্দেশে বললেন, “গান এতো সহজ কাজ না। অনেক কঠিন রে ভাই। এক দিনের এক ঘটনার কথা বলি। তখন আমরা বয়সে তরুণ ছিলাম। কিন্তু, গানই ছিল আমাদের ধ্যান-জ্ঞান। গান গাওয়ার জন্যে তখন কেউ ডাকলে নিজেদের বেশ সম্মানীত বোধ করতাম।”

“এমন যখন অবস্থা তখন একদিন দাওয়াত এলো একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে গাইতে হবে। তবে আমাদের যেতে হবে চট্টগ্রাম শহর থেকে বেশ দূরের একটি গ্রামে। আমাদেরকে কিছু খরচা-পাতি দেওয়া হবেও জানানো হলো। কিন্তু, সময়টা ছিল বর্ষাকাল। একটু বিপদেই পড়লাম আমরা। এতো সব দামি ইন্সট্রুমেন্ট নিয়ে বৃষ্টির মধ্যে এতো দূর যেতে হবে- এ নিয়ে দলের সদস্যদের মধ্যেও কয়েকজন গররাজি ছিলেন। কয়েকজন ছিলেন নিমরাজি।”

“কিন্তু, গানই যখন আমাদের প্রাণ, তখন যেতেই তো হবে। যেখানে বিনা পয়সাতেও গান শোনাতে হয় সেখানে গান গেয়ে যখন কিছু টাকা পাওয়া যাবে তখন সব প্রতিবন্ধকতাকে তুচ্ছ ভাবাই উচিত।”

“যাহোক, আমরা বৃষ্টির মধ্যে, কাদা-মাটির রাস্তা পেরিয়ে রাতের অন্ধকারে গিয়ে উঠলাম সেই গ্রামে। শ্রান্ত-ক্লান্ত। তারপরও, গান গাইলাম অনেক রাত পর্যন্ত। বেশ কয়েকটি গান গাওয়ার পর দেখি দর্শকদের সংখ্যা কমতে শুরু করেছে। আমরা গান বন্ধ করবো কিনা তা জানার জন্যে আয়োজক ব্যক্তিকে খুঁজলাম। কিন্তু তাকে পাওয়া গেলো না কোথাও। বুঝতে পারলাম ‘ডালমে কুছ কালা হ্যাঁয়’। আমরা গান বন্ধ করে যন্ত্রপাতিসব গুছিয়ে নিলাম। আর লোক পাঠিয়ে খুঁজতে লাগলাম সেই আমন্ত্রণকারীকে।”

“শেষে যা হলো। রাতের খাওয়াটাও পেলাম না। টাকাতো দূরের কথা। গভীর রাতে আবার সেই কাদা-পানির মধ্যে হাঁটা দিলাম বাসার উদ্দেশে। গান করতে গিয়ে এভাবেই প্রতারণার শিকার হয়েছিলাম। তবু গান ছাড়িনি।”

Comments

The Daily Star  | English
government changed office hours

Govt office hours 9am-3pm from Sunday to Tuesday

The government offices will be open from 9:00am to 3:00pm for the next three days -- from Sunday to Tuesday -- this week, Public Administration Minister Farhad Hossain said today

58m ago