‘নীরব ভোটে’ যেভাবে মা-ছেলেকে জেতালেন গাজীপুরবাসী

খাতাপত্রে জায়েদা বিজয়ী হলেও এই ভোট ছিল মূলত জাহাঙ্গীর ও আজমতের দ্বৈরথ। এর শুরুটা হয়েছিল ২০১৩ সালে গাজীপুর সিটির প্রথম নির্বাচন থেকে।
জাহাঙ্গীর আলম ও তার মা জায়েদা খাতুন কানাইয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিয়ে বিজয়সূচক চিহ্ন দেখান। ছবি: স্টার

বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টা। ঘণ্টাখানেক আগে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা শুরু হয়েছে নগরের বঙ্গতাজ অডিটোরিয়ামে। এর বাইরের সড়কে ততক্ষণে ভিড় করতে শুরু করেছেন টেবিল ঘড়ি প্রতীকের সমর্থকরা। মাইকে একটি করে কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণা হচ্ছে, আর সোল্লাসে চিৎকার করে উঠছেন তারা।

এর অদূরেই জেলা পরিষদের ঢাল এলাকায় দিনের ভোট নিয়ে আলাপ করছিলেন স্থানীয় কিছু ভোটার। কাছে গিয়ে জানতে চাইলাম, 'ভোট কেমন হলো?' জবাবে তারা সমস্বরেই বলে উঠলেন, 'নীরব বিপ্লব' ঘটে গেছে। সুষ্ঠু পরিবেশে লোকজন ভোট দেওয়ার সুযোগ পেয়েছে। এই সুযোগ তারা ছাড়েননি। টেবিল ঘড়ির জয় সুনিশ্চিত।

এতটা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ওই ভোটাররা যখন টেবিল ঘড়ির জয়ের ব্যাপারে কথা বলছিলেন, তখন ৪৮০ কেন্দ্রের মধ্যে মাত্র ৩০টি কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণা করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. ফরিদুল ইসলাম। তাতে প্রায় আড়াই হাজার ভোটে এগিয়ে ছিলেন দল থেকে বহিস্কৃত ও মেয়র পদ থেকে বরখাস্ত জাহাঙ্গীর আলমের মা ঘড়ি প্রতীকের জায়েদা খাতুন। বাকি ৪৫০টি কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণা তখনো বাকি।

কিন্তু সময় যত গড়িয়েছে জায়েদা খাতুনের সঙ্গে নৌকা প্রতীকের আজমত উল্লা খানের ব্যবধান তত বেড়েছে। শেষমেষ গভীর রাতে যখন চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করা হয়, তাতে দেখা যায়, জায়েদা খাতুন ১৬ হাজার ১৯৭ ভোটের ব্যবধানে আজমত উল্লা খানকে পরাজিত করেছেন।

নিজে প্রার্থী হতে না পারার পর গৃহিনী মাকে নিয়ে ভোটের লড়াইয়ে নেমে যাওয়া গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম দল থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার পর বলেছিলেন, গাজীপুরে আওয়ামী লীগেরই তাকে প্রয়োজন। ভোটে দৃশ্যত সেটাই দেখান তিনি। দলকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে মাকে প্রার্থী করে জিতিয়ে আনেন।

ভোটকেন্দ্রে পুরুষ ভোটারদের দীর্ঘ সারি। ছবি: স্টার

অথচ নির্বাচনের আগের দিন পর্যন্তও এমনটা ভাবা যায়নি। নির্বাচন সামনে রেখে রাজধানী লাগোয়া দেশের সবচেয়ে বড় এই সিটি করপোরেশনের প্রধান-অপ্রধান সড়কসহ সব অলিগলি ডিজিটাল ব্যানার-পোস্টারে ছেয়ে গেলেও কোথাও ঘড়ি প্রতীকের পোস্টার-ব্যানার দেখা যায়নি। দলের প্রতীক নিয়ে ভোট চেয়ে জ্যেষ্ঠ নেতা আজমত উল্লা যখন সাড়ম্বরে গণসংযোগ করেছেন, তখন গুটিকতক কর্মী-সমর্থক নিয়েও প্রচারে গিয়ে বাধার মুখে পড়েছেন জাহাঙ্গীর ও তার মা। তাদের গাড়ি বহরে হামলার ঘটনা ঘটেছে। একাধিকবার তারা ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন। এসবের পাশাপাশি প্রশাসনের অসহযোগিতা, সমর্থকদের ও এজেন্টদের তুলে নেওয়া এবং ভোটের দিন কিছু কেন্দ্রে নৌকায় ভোট দিতে চাপ দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তারা।

