বাংলাদেশের কীর্তির পর আফগানদের চোখ রাঙাচ্ছে বড় হার
নাজমুল হোসেন শান্ত ও মুমিনুল হকের সেঞ্চুরিতে পাহাড়সম লিড নিল বাংলাদেশ। এতে জয়ের জন্য সামনে রেকর্ড লক্ষ্য পেল আফগানিস্তান। সেটা তাড়া করতে নেমে শুরুতেই টাইগার পেসারদের তোপের মুখে পড়ল তারা। ফলে বড় হার চোখ রাঙানি দিচ্ছে তাদের।
শুক্রবার মিরপুর টেস্টের তৃতীয় দিনের খেলা শেষে দ্বিতীয় ইনিংসে আফগানদের সংগ্রহ ২ উইকেটে ৪৫ রান। ৬৬২ রানের বিশাল লক্ষ্য পাওয়া দলটিকে জয়ের জন্য করতে হবে আরও ৬১৭ রান। অন্যদিকে, ম্যাচের ফল নিজেদের দিকে আনতে স্বাগতিকদের চাই ৮ উইকেট। সেজন্য তাদের হাতে সময় আছে আরও দুদিন।
ক্রিজে আছেন রহমত শাহ ৩২ বলে ১০ রানে। নাসির জামাল খেলছেন ১৫ বলে ৫ রান নিয়ে। আগামীকাল শনিবার তারা দুজন শুরু করবেন চতুর্থ দিনের খেলা।
সফরকারীদের ইনিংসের প্রথম বলেই উইকেটের উল্লাস করে বাংলাদেশ। শরিফুল ইসলামের ডেলিভারিতে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে পড়েন ওপেনার ইব্রাহিম জাদরান। রিভিউ নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তাতে পাল্টায়নি সিদ্ধান্ত। ফলে গোল্ডেন ডাকের তিক্ত স্বাদ নিতে হয় জাদরানকে।
পরের ওভারে আক্রমণে এসেই উইকেট উৎসবে যোগ দেন তাসকিন আহমেদ। প্রথম ইনিংসে খরুচে থাকা পেসার বিদায় করেন আরেক ওপেনার আব্দুল মালিক। বল তার ব্যাট ছুঁয়ে জমা পড়ে উইকেটরক্ষক লিটন দাসের গ্লাভসে। ৭ বলে তার রান ৫।
৭ রানে ২ উইকেট হারানো আফগানিস্তান আরও ধাক্কা খায় ষষ্ঠ ওভারে। তাসকিনের বাউন্সার আঘাত করে হাশমতউল্লাহ শহিদির হেলমেটের পিছনের দিকে অংশে। ব্যথায় মুহূর্তেই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন আফগান অধিনায়ক। মাঠে ছুটে আসেন তাদের ফিজিও। স্ট্রেচারও আনা হয় মাঠে। তবে কয়েক মিনিট সেবা-শুশ্রূষার পর হেঁটেই মাঠ ছাড়েন তিনি।
হাশমতউল্লাহ আহত অবসরে যাওয়ার পর রহমতের সঙ্গে জুটি বাঁধেন নাসির। স্বাচ্ছন্দ্যে না খেলতে পারলেও দিনের বাকি ৫ ওভারে আর কোনো বিপদ হতে দেননি তারা। তবে তাদের সামনে রয়েছে কঠিন সমীকরণ। জিততে হলে টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি রান তাড়ার কীর্তি গড়তে হবে তাদের। বর্তমান রেকর্ড ওয়েস্ট ইন্ডিজের দখলে। ২০০৩ সালে অ্যান্টিগায় ৪১৮ রানের লক্ষ্য ছুঁয়ে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েছিল তারা।
