ডেঙ্গু কাড়ছে নবীন প্রাণ, দায়িত্বপ্রাপ্তদের টনক নড়বে কবে?

মশক নিধনে যারা জড়িত, সেইসব কর্মকর্তা, কর্মচারী বা গোটা স্বাস্থ্যখাতকে গণভবনে ডাকা হবে কবে? আমি সেইদিনের অপেক্ষায়। ডেকে তাদের জিজ্ঞেস করা হোক কেন ডেঙ্গুতে আমাদের সন্তান মারা যাচ্ছে? কেন মায়ের বুক খালি হচ্ছে?
পূর্ব জুরাইনের নবীনবাগ এলাকার এই পরিবারটির ৩ জন সদস্য ডেঙ্গুতে আক্রান্ত। হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা করানোর সামর্থ্য নেই তাদের, তাই বাড়িতেই চিকিৎসা নিচ্ছেন তারা। ছবি: মিজানুর রহমান

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে অবসরের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার তামিমের। তামিম অবসরের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা প্রসঙ্গে বলেছেন, 'আজ দুপুরবেলায় আমাকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তার বাসায় দাওয়াত করেছিলেন। ওনার সঙ্গে অনেকক্ষণ আমরা আলোচনা করেছি। উনি আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন খেলায় ফিরে আসতে। আমি আমার অবসর এই মুহূর্তে তুলে নিচ্ছি।' (প্রথম আলো, ৭ জুলাই ২০২৩)।

মশক নিধনে যারা জড়িত, সেইসব কর্মকর্তা, কর্মচারী বা গোটা স্বাস্থ্যখাতকে গণভবনে ডাকা হবে কবে? আমি সেইদিনের অপেক্ষায়। ডেকে তাদের জিজ্ঞেস করা হোক কেন ডেঙ্গুতে আমাদের সন্তান মারা যাচ্ছে? কেন মায়ের বুক খালি হচ্ছে?

কথা শুনে আপনি বিরক্ত হতে পারেন, হতে পারেন ক্ষুব্ধ, কিন্তু আমাদের যে দুশ্চিন্তায় ঘুম আসছে না। আমাদের মতো অসংখ্য বাবা-মা যে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে সেই খবর রাখে কয়জন। ২০২৩ সালে ডেঙ্গুতে যেসব সন্তান মারা যাচ্ছে তারা কি আমাদের সন্তান না? তাহলে কেন স্বাস্থ্যখাতে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঘুম ভাঙছে না? তারা কীভাবে নিশ্চিন্তে ঘুমায়! কেন তাদের কঠোর জবাবদিহিতার পর্যায়ে আনা হচ্ছে না?

নারী ধর্ষণের বিচার, ক্রিকেটে মান-অভিমান, খেলার মাঠ চাওয়া, বাজার স্থির রাখা, রাজনৈতিক অস্থিরতা সবকিছুর জন্য গণভবন থেকে ফোন আসে। বাধ্য হয়ে ফোন দিতে হয় এরপর সবাই কথা শোনে। এই আলোচনা অনেক পুরোনো, সবকিছু যদি প্রধানমন্ত্রীকে ফোন দিয়ে করতে হয় তাহলে বাকিদের কাজ কী? তারা বেতন নেন কী কারণে? তাদের রেখে কী লাভ? বহুজন বহুপন্থায় ব্যাখ্যা দিয়েছেন, টকশোতে অনেক সময়ও ব্যয় হয়েছে, সমাধান কি মিলেছে?

২০০০ সাল থেকে ডেঙ্গুকে আমরা চিনছি, জানছি। ২০১৮ সালে এসে তা বিভীষিকাময় রূপ দেখায়। ২০১৮ সালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা যান ২৬ জন, ২০১৯ সালে ১৭৯ জন, ২০২০ সালে ৭ জন। ২০২০ সালে করোনায় যে পরিমাণ মানুষ মারা গিয়েছিল তার হিসাব রাখাই ছিল দায়। ২০২১ সালে ডেঙ্গুতে মারা যান ১০৫ জন, ২০২২ সালে ২৮১ জন আর ২০২৩...?

২০২৩ সালে ইলমা জাহান, আহনাফ রাফান ও শ্রাবন্তী সরকারের মতো ফুটফুটে নবীন প্রাণ থেমে গেল, এটা কি মেনে নেওয়া যায়? কেউ কি মেনে নিতে পারবে?