এত প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও জাহাঙ্গীরের ছায়ায় থেকে তার মায়ের জিতে আসার কারণ সম্পর্কে স্থানীয় ভোটারদের ভাষ্য, নৌকা প্রতীকের আজমত উল্লাহ খান মূলত একজন 'জনবিচ্ছিন্ন' নেতা। তার সবকিছুই ছিল টঙ্গীকেন্দ্রিক। দীর্ঘ ১৮ বছর তিনি টঙ্গী পৌরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন। কিন্তু সেখানেও তিনি তেমন কিছু করেননি। বিপরীতে মাত্র ৫ বছরেরও কম সময়ে জাহাঙ্গীর যেসব দৃশ্যমান উন্নয়নকাজ হাতে নিয়েছেন, তাতে পুরো গাজীপুর অঞ্চলের লোকজন কিছুটা হলেও সুফল ভোগ করছেন।

এর পাশাপাশি এই ভোটারদের ভাষ্য, জায়েদা খাতুনের মতো একজন 'বয়স্ক' নারী প্রার্থীর প্রচারকাজে যেভাবে বাধা দেওয়া হয়েছে, যেভাবে হামলা চালানো হয়েছে তাতে সাধারণ ভোটারদের পাশাপাশি নৌকার সমর্থকদের অনেকেও বিষয়টা ভালোভাবে নেননি। এটা তাদের অনুভূতিতে লেগেছে। কিন্তু পরিস্থিতির কারণে তারা চুপ ছিলেন। সুযোগ পেয়ে নীরবে বৃহস্পতিবারের নির্বাচনে টেবিল ঘড়ি প্রতীকে ভোট দিয়ে তারা এর প্রতিফলন ঘটিয়েছিলেন।

এ ছাড়া গতকাল ফলাফল ঘোষণা কেন্দ্রে উপস্থিত মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের নির্বাচন পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত আওয়ামী লীগ ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের একাধিক নেতা বলেছেন, মেয়র থাকার অবস্থায় জাহাঙ্গীর তার নিজের নামে গড়া ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে অনেক দুস্থ-গরিব শিক্ষার্থীর দায়িত্ব নিয়েছেন, অনেকে নিয়মিতভাবে বৃত্তি দিয়ে যাচ্ছেন। এর বাইরে বিভিন্নজনকে দান-অনুদান ও নানা আর্থিক সুবিধা দিয়েছেন তিনি। এ কারণে তার নিজস্ব একটি ভোটব্যাংক আগেই ছিল। আবার দল তাকে বহিষ্কার করলেও স্থানীয়ভাবে দলের একটি অংশের সমর্থন তিনি ভেতরে–ভেতরে পেয়ে আসছিলেন। পাশাপাশি কাউন্সিলর পদপ্রার্থীদের বড় একটি অংশ তাকে সমর্থন দিয়ে গেছেন।

ভোটকেন্দ্রে নারী ভোটারদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। ছবি: স্টার

জাহাঙ্গীর ও আজমতের দ্বৈরথ

খাতাপত্রে জায়েদা বিজয়ী হলেও এই ভোট ছিল মূলত জাহাঙ্গীর ও আজমতের দ্বৈরথ। এর শুরুটা হয়েছিল ২০১৩ সালে গাজীপুর সিটির প্রথম নির্বাচন থেকে।

সিটি করপোরেশন হওয়ার পর আজমত এর প্রথম নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমর্থনে প্রার্থী হয়েছিলেন। নির্দলীয় প্রতীকের সেই নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে মেয়র প্রার্থী হয়েছিলেন জাহাঙ্গীরও।

কিন্তু ভোটের আগে নাটকীয়ভাবে 'নিখোঁজ' হওয়ার পর ফিরে এসে জাহাঙ্গীর কাঁদতে কাঁদতে আজমতকে সমর্থনের ঘোষণা দেন। তবে সেই নির্বাচনে লক্ষাধিক ভোটের ব্যবধানে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী আবদুল মান্নানের কাছে হেরে যান আজমত।

পরে ২০১৮ সালের নির্বাচনে আজমতকে হটিয়ে দলের মনোনয়ন ছিনিয়ে নেন সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর। নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করে বিএনপির ধানের শীষের প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারকে হারিয়ে মেয়র হন তিনি।

এদিকে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে একটি ঘরোয়া আলোচনায় জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের নিয়ে 'আপত্তিকর' মন্তব্য করার অভিযোগ ওঠার পর আওয়ামী লীগের একটি অংশের ক্ষোভ-বিক্ষোভের মধ্যে দলীয় সদস্যপদ হারান তিনি। তিনি বরখাস্ত হন মেয়র পদ থেকেও।

