২৪ ঘণ্টার মধ্যে দুই মহাদেশে খেলে অসম্ভবকে সম্ভব করলেন রাজা

সিকান্দার রাজা যখন লাহোর বিমানবন্দরে পৌঁছান, টস হতে বাকি আর মিনিট দশেক। পৌঁছে যাওয়ার খবর পেয়েই একাদশে তাকে রেখেই টস করতে যান শাহীন শাহ আফ্রিদি। বিমানবন্দর থেকে ছুটে এসেই মাঠে নেমে যান জিম্বাবুয়ের অলরাউন্ডার। ৪ ওভার বল করলেন, তবে ব্যাটিংয়ে করলেন বাজিমাত। শেষ ওভারের ঝড়ে লাহোর কালান্দার্সকে পিএসএলে চ্যাম্পিয়ন করে তিনি এখন নায়ক।
জিম্বাবুয়ের হয়ে একমাত্র টেস্ট খেলতে রাজা ছিলেন ইংল্যান্ডে। নটিংহ্যামে ২২ মে থেকে শুরু হওয়া টেস্ট চারদিনের টেস্ট শেষ হয়ে যায় তিন দিনে। একদিন আগে খেলা শেষ হয়ে যাওয়াতেই রাজাকে পিএসএল ফাইনালে নিয়ে আসার পরিকল্পনা করে লাহোর। নাটকীয় যাত্রায় সেটা কাজেও লেগে যায়।
শনিবার রাজা ছিলেন নটিংহ্যামে, লাহোরের ডাকে সেটা দিয়ে ওইদিন বার্মিংহ্যাম গিয়ে ধরেন দুবাইর ফ্লাইট। অর্থাৎ শনিবার তিনি ডিনার সেরেছেন বার্মিংহ্যামে। রোববার সকালে ব্রেকফাস্ট করেছেন দুবাইতে। গাড়ি করে আবুধাবি গিয়ে লাঞ্চ সেরে ধরেছেন লাহোরের ফ্লাইট। সেই ফ্লাইট থেকে নেমে অনেকটা হন্তদন্ত হয়ে খেলতে নেমে করে ফেলেছেন বাজিমাত।
রাজার ফ্লাইট একটু বিলম্ব হলেও লাহোরের পরিকল্পনা ভেস্তে যেত, রাজার লম্বা ভ্রমণও যেত বৃথা। সেই শঙ্কা থাকায় দলটি দুইটি একাদশের তালিকা তৈরি করে রাখে। একটিতে ছিলেন রাজা, আরেকটিতে সাকিব আল হাসান।
আগে ব্যাট করে কোয়েটা গ্লাডিয়েটর্স করে ২০১ রান। ওই রান তাড়ায় লাহোরের জয়ের মূল নায়ক শ্রীলঙ্কান কুশল পেরেরা। বাঁহাতি ব্যাটার খেলেন ৩১ বলে ৬২ রানের ইনিংস।
ম্যাচ জিততে শেষ ২ ওভারে লাহোরের দরকার ছিলো ৩১ রানের। ১৯তম ওভারে পেরেরা মোহাম্মদ আমিরকে উড়ান ছক্কা-চারে। সব মিলিয়ে ওই ওভারে আসে ১৬ রান। শেষ ওভারে চাই ১৩। প্রথম ৩ বল থেকে আসে ৫ রান। পরের দুই বলে ছক্কা ও চার মেরে খেলা শেষ করে দেন রাজা। ৭ বলে ২২ রানের ইনিংসে সব আলো কেড়ে নেন নিজের দিকে। তৃতীয়বারের মতন চ্যাম্পিয়ন হয়ে যায় লাহোর।
শনিবার ইংল্যান্ডের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টে ফলোঅনে পড়া দলকে টানছিলেন রাজা। ৬৮ বলে খেলেছিলেন ৬০ রানের ইনিংস। শেষ পর্যন্ত ইনিংস হার এড়াতে পারেননি। ম্যাচটা চতুর্থ দিনে গেলে পিএসএল ফাইনাল খেলা সম্ভব হতো না রাজার। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে টেস্ট, টি-টোয়েন্টি দুই সংস্করণ, দুই মহাদেশে খেলে অসম্ভব এক নজির গড়লেন তিনি।
ম্যাচ শেষে নিজেই জানান নিজের অভিজ্ঞতার কথা, 'গতকাল(শনিবার) আমি প্রায় ২৫ ওভার ব্যাট করেছি। আমি বার্মিংহামে রাতের খাবার খেয়েছি, দুবাইতে সকালের নাস্তা, আবু ধাবিতে দুপুরের খাবার, এবং অবশেষে লাহোরে পৌঁছেছি। আমি জানতাম আমার দলের আমাকে কতটা প্রয়োজন। জিতে ভালো লাগছে। আমি মানসিকভাবে এবং শারীরিকভাবে সম্পূর্ণ অবসাদগ্রস্ত ছিলাম। আমি নিজেকে বলেছিলাম যে যে বলই আসুক না কেন, আমি আমার সেরা শট খেলব।'
Comments