'আমার ক্যারিয়ার এখনো আমার প্রত্যাশা পূরণ করেনি'

ছবি: ফিরোজ আহমেদ

সাম্প্রতিক সময়ে বেশ চাপে রয়েছেন উইকেটরক্ষক-ব্যাটার লিটন দাস। বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দলে জায়গা পাননি, ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে দল পেতে হয়েছে শেষ মুহূর্তে। তবু ৩০ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার তার ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী। 

দ্য ডেইলি স্টার-এর সামসুল আরেফিন খানের সঙ্গে এক আলাপচারিতায় তিনি তার ক্যারিয়ার, সম্ভাব্য টি-টোয়েন্টি নেতৃত্ব এবং অন্যান্য বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকারের গুরুত্বপূর্ণ অংশ নিচে তুলে ধরা হলো—

দ্য ডেইলি স্টার: আপনি সাধারণত ঢাকা লিগে শীর্ষ দলগুলোর হয়ে খেলেন, তবে এবার তুলনামূলক নতুন এক দলে যোগ দিয়েছেন। কেমন অভিজ্ঞতা হচ্ছে?

লিটন দাস: শিরোপাজয়ী বা রানার্সআপ দলের অংশ হতে পারাটা সবসময়ই দারুণ অনুভূতি। তবে এবার আমার দলে সবাই তরুণ, তবুও আমি তাদের সঙ্গে খেলাটা উপভোগ করছি।

ডেইলি স্টার: দল বদলের সময় শেষ মুহূর্তে দল পাওয়ায় কোনো হতাশা কাজ করেছে কি?

লিটন দাস: হতাশা? তা নয়। মানুষ সবসময় যা চায়, তা পায় না। আমি যেমন ভাবছিলাম, ক্লাবগুলো হয়তো তেমনভাবে ভাবেনি।

ডেইলি স্টার: সাম্প্রতিক বিপিএলের পর থেকে ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিকের বিষয়টি বড় আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আগে থেকেও এটি ছিল, তবে গত কয়েকটি আসরে বিষয়টি আরও বেশি সামনে এসেছে। এর জন্য আপনি কাকে দায়ী মনে করেন?

লিটন দাস: আমি কাউকে এককভাবে দায়ী করব না। সরকার পরিবর্তনের পর পুরো চিত্রটাই বদলে গেছে। সাধারণত বিষয়টি এমন যে, ক্রিকেটাররা খেলবে, এবং তারা সেখান থেকে অর্থ উপার্জন করবে। কিন্তু বর্তমানে পারিশ্রমিক আগের তুলনায় অনেক কমে গেছে। একই অবস্থা পরের বছর হলে, এটা বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য ভালো হবে না।

ডেইলি স্টার: এই পরিস্থিতির জন্য কি ক্রিকেটারদের কোনো দায় নেই?

লিটন দাস: দেখুন, বিপিএল আয়োজন করে বিসিবি। তারাই প্লেয়ার ড্রাফট করে এবং ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক নির্ধারণ করে। শুধুমাত্র ঢাকা লিগেই ক্রিকেটাররা নিজেদের পারিশ্রমিক নিয়ে আলোচনা করতে পারে। কিন্তু আসল ব্যাপার হলো— যারা জাতীয় দলে আছে বা খুব কাছাকাছি আছে, তারা হয়তো টিকে যেতে পারবে। বিসিবি আমাদের মাসিক ভাতা দেয়। কিন্তু বাংলাদেশে প্রচুর ক্রিকেটার আছে, যারা প্রতি বছর ঢাকা লিগের জন্য অপেক্ষা করে।

ঢাকা লিগই একমাত্র টুর্নামেন্ট যেখানে ১২টি দল অংশ নেয়, এবং প্রতি দলে কমপক্ষে ১৫ জন খেলোয়াড় থাকে। খেলোয়াড়দের সংখ্যা অনেক বড়, তাই যখন পারিশ্রমিক কমে যায়, তখন তাদের জন্য এটি কঠিন হয়ে পড়ে। যদি এখানে ভালো পারিশ্রমিক পাওয়া যায়, তাহলে তারা আরও বেশি উৎসাহী হবে এবং ক্রিকেটে আরও বেশি নিবেদন দেখাবে।

ডেইলি স্টার: মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ অবসর নিয়েছেন। আপনি কি এখন দলকে এগিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব অনুভব করছেন?