এর ১ বছরের বেশি সময় পর ভবিষ্যতে সংগঠনের স্বার্থ পরিপন্থী কার্যক্রম ও সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গ না করার শর্তে গত ১ জানুয়ারি তাকে ক্ষমা করার কথা জানিয়ে চিঠি দেয় আওয়ামী লীগ।

তবে ভোটের সময় এলে আবার ১০ বছর আগের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে। এবারও আওয়ামী লীগ আজমতকে মনোনয়ন দিলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন জাহাঙ্গীর। তবে খেলাপি ঋণের কারণে তার প্রার্থিতা বাতিল হয়ে যায়। এরপর আবার দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।

কিন্তু তার বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্রের অভিযোগ করে আসা জাহাঙ্গীর পরিস্থিতি আঁচ করে মা জায়েদা খাতুনের নামেও মনোনয়নপত্র কিনে রেখেছিলেন। আর নিজে প্রার্থী হতে না পারার পর গৃহিনী মাকে নিয়ে ভোটের লড়াইয়ে নেমে যান। এক্ষেত্রে অনেকটা 'ডামি প্রার্থী' মায়ের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট হিসেবে প্রচার-প্রচারণা মূলত জাহাঙ্গীরই চালান। আর বয়সে প্রবীণ হলেও রাজনীতিতে নতুন জায়েদা খাতুনও বলেন, তার এই লড়াই ছেলের জন্য।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা। ছবি: স্টার

সুষ্ঠু পরিবেশে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারী ভোটারের উপস্থিতি

গতকাল গাজীপুরের ভোট ছিল উৎসবমুখর। এতে সকাল থেকেই কেন্দ্রে কেন্দ্রে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারী ভোটারের উপস্থিতি দেখা যায়। ধারণা করা হচ্ছে, এই নারী ভোটারদের একটি বড় অংশের ভোট পেয়েছেন জায়েদা খাতুন।

এদিন দুপুরে ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের রাহাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে কথা হয় জয়নব খাতুন (৫০) নামের এক নারী ভোটারের সঙ্গে। জানান, নিজে ভোট দিতে পারলেও ইভিএমে তার মেয়ের আঙুলের ছাপ মিলছিল না। তাই সেটা নিয়েই তখন দৌড়ঝাঁপ করছিলেন তিনি।

জয়নব বলেন, 'ভোটের পরিবেশ ভালো। কোনো সমস্যা হয় নাই। নিজে ভোট দিছি। মেয়েরটাও নষ্ট করতে চাই না।'

এর আগে টঙ্গীর রেনেসাঁ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে আরেকটি নারী কেন্দ্রে আফসানা খানম নামের এক ভোটার বলেন, 'অনেকক্ষণ ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। সময় একটু বেশি লাগতেছে। কিন্তু ভোট না দিয়ে যাব না।'

আওয়ামী লীগ বিরোধীদের ভোটও জায়েদার পক্ষে

স্থানীয়দের ভাষ্য, সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনসহ বিগত কয়েকটি নির্বাচনে তারা অনেকে ভোট দেওয়ার সুযোগ পাননি। আবার আওয়ামী লীগের অনেক কর্মকাণ্ডে মানুষ অসন্তুষ্ট থাকলেও তা বলার সুযোগ ছিল না। তাই এই নির্বাচনে ভোটের মাধ্যমে তারা সেই সুযোগটি নিয়েছেন।

এর ব্যাখ্যায় স্থানীয় রাজনৈতিক কর্মীরা বলছেন, এই নির্বাচনে বিএনপি ছিল না। কিন্তু আরেক শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হাতি প্রতীকের স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী সরকার শাহনূর ইসলামের (রনি সরকার) পরিবার বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। তিনি মাত্র ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন। তাই তারা মনে করছেন বিএনপির কর্মী–সমর্থকদের বেশিরভাগ ভোটও জায়েদা খাতুনের পক্ষে গেছে।

ভোটের পরদিন আজ শুক্রবার সকালে নগরের মাধববাড়ি মোড় এলাকায় কথা হয় স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, 'আওয়ামী লীগের অনেকেই দলের কর্মকাণ্ডে খুশি না। নৌকার অনেক সমর্থক উপরে-উপরে আজমত ভাইয়ের পক্ষে ছিলেন। কিন্তু ভোটটা দিছেন জাহাঙ্গীর ভাইরে (জায়েদা খাতুনকে)।'

গতকালের ভোটের দিন দ্য ডেইলি স্টারের সাংবাদিকরা অন্তত ৬০টি কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। এর ৫০টির বেশি কেন্দ্রে ঘড়ি কিংবা হাতি প্রতীকের এজেন্ট ছিল না। ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের এক নেতার ভাষ্য, 'কাউন্সিলর প্রার্থীদের অনেকে গোপনে ঘড়ির জন্য কাজ করেছেন। কেন্দ্রে কেন্দ্রে তাদের এজেন্টরাই সবকিছু নজরে রেখেছেন।'

