সাকিবের অভিজ্ঞতায় ব্যাটিংয়ের সংকট দূর হওয়ার আশা

চট্টগ্রাম টেস্টে যোগ দেওয়ার আগে ব্যাটিং অনুশীলন ভালোই হয়েছে বলা যায়। শ্রীলঙ্কা সিরিজ অবশ্য খেলার কথা ছিলো না সাকিবের।  চোখের সমস্যা নিয়ে বিপিএল খেলা শীর্ষ তারকাকে ছুটিও দিয়েছিল বিসিবি। তবে সিদ্ধান্ত বদলে একটি টেস্ট খেলার ইচ্ছা প্রকাশ করতেই তাকে ফেরাতে কোন দ্বিধা করা হয়নি।
Shakib Al Hasan
ফাইল ছবি: একুশ তাপাদার/স্টার

বুধবার বিকেএসপিতে প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচের মধ্যে নামে বৃষ্টি। খেলার অবসরে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ সাকিব আল হাসানকে জিজ্ঞেস করেন, 'কবে যাবি?'। সাকিব জবাব দেন, 'কাল সকালে যাব, মাহমুদউল্লাহ ফের জিজ্ঞেস করেন, 'আজকে গেলে কি হতো?'মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে তখনই খুনসুটিতে মেতে উঠেন সাকিব বলতে, 'আপনাকে নিয়ে যাইতে কইছে পাপন ভাই, চলেন, একসঙ্গে যাব। দেশের প্রয়োজনে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ…।'

মাহমুদউল্লাহর হাত টেনে ড্রেসিংরুমে ঢুকে যান সাকিব।  দুজনের বাকি কথা অবশ্যই ড্রেসিংরুমের অন্দরে। তা জানা না গেলেও সাকিব যে ফুরফুরে মেজাজে আছেন সেই ছবি পরিষ্কার। এদিন দলের জয়ে ম্যাচ সেরাও হয়েছেন সাকিব। ৬৫ বলে করেছেন ৫৩, পরে নিয়েছেন ২ উইকেট।

চট্টগ্রাম টেস্টে যোগ দেওয়ার আগে ব্যাটিং অনুশীলন ভালোই হয়েছে বলা যায়। শ্রীলঙ্কা সিরিজ অবশ্য খেলার কথা ছিলো না সাকিবের।  চোখের সমস্যা নিয়ে বিপিএল খেলা শীর্ষ তারকাকে ছুটিও দিয়েছিল বিসিবি। তবে সিদ্ধান্ত বদলে একটি টেস্ট খেলার ইচ্ছা প্রকাশ করতেই তাকে ফেরাতে কোন দ্বিধা করা হয়নি।

৩৭ পেরুনো সাকিব সর্বশেষ টেস্ট খেলেছিলেন গত বছর এপ্রিল মাসে। তখন তিনি ছিলেন টেস্ট অধিনায়ক। দেশের ক্রিকেটের প্রেক্ষাপটও ছিলো ভিন্ন। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সেই টেস্টের পর প্রথম শ্রেণীতেও কোন ম্যাচ খেলেননি তিনি। টেস্ট না খেললে ঘরোয়া প্রথম শ্রেনীর ক্রিকেটে এমনিতেও কখনো খেলতে দেখা যায় না তাকে।

তবে এই সময়ে টি-টোয়েন্টি আসর বিপিএল আর চলমান লিস্ট-এ আসর ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে খেলতে দেখা গেছে তাকে। বিপিএলে শুরুর দিকে রান না পাওয়া বাঁহাতি ব্যাটার পরে খেলেন মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া একাধিক ইনিংস। তার আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে চোখের সমস্যা খুব একটা টের পাওয়া যায়নি।

চট্টগ্রামে গিয়ে টেস্ট দলে যোগ দেওয়ার আগে শেখ জামাল ধানমন্ডির হয়ে তিনে নেমে ফিফটি করেন। শেখ জামালের হয়ে প্রিমিয়ার লিগের আগের দুই ম্যাচে বোলিং ভালো হলেও ব্যাটিংয়ে রান পাচ্ছিলেন না। করেছিলেন ১৯ ও ৩৪ রান। এদিন রান পাওয়ায় স্বস্তিতে থাকার কথা তার।

সাকিব যখন ফিরছেন, বাংলাদেশ দলের অবস্থা তখন নাজুক। বিশেষ করে সিলেট টেস্টে ব্যাটিংয়ে দলের প্রশ্নবিদ্ধ অ্যাপ্রোচ নিয়ে সমালোচনায় হাওয়া বেশ গরম। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৩২৮ রানের বিশাল হারের পেছনে নাজমুল হোসেন শান্তদের ব্যাটিংকেই দায়ি করা হচ্ছে।

সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল মনে করছেন, লাল বলের ক্রিকেটে লম্বা বিরতি হলেও খেলার মধ্যে থাকায় তার সংযুক্তি দলের ব্যাটিং লাইনআপকে করবে ঋদ্ধ,  'সাকিব একদম খেলার মধ্যে নেই এমন না, যেখানে খেলছে ব্যাটিংয়েও ভালোই করছে। বিপিএল খেলল। এখন ডিপিএল খেলছে। আজ একটা ফিফটি মারল। ওর একটা অভিজ্ঞতা তো যুক্ত হবে। সেদিক থেকে দল লাভবান হবে।'

গত বছর আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ঘরের মাঠে টেস্টে ৮৭ রানের ইনিংস খেলেছিলেন সাকিব। তার আগে টেস্ট খেলেছিলেন ২০২২ সালের ডিসেম্বরে ভারতের বিপক্ষে। সেই সিরিজে সেই সিরিজে চট্টগ্রামে ৩ ও ৮৪ করলেও মিরপুরে করেন ১৬ ও ১৩ রান। বোলিংয়ে শেষ ৬ ইনিংসে তার উইকেট ৮টি। সাকিব টেস্ট খেলেন অনেক দিন পর পর।  টেস্টে একদম অনিয়মিত হয়ে পড়া শীর্ষ তারকার পারফরম্যান্স নিয়ে তবু সংশয় নেই আশরাফুলের,  'সাকিবের জন্য এগুলো ব্যাপার না। ও নেমেই ভালো খেলতে পারবে। সাকিব যুক্ত হওয়া দলের জন্য ইতিবাচক বিষয়।'

৩০ মার্চ চট্টগ্রামে শুরু হবে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কার দ্বিতীয় টেস্ট। সাকিব থাকলে একজন বাড়তি ব্যাটার নিয়ে খেলার সুযোগ পাবে বাংলাদেশ। চোখের সমস্যায় ব্যাটিং নিয়ে সমস্যা তৈরি হলেও বোলিং কোন সংশয় কখনই তৈরি হয়নি।

সিলেটে দুই ইনিংসেই ব্যর্থ হন বাংলাদেশের ব্যাটাররা। ১৮৮ ও ১৮২ রান আসে দুই ইনিংস থেকে। মুমিনুল হক ছাড়া কোন ব্যাটারই নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি। আশরাফুল মনে করেন কোকাবুরা বলের শুরুর মুভেমেন্ট সামলাতে পারেননি বেশিরভাগ ব্যাটার। বল পুরনো হলে খেলা হয় সহজ, সেই সহজ পরিস্থিতি তৈরির জায়গায় যেতে পারেননি তারা। সাকিব দলে যোগ দিলে অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার থেকে অনেক পরিস্থিতি সামাল দিতে পারবেন।

Comments