এই বাচ্চাগুলোর ছবি দেখে আমি স্থির থাকতে পারছি না। এদের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ হলো চট্টগ্রামের শ্রাবন্তী সরকারের মৃত্যু। ঈদের ছুটিতে পরিবারের সঙ্গে ভারতের ত্রিপুরা যাবে, তা নিয়ে ছিল কত উচ্ছ্বাস। ঘুরতে যাওয়ার আগে মেয়েটার জ্বর উঠল, দুই দিনে কিছুটা কমে। কিন্তু কয়েক দিন পর আবারও ফিরে আসে জ্বর, ঘোরাঘুরির মাঝপথেই তাকে নিয়ে দেশে ফিরে আসে পরিবার। মাত্র ৬ দিনের ডেঙ্গু জ্বরে মারা গেল পঞ্চম শ্রেণির মেয়েটা। তাকে শ্মশানে দাহ করেই তার ভাইকে নিয়েও ছুটতে হয় মা-বাবাকে। কারণ তাদের সেই সন্তানও ডেঙ্গু আক্রান্ত। মেয়ের জন্য একটু শোক প্রকাশ করবেন, সেই উপায়ও ছিল না। কোনো বাবা-মা কি এটা মেনে নিতে পারবে?

২০০০ সাল থেকে সিটি করপোরেশন থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্যখাত তাহলে কী করল? এই জবাবদিহিতা চাইবে কে? ডেঙ্গু বিশেষজ্ঞরা আগেই জানিয়েছিলেন, কোন সময়ে ডেঙ্গু ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। তাহলে কেন তাদের কথা শোনা হলো না?

২০২২ সালের শুরুর দিকে ডেঙ্গু বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছিলেন, বছরের কোন সময়ে ডেঙ্গু আক্রমণাত্মক আচরণ করবে, সেই সময়ও তাদের কথা শোনা হয়নি। একইভাবে ২০২১ সালেও বিশেষজ্ঞদের কথা শোনা হয়নি। ফলাফল যা হওয়ার তাই হয়েছে। কিছু বুঝে উঠার আগেই শত শত প্রাণ হারাতে হয়েছে। যদি এমন হতো, যে জেলাতেই ডেঙ্গুর কারণে শিশুরা মারা যাবে সঙ্গে সঙ্গে সিটি করপোরেশন থেকে সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্যখাতের সবাইকে চাকরিচ্যুত করা হবে তাহলে সবাই কথা শুনতো। শুনতে বাধ্য হতো। বসে বসে বেতন গুণতো না। করোনার সময় আমরা দেখেছি কতটা অথর্ব এই স্বাস্থ্যখাত।

শুধু ডেঙ্গু কেন, সাধারণ মশার যন্ত্রণায় রাজধানীতে টেকা দায়। আমি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে থাকি। আমার এলাকায় প্রায়ই দেখি মশার ওষুধ ছিটানো হয়। কিন্তু মশার যন্ত্রণায় দরজা-জানালা খোলা যায় না। অর্থাৎ, মশা নিধনের যে ওষুধ দেওয়া হচ্ছে তার কার্যকারিতা নেই। যেখানে ওষুধ ছিটানো হয় সেখানে ওষুধ কাজ করে না, আর কোনো কোনো এলাকায় অল্প সময়ের জন্য ওষুধ ছিটানো হয়।

বিজ্ঞানী ও গবেষকরা ১৪ মাস আগে বলেছিলেন, মশার ওষুধ কার্যকারিতা হারিয়েছে। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় ছিটানো ওষুধে মশা মরছে না। সব জেনেও কর্তৃপক্ষ মশা মারার ওষুধ পরিবর্তনে পদক্ষেপ নেয়নি (প্রথম আলো, ৯ জুলাই ২০১৯)। এখনো কি কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে? হয়নি। সংকটটা এমন, একে তো অল্প সময়ের জন্য ওষুধ দেওয়া হয়, তার মানে দায়িত্বে অবহেলা করা হচ্ছে। আর যে ওষুধ দেওয়া হয় তা কাজ করে না। যদি কাজ করতো তাহলে মশার কামড়ে এইভাবে অভিভাবকদের সন্তান হারাতে হতো না।

রাজধানীর বাইরে দ্রুত ছড়াচ্ছে ডেঙ্গু। সরকারি হিসাবে এরইমধ্যে ৬১ জেলায় এডিস মশাবাহিত এই রোগ ছড়িয়েছে (সমকাল, ১২ জুলাই ২০২৩)। কেন ছড়াল? প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ার কারণে বা গুরুত্ব না দেওয়ায় কারণে এই অবস্থা। জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, ডেঙ্গু পরিস্থিতি এবার জটিল হচ্ছে। মানুষ একইসঙ্গে ডেঙ্গুর একাধিক ধরনেও আক্রান্ত হচ্ছেন। ডেঙ্গুর ৪টি স্ট্রেইন (ডেন-১, ২, ৩ ও ডেন-৪) এর যেকোনো একটি দিয়ে ডেঙ্গু জ্বর হতে পারে।

আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা শিরিন জানাচ্ছেন, প্রায় ৩০০ রোগীর নমুনা বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ৫১ দশমিক ৫ শতাংশের সংক্রমণ ডেন-২–এ এবং ৪৩ দশমিক ৯ শতাংশের সংক্রমণ ডেন-৩–এ। বাকি ৪ দশমিক ৬ শতাংশ রোগী একইসঙ্গে ডেন-২ ও ডেন-৩–এ আক্রান্ত (প্রথম আলো, ১০ জুলাই ২০২৩)।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু ঢাকায় নয় বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি জেলায় ডেঙ্গু সংক্রমণ বাড়বে আগস্ট-সেপ্টেম্বরে (ঢাকা পোস্ট, ৪ জুলাই ২০২৩)। আগস্ট আসার আগেই ডেঙ্গু জুলাই মাসে যে রূপ দেখাচ্ছে, তাতে আগস্ট-সেপ্টেম্বরের ভয়াবহতা আঁচ করাই যাচ্ছে না।

আগে গণমাধ্যমে ডেঙ্গুর খবর আসতো এইভাবে, এক বছরে কত আক্রান্ত হয়েছেন বা ৬ মাসে কত আক্রান্ত হয়েছেন। এখন খবর আসছে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ১ হাজার ৫৪ রোগী শনাক্ত হয়েছে। এরমধ্যে ঢাকার বাইরে ৪২৭ জন। এই সময়ে মারা গেছেন ৭ জন। শনাক্ত ও মৃত্যু দুটোই এই বছরের সর্বোচ্চ (সমকাল, ১২ জুলাই ২০২৩)।

এতে কি বোঝা যাচ্ছে আসলে ডেঙ্গু কতটা আক্রমণাত্মক এই মাসে? আমি বা আপনি বুঝতে পারলে কী হবে, যাদের বোঝার দরকার তাদের বুঝতে হবে। তারা কবে বুঝবে? এখন এমন অবস্থা হয়েছে শিশু-কিশোরদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠাতেও ভয় পাচ্ছেন অভিভাবকরা। এমন কি হওয়ার কথা ছিল?

ডেঙ্গু ব্যবস্থাপনা নিয়ে সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমি-আপনি হতাশ তা নয়, টিআইবি বলছে, ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে জেনেও ২ সিটির উদ্যোগ হতাশাজনক। দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোর সমন্বয়হীনতার, যথাযথ পরিকল্পনা, পূর্বপ্রস্তুতি ও কার্যকর বাস্তবায়নের ঘাটতির কারণেই ঢাকাসহ প্রায় সারাদেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি মারাত্মক রূপ ধারণ করেছে।

টিআইবির ১৫ দফা সুপারিশ হলো—

১. সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনের অংশগ্রহণের মাধ্যমে জাতীয় পর্যায়ে এডিস মশাসহ অন্যান্য মশা নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থাপনা কৌশল ও কর্ম পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে, যেখানে সব অংশীজনের দায়িত্ব ও কর্তব্য সুস্পষ্ট করা হবে।

২. জাতীয় কৌশল ও কর্মপরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সংশ্লিষ্ট অংশীজনের মশা নিধনে নিজস্ব পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে।

৩. মশা নিয়ন্ত্রণে সব ধরনের পদ্ধতির ব্যবহার নিশ্চিত করে ২ সিটি করপোরেশনকে একইসঙ্গে সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। মশা নিধনে পরিবেশবান্ধব-পদ্ধতির ব্যবহার বাড়াতে হবে। যেমন: মশার উৎস নির্মূল— ২টি ভবনের মধ্যবর্তী জন-চলাচলহীন অংশে জমে থাকা পরিত্যক্ত বর্জ্য, ঝোপঝাড়, ড্রেন, ডোবা, নালা এবং খাল নিয়মিত পরিষ্কার করা, পরিবেশবান্ধব রাসায়নিক ব্যবহার। বছরব্যাপী এই কার্যক্রম পরিচালনার পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে।

৪. সব সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও রোগ-নির্ণয় কেন্দ্রকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালনায় একটি কেন্দ্রীয় ডাটাবেজের অধীনে নিয়ে আসতে হবে, যেখানে সবার অভিগম্যতা নিশ্চিত থাকবে। ডেঙ্গু রোগী চিহ্নিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সিটি করপোরেশন এবং দেশের অন্য এলাকায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করতে হবে।

৫. স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) ইত্যাদি দপ্তরের সহযোগিতা নিয়ে প্রতিবছর ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাবের শুরুতেই (মে-আগস্ট) সব হটস্পট চিহ্নিত করতে হবে এবং এই বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের ব্যবস্থা করতে হবে।