ভোটের দিন কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান। ছবি: স্টার

শান্তিপূর্ণ পরিবেশে স্বস্তির ভোট

গতকাল এই মহানগরে প্রথমবারের মতো ইভিএম পদ্ধতিতে যে ভোট হয়েছে, তাতে সুষ্ঠু ভোটের ব্যাপারে শুরু থেকে কেবল আশাবাদ ব্যক্ত করে আসছিলেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ প্রার্থী আজমত উল্লা খান।

বিপরীতে প্রচার-প্রচারণার শুরু থেকেই আশঙ্কার কথা বলে আসছিলেন আজমত উল্লার প্রধান ২ বিরোধী স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন ও রনি সরকার। এ নিয়ে আশা-শঙ্কার দোলাচলে ছিলেন সাধারণ ভোটাররাও। তবে সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়ে বিকেল ৪টা পর্যন্ত পুরো ভোটদান পর্ব শেষ হয় শান্তিপূর্ণভাবে। একটি দুটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া তেমন কোনো সহিংসতার খবরও পাওয়া যায়নি।

এদিন দুপুরে জায়েদা খাতুন ও রনি সরকারও ভোটের পরিবেশ নিয়ে নিজেদের সন্তুষ্টির কথা জানান সাংবাদিকদের কাছে।

আর সাম্প্রতিক সময়ে সংসদীয় বিভিন্ন আসনের উপনির্বাচন ও স্থানীয় সরকারের নির্বাচনগুলোতে ভোটার খরা দেখা গেছে তার বিপরীত চিত্র ছিল গতকাল। এদিন সকাল থেকেই প্রায় প্রতিটি কেন্দ্রে ভোটারের দীর্ঘ সারি দেখা যায়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যা বাড়তে থাকে।

বেশিরভাগ কেন্দ্রের বাইরে নৌকার প্রচুর সমর্থক উপস্থিত থাকলেও তারা কাউকে জোর করছেন কিংবা ভয় দেখাচ্ছেন এমন কোনো অভিযোগ প্রায় ছিলই না। সব মিলিয়ে পরিবেশ ছিল উৎসবমুখর। সবাই নির্ভয়েই ভোট দিয়েছেন।

ফলাফল ঘোষণা কেন্দ্রে মা জায়েদা খাতুনের নির্বাচনের ফলাফল জানতে বসে আছেন জাহাঙ্গীর আলম। ছবি: রাশেদ সুমন/স্টার

ফলাফল ঘোষণা কেন্দ্রে কেবল জাহাঙ্গীরই ছিলেন

রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. ফরিদুল ইসলাম গতকাল নগরের বঙ্গতাজ মিলনায়তনে ফলাফল ঘোষণা শুরু করেন সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে। এর কিছুক্ষণের মধ্যে সেখানে উপস্থিত হন জাহাঙ্গীর। থাকেন শেষ পর্যন্ত। এ সময় অন্য কোনো মেয়র প্রার্থী সেখানে ছিলেন না।

এদিকে শুরুতে ফলাফল ঘোষণা কেন্দ্রের সামনে কেবল ঘড়ি প্রতীকের সমর্থকরা জড়ো হন। একেকটি কেন্দ্রের ফল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে এগিয়ে থাকার তথ্যে তাদের হাততালি, উল্লাস ও স্লোগানে কেঁপে উঠতে থাকে কেন্দ্রের বাইরের প্রাঙ্গণ। রাত সোয়া ৯টার পর থেকে সেখানে কিছু নৌকার সমর্থকদের দেখা মেলে। এ সময় পাল্টাপাল্টি স্লোগানে তাদের ভেতর খানিকটা উত্তেজনা ছড়ায়। তবে সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ভোটের হিসাবে টেবিল ঘড়ি এগিয়ে থাকায় আত্মবিশ্বাস ও উচ্ছ্বাস বেশি দেখা যায় ঘড়ির শিবিরে। আর আস্তে আস্তে নৌকার সমর্থকদের ভিড় কমে আসে।

ভোটের হার ৪৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ

গাজীপুর সিটি করপোরেশনে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৬৩ জন। গতকালের নির্বাচনে ভোট পড়েছে ৫ লাখ ৭৫ হাজার ৫০। ভোট পড়ার হার ৪৮ দশমিক ৭৫।

নির্বাচনে অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকের জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন পান ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকের জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ পান ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকের গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম পান ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ পান ২ হাজার ৪২৬ ভোট।

 

Comments