আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০২৩

বিশ্বকাপে নিজের জন্মভূমিই যখন প্রতিপক্ষ হয়ে যায়

দশ দলের বিশ্বকাপে সহযোগী দেশগুলোর খেলার স্বপ্ন— স্বপ্নই থেকে যায়। অনেকেরই তাই 'বড় বিশ্বকাপ' খেলার স্বপ্ন পূরণ হয় না। সেখানে নিউজিল্যান্ডে জন্ম নেওয়া ম্যাক্সওয়েল প্যাট্রিক ও'ডাউডের তা হয়েছে নেদারল্যান্ডসের জার্সিতে!

বিশ্বকাপে নিজের জন্মভূমিই যখন প্রতিপক্ষ হয়ে যায়

বিশ্বকাপ ২০২৩
ছবি: এএফপি

বিশ্বকাপের মঞ্চে হায়দরাবাদে মুখোমুখি নিউজিল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডস। ১২তম ওভারে পেসার লোকি ফার্গুসনকে বোলিংয়ে আনেন নিউজিল্যান্ড ক্যাপ্টেন টম ল্যাথাম। আগের ওভারেই আউট হয়ে যান নেদারল্যান্ডসের ওপেনার ম্যাক্স ও'ডাউড। ফার্গুসন বনাম ও'ডাউড— লড়াইটার জন্ম হয়নি তাই। তা আলাদা করে কেন এই লড়াইয়ের কথা বলছি?

কারণটা হচ্ছে এই দুজন, একই দলের হয়ে খেলেছেন গত বছরের ডিসেম্বরেই। ভাবছেন, ফ্র‍্যাঞ্চাইজি লিগের যুগে তাতে এমন কী চমকের ব্যাপার আছে! ফ্র‍্যাঞ্চাইজিভিত্তিক প্রতিযোগিতার দুনিয়ায় আজকে এক দলে, তো কাল প্রতিপক্ষ— স্বাভাবিক ব্যাপারই। তবে ও'ডাউড ও ফার্গুসনের ব্যাপারটা শুধু এখানেই আটকে নেই। 

নিউজিল্যান্ডের ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট সুপার স্ম্যাশের গেল আসরে ও'ডাউড খেলেছেন অকল্যান্ডের হয়ে। সে দলের দুজন— ফার্গুসনের সঙ্গে মার্ক চ্যাপম্যান ছিলেন নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে বিশ্বকাপের ম্যাচে। আর ও'ডাউড নেমেছিলেন নিজেরই জন্মভূমি নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে।

জন্ম তার নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ডে। যে স্কুলে শিক্ষাদীক্ষা নিয়েছেন, সেটিও অকল্যান্ডেই অবস্থিত। অকল্যান্ড অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে জাতীয় বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্টেও খেলেছেন। অকল্যান্ড এ দলের হয়েও নেমেছেন ক্রিকেট মাঠে। কিন্ত শেষমেশ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের দরবারে হাজির হয়েছেন নেদারল্যান্ডসের হয়ে। ডাচদের হয়ে অভিষেক হয়েছে ২০১৫ সালে।

ও'ডাউড নিজেই আগে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, বছর দশেক আগে নেদারল্যান্ডসে বাবা-মায়েরা পেশা হিসেবে ক্রিকেটে ছেলের ভবিষ্যৎ দেখতেন না মোটেও। এখন দৃশ্যপট পুরোপুরি যে বদলে গেছে তা নয়। তবে ও'ডাউডদের সাফল্যে তাতে অন্তত কিছু উন্নতি এসেছে। আর ২৯ বছর বয়সী ও'ডাউড যখন শুরু করেন, তখন তো ক্রিকেট পেশায় উৎসাহী লোক নেদারল্যান্ডসে খুঁজতে হতো হন্য হয়ে! সেখান থেকে কীভাবে তাহলে ক্রিকেটের প্রেমে পড়লেন তিনি?

এখানে আবার এসে যায় নিউজিল্যান্ড। পারিবারিক সূত্রেই যে তার গায়ে ক্রিকেটের রক্ত বইছে। বাবা অ্যালেক্স ও'ডাউডও ছিলেন ক্রিকেটার। নিউজিল্যান্ডে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলেছেন অকল্যান্ড ও নর্দান ডিস্ট্রিক্টের হয়ে। নেদারল্যান্ডসে পরে ক্রিকেট কোচিংয়েও যুক্ত ছিলেন। ক্রিকেটেই শুধু নয়, রাগবিতেও জড়িয়ে ছিলেন সিনিয়র ও'ডাউড। কোচ হিসেবে রাগবিতে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। ক্রীড়ামোদী পরিবার পাওয়ায় জুনিয়র ও'ডাউডের তাই ক্রিকেটে মজে থাকতে সমস্যা হয়নি।

নিউজিল্যান্ডে জন্ম নিয়ে নিজের জন্মভূমির বিপক্ষে তাহলে কীভাবে খেলছেন ম্যাক্স? এখানে এসে যান তার মা। ও'ডাউডের মা হচ্ছেন নেদারল্যান্ডসের পাসপোর্টধারী। ও'ডাউডের শৈশব আসলে কেটেছে ডাচদের মাটিতেই। নেদারল্যান্ডসের বয়সভিত্তিক দলে খেলেছেন। দেশটির অনূর্ধ্ব-১৯ জাতীয় দলের প্রতিনিধিত্বও করেছেন তিনি। 

নেদারল্যান্ডসের মূল দলের নিয়মিত সদস্য এখন ও'ডাউড। সব মিলিয়ে নব্বইয়ের বেশি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন। চলতি বছরে নেদারল্যান্ডস সবচেয়ে বেশি রানও পেয়েছে এই ডানহাতি ওপেনারের ব্যাট থেকে। গেল দুই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও তিনি ছিলেন স্কোয়াডের অংশ। এবার নেদারল্যান্ডস কঠিন পথ পাড়ি দিয়ে ওয়ানডে বিশ্বকাপের দরজাও খুলতে পারল। সেখানে ও'ডাউডও গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হয়ে ভূমিকা রেখেছেন।

জন্মভূমির বিপক্ষে বিশ্বকাপের মঞ্চে খেলার বিরল অভিজ্ঞতার দিনে অবশ্য হারই সঙ্গী হয়েছে ও'ডাউডের। গতকাল সোমবার ৯৯ রানের বড় ব্যবধানে কিউইদের কাছে পরাস্ত হয়েছে ডাচরা। ও'ডাউডও ব্যাট হাতে স্মরণীয় কিছু করতে পারেননি। ৩১ বলে ১৬ রানে আউট হয়েছেন।

দশ দলের বিশ্বকাপে সহযোগী দেশগুলোর খেলার স্বপ্ন— স্বপ্নই থেকে যায়। অনেকেরই তাই 'বড় বিশ্বকাপ' খেলার স্বপ্ন পূরণ হয় না। সেখানে নিউজিল্যান্ডে জন্ম নেওয়া ম্যাক্সওয়েল প্যাট্রিক ও'ডাউডের তা হয়েছে নেদারল্যান্ডসের জার্সিতে!

Comments

The Daily Star  | English
remittance earning of Bangladesh

Bangladesh’s forex reserves cross $25b again

However, as per BB’s calculation, the figure stands at $30.07 billion

3h ago