'এই ইউনিটের বিশ্বসেরা হওয়ার সব রসদ আছে'

শেষ ওয়ানডেতে আইরিশদের ১০ উইকেটে উড়িয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। উইকেটের হিসাবে এই সংস্করণে এটাই তাদের সর্বোচ্চ জয়ের রেকর্ড। সফরকারীদের ছুঁড়ে দেওয়া ১০২ রানের মামুলি লক্ষ্য তারা পেরিয়ে গেছে ২২১ বল হাতে রেখে। এতে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ ২-০ ব্যবধানে নিজেদের করে নিয়েছে স্বাগতিকরা।
ছবি: ফিরোজ আহমেদ

তৃতীয় ওয়ানডেতে আয়ারল্যান্ডকে গুঁড়িয়ে দেওয়ার পর সতীর্থদের প্রশংসায় মাতলেন তামিম ইকবাল। বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক তাদেরকে দিলেন আরও বড় স্বপ্নের দিকে ধাবিত হওয়ার মন্ত্র। তার মতে, বিশ্বসেরায় পরিণত হওয়ার সব রকমের সামর্থ্য ও দক্ষতা তাদের আছে।

বৃহস্পতিবার সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে শেষ ওয়ানডেতে আইরিশদের ১০ উইকেটে উড়িয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। উইকেটের হিসাবে এই সংস্করণে এটাই তাদের সর্বোচ্চ জয়ের রেকর্ড। সফরকারীদের ছুঁড়ে দেওয়া ১০২ রানের মামুলি লক্ষ্য তারা পেরিয়ে গেছে ২২১ বল হাতে রেখে। এতে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ ২-০ ব্যবধানে নিজেদের করে নিয়েছে স্বাগতিকরা।

মাঝের ম্যাচটিতে বাংলাদেশ আগে ব্যাট করে ৬ উইকেট হারিয়ে নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসের সর্বোচ্চ ৩৪৯ রান তোলার পর খেলা ভেসে যায় বৃষ্টিতে। সেদিন মুশফিকুর রহিম গড়েন টাইগারদের পক্ষে দ্রুততম ওয়ানডে সেঞ্চুরির কীর্তি। তিনি মাত্র ৫০ বলে শতকে পৌঁছে অপরাজিত থাকেন।

এদিন বাংলাদেশের তিন পেসারের গতি, মুভমেন্ট ও সুইংয়ের সামনে অসহায় আত্মসমর্পণ করে আয়ারল্যান্ড। অগ্রণী ভূমিকা রাখা হাসান মাহমুদ ক্যারিয়ারের প্রথমবারের মতো নেন ৫ উইকেট। এছাড়া, তাসকিন আহমেদ ৩ ও ইবাদত হোসেন ২ উইকেট পান। ফলে প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রতিপক্ষের ইনিংসের ১০ উইকেটের সবগুলো নেওয়ার কৃতিত্ব দেখায় বাংলাদেশের পেসাররা।

এই ম্যাচে তিন ফাস্ট বোলারের সঙ্গে দুজন বাঁহাতি স্পিনার ও একজন অফ স্পিনার নিয়ে একাদশ সাজিয়েছিল বাংলাদেশ। তবে আয়ারল্যান্ডের খেলা ২৮.১ ওভারের মধ্যে মাত্র চারটি করেন স্পিনাররা। বাঁহাতি নাসুম হাত ঘোরান ৩ ওভার। একাদশে ফেরা অফ স্পিনার মিরাজ সুযোগ পান ১ ওভার বোলিংয়ের। বাংলাদেশের শীর্ষ ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান আক্রমণেই আসেননি। অথচ স্পিনকেই টাইগারদের বোলিং আক্রমণের মূল শক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে।