৬. সব যোগাযোগমাধ্যমে (প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম) এডিস মশা ও এর লার্ভা, ডেঙ্গু রোগ নিয়ন্ত্রণ ও দ্রুত চিকিৎসার বিষয়ে সচেতনতা ও সতর্কতামূলক বার্তার কার্যকর প্রচার বাড়াতে হবে; প্রয়োজনে এলাকাভিত্তিক মাইকিং, ধর্মীয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এই সংক্রান্ত প্রচার কার্যক্রম চালাতে হবে।

৭. এডিস মশার জরিপ কার্যক্রম ঢাকার বাইরে সম্প্রসারিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়, কীটতত্ত্ববিদ, বেসরকারি গবেষণা সংস্থা ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের সহায়তা নেওয়া যেতে পারে।

৮. চিহ্নিত ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা বিশেষ করে নির্মাণাধীন ভবন ও প্রকল্প এলাকাগুলোয় নিয়মিত নজরদারির ব্যবস্থা এবং উৎস নির্মূলসহ সমন্বিত ব্যবস্থা প্রয়োগের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে বিশেষ দল বা র‌্যাপিড অ্যাকশন টিম গঠন করা যেতে পারে।

৯. জনসংখ্যা, আয়তন, ডেঙ্গু আক্রান্তের হার, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ইত্যাদি বিবেচনা করে মাঠপর্যায়ের জনবলের চাহিদা নিরূপণ এবং চাহিদার ভিত্তিতে নিয়োগ বা আউটসোর্সিং করতে হবে; এর জন্য পর্যাপ্ত ও সুষম বাজেট বরাদ্দ দিতে হবে।

১০. মশা নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে জনসম্পৃক্ততা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধির সমন্বয়ে এলাকাভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবক দল গঠন করতে হবে এবং যথাযথ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।

১১. উপযুক্ত কীটনাশক ও এর চাহিদা নির্ধারণ, ক্রয়, কার্যকরতা ও সহনশীলতা পরীক্ষার জন্য সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে বিশেষজ্ঞ কারিগরি কমিটি করতে হবে, তাদের কার্যক্রম নিয়মিত হতে হবে এবং সভাগুলোর কার্যবিবরণী প্রকাশ করতে হবে।

১২. অনিয়ম ও দুর্নীতি প্রতিরোধে কীটনাশক ক্রয় প্রক্রিয়ায় জাতীয় ক্রয় আইন ও বিধিমালা অনুসরণ করতে হবে।

১৩. মশা নিধন কার্যক্রম-সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম, দুর্নীতি ও দায়িত্বে অবহেলার বিষয়গুলো তদন্ত করে সংশ্লিষ্টদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

১৪. মশার কীটনাশক প্রতিরোধী ক্ষমতা রোধ করার জন্য কিছুদিন পরপর যথাযথ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে কীটনাশক পরিবর্তন, একেক এলাকায় ভিন্ন ভিন্ন কীটনাশক ব্যবহার ইত্যাদি নিশ্চিত করতে হবে।

১৫. তৃতীয় পক্ষ (বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, কীটতত্ত্ববিদ, বেসরকারি গবেষণা সংস্থা ইত্যাদি) কর্তৃক মশার কীটনাশক প্রতিরোধী ক্ষমতা এবং মশা নিধন কার্যক্রম মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। 

এই ১৫টি দফা সঠিকভাবে কার্যকর হলে দেশে ডেঙ্গু থাকবে? থাকলেও এইভাবে মানুষের মৃত্যু হবে না। প্রযুক্তির এই যুগে প্রতিরোধ করতে চাইলে সম্ভব। মশার কামড়ে মানুষের মৃত্যু এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। করোনার মতো অপরিচিত ভয়াবহ মহামারি যখন বাংলাদেশ নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছিল, তাহলে ডেঙ্গু কেন পারবে না। আমাদের চিকিৎসক, চিকিৎসা প্রযুক্তি পর্যাপ্ত, অভাব শুধু সঠিক পরিকল্পনা এবং সদিচ্ছার। সেই সদিচ্ছা হবে কবে? কবে ডেঙ্গু সংশ্লিষ্ট সব সংস্থা আন্তরিক হবে, নাগরিক হিসেবে, অভিভাবক হিসেবে এটাই আমি জানতে চাই।

বিনয় দত্ত: কথাসাহিতিক ও সাংবাদিক

[email protected]

(দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির আইনগত, মতামত বা বিশ্লেষণের দায়ভার সম্পূর্ণরূপে লেখকের, দ্য ডেইলি স্টার কর্তৃপক্ষের নয়। লেখকের নিজস্ব মতামতের কোনো প্রকার দায়ভার দ্য ডেইলি স্টার নেবে না।)

Comments