সাঁতারে 'এক হাতে' লড়ে নাদিমুল পেলেন ৪ পদক

সাঁতার প্রতিযোগিতায় যখন পদকের লড়াই চলে মাইক্রোসেকেন্ডের ব্যবধানে, যখন অন্যরা দুই হাতে নির্ভুল টাচ করে ফিনিশিং লাইন স্পর্শ করেন, তখন নাদিমুল হকের জন্য সেই কাজটা একটু কঠিন। কারণ, জন্মগতভাবে তার বাঁ হাতের চারটি আঙুলই নেই।

ব্রেস্ট স্ট্রোক ও বাটারফ্লাই ইভেন্টে নিয়ম অনুযায়ী দুই হাতে টাচ প্যাডে স্পর্শ করা বাধ্যতামূলক হলেও নাদিমুল সেখানেই খানিকটা প্রতিবন্ধকতায় পড়েন। কিন্তু সেটিকে কখনও বাধা হিসেবে দেখেননি। বরং মিরপুরের ৩৭তম জাতীয় বয়সভিত্তিক সাঁতার প্রতিযোগিতায় শিলাইদহ সুইমিং ক্লাবের হয়ে অংশ নিয়ে ইতোমধ্যে ৪টি ইভেন্টেই পদক জিতে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন এই কিশোরগঞ্জের নিকলীর তরুণ।

দুই দিনে নাদিমুলের ঝুলিতে এসেছে ৩টি রুপা ও ১টি ব্রোঞ্জ পদক। বুধবার ১০০ মিটার ব্রেস্ট স্ট্রোক ও ২০০ মিটার ফ্রি স্টাইলে জিতেছেন রুপা। বৃহস্পতিবারও তার ধারাবাহিকতা বজায় থাকে—২০০ মিটার ব্রেস্ট স্ট্রোকে জিতেছেন রুপা এবং ১৫০০ মিটার ফ্রি স্টাইলে পেয়েছেন ব্রোঞ্জ।

সোনা জয়ের সম্ভাবনাও ছিল। কিন্তু উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য সেভাবে অনুশীলন করতে পারেননি নাদিমুল, 'আমি আসলে উচ্চ মাধ্যমিকের টেস্ট পরীক্ষার জন্য সেভাবে অনুশীলন করতে পারিনি। সোনার সম্ভাবনা জাগিয়েও মাইক্রো সেকেন্ডের জন্য হয়নি। তা না হলে সব কটি ইভেন্টে সোনা জিততে পারতাম।'

২০১৬ সাল থেকে সাঁতার শুরু করলেও ২০২১ সাল থেকে নিয়মিত পদক জিতছেন তিনি। গত তিন বছরে সোনার পদকও এসেছে তার সংগ্রহে। জন্ম থেকেই বাঁ হাতে আঙুল না থাকায় পরিবারে শুরুতে কষ্টের ছায়া ছিল। তবে এখন গর্বেই বুক ফুলিয়ে বলেন নাদিমুলের বাবা-মা। কারণ, খেলাধুলার মধ্য দিয়েই তাদের কষ্ট ভুলিয়ে দিয়েছেন নাদিমুল।

গর্বের সুরেই নাদিমুল বলেন, 'আমার জন্ম থেকে হাতে সমস্যা। এই অবস্থা নিয়েই বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ সব সাঁতারু বিকেএসপি, আনসারের সাঁতারুদের সঙ্গে লড়াই করছি। এই হাত নিয়ে আমি আরও সামনে এগিয়ে যেতে চাই। হাত ভালো থাকলে আরও ভালো ফল করতাম।'

শৈশবে দুরন্তপনা ছিল তার সঙ্গী—ফুটবল, ক্রিকেট, গাছে উঠে ফল পাড়া, সবই করতেন অবলীলায়। কিন্তু কেন সাঁতার? জবাবে বলেন, 'আমার চাচা আবুল হাশেম সাঁতার সংগঠক, তার ছেলে এনামুল হক সাঁতারু। উনি ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিবেন। অন্য ভাইয়েরাও সাঁতারু। আমি আসলে সাঁতারুর ঘরের সন্তান। তাছাড়া নিকলি হাওড় অঞ্চল। পানিতেই আমাদের শৈশব কাটে। সাঁতারকে তাই বেছে নিয়েছি।'

নাদিমুল এখনও পর্যন্ত কোনো আন্তর্জাতিক প্যারা অলিম্পিক বা প্যারা গেমসে অংশ নিতে পারেননি। সর্বশেষ প্যারা এশিয়ান গেমসে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড না পাওয়ায় যেতে পারেননি। ভবিষ্যতে সুযোগ পেলে দেশের হয়ে পদক জিততে চান তিনি, 'যদি অলিম্পিকে সাঁতারে অংশ নেওয়ার সুযোগ পাই তাহলে আশা করি আমি বাংলাদেশের হয়ে পদক জিততে পারব। সেই আত্মবিশ্বাস আমার মধ্যে আছে।'

Comments