শরিফুলের আগুন ঝরা বোলিংয়ে ১২৬ রানেই শেষ আফগানরা

ছবি: এএফপি

একাদশে ফিরেই নিজের সামর্থ্যের প্রমাণ রাখলেন শরিফুল ইসলাম। বাঁহাতি পেসারের আগুন ঝরা বোলিংয়ে শুরুতেই এলোমেলো হয়ে গেল আফগানিস্তান। তাসকিন আহমেদ ও তাইজুল ইসলামও জ্বলে ওঠায় প্রতিরোধ গড়ার উপায় খুঁজে পেল না তারা। হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর অভিযানে কোনোমতো একশ ছাড়ানো সফরকারীদের গুঁড়িয়ে দিয়ে লক্ষ্য ছোট রাখল বাংলাদেশ।

মঙ্গলবার চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে ১২৬ রানে অলআউট হয়েছে আফগানরা। টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে টাইগার বোলারদের তোপের মুখে ৪৫.২ ওভারেই থেমে যায় তাদের ইনিংস। সতীর্থদের আসা-যাওয়ার মাঝে আজমতউল্লাহ ওমরজাই কেবল পাল্টা লড়াই চালান। ক্যারিয়ারের প্রথম ওয়ানডে ফিফটিতে ৫৬ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। ৭১ বল মোকাবিলায় তার ব্যাট থেকে আসে ১ চার ও ৩ ছক্কা।

ওয়ানডে ক্যারিয়ারের সেরা বোলিং নৈপুণ্য উপহার দেন শরিফুল। ৯ ওভারে ১ মেডেনসহ ২১ রান খরচায় ৪ উইকেট নেন তিনি। এই সংস্করণে ৩১ ম্যাচে তৃতীয়বারের মতো ৪ উইকেটের দেখা পান তিনি। তার আগের সেরা ছিল ২০২২ সালে প্রভিডেন্সে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৩৪ রানে ৪ উইকেট। শরিফুলের মতোই একাদশে ফেরা তাসকিন ২ উইকেট পান ২৩ রানে। ২ উইকেট নিতে ৩৩ রান খরচ করেন তাইজুল।

প্রথম দুই ম্যাচ জিতে ইতোমধ্যে সিরিজ নিশ্চিত করে ফেলা আফগানিস্তানের ওয়ানডেতে বাংলাদেশের বিপক্ষে এটাই সর্বনিম্ন দলীয় স্কোর। এর আগে ২০১৬ সালে টাইগারদের বিপক্ষে ১৩৮ রানে অলআউট হয়েছিল তারা। ওই ম্যাচের ভেন্যু ছিল মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়াম।

ইনিংসের তৃতীয় ওভারের প্রথম বলেই সাফল্য পায় বাংলাদেশ। শরিফুলের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে জায়গায় দাঁড়িয়ে খোঁচা দিয়ে উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহিমের হাতে ক্যাচ দেন ইব্রাহিম জাদরান। আগের ম্যাচে সেঞ্চুরি তুলে নেওয়া ওপেনার ৬ বলে করেন ১ রান। ফলে মাত্র ৩ রানেই ভাঙে আফগানদের উদ্বোধনী জুটি। গত ওয়ানডেতে রহমানউল্লাহ গুরবাজের সঙ্গে ২৫৬ রান যোগ করেছিলেন ইব্রাহিম।

ওই ওভারের পঞ্চম বলে রহমত শাহকেও তুলে নেন শরিফুল। ৪ বল খেলে কোনো রান না করে ফেরেন তিনি। এর ঠিক আগের বলেই ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন রহমত। অল্পের জন্য সেটার নাগাল পাননি মেহেদী হাসান মিরাজ। কিন্তু শুরু থেকেই অস্বস্তিতে থাকা রহমত কাজে লাগাতে পারেননি সুযোগ।

ষষ্ঠ ওভারে সফরকারীদের সবচেয়ে বিপজ্জনক ব্যাটার গুরবাজকে আউট করেন ডানহাতি পেসার তাসকিন। তার বাউন্সার পুল করতে গিয়েছিলেন আগের ম্যাচে অসাধারণ সেঞ্চুরি হাঁকানো ব্যাটার। কিন্তু ঠিকঠাক সংযোগ না হলে ব্যাটের কানায় লেগে চলে যায় উইকেটরক্ষকের গ্লাভসে। লাফিয়ে দারুণ ক্যাচ গ্লাভসবন্দি করেন মুশফিক। ২২ বলে কেবল ৬ রান করেন গুরবাজ।

