বাংলাদেশের ক্রিকেট সংস্কৃতিতে যখন ‘আমরা’ থেকে ‘আমি’ বড়

towhid hridoy

ম্যাচের তখনো বাকি প্রায় ১৪ ওভার। টিভি পর্দায় দেখাচ্ছে এক শ্রীলঙ্কান দর্শক ঝিমুচ্ছেন, ধারাভাষ্যকাররা কথা বলছেন মাঠে আসা অদ্ভুত সুন্দর এক পাখি নিয়ে। আসলে খেলা নিয়ে আলাপের তখন কিছু নেই। সবাই জানে কোন দল হারছে, কোন দল জিততে চলেছে। অবশ্যম্ভাবী বাস্তবতা নিয়ে মানুষের উত্তেজনা, আগ্রহ থাকে না।

পাল্লেকেলেতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজ নির্ধারণী তৃতীয় ওয়ানডেতে বাংলাদেশকে খুঁজেই পাওয়া যায়নি। বিশেষ করে ২৮৬ রান তাড়ায় নামা দলটিকে একবার ম্যাচে আছে এমনটা মনে হয়নি। ৯৯ রানের বড় হার হয়ত ফলের কথা বলবে। তবে খেলা দেখে থাকলে এই বাজে ফলের চেয়েও আরেকটি সাংঘাতিক খারাপ দিক নজর কাড়তে বাধ্য।

ক্রিকেটে দলের চাহিদা অনুযায়ী খেলতে গিয়ে ব্যর্থ হওয়া এক জিনিস, আর দলের চাহিদার বিপরীতে আমিত্ব থেকে খেলা আরেক। 'স্বার্থপর' শব্দটা বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের কাছে খুব তেতো শোনায়, হয়ত ক্রিকেট কর্তারাও মনঃক্ষুণ্ণ হন। ভদ্রস্থভাবে তাদের 'আমিত্বে' মশগুলই বলা যাক।

উদাহরণ হিসেবে তাওহিদ হৃদয়ের ইনিংসটার কথা উল্লেখ করার মতন। ২০ রানে ২ উইকেট পড়ার পর তিনি চতুর্থ ওভারে চারে নেমেছিলেন, আউট হন ৩৩তম ওভার। মাঝের ওভারে লম্বা সময় ক্রিজে থেকে করেন ৭৮ বলে ৫১ রান, স্ট্রাইকরেট ৬৫.৩৮।

কেউ কেউ বলতে পারেন এক পাশে উইকেট পড়ছিল বলেই হয়ত তিনি নিজেকে গুটিয়ে রেখেছিলেন। কিন্তু এটা তো টেস্ট ম্যাচ নয় যে গুটিয়ে রেখে ম্যাচ জিততে পারবেন। পাল্টা যুক্তিতে বলা যায় তিনি নিজেকে এতটা গুটিয়ে রেখেছেন বলেই আরেক পাশের রানের চাপে উইকেট পড়েছে।

বাংলাদেশের যে খুব বড় ব্যাটিং ধস হয়েছে এমন না। ২০ রানে দুই উইকেট পড়ার পর তৃতীয় উইকেটে ৫৮ বলে আসে ৪২ রান, সেখানে ২১ বলে ১২ করেন হৃদয়। মেহেদী হাসান মিরাজের সঙ্গে এরপর ৪৩ রানের জুটিতে ২০ বলে ১৪ রান করেন হৃদয়। শামীম হোসেনের সঙ্গে ১৯ রানের জুটিতে ১৯ বল খেলে কেবল ৭ রান করেন হৃদয়।

ততক্ষণে কিন্তু বাংলাদেশের ওভারপ্রতি রান তোলার চাহিদা বেড়ে প্রায় আটের কাছাকাছি। প্রতি ওভারে যখন কমপক্ষে একটা বাউন্ডারি দরকার তখনও সতর্ক পথে এগুতে দেখা যাচ্ছিলো হৃদয়কে, ৭৫ বলে নিরাপদে স্পর্শ করেন ফিফটি। আউট হয়েছেন দুশমন্ত চামিরার ভেতরে ঢোকা বলে বোল্ড হয়ে।  তার ইনিংসটি দলের কোন কাজে লেগেছে বোলা দুষ্কর। এর আগে পারভেজের ৪৪ বলে ২৮, পরে জাকেরের ৩৫ বলে ২৭ রানের ইনিংসগুলো ছিলো চাহিদার বিপরীতধর্মী।

আচমকা বাংলাদেশের ব্যাটাররা এমন খেলে ফেলছেন ব্যাপারটা না নয়। আমিত্বে ভরা ক্রিকেট সংস্কৃতির এই ধারা বহুদিন ধরেই চলমান। তামিম ইকবাল, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মুশফিকুর রহিমদের বেলাতেও এমন বদনাম আছে। বিশেষ করে টি-টোয়েন্টিতে তামিম ওপেনার হিসেবে ৭৮ ম্যাচ খেলেছেন স্রেফ ১১৬ স্ট্রাইকরেটে। এত কম স্ট্রাইকরেটে টি-টোয়েন্টিতে এত বেশি ম্যাচ খেলার নজির নেই দুনিয়ার আর কোন ওপেনারের।

একটা সময় দেশের ক্রিকেটে ব্যক্তিগত অর্জনকে ফাঁপানো হতো বেশি, কারণ দলীয় সাফল্য আসত কম। পরে কখনো কখনো দেখা গেল দলীয় স্বার্থের উপরে উঠে যাচ্ছে ব্যক্তিগত লক্ষ্য বা মাইলফলক।

এই শ্রীলঙ্কা সফরেই গল টেস্টে নাজমুল হোসেন শান্ত জোড়া সেঞ্চুরি করতে গিয়ে বাড়তি ১১ ওভার ব্যাট করেছেন। তাতে শক্ত অবস্থানে থেকেও জেতার জন্য প্রতিপক্ষকে  পুশ করতে পারেনি বাংলাদেশ। ড্র নিশ্চিতের পরিস্থিতিতে সেঞ্চুরি করে ক্ষ্যাপাটে উদযাপন করেছিলেন শান্ত।

সংস্কৃতি মূলত দাঁড়ায় একটা ধারাবাহিক প্রক্রিয়ায়। অগ্রজরা যা দেখিয়ে যান অনুজরা সেই পথেই হাঁটেন। সেই সংস্কৃতি দলের স্বার্থের বিরোধী হলে তা বিপদজনক। বাংলাদেশ কি সেই বিপদজনক পথে হাঁটছে?

 

Comments

The Daily Star  | English

Bangladesh Police: Designed to inflict high casualties

A closer look at police’s arms procurement records reveals the brutal truth behind the July killings; the force bought 7 times more lethal weapons than non-lethal ones in 2021-23

5h ago