'ধাপে ধাপে অলিম্পিকের পথে': আলিফের দৃঢ় পদচারণা

এশিয়া কাপ আর্চারিতে স্বর্ণপদক জিতে আলোচনায় এসেছেন তরুণ আর্চার আবদুর রহমান আলিফ। যেখানে অভিজ্ঞ দুই আর্চার রোমান সানা ও আবদুর হাকিম রুবেল যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছেন। তবে ২০২১ সালে জাতীয় রিকার্ভ শিরোপা জিতে যখন প্রথম শিরোনামে এসেছিলেন তখন তিনি নবম শ্রেণির ছাত্র। তবে সম্ভাবনা থাকলেও অনেক বছর ধরে খুঁড়িয়ে চলছিল তার পারফরম্যান্স। অবশেষে গত বছরের এশিয়ান ইয়ুথ আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপে রুপা জিতে নিজের ছন্দ ফিরে পান।
সম্প্রতি দ্য ডেইলি স্টারের আনিসুর রহমানের সঙ্গে আলাপচারিতায় নিজের সাফল্য, ব্যর্থতা, অন্যদের দেশত্যাগ এবং অলিম্পিক স্বপ্নের কথা তুলে ধরেন আলিফ। নিচে সাক্ষাৎকারের সংক্ষিপ্তাংশ তুলে ধরা হলো –
দ্য ডেইলি স্টার: এশিয়া কাপে প্রথমবারের মতো ফাইনালে খেলেই প্রথম স্বর্ণপদক। কেমন লাগছে?
আলিফ: খুবই ভালো লাগছে। আমি ভাবতেই পারিনি ফাইনাল পর্যন্ত উঠব, আর স্বর্ণ তো দূরের কথা। তবে অনুশীলনে ভালো স্কোর করছিলাম বলে আত্মবিশ্বাস ছিল ভালো কিছু করার।
দ্য ডেইলি স্টার: রোমান সানার ফাইনালে বারবার হারের পর আপনার জয়। আপনি কি মানসিকভাবে ওনার চেয়ে দৃঢ়?
আলিফ: আর্চারি পুরোপুরি আত্মবিশ্বাস আর শটের খেলা। মনোযোগ যদি একশ ভাগ নাও থাকে, আত্মবিশ্বাস নিয়ে ভালো শট দিলে ফল আসে। আমার মধ্যে ওটাই আছে। আমি আমার সর্বোচ্চটা দেওয়ার চেষ্টা করেছি।
দ্য ডেইলি স্টার: ফাইনালের মাঝপথে প্রতিপক্ষ খেলার মোড় ঘুরিয়ে দিচ্ছিল। পঞ্চম ও শেষ সেটে কী ভাবছিলেন?
আলিফ: আমি আত্মবিশ্বাস হারাইনি। মনে হচ্ছিল আল্লাহ আমার ধৈর্য পরীক্ষা নিচ্ছেন। আমি কুরআনের একটি সূরা পাঠ করছিলাম, মাথা ঠান্ডা রেখেছি, শুধু শটে মন দিয়েছি।
দ্য ডেইলি স্টার: রোমান ও রুবেলের যুক্তরাষ্ট্রে চলে যাওয়ায় কি আপনার দলে সুযোগ পাওয়া সহজ হয়েছে?
আলিফ: আমার পারফরম্যান্স তখনও খারাপ ছিল না, শুধু অন্যদের গড় স্কোর বেশি ছিল। এখন আমার স্কোর উন্নতি করেছে। যখন গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়রা চলে যায়, তখন দলকে গুছিয়ে নিতে সময় লাগে। তবে এখন আমাদের মতো জুনিয়র—সাগর (ইসলাম), রাকিব (মিয়া), মিশাদ (প্রধান) আর আমি—আছি, আমরা শিগগিরই ফল আনব।
দ্য ডেইলি স্টার: নিজের সবচেয়ে বড় শক্তি কী মনে করেন?
আলিফ: আমার আত্মবিশ্বাস। আমি সহজে হার মানি না। যারা আমাকে চেনে, জানে আমি শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত লড়াই করি।
দ্য ডেইলি স্টার: ইলিমিনেশন রাউন্ডে আপনি একাধিকবার পারফেক্ট ৩০ শট করেছেন। নিজের গড় স্কোর কেমন মনে করেন?
আলিফ: প্রতিটি ম্যাচ ও প্রতিযোগিতার উপর গড় ভিন্ন হয়। আমি এই ফর্মেই সোনা জিতেছি, কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরও উন্নতি করবো ইনশাআল্লাহ।
দ্য ডেইলি স্টার: অনেকেই আশাবাদী যে আপনি ও সাগর ২০২৮ অলিম্পিকে পদক জিততে পারবেন। আপনি কতোটা আত্মবিশ্বাসী?
আলিফ: এটা বিশাল প্রত্যাশা। এমনকি বর্তমান বিশ্বসেরা কিম উ-জিন (দ. কোরিয়া)–ও ২০২৪ অলিম্পিকে গিয়ে তৃতীয় চেষ্টায় সোনা জিতেছে। আমি এখনো কেবল এশিয়া কাপে সোনা জিতেছি। সামনে আছে এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ, ওয়ার্ল্ড কাপ, ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ, তারপর অলিম্পিক। আমি ধাপে ধাপে এগিয়ে যাব।
দ্য ডেইলি স্টার: রোমান, রুবেল, দিয়া, আশিমরা যুক্তরাষ্ট্রে চলে যাওয়ায় আপনি কি হতাশ না অনুপ্রাণিত?
আলিফ: ওটা তাদের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। তারা যা ভালো মনে করেছে, করেছে। কিন্তু আমি চাই এই খেলাতেই ক্যারিয়ার গড়তে, আর্চার হিসেবে পরিচিত হতে, এবং বাংলাদেশের হয়ে জয় আনতে।
দ্য ডেইলি স্টার: আর্চারিতে যাত্রাটা কীভাবে শুরু হয়েছিল?
আলিফ: আমি ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলা পছন্দ করতাম, বিশেষ করে ফুটবল। যদিও পরিবার শুরুতে খুব একটা সাপোর্ট করত না। পরে আমার মা বাবাকে রাজি করান। বাবা কলেজের অধ্যাপক। এরপর আমি বিকেএসপির ট্রায়ালে অংশ নিতে পারি। তখন ফুটবলে নির্বাচিত হই, তবে বাবার এক বন্ধুর পরামর্শে আর্চারির ট্রায়ালেও অংশ নিই। সেখানেও নির্বাচিত হই। ২০১৮ সালে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময় বিকেএসপিতে ভর্তি হই। সেই থেকে আর্চারিই আমার পথ। যতদিন দেশকে প্রতিনিধিত্ব করতে পারবো, ততদিন এই পথেই থাকবো।
Comments