নবম ওভারে শরিফুলের তৃতীয় শিকার হন মোহাম্মদ নবি। কৌশল খাটিয়ে তাকে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেন তিনি। রাউন্ড দ্য উইকেটে গিয়ে তার অফ স্টাম্পের বাইরে করা ডেলিভারি ভেতরে ঢুকে আঘাত করে প্যাডে। পরে রিভিউ নিয়েছিলেন নবি। তবে লাভ হয়নি। ৯ বলে ১ রান আসে তার ব্যাট থেকে। ফলে ১৫ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ভীষণ চাপে পড়ে আফগানিস্তান।

এরপর জুটি গড়ার চেষ্টা ছিল আফগানিস্তানের অধিনায়ক হাশমতুল্লাহ শহিদি ও নাজিবউল্লাহ জাদরানের। সুইপের চেষ্টায় ব্যর্থ নাজিবউল্লাহকে এলবিডব্লিউ করে বেশি দূর এগোতে দেননি বাঁহাতি স্পিনার সাকিব আল হাসান। ২২ বলে ১০ রান করে বিদায় নেন তিনি। মাঠ ছাড়ার আগে বাকি রিভিউটিও নষ্ট করে যান নাজিবউল্লাহ। ফলে ১৭ রানেই থামে পঞ্চম উইকেট জুটি।

দলের বিপর্যয়ে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে পারেননি হাশমতুল্লাহ। ওমরজাইয়ের সঙ্গে ২১ রানের জুটির পর বাঁহাতি স্পিনার তাইজুলের শিকার হন আফগান অধিনায়ক। বাজে শটে উইকেট ছুঁড়ে আসেন তিনি। রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে হারান স্টাম্প। ৫৪ বলে ৪ চারে হাশমতুল্লাহর সংগ্রহ ২২ রান।

দ্বিতীয় স্পেলে শরিফুলকে বাংলাদেশ অধিনায়ক লিটন দাস ফেরান ২৭তম ওভারে। তৃতীয় বলেই তার প্রতি রাখা আস্থার প্রমাণ দেন শরিফুল। অভিষিক্ত আব্দুল রহমান বাউন্সার পুল করতে গিয়ে ক্যাচ তোলেন ডিপ মিডউইকেটে। কিছুটা দৌড়ে তা লুফে নেন তাইজুল। রহমান থামেন ২০ বলে ৪ রানে।

৬৮ রানে ৭ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর আফগানরা ১২৬ পর্যন্ত পৌঁছায় ওমরজাইয়ের কল্যাণে। আরেক অভিষিক্ত জিয়া-উর-রেহমানের সঙ্গে ৫৩ বলে ২১ ও মুজিব উর রহমানের সঙ্গে ৫৮ বলে ৩৬ রানের জুটি গড়েন তিনি। ৬৭ বলে হাফসেঞ্চুরি স্পর্শ করেন ওমরজাই। তাকে ফিরিয়ে সফরকারীদের দুর্দশার ইতি টানেন তাসকিন। স্লোয়ার ডেলিভারিতে ছক্কা মারতে চেয়েছিলেন ওমারজাই। কিন্তু ঠিকঠাক টাইমিং না হওয়ায় লং-অফে ক্যাচ নেন মোহাম্মদ নাঈম শেখ।

এর আগে তাইজুলের দ্বিতীয় শিকার হন জিয়া। লাইন মিস বোল্ড হন তিনি। ৩০ বলে তার রান ৫। আর মুজিবকে নিজের ঝুলিতে ঢোকান মিরাজ। স্লিগ করার চেষ্টায় ডিপমিডউইকেটে আফিফের হোসেনের তালুবন্দি হন মুজিব। ৩৪ বলে তার ব্যাট থেকে আসে ১১ রান।

Comments

The Daily Star  | English

Seven killed in Mymensingh road crash

At least seven people were killed and several others injured in a head-on collision between a bus and a human haulier in Mymensingh’s Phulpur upazila last night

1d ago