‘মেয়েদের ভুল’ এবং ‘কাউন্সেলিংয়ে’ সমাধান দেখছেন ইডেন অধ্যক্ষ

সিট-বাণিজ্য, চাঁদাবাজি, ‘চাপ দিয়ে অনৈতিক কাজ করানো’, শিক্ষার্থী নিপীড়নের অভিযোগ ইডেন কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি তামান্না জেসমিন রীভা ও সাধারণ সম্পাদক রাজিয়া সুলতানার বিরুদ্ধে। অভিযোগ ছাত্রলীগের অন্য অংশের বিরুদ্ধেও আছে। তবে বিষয়টি ‘মেয়েদের ভুল’ এবং ‘কাউন্সেলিংয়ে’ সমাধান দেখছেন অধ্যক্ষ সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য।

সিট-বাণিজ্য, চাঁদাবাজি, 'চাপ দিয়ে অনৈতিক কাজ করানো', শিক্ষার্থী নিপীড়নের অভিযোগ ইডেন কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি তামান্না জেসমিন রীভা ও সাধারণ সম্পাদক রাজিয়া সুলতানার বিরুদ্ধে। অভিযোগ ছাত্রলীগের অন্য অংশের বিরুদ্ধেও আছে। তবে বিষয়টি 'মেয়েদের ভুল' এবং 'কাউন্সেলিংয়ে' সমাধান দেখছেন অধ্যক্ষ সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য।

তিনি বলছেন, 'আমরা সবাই কিন্তু সব কাজ ঠিক করি না। আমাদের কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা আছে।'

৩৫ হাজার শিক্ষার্থীর ইডেন কলেজ এখন সারা দেশের আলোচনার বিষয়। সেই পরিপ্রেক্ষিতে দ্য ডেইলি স্টার আজ মঙ্গলবার সকালে কথা বলেছে ইডেন কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক সুপ্রিয়া ভট্টাচার্যর সঙ্গে।

দ্য ডেইলি স্টার: অভিযোগ উঠেছে, ইডেন কলেজ হোস্টেলের সিট ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণে, আপনার বা কলেজ প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে না; আপনি কলেজ নিয়ন্ত্রণ করেন না, নিয়ন্ত্রণ করে ছাত্রলীগ।

অধ্যাপক সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য: এগুলো তো আসলে, বলার জন্য অনেক কথাই বলা যায়, তাই না।

ডেইলি স্টার: হোস্টেলের সিটগুলো আসলে কে বা কারা নিয়ন্ত্রণ করে?

সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য: এখানে তো ব্যাপারটা নিয়ন্ত্রণের না। এখানে আমরা হোস্টেলের সিট বরাদ্দ যে দিই, আমরা ছাত্রী সংখ্যা অনুপাতে বিভাগগুলোতে চাহিদা চাই। চাহিদা চাইলে পরে বিভাগগুলো মেয়েদের আগে ইন্টারভিউ নেয়, কার বাড়ি দূরে, কার বেশি সমস্যা—ওই ইন্টারভিউয়ের ভিত্তিতে উনারা তালিকা পাঠান। সেই তালিকাতে উনারা আবার অপেক্ষমাণ তালিকাও দেয়। আমাদের তো মেয়ে প্রচুর। তো অপেক্ষমাণ তালিকাও দেন, দিলে পরে আমরা তখন ওই তালিকা থেকে বিভিন্ন হোস্টেলের যতগুলো সিট দরকার ওই তালিকা থেকে বরাদ্দ দিই।

ডেইলি স্টার: তাহলে ছাত্রলীগ সিট-বাণিজ্য করে কীভাবে? রুম দখলে রাখে কীভাবে?

সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য: এটা তো আসলে, বলার জন্য তো কত কথাই বলা যায়, তাই না। এটা কিন্তু আমরা যখনই খবর পাই বা এখনো কিন্তু আমরা এই বিষয়গুলো যাচাই-বাছাই করে দেখছি।

ডেইলি স্টার: এর আগে যখন ঘটনা ঘটেছে, তখন কি যাচাই-বাছাই করেছেন?

সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য: জ্বী, জ্বী, জ্বী। আমরা যখনই যেটা শুনি, তাৎক্ষণিকভাবেই খোঁজ-খবর নেই।

ডেইলি স্টার: এর আগে যা ঘটেছে ,'খোঁজ-খবর' নিয়ে কিছু পেয়েছেন?

সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য: এমন সত্যতা তো ওইভাবে আমরা তেমন কিছু পাইনি।

ডেইলি স্টার: তার মানে সিট-বাণিজ্য হয় না?

সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য: এটা তো মনে করেন যে যারা বলছে তারা যদি, মানে, আমাদের হল কর্তৃপক্ষকে জানায়, বিভাগকে জানায়, এটা আমি আগেও বলেছি, তাহলে কিন্তু বিষয়গুলো আমাদের কাছে আসে। আমি যদি সেখানে ভুক্তভোগী হিসেবে বলি আরকি।

ডেইলি স্টার: কিছুদিন আগে ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি একজনকে রুমে আটকে রাখলেন, হুমকি দিলেন, তার টেলিফোনের কথোপকথন ফাঁস হলো। এখন মারামারি করছে। সিট-বাণিজ্য, চাঁদাবাজি, মেয়েদের চাপ দিয়ে অনৈতিক কাজ করানোর অভিযোগ—এগুলো কি অপরাধের পর্যায়ে পড়ে না?

সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য: এখন মনে করেন, এখানে আমাদের কিন্তু একজন কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট আছেন। আমরা নিয়োগ দিয়েছি। তো ওই কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্টের মাধ্যমে আমরা কিন্তু আমাদের শিক্ষার্থীদের বিষয়ে যখনই কিছু শুনি, তখনই কিন্তু কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করি।

ডেইলি স্টার: এটা কি কাউন্সেলিংয়ের বিষয়, নাকি অপরাধের বিষয়?

সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য: আমাদের তো মেয়ে, তাই না? ফলে, আমাদের মেয়েরা তাদের চিন্তা-ভাবনার মধ্যে, যাতে তারা সঠিকভাবে চিন্তা করে, একটা বিষয়কে ইতিবাচকভাবে দেখে এবং তারা কলেজে যে নিয়ম আছে সেটা যাতে অনুসরণ করে— এই জন্য আমরা আসলে কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থাটা করি।

কারণ, এইটার চেয়ে বড় কিছু কিন্তু আর নেই। কারণ, আমরা কেউ কিন্তু একেবারে, কী বলব যে, আমরা কেউই কিন্তু সব সময় সবকিছু সঠিক কাজ করব তা কিন্তু না। তাই না?

ডেইলি স্টার: শিক্ষার্থীরা ভুল করবে, শিক্ষার্থীরা হয়তো যেটা করার কথা সেটা করবে না, কিছুটা নিয়মের ব্যত্যয় করবে—সেটা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু যে প্রক্রিয়াতে ছাত্রলীগের ২ গ্রুপ নিজেদের মধ্যে মারামারি ও সংঘর্ষে জড়াচ্ছে, সারাদেশের মানুষ টেলিভিশনে যে দৃশ্য দেখল, সেটা কি ভুল না অপরাধ?

সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য: দেখেন, আমরা সবাই কিন্তু সব কাজ ঠিক করি না। তাই না।

ডেইলি স্টার: চাঁদাবাজি, সিট-বাণিজ্য, মেয়েদের চাপ দিয়ে 'অনৈতিক কাজে বাধ্য' করার অভিযোগকে আপনি 'ভুল' হিসেবে দেখছেন? 'কাউন্সেলিংয়ে' সমাধান ভাবছেন?

সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য: আমরা কিন্তু ব্যবস্থা নেই।

ডেইলি স্টার: আপনি একজন শিক্ষক, কলেজের অধ্যক্ষ। আপনার কলেজ নিয়ে যে আলোচনা-সমালোচনা, কেমন অনুভব করছেন?

সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য: আমরা তদন্ত কমিটি করেছি। তদন্ত কমিটি তদন্ত করছে এবং তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আমরা সেক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেব।

ডেইলি স্টার: হোস্টেলের নিয়ন্ত্রণ বা যেটা বলা হচ্ছে, ক্যাম্পাসে আপনাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই…

সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য: এটা যদি না থাকত, কলেজের ভেতরে তো প্রতিদিনের পরীক্ষা, ক্লাস, প্র্যাকটিক্যাল—এগুলো কি তাহলে চলত?

ডেইলি স্টার: আপনারা কি ছাত্রলীগের যেসব নেত্রীরা হোস্টেল দখল করে আছে, রুম দখল করে আছে, ১০-১২ বছর ধরে আছে, তাদেরকে সরাতে পারবেন?

সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য: ওই যে বললাম, আমাদের তদন্ত কমিটি কাজ করছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে আমরা আমাদের ব্যবস্থা নেব।

ডেইলি স্টার: এর আগেও যখন ঘটনা ঘটল, আলোচনায় আসলো, তখন কি আপনারা তদন্ত কমিটি করেছিলেন?

সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য: জ্বী, জ্বী, জ্বী।

ডেইলি স্টার: তখন কী হয়েছিল? কী পাওয়া গিয়েছিল?

সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য: সেই তদন্ত আমরা সম্পূর্ণ শেষ করতে পারিনি। কারণ আমাদের তো সবার কাছ থেকে তথ্য জানতে হয়, সবার সাক্ষাৎকার তখনো নেওয়া সম্ভব হয়নি। তারপরেই তো আবার এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে গেল। ফলে, তদন্ত আমাদের চলছে।

ডেইলি স্টার: আরেকটা কথা বলা হয় যে আপনি ছাত্রলীগের কাছে অসহায়। ছাত্রলীগ নেত্রীদের আপনি ফোন করেন, তারা আপনাকে গুরুত্ব দেন না।

সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য: এটা, এটা, এটা একেবারেই সত্য না। একেবারেই সত্য না।

ডেইলি স্টার: আপনি তাদেরকে ফোন করেন না?

সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য: অবশ্যই না, অবশ্যই না।

ডেইলি স্টার: এখন ক্যাম্পাসের অবস্থা কেমন?

সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য: স্বাভাবিক। আমাদের পরীক্ষা চলছে, ক্লাস চলছে, প্র্যাকটিক্যাল চলছে, ভাইবা চলছে।

ডেইলি স্টার: এক গ্রুপ যে আরেক গ্রুপকে বের করে দিলো ক্যাম্পাস থেকে। এর পরিপ্রেক্ষিতে কি আরও 'অনাকাঙ্ক্ষিত' ঘটনা ঘটতে পারে?

সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য: দেখেন, আমরা তো, এটা আমরা কীভাবে বলব? আমরা তো কোনো ঘটনা ঘটাই না। তাহলে আমরা কীভাবে বলব?

ডেইলি স্টার: আপনার মেয়েরা তো ঘটনা ঘটিয়েছে।

সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য: আমরা আমাদের সতর্কতা বজায় রাখছি। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তার ব্যবস্থা রাখছি।

ডেইলি স্টার: কীভাবে নিরাপত্তা দিচ্ছেন, পুলিশ দিয়ে?

সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য: আমাদের শিক্ষকরা সার্বক্ষণিকভাবে আছেন। আমাদের কিন্তু হোস্টেলগুলোতে হোস্টেল কর্তৃপক্ষ আছে, হোস্টেল কমিটি আছে।

ডেইলি স্টার: বলেন কি, হোস্টেল কর্তৃপক্ষ আছে?

সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য: হা হা হা… না থাকলে তো আর হোস্টেল চলত না।

ডেইলি স্টার: হোস্টেল কি আসলে চলছে?

সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য: হোস্টেল না চললে, হোস্টেলে এত এত মেয়ে আছে কীভাবে?

ডেইলি স্টার: বলা হয় ছাত্রলীগ নেত্রীরা চালাচ্ছেন।

সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য: অবশ্যই না। হোস্টেল কর্তৃপক্ষই হোস্টেল চালায়।

ডেইলি স্টার: কিন্তু ঘটনা যখন ঘটে, তখন আপনার হোস্টেল কর্তৃপক্ষকে খুঁজে পাওয়া যায় না।

সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য: এটা একেবারেই সত্য কথা না। আমাদের হোস্টেল কর্তৃপক্ষ সার্বক্ষণিক মেয়েদের সঙ্গে আছে।

ডেইলি স্টার: যখন সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলো, মারামারির ঘটনা ঘটলো, তখনো কি ছিল?

সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য: অবশ্যই ছিল, সবাই ছিল। সেখানে উনারাও তো আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন।

ধন্যবাদ, ধন্যবাদ আপনাকে। আমার আরও একটা ফোন আসছে। আজকে আমার ২টি পরীক্ষা। ফলে গুরুত্বপূর্ণ একটা ফোন আসছে।

ডেইলি স্টার: শেষ প্রশ্ন, যারা মারামারি করলো, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন?

সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য: ওই যে বললাম, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আমরা আমাদের ব্যবস্থা নেব।

ডেইলি স্টার: তদন্ত কমিটি করেছেন কাদের নিয়ে?

সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য: আমাদের শিক্ষকদের নিয়ে!

ডেইলি স্টার: কয়জন শিক্ষক?

সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য: ৪ জন।

ডেইলি স্টার: তদন্ত কি শেষ হবে? প্রতিবেদন প্রকাশিত হবে? আগেরটা তো হয়নি এখনো।

সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য: তদন্ত রিপোর্টের ভিত্তিতে আমরা ব্যবস্থা নেব।

ডেইলি স্টার: তদন্তটা শেষ হবে কি না?

সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য: অবশ্যই শেষ হবে। শেষ না হওয়ার তো কোনো কারণ নেই।

ডেইলি স্টার: আগেরটা তো শেষ হয়নি।

সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য: আগেরটা শেষ হয়নি, আপনাকে তো বললাম, সবার সঙ্গে কথা বলে নিতে হবে।

ডেইলি স্টার: এটাও তো ওই রকমই হতে পারে।

সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য: আগে থেকেই আমরা যদি নেতিবাচক চিন্তা করি, তাহলে তো ইতিবাচক কিছু করতে পারব না। তাই না?

ডেইলি স্টার: ইতিবাচক কিছু করতে পারেন, সেই প্রত্যাশা রাখি।

সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য: ধন্যবাদ, আপনাদের সহযোগিতা কামনা করি।

Comments