আমার গ্ল্যামার সব বাইশগজে: তাসকিন

পুঁজি ছিল স্রেফ ১০৮ রানের। টানা হারতে থাকা ঢাকা ডমিনেটর্স ওই পুঁজি নিয়ে জিততে পারবে বলে কেউ ভাবেনি, তাসকিন আহমেদ হয়ত ভেবেছিলেন।
Taskin Ahmed
ছবি: ফিরোজ আহমেদ

পুঁজি ছিল স্রেফ ১০৮ রানের। টানা হারতে থাকা ঢাকা ডমিনেটর্স ওই পুঁজি নিয়ে জিততে পারবে বলে কেউ ভাবেনি, তাসকিন আহমেদ হয়ত ভেবেছিলেন। খুলনা টাইগার্সের বিপক্ষে মাত্র ৯ রানে ৪ উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরা হওয়া এই পেসার বললেন, খেলোয়াড় হিসেবে তার সব জৌলুস, সৌন্দর্য বাইশগজে।

বিপিএলে টানা হারের বৃত্ত ভাঙতে যেকোনোভাবে একটা জয় চাইছিল ঢাকা। ইনিংসের অর্ধেক পথে এবারও মনে হচ্ছিল তাদের জন্য অপেক্ষায় আরেকটি বড় হার। আগে ব্যাটিং পেয়ে আবারও ব্যাটারদের ব্যর্থতা ছিল চেনা দৃশ্য। একটু বৈপরীত্য এনে এদিন সৌম্য সরকার দেখান দৃঢ়তা। প্রচণ্ড রান খরা পার করে তুলে নেন টুর্নামেন্টের প্রথম ফিফটি। সৌম্যের ফিফটির পরও রানটা তাদের কেবল ১০৮, যাতে সৌম্যের একারই ৫৭। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এসেছে অতিরিক্ত থেকে।

অল্প এই পুঁজি নিয়ে খেলা জেতার আশা করা কঠিন। টুর্নামেন্টে ঢাকার পারফরম্যান্স বিচার করলে তা অসম্ভবের কাছাকাছি। সেটাই হয়ে গেল সম্ভব, শেই হোপকে বোল্ড করে প্রথম শিকার ধরে তাসকিন বললেন প্রক্রিয়ার মধ্যে থাকায় তার মনে হচ্ছিল যেকোনো কিছুই হতে পারে, 'প্রত্যেক ম্যাচে বিশ্বাস নিয়ে নামি। আমি প্রক্রিয়া নিয়ে থাকতে বিশ্বাস করি। আমি আমার কাজের ক্ষেত্রে যেহেতু সৎ, সেহেতু মনে হয় আল্লাহ তায়ালা যেকোনো সময় যেকোনো পুরস্কার দিতে পারে। প্রক্রিয়ার মধ্যে থাকি বলে মনে হয় যেকোনো সময় যেকোনো কিছু হতে পারে।'

Taskin Ahmed
তাসকিন আহমেদের উদযাপন। ছবি: ফিরোজ আহমেদ

১০ ওভার পর খুলনা টাইগার্সের স্কোর ছিল ৩ উইকেটে ৫৮। হাতে ৭ উইকেট নিয়ে জিততে চাই আর ৫১ রান। প্রবলভাবে খুলনার দিকে হেলে পড়া ম্যাচে তখন ফের আঘাত হানেন তাসকিন। আজম খানকে আউট করে ফেলেন গুরুত্বপূর্ণ উইকেট।

মোমেন্টাম পেয়ে সালমান এরশাদ, আমির হামজা, আল-আমিন হোসেনদের তোপে একের পর এক উইকেট পড়তে থাকলে বড় হতে থাকে ডমিনেটর্সদের আশা।

শুরুটা যিনি করেছিলেন, শেষটাও তিনি। ১৬তম ওভারে এসে ৩ বলের মধ্যে শেষ দুই উইকেট উপড়ে যেন হাওয়ায় ভাসলেন তাসকিন। বাধনহারা দৌড়ে ছুটে ডাইভ দিয়ে করলেন দারুণ এক উদযাপন। অবিশ্বাস্য এক জয়ের পর বারবার প্রক্রিয়া অনুসরণের কথা জানান ডানহাতি এই পেসার, 'আমার ভূমিকাটা গতিময় ও আগ্রাসী বল করা। কখনো উইকেট পাব, কখনো পাব না। একই প্রক্রিয়ায় ছিলাম। ম্যাচটা জিততে পেরেছি। জেতার পেছনে অবদানও আছে। এটাই খুশির ব্যাপার।'

বোলার হিসেবে বরাবরই নিজেকে নিংড়ে দেন তিনি, ব্যাট হাতেও করেন সামর্থ্যের সর্বোচ্চ প্রয়োগের চেষ্টা। খামতি ছিল ফিল্ডিংয়ে। এবার বিপিএলে ফিল্ডিংয়ে তাকে দুরন্ত দুই ক্যাচ নিতেও দেখা গেছে। সব কিছুই পরিশ্রমের ফল তার কাছে, জানালেন বাইশগজই তার আসল সৌন্দর্য মেলে ধরার জায়গা, 'ক্রিকেট খেলোয়াড় হিসেবে আমার মঞ্চ, আমার গ্ল্যামার সব বাইশগজেই। এখানে আমি আমার সেরাটা দিয়ে উপভোগ করার চেষ্টা করি। কিছু দিন ভালো হবে, কিছু দিন খারাপ। কঠোর পরিশ্রম করা, প্রসেসে থাকা, মাইন্ড ট্রেনিং করা। সব কিছু মিলিয়ে মাঠে ফেইল করার ভয়টা ছাড়া আমি চেষ্টা করি খেলার। কোন কোন দিন হয়ত হবে না। এটাও মেনে নিতে হবে। ফেইল করার ভয়টা ছেড়ে মাঠে চেষ্টা করি।'

'এমনকি ফিল্ডিংয়েও। একটা সময় হয়ত অনেক বেশি খারাপ ফিল্ডিং ছিল। এখন আগের চেয়ে একটু বেটার হয়েছে। উন্নতির তো শেষ নেই। সব কিছু নিয়ে কাজ করছি।'

৮ ম্যাচের মধ্যে কেবল দুই জয়ে চার পয়েন্ট ঢাকার। বাকি চার ম্যাচের সবগুলো জিতলে পরে কাগজে কলমে একটা আশার জায়গা থাকতে পারে তাদের। দ্বিতীয় জয় পাওয়ার পর পরের ধাপে যাওয়ার সম্ভাবনা একদম উড়িয়ে দিলেন না তাসকিন, 'এটা একটা মাস্ট নিডেড জয় ছিল। এটা হারলে টুর্নামেন্ট থেকে বাদ পড়ে যেতাম। এই ম্যাচটা জিতে এখনো একটা আশা থাকবে কিন্তু, যে আমরা আরও জিতলে কোয়ালিফাই করতেও পারি। কে জানে।'

Comments