সালাউদ্দিনের আপত্তিকর মন্তব্যে সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠনের নিন্দা

ছবি: বাফুফে

সাংবাদিকদের নিয়ে কাজী সালাউদ্দিনের আপত্তিকর মন্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে দেশের সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) অবিলম্বে তাকে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সভাপতির দায়িত্ব থেকে পদত্যাগের দাবি করেছে। বাংলাদেশ ক্রীড়া লেখক সমিতি (বিএসপিএ) তাকে সম্মানসূচক সদস্যপদ থেকে বহিষ্কার করেছে।

গতকাল মঙ্গলবার বাফুফে কার্যালয়ে ছিল ফুটবল ফেডারেশনের কার্যনির্বাহী কমিটির সভা। প্রায় চার ঘণ্টা সভার পর সভাকক্ষে ঢোকার অনুমতি পান দেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের সাংবাদিকরা। সেখানে ছিলেন সালাউদ্দিনসহ বাফুফের প্রায় সব শীর্ষ কর্তা। তাদের বক্তব্য ধরে রাখার জন্য রেকর্ডার অন করে রেখেছিলেন সাংবাদিকরা। আনুষ্ঠানিকভাবে সংবাদ সম্মেলন শুরুর আগে সাংবাদিকদের বাবা-মাকে নিয়ে সালাউদ্দিনকে কটাক্ষ করতে শোনা যায় সেই রেকর্ডে।

সহকর্মীদের কাছে বাফুফে সভাপতি বলেন, 'জার্নালিস্টরা (সাংবাদিকরা) এখানে ঢুকতে গেলে ফটো (ছবি) দিতে হবে তাদের বাপ-মার। আরেকটা কন্ডিশন (শর্ত) হলো, তার বাপের ফটো পাঠাতে হবে জুতা পরা। ঠিক আছে (হাসি)? এটা হতে হবে মেন্ডেটরি (আবশ্যক)। বাপের জুতা পরা ছবি থাকতে হবে।'

এমন মন্তব্যের প্রেক্ষিতে বুধবার সালাউদ্দিনকে পদত্যাগের দাবি জানিয়ে বুধবার ডিআরইউর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, 'বাফুফে সভাপতির মতো শীর্ষ পদে থেকে এ ধরনের বক্তব্য কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। শুধু সাংবাদিক সমাজ নয়, তাদের পরিবারকে জড়িয়ে এই বক্তব্য দেওয়ার পর বাফুফে সভাপতির মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে মানুষ আজ সন্দিহান হয়ে পড়েছে। আমাদের সমাজে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ রয়েছে, সকল পেশার মানুষের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা আমাদের সামাজিক দায়িত্ব। সালাউদ্দিন যে কুরুচিপূর্ণ ভাষায় কথা বলেছেন, সে ভাষায় সাংবাদিকরা কথা বলতে মোটেও অভ্যস্ত নন। আমরা অবিলম্বে সালাউদ্দিনকে জাতির সামনে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান করছি।'

সেখানে আরও বলা হয়েছে, 'সালাউদ্দীনের দায়িত্ব পালনকালে দেশের জনপ্রিয় এই খেলার মান প্রতিনিয়ত নিম্নগামী। র‍্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান প্রায় সবার নিচের দিকে। বাফুফে অনিয়ম-দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে বলেও বিভিন্ন সূত্রের খবর, যার সাম্প্রতিক প্রমাণ ফিফার নিষেধাজ্ঞা। বিভিন্ন সময়ে এসব খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ায় তিনি সাংবাদিকদের ওপর ক্ষিপ্ত। যার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে তার সবশেষ মন্তব্যে। দেশে ও দেশের বাইরে ফুটবলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার পর বাফুফের সভাপতি পদে থাকার নৈতিক অধিকার তিনি হারিয়েছেন বলে মনে করে ডিআরইউ।'

সালাউদ্দিনকে সম্মানসূচক সদস্যপদ থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত জানিয়ে বিএসপিএর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, 'পরীক্ষিত ক্রীড়া সংগঠক, কিংবদন্তি খেলোয়াড় ও গণমাধ্যম–সংশ্লিষ্ট ক্রীড়া সংগঠকদের সম্মানসূচক সদস্যপদ দেওয়ার রেওয়াজ আছে এ সংগঠনের। এ ধারায় বিএসপিএ বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সাবেক প্রধান ও বর্তমানে মাননীয় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালসহ অনেক ক্রীড়া ব্যক্তিত্বকে সম্মানিত করেছে সম্মানসূচক সদস্যপদ দিয়ে। একইভাবে কাজী সালাউদ্দিনকে সম্মানসূচক সদস্যপদ দেওয়া হয়েছিল। তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে তার আচরণ, বক্তব্য সব কিছুই এই ঐতিহ্যবাহী ক্রীড়া সাংবাদিক সংগঠনের মতাদর্শের পরিপন্থী। তার কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য ক্রীড়া সাংবাদিকদের আত্মসম্মানে আঘাত হেনেছে।'

সাংবাদিকদের নিয়ে বাফুফে সহ-সভাপতি কাজী নাবিল আহমেদের মন্তব্যেরও নিন্দা জানিয়েছে বিএসপিএ, 'সাংবাদিকদের ওপর তাদের কতটা বিদ্বেষ, সেটা প্রকাশ পেয়েছে তাদের কথাবার্তায়। তারা শুধু সাংবাদিকদের নয়, তাদের পরিবার এমনকি সাংবাদিকদের মা-বাবাকে পর্যন্ত কটাক্ষ করতে ছাড়েননি। এটা পুরো সাংবাদিক সমাজকে ভীষণভাবে আহত করেছে।'

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, 'দেশের সাংবাদিক ও তাদের পরিবার নিয়ে কুৎসিত মন্তব্য করে কাজী সালাউদ্দিন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) মতো সংস্থার সভাপতি পদে থাকার নৈতিক অধিকার হারিয়েছেন।'

Comments

The Daily Star  | English

Gaza civil defence says Israeli forces kill 23

Among the casualties were three children who were killed in an air strike on a home in Jabalia, northern Gaza

58m ago