এর আগে ৪ উইকেটে ৪২৫ রান তুলে দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করে বাংলাদেশ। চারে নামা মুমিনুলের রান সেসময় ছিল ১৪৫ বলে ১২১। অধিনায়ক লিটন ছিলেন ৮১ বলে ৬৬ রানে। তাদের ওয়ানডে ঘরানার অবিচ্ছিন্ন পঞ্চম উইকেট জুটিতে আসে ১৬০ বলে ১৪৩ রান।
বাংলাদেশ ইনিংস ঘোষণা করায় আফগানরা পায় ৬৬২ রানের বিরাট লক্ষ্য। টেস্ট ক্রিকেটে এটিই কোনো প্রতিপক্ষকে টাইগারদের দেওয়া সর্বোচ্চ রানের লক্ষ্য। এর আগে ২০২১ সালে হারারেতে জিম্বাবুয়েকে ৪৭৭ রানের লক্ষ্য দিয়েছিল তারা।
৬৭ বলে ফিফটি পূরণ করা মুমিনুল তিন অঙ্কে পৌঁছান ১২৩ বলে। ক্যারিয়ারের ৫৭তম টেস্টে এটি তার দ্বাদশ সেঞ্চুরি। সাদা পোশাকের ক্রিকেটে বাংলাদেশের পক্ষে সবচেয়ে বেশি শতরানের রেকর্ড তার দখলে। তামিম ইকবাল ও মুশফিকুর রহিম যৌথভাবে দুইয়ে আছেন দশটি করে সেঞ্চুরি নিয়ে।
দ্বিতীয় দিনের ১ উইকেটে ১৩৪ রান নিয়ে এদিন খেলতে নেমেছিল বাংলাদেশ। প্রথম সেশনে ১ উইকেট খুইয়ে ২৬ ওভারে তারা যোগ করে ১২১ রান। দ্বিতীয় সেশনে ২ উইকেট হারিয়ে তারা তোলে ১২৩ রান। এরপর তৃতীয় সেশনে বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে জমা হয় আরও ৪৭ রান। তবে কোনো উইকেট নিতে পারেনি আফগানরা।
মুমিনুলের আগে সেঞ্চুরির স্বাদ নেন নাজমুল হোসেন শান্ত। তিনে নেমে নান্দনিক ব্যাটিংয়ের পর ক্যাচ দিয়ে ১২৪ রানে থামেন তিনি। ১৫১ বল মোকাবিলায় তিনি মারেন ১৫ চার। এতে ভাঙে মুমিনুলের সঙ্গে তার ১১৩ বলে ৮৩ রানের জুটি।
একমাত্র বাংলাদেশি ব্যাটার হিসেবে এতদিন এক টেস্টের দুই ইনিংসে সেঞ্চুরি ছিল কেবল মুমিনুলের। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওই কীর্তি গড়েন তিনি। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে প্রথম ইনিংসে করেন ১৭৬ রান। দ্বিতীয় ইনিংসে সাবেক টেস্ট অধিনায়কের ব্যাট থেকে আসে ১০৫ রান।
পাঁচ বছর পর মুমিনুলের সঙ্গী হয়েছেন শান্ত। প্রথম ইনিংসে তার ব্যাট থেকে এসেছিল ১৭৫ বলে ১৪৬ রান। ক্যারিয়ারের ২৩তম টেস্টে চতুর্থ সেঞ্চুরির স্বাদ পান ফর্মের তুঙ্গে থাকা শান্ত। তার আগের সেঞ্চুরিগুলো এসেছিল ২০২১ সালে শ্রীলঙ্কা ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে।
দিনের প্রথম ঘণ্টায় দুর্ভাগ্যজনক কায়দায় রানআউটে কাটা পড়েন ওপেনার জাকির হাসান। সেঞ্চুরির সুবাস জাগিয়ে তিনি সাজঘরে ফেরেন ৯৫ বলে ৮ চারে ৭১ রানে। এতে ভাঙে শান্তর সঙ্গে তার ১৯৯ বলে ১৭৩ রানের দ্বিতীয় উইকেট জুটি।
Comments