লিটন দাস: একজন ক্রিকেটার যখন ক্যারিয়ার শুরু করে কিংবা দশ বছর খেলেও, তার ভূমিকা একই রকম থাকে। ক্রিকেট এমন একটি খেলা যেখানে জুনিয়র-সিনিয়রের তেমন গুরুত্ব নেই, বরং নির্ভর করে কে নির্দিষ্ট দিনে কেমন পারফর্ম করছে।

গত কয়েকটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আমাদের দলে মূলত তরুণরাই ছিল, সিনিয়র ক্রিকেটার ছিল খুবই কম। টেস্টে শুধু মুশফিক ভাই খেলছেন এবং তিনি এখনো অবসর নেননি। ওয়ানডেতে মুশফিক ভাই ও রিয়াদ ভাই ছিলেন। আমরা অবশ্যই তাদের অভিজ্ঞতা মিস করব। তবে আমাদের দলের বেশিরভাগ খেলোয়াড়ই দীর্ঘদিন ধরে খেলছে— কেউ সাত থেকে দশ বছর, কেউ দুই থেকে তিন বছর। তাই আমি মনে করি না এটি বড় সমস্যা হবে।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে আমরা কোনো সিনিয়র ক্রিকেটার ছাড়াই খেলেছি। সাম্প্রতিক অনেক সিরিজেও একই অবস্থা ছিল। তারা একদিন না একদিন অবসর নেবেই, এবং আমি তাদের সিদ্ধান্তকে শ্রদ্ধা করি।

ডেইলি স্টার:  বাংলাদেশ সাধারণত আইসিসি ইভেন্টগুলোতে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি ছাড়াই যায়। আপনি কি মনে করেন দল যথেষ্ট প্রস্তুতি নেয়?

লিটন দাস: প্রস্তুতি সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত ব্যাপার। কেউ দুই দিনে প্রস্তুত হয়ে যায়, কেউ হয়তো এক সপ্তাহ নেয়। এটি খেলোয়াড়ভেদে পরিবর্তিত হয়। তবে অবশ্যই ফরম্যাট পরিবর্তনের সময় এক বা দুটি ম্যাচ খেলে মানিয়ে নিতে পারলে ভালো হয়। কিন্তু না খেললেও প্রস্তুতি খারাপ বলা যাবে না। কয়েকটি ম্যাচ খেললেই পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া সহজ হয়ে যায়।

ডেইলি স্টার: আপনি এখন ৩০-এর কোঠায় এবং প্রায় এক দশক ধরে জাতীয় দলে খেলছেন। নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে সন্তুষ্ট?

লিটন দাস: আমার ক্যারিয়ার এখনো সেই জায়গায় পৌঁছায়নি, যেখানে আমি নিজেকে দেখতে চেয়েছিলাম বা দেশের জন্য যা করতে চেয়েছিলাম। আমার এখনো অনেক কিছু করার আছে, অনেক কিছু দেওয়ার আছে এবং অনেক কিছু অর্জনের বাকি রয়েছে।

ডেইলি স্টার: শান্ত অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেওয়ার পর টি-টোয়েন্টি দলের অধিনায়ক হিসেবে আপনার নাম শোনা যাচ্ছে। আপনি কি আগ্রহী?

লিটন দাস: আমি অধিনায়কত্ব উপভোগ করি। আমি সবসময় আমার অভিজ্ঞতা দিয়ে সতীর্থদের সাহায্য করার চেষ্টা করি। এটা শুধু তখনই করি না যখন অধিনায়ক থাকি, বরং যখনই খেলি, তখনই নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করি।

যদি বিসিবি মনে করে আমি যোগ্য, তাহলে আমি এই দায়িত্ব নিতে দ্বিধা করব না।

ডেইলি স্টার: আপনি পিএসএলের জন্য করাচি কিংসের দলে আছেন। এনওসি (অনাপত্তি পত্র) চেয়েছেন?

লিটন দাস: আমি এখনো এনওসির জন্য আবেদন করিনি। তবে আশা করি এক-দুই দিনের মধ্যেই করব।

ডেইলি স্টার: আপনি কি মনে করেন যে বিসিবি বিদেশি লিগে খেলার অনুমতিপত্র (এনওসি) দিতে আরও উদার হওয়া উচিত?

লিটন দাস: অবশ্যই ভালো হবে। তবে এটি সম্পূর্ণ নির্ভর করে পরিস্থিতির ওপর… নির্দিষ্ট কোনো সিরিজের জন্য একজন খেলোয়াড়ের গুরুত্বের ওপর। আমি মনে করি বোর্ডই এটি ভালো বুঝবে এবং চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।

Comments

The Daily Star  | English

No agreement on ‘humanitarian corridor’ for Rakhine: national security adviser

Khalilur clarified that UN secretary-general did not use the term "corridor", which he said carries specific implications

2h ago