ব্যাটার ও স্পিনারদের পাশাপাশি পেসাররাও ওয়ানডেতে নিয়মিত সাফল্য পাওয়ায় তাদেরকে নিয়ে গর্বিত তামিম। ম্যাচ পরবর্তী পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, 'অবিশ্বাস্য। এই গোটা সিরিজে আমরা যেভাবে খেলেছি, সেটা খুবই সুন্দর ছিল। প্রথম দুই ম্যাচে আমাদের যে ব্যাটিং পারফরম্যান্স ছিল, সেটা এমন কিছু যা আগে আমরা কখনও করিনি। বিশেষ করে, এদিন যখন আমরা ফিল্ডিংয়ে ছিলাম, যেভাবে ফাস্ট বোলাররা বল করেছে, সেটা অবিশ্বাস্য ছিল। আমি নিশ্চিত নই, বাংলাদেশে এমন কিছু আগে কখনও ঘটেছে কিনা যে ফাস্ট বোলাররা সবগুলো উইকেট নিয়েছে। এখন আমি গর্বের সঙ্গে বলতে পারি যে আমাদের একটি দৃঢ়, দৃঢ়, দৃঢ় ফাস্ট বোলিং আক্রমণ রয়েছে।'

নিজের নেতৃত্বাধীন বর্তমান দলের বিশ্বসেরা হওয়ার সম্ভাবনা দেখেন এই বাঁহাতি ওপেনার, 'মিরাজের মতো খেলোয়াড়রা যখন ব্যাট হাতে পারফর্ম করতে শুরু করে, তখন আমরা একজন ব্যাটার কম নিয়ে খেলতে পারি। কারণ, মিরাজের সামর্থ্যে আমাদের আস্থা রয়েছে। যদি আপনি আমাদের আজকের একাদশের দিকে তাকান, সেখানে তিনজন ফাস্ট বোলার, দুজন বাঁহাতি স্পিনার ও একজন অফ স্পিনার ছিল। বোলিং বিভাগে আমরা সম্ভবত সবদিক পূর্ণ করেছি। আমি মনে করি, এটাই সামনে এগোনোর উপায়। খেলোয়াড়দের ওপর বিশ্বাস রেখে যেতে হবে আমাদের। সামনে অনেক উত্থান-পতন আসতে পারে। তবে এই ইউনিটের বিশ্বসেরা হওয়ার সব রসদ রয়েছে।'

সহজ লক্ষ্য তাড়ায় লিটন দাস খেলেন ৩৮ বলে অপরাজিত ৫১ রানের আগ্রাসী ইনিংস। তামিম অপরাজিত থাকেন ৪১ বলে ৪১ রানে। লিটনকে নিয়ে বাংলাদেশ অধিনায়কের মন্তব্য, '(ওয়ানডেতে প্রথমবারের মতো ১০ উইকেটের জয়) এটা শুনে খুবই ভালো লাগল। আমি মনে করি, উইকেট খুব ভালো ছিল। বিশেষ করে, সন্ধ্যার দিকে। যেভাবে আমরা কর্তৃত্বের সঙ্গে রান তাড়া করেছি, সেটা প্রতিপক্ষ দলগুলোকে খুবই শক্ত বার্তা দেবে। আমি মনে করি, লিটনের ইনিংসটি ছিল আনন্দদায়ক। সে আমাদের জন্য অবিশ্বাস্য সব ইনিংস খেলছে। আশা করি, সে ধারাবাহিকতা বজায় রাখবে।'

ঘরের মাঠে প্রচলতি রীতির বাইরে গিয়ে এবার স্পিনবান্ধব উইকেট ব্যবহার করেনি বাংলাদেশ। তারপরও মিলেছে দারুণ সাফল্য। সামনে তাকিয়ে স্পোর্টিং পিচে খেলার বিকল্প দেখছেন না তামিম, 'আপনার মনে আছে কিনা জানি না কয়েক সপ্তাহ আগে আমি বলেছিলাম যে সামনে এগোতে আমাদেরকে স্পোর্টিং উইকেটে খেলতে হবে। কোচদের অনেক কৃতিত্ব পাওয়ার আছে। তিনি আমাদেরকে এই ধরনের উইকেটে খেলতে অনুপ্রাণিত করেছে। এই ধরনের উইকেটে যতক্ষণ না আপনি খেলছেন, আপনি ভেবে অবাক হবেন যে কী কী অর্জন করতে পারেন।'

Comments