অন্যরকম লড়াইয়ে লিটন-ইমরুল

সামনের বিশ্বকাপে ওপেনিংয়ে তামিম ইকবালের সঙ্গী হচ্ছেন কে? কদিন আগেও এই প্রশ্নে কোন একটা উত্তর খুঁজে পাওয়াও ছিল মুশকিল। এশিয়া কাপের ফাইনালের পর জিম্বাবুয়ে সিরিজের প্রথম ম্যাচ। পর পর দুই ম্যাচে মিলেছে দুই জবাব। নায়কোচিত দুই ইনিংসে এই জায়গায় এবার দাবি জানিয়ে রেখেছেন দুজন। লিটন দাস নাকি ইমরুল কায়েস? প্রশ্নটা এবার আরও নির্দিষ্ট। বলা যায়, খেল জমে উঠেছে বেশ।
Liton Das & IMRUL KAYES
ছবি: ফিরোজ আহমেদ

সামনের বিশ্বকাপে ওপেনিংয়ে তামিম ইকবালের সঙ্গী হচ্ছেন কে? কদিন আগেও এই প্রশ্নে কোন একটা উত্তর খুঁজে পাওয়াও ছিল মুশকিল। এশিয়া কাপের ফাইনালের পর জিম্বাবুয়ে সিরিজের প্রথম ম্যাচ। পর পর দুই ম্যাচে মিলেছে দুই জবাব। নায়কোচিত দুই ইনিংসে এই জায়গায় এবার দাবি জানিয়ে রেখেছেন দুজন। লিটন দাস নাকি ইমরুল কায়েস? প্রশ্নটা এবার আরও নির্দিষ্ট। বলা যায়, খেল জমে উঠেছে বেশ।

ওপেনিংয়ে তামিম ইকবালের একজন যোগ্য সঙ্গীর খোঁজে অনেকদিন থেকেই হা-হুতাশ বাংলাদেশ দলে। সৌম্য সরকার ছন্দ হারিয়ে ফেলার পর একে, ওকে, তাকে দিয়ে চেষ্টা করা হয়েছে বারকয়েক। ফল মেলেনি। টানা কয়েক ম্যাচ সুযোগ পেয়ে এশিয়া কাপের ফাইনালে গিয়ে সমাধানের প্রথম পথ দেখান লিটন দাস। এশিয়া কাপের ফাইনালের মতো বড় মঞ্চে, ভারতের মতো শক্তিধর প্রতিপক্ষের বিপক্ষে সব আলো নিজের দিকে নিয়ে এসেছিলেন তিনি। নয়নভুলানো ব্যাটিং করে দারুণ এক সেঞ্চুরিতে মাত করেছিলেন। তার ১১৭ বলে ১২১ রানের ইনিংসের তারিফ করেছেন দেশি বিদেশি বহু ক্রিকেট বিশ্লেষক। মনে করা হচ্ছিল, তামিমের সঙ্গী হওয়ার দৌড়ে তিনি অনেকখানিই বুঝি এগিয়ে গেছেন। ইমরুল হয়ত তখন মনে মনে বলছিলেন, আস্তে ভায়া আস্তে। আমিও তো আছি। সেই থাকার প্রমাণ দিতে দেরি করেননি, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ম্যাচেই চোখ ধাঁধানো সেঞ্চুরি করে বসেছেন ইমরুল।

ওপেন করতে নেমেছিলেন লিটনের সঙ্গেই। ছন্দে থাকা লিটন এদিন আগাগোড়া ব্যর্থ। দল পড়ে যায় চাপে, তারমধ্যে ক্রিজ আঁকড়ে সুযোগটা লুফে নেন ইমরুল। এশিয়া কাপে গিয়ে নিজের পছন্দের জায়গা ওপেনিংয়ে নামতে পারেননি। ছয়ে নেমে আফগানিস্তানের বিপক্ষে বিরূপ পরিস্থিতি চিনিয়েছিলেন নিজের জাত। ব্যাটিং অর্ডার বদলে তিনেও খেলেছেন। তবে চোখ তার নিশ্চয়ই ছিল ওপেন করার দিকেই। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে সেখানে নেমে করলেন ১৪০ বলে ১৪৪। কেবল রান সংখ্যাতেই নয়। খেলার ধরনে ইমরুলের এতদিনের যা বদনাম, এক ইনিংসেই সব গায়েব হওয়ার অবস্থা।

১৩ চারের সঙ্গে পুরো ইনিংসে ইমরুল মেরেছে ছয়খানা ছক্কা! তাও কিসব শটে! পেসারকে মাথার উপর দিয়ে উড়িয়ে মেরেছেন, সুইপ তো খেলেছেনই। ছিল নিখুঁত টাইমিংয়ে রিভার্স সুইপও। জায়গা বের করে মারা কাভার ড্রাইভগুলো তো ছিল দেখার মতো। ঠিক যেন ‘ইমরুল সুলভ’ নয়। রোববার মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ইমরুল নিজেকেই চিনিয়েছেন ভিন্নভাবে। তাকে এতদিন থেকে দেখে আসা অনেকে, বিচার করা অনেকে তাক লাগার মতো চোখ বড় করে দেখেছেন সেসব।

ম্যাচ পরিস্থিতি, প্রতিপক্ষের হিসাব নিলে লিটনে সেঞ্চুরিটিই অনেকখানি এগিয়ে থাকবে এখনো। এমনকি ইমরুলও তার এই সেঞ্চুরিকে আফগানিস্তানের বিপক্ষে খেলা ৭২ রানের ইনিংস থেকে পিছিয়ে রাখছেন। তবে তামিমের সঙ্গী হওয়ার লড়াইয়ে যে তিনি পিছিয়ে নেই, আছেন সদর্পেই সেই দাবি জোরালো করতে পেরেছেন ঠিকঠাক।

তামিম না থাকায় জিম্বাবুয়ে সিরিজের সব ম্যাচেই হয়ত একসঙ্গে ওপেন করতে নামবেন লিটন-ইমরুল। দুজন পাল্লা দিয়ে ছাড়াতে চাইবেন দুজনকে। তাদের মধুর লড়াই জমে উঠা নিশ্চিতভাবেই সুখবর বাংলাদেশের জন্য।

ব্যাটিংয়ের জৌলুস, আগ্রাসী মনোভাব, বড় মঞ্চে পারফর্ম করার সামর্থ্যে লিটন ইঙ্গিত দিয়েছেন সুন্দর আগামীর। এই আসি, এই যাই করে ক্যারিয়ারে দশ বছর পার করে দেওয়া ইমরুলও যেন এবার বললেন, আমারও এখনো দেওয়ার আছে অনেক কিছু।

ইংল্যান্ডে সামনের বিশ্বকাপ হবে বড় রানের। অধিনায়ক মাশরাফি মর্তুজা তো মনে করছেন জিততে হলে হরহামেশা তাড়া করতে হতে পারে সাড়ে তিনশো। একপাশে তামিম বা মিডল অর্ডারে মুশফিক, মাহমুদউল্লাহর ব্যাটে চেপে যা কুলানো সম্ভব নাও হতে পারে। দরকার তাই আরও পারফর্মার, ইনিংস টেনে নিতে পারার আরও জনাকয়েক লোক। দলে থিতু হওয়ার আভাস দেওয়া লিটন, ইমরুল দিচ্ছেন সে ইঙ্গিত। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জেতার চেয়ে যা বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে ভাল খবর।

 

 

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

5h ago