সিলেট থেকে

নতুন চক্রে ‘ঘরের ফায়দা’ নিয়ে মলিন চিত্র বদলাতে চায় বাংলাদেশ

ছবি: ফিরোজ আহমেদ

টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম চক্র আর দ্বিতীয় চক্র- দুই চক্রের পয়েন্ট তালিকায় প্রত্যেক দলেরই অবস্থানের পরিবর্তন হয়েছে। শুধুমাত্র দুটি দল প্রথম চক্রে যেমন ছিল, দ্বিতীয় চক্রেও তেমন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে আরেকটি দেশের নাম যে বাংলাদেশ, অনুমান করতে কষ্ট হয় না!

আগের দুই চক্রই বাংলাদেশ সবার নিচে থেকে শেষ করেছে। ২০১৯ থেকে ২০২১ পর্যন্ত হওয়া প্রথম চক্রে ৭ ম্যাচে একটিতে ড্র বাদে সবকটিতেই হেরেছিল বাংলাদেশ। ২০২১ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে হওয়া দ্বিতীয় চক্রে বাংলাদেশ খেলেছিল ১২ ম্যাচ। তাতে এসেছিল ১০টি হার। এক ড্রয়ের সাথে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম জয় যদিও সেবার পায় বাংলাদেশ। মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে সেই ঐতিহাসিক জয় ছিল নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। এবার কিউইদের বিপক্ষেই সিরিজ দিয়ে আরেকটি চক্র যখন শুরু করছে বাংলাদেশ, প্রশ্ন চলেই আসে- নতুন চক্রে বাংলাদেশের আদতে কোনো পরিকল্পনা আছে তো? 

আগে ঘর সামলাও, পরে বাহির- এই মন্ত্রই এখন জপছে লাল বলের বাংলাদেশ। ঘরের অবস্থাও যে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নাজুকই হয়ে পড়েছে! সবশেষ দুই টেস্টে জয় মিলেছে অবশ্য, তবে তা টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের বাইরের দুটি দলের বিপক্ষে। নবাগত আফগানিস্তান ও আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে দুই জয়ের আরেকটু পেছনে গেলেই তো ফুটে ওঠে বিবর্ণ চেহারা। এর আগে ঘরের মাটিতে যে ৮ টি টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ, তার মধ্যে একটিতেও জিততে পারেনি। ৭ ম্যাচে হারের বিপরীতে মাত্র এক ড্র করতে পেরেছিল তারা।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, ভারত- দুটি করে টেস্টের সিরিজে হেরেছে সবকটিতেই। অথচ ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার মতো দলকে হারিয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশ ২০১৬-১৭ সালে। স্পিনের শক্তিতে ঘরের মাঠের বাংলাদেশ কিছুটা সমীহ জাগানিয়া হতে শুরু করেছিল তখন। কিন্তু শেষমেশ নিজেদের আঙিনায়ই বাংলাদেশ সর্দারি চালিয়ে যেতে পারেনি। একের পর এক বিদেশি দল এসে জয় নিয়েই ফিরে যাচ্ছে।

নতুন চক্রে বাংলাদেশ দলের চিন্তাভাবনা তাই আগে ঘর সামলানোতেই। নিউজিল্যান্ড সিরিজ শুরুর আগে অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত ও কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের মুখে একই কথাই শোনা গেল। সোমবার প্রথম টেস্টের আগে সংবাদ সম্মেলনে শান্ত বলেন, 'আমাদের হোমের ম্যাচগুলা জিততে হবে। এটা আমাদের প্রথম প্রায়োরিটি। কীভাবে আরও ভালো খেলতে পারি, যে কোনো দলের বিপরীতে, দেশের বাইরে গিয়ে কীভাবে আস্তে আস্তে আরও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারি, এটাই আমাদের লক্ষ্য।'

আগের দিন অর্থাৎ রবিবার হাথুরুসিংহেও এসে শোনান একই লক্ষ্যের কথা, 'সব দলই আমার মনে হয়, ঘরে জিততে গর্ববোধ করবে। আমরাও ব্যতিক্রম নই। তো আমরা আমাদের কন্ডিশনে ম্যাচ জিততে চাই। ঘরের বাইরের কন্ডিশনে লড়াই করার চেষ্টা করতে চাই। এটাই পরিকল্পনা এবং আমরা আমাদের শক্তির জায়গা ও সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে ভালোই জানি। তাই আমরা বড় জিনিসের সম্ভাবনার কথা শোনাতে যাচ্ছি না। কিন্তু আমরা ঘরের মাঠে যতটুকু সম্ভব লড়াই করার চেষ্টা করে যাব। এরপর যখন বাইরে যাব, আমরা প্রস্তুতি নেব। কারণ আমরা দল হিসেবে গড়ে ওঠার পর্যায়ে আছি এখন।'

'তবে রোমাঞ্চকর বিষয় হচ্ছে, এখানে ভালো তরুণ খেলোয়াড়েরা আছেন, কিন্তু চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, এরা যথেষ্ট ক্রিকেট খেলেনি এ পর্যন্ত আসার পথে। তো আমাদের পরিকল্পনা এখনকার চাইতে একটু ভালো হতে হবে সামনের সময়ে। যাতে প্রত্যেক পজিশনের জন্য বেশি সংখ্যাক খেলোয়াড় মজুদ থাকে- বোলিং, ব্যাটিংয়ে। আর বেশি চ্যালেঞ্জও থাকতে হবে, যেমন বাইরে থাকা খেলোয়াড়রা চ্যালেঞ্জ জানাবে দলে থাকা খেলোয়াড়দের। এতে আমাদের দল আরও ভালো হবে।'

শান্ত যে নতুন চক্র নিয়ে পরিকল্পনা কিংবা আশার কথা শোনাবেন, তার অধিনায়কত্বও তো আপাতত অস্থায়ী অবস্থায় দাঁড়িয়ে। মূল অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের ইনজুরিতে না থাকা, সহ-অধিনায়ক লিটন দাসের ব্যক্তিগত কারণে ছুটি নেওয়া, এসব কারণেই শান্তর কাঁধে অধিনায়কত্বের ভার। তবে সেই ভারটা লম্বা সময়ের জন্য পেলেই পরিকল্পনায় সুবিধা হয় মনে করেন শান্ত, 'খেলোয়াড়রা সবাই চায় যে এই চক্রটা কীভাবে আমরা ভালো করতে পারি। অধিনায়কের বিষয় যেটা বললেন, একটা অধিনায়ক যদি লম্বা সময় থাকে, তার জন্য পরিকল্পনা করা সুবিধা হয়। আমি আশা করি, হয়তো বোর্ডও পরিকল্পনা করেছে লম্বা সময়ের জন্য।'

'তবে আমার কাছে মনে হয় না খেলোয়াড়রা এটা নিয়ে খুব বেশি চিন্তা করছে। খেলোয়াড়রা যদি খেলোয়াড়দের দিক থেকে পারফরম্যান্স করে, দল ভালো একটা অবস্থানে যাবে। গুরুত্বপূর্ণ হলো যে অধিনায়ক হবে, সে তার দায়িত্ব পালন করবে। আর প্রত্যেকটা খেলোয়াড় যদি দায়িত্ব পালন করে, দল এমনিতেই ভালো অবস্থানে যাবে।'

Comments

The Daily Star  | English

Stop destroying nature, plant trees instead of cutting: Yunus

Protecting the environment should be a citizen-led movement, he says

57m ago