বিশ্বকাপের আগে বাংলাদেশের যে হিসাব তালগোল পাকানো

Bangladesh Cricket Team
বিশ্বকাপের নতুন জার্সি পরে বাংলাদেশ দল। নতুন কিছু আসবে কি?

বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজের শেষ ম্যাচে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্রামে রাখে তাদের অধিনায়কসহ আগের দুই ম্যাচের সেরা পারফর্মারদের। বিশ্বকাপ সামনে রেখে অনেকটা পরীক্ষা নিরীক্ষায় নামে তারা। অথচ হওয়ার কথা ছিলো উল্টো। সেরাদের বিশ্রামে রেখে নীরিক্ষা চালানোর কথা ছিলো বাংলাদেশেরই। তা বাদ দিয়ে নাজমুল হোসেন শান্তদের হোয়াইটওয়াশের বিব্রতকর পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে খেলতে হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে এই সিরিজ থেকে আসলে কি পেল বাংলাদেশ?

প্রস্তুতির প্রসঙ্গে বলা যেতে পারে, কন্ডিশনের সঙ্গে তো খাপ খাওয়ানো গেল। কিন্তু যদি দেখিয়ে দেওয়া হয় টেক্সাসের এই সময়ের আবহাওয়া আর বাংলাদেশের আবহাওয়ার তেমন ফারাক নেই। মন্থর উইকেটের ধরণের সঙ্গেও দেশের উইকেটগুলোর বেশ মিলই আছে। তাতে প্রশ্নটা আরও বড় হয়। সহযোগী সদস্য দেশটির বিপক্ষে খেলে এবং হেরে বিশ্বকাপের আগে উল্টো আত্মবিশ্বাসে দাগ পড়ে গেছে। মাথার উপর প্রবল চাপ তৈরি হয়েছে, গলার ভেতর বিদ্ধ হয়েছে অস্বস্তির কাঁটা। এর বদলে প্রাপ্তি কি?

শেষ ম্যাচ বাংলাদেশ ১০ উইকেটে  জিতেও নিস্তার নেই। তাও ট্রল হচ্ছে শান্তদের নিয়ে। বড় হারের পরও যে যুক্তরাষ্ট্র দাবি করতেই পারে, আমরা তো সেরা দল খেলাইনি। গুরুত্বহীন ম্যাচ তাই অস্বস্তির কাঁটা দূর করার উপায় কোথায়?

বিশ্বকাপ সামনে রেখে এই সিরিজের পরিকল্পনা করা হয় বেশ আগে। কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে আগেভাগে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে খেলার সূচি ঠিক করে বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগ। তখনই প্রশ্ন উঠেছিল, তাই বলে যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে কেন? অন্য আর কেউই নেই? এর আগে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের সিরিজ নিয়েও একই প্রশ্ন ঘোরাফেরা করেছে। বিশ্বকাপের কঠিন লড়াইয়ে নামার আগে দুর্বল দলের বিপক্ষে খেলে আসল পরীক্ষা হবে কিনা তা নিয়ে খোদ দল সংশ্লিষ্ট কেউ কেউ সন্দিহান ছিলেন। কে জানত দুর্বল দলই বাংলাদেশের জন্য হয়ে উঠবে প্রবল। শাক দিয়ে মাছ ঢেকে রাখার চেষ্টা করেও যা পারা যাবে না! 

ঘরের মাঠে খেলা বলে জিম্বাবুয়ে বাংলাদেশকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারেনি, বিশ দলের বিশ্বকাপে উঠতে না পারা দলটির সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সও ছিলো তলানিতে। তাদের বিপক্ষে প্রথম তিন ম্যাচ জিতে সিরিজ নিশ্চিত করেও একাদশে খুব বেশি উলটপালট করেনি বাংলাদেশ। তাসকিন আহমেদের মতন মূল পেসার টানা চার ম্যাচ খেলে পড়েন ইনজুরিতে। ৪-১ ব্যবধানে সিরিজ হারলেও জিম্বাবুয়ে কিন্তু আগামীর চিন্তায় কিছু পরীক্ষা করতে পেরেছে। শন উইলিয়ামস, ক্রেইগ আরভিন, রায়ান বার্লদের মতন পরীক্ষিত তারকাদের বসিয়ে নতুনদের সুযোগ দেয় তারা। জোনাথন ক্যাম্পবেল, ব্রায়ান বেনেটদের মতন দুই তরুণকে বেরও করে নিয়ে আসে।

যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে তিন ম্যাচের সিরিজেও একাদশে পরীক্ষা নিরীক্ষা হয়নি। রিজার্ভ তালিকায় থাকা দুই ক্রিকেটারের একজন (হাসান মাহমুদ) খেলার সুযোগ পেয়েছেন। তাও কেবল শেষ ম্যাচে, ততক্ষণে বিশ্বকাপ দলে বদল আনার সম্ভাবনা শেষ।

অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে এই দুই সহজ প্রতিপক্ষের বিপক্ষেই বাংলাদেশ খেলেছে একধরণের ভয় নিয়ে। হারের এই ভয় পুরো দলকে আড়ষ্ট করে রেখেছিলো।  বিশ্বকাপ সামনে রেখে ব্যাটারদের মেলে ধরার সুযোগ দেওয়ার বদলে যেমন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জয় নিশ্চিত করা ছিলো গুরুত্বের শীর্ষে। টস জিতে আগে তাই ব্যাটিং করতে দেখা যায়নি একাধিকবার। এসব স্রেফ খেলোয়াড়দের বিষয় না, টিম ম্যানেজমেন্টের দুর্বল পরিকল্পনারও ফসল।

জিম্বাবুয়ে ও যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে দুই সিরিজ দেখিয়ে দিল খেলোয়াড়দের দক্ষতার পাশাপাশি কর্মকর্তাদের চিন্তার দীনতা। সহজ প্রশ্ন বেছে লেটার মার্কস পেয়ে একধরণের ফাঁপা আত্মবিশ্বাসের বিজ্ঞাপন চেয়েছেন তারা। যুক্তরাষ্ট্রের দল সেই পরিকল্পনা নসাৎ করে দেওয়ায় তারা এখন হয়ত বিব্রত, হিসাব মেলাতে না পেরে আপাতত গুটিয়ে গেছেন।

সাকিব আল হাসানের ভাষায় যুক্তরাষ্ট্র সিরিজের ফল প্রভাব ফেলতে পারে বিশ্বকাপে, সেই প্রভাব মানে নেতিবাচক প্রভাব।  আবার নাও পারে। সিরিজটা না খেললে এই ঝুঁকিটা থাকত না। বিশ্বাসের জমিন চওড়া রেখেই মূল আসরে নেমে পড়তে পারতেন তারা।

যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে সিরিজটা না খেললে অবশ্য নানামুখী দীনতা আরেকটু আড়ালে থাকত। এখন রোগটা এতবেশি প্রকাশিত যে চিকিৎসার একটা ব্যবস্থা হলেও হতে পারে।

বিশ্বকাপের মূল মঞ্চে নামার আগে বাংলাদেশের হাতে আছে আরও দুটি ম্যাচ। দুটোই নির্জলা প্রস্তুতি ম্যাচ। এসব ম্যাচে কিছু জিনিস হয়ত খতিয়ে দেখার সুযোগ থাকবে। স্বীকৃত ম্যাচ না হওয়ার খবরে ব্যাটাররা যদি চাপ সরিয়ে মেলে ধরতে পারেন তাও হবে এক প্রাপ্তি।

একটা জায়গায় অবশ্য শান্তরা স্বস্তি খুঁজতে পারেন। বিশ্বকাপের আগে এমন পারফরম্যান্স করেছেন যে তাদের নিয়ে সমর্থকদের প্রত্যাশার মাত্রা শূন্যের ঘরে। হারানোর তো আর কিছুই বাকি নেই, এই আবহে যদি জেগে উঠা যায়!

Comments

The Daily Star  | English
Khaleda Zia calls for unity

Institutionalise democracy, stay united

Urging people to remain united, BNP Chairperson Khaleda Zia has said the country must quickly seize the opportunity to institutionalise the democratic system.

2h ago