ধর্মশালায় বিশ্বকাপে পরিচিত আপসেটে কমলা উৎসব

ফর্মের তুঙ্গে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকা সম্প্রতি দুর্দান্ত ক্রিকেট খেলছিল। সেই প্রোটিয়ারাই নুয়ে পড়ল নেদারল্যান্ডসের সামনে। বিশ্বকাপে আরও একবার! গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর এবার ওয়ানডে বিশ্বকাপেও ডাচরা হারিয়ে দিয়েছে প্রোটিয়াদের। ওয়ানডে বিশ্বকাপে টেস্ট খেলুড়ে দেশের বিপক্ষে ডাচরা পেয়েছে প্রথম জয়।
১৪০ রানে ৭ উইকেট হারানো নেদারল্যান্ডস শেষ নয় ওভারে ১০৪ রান এনেছিল। শেষের দিকে পাওয়া সেই মোমেন্টাম পরে ডাচরা ধরে রেখেছে পুরো বোলিং ইনিংসেই। মারওয়ে-মিকেরেনদের বোলিংয়ের সঙ্গে বাকিরাও সময়মতো কাজে এসেছেন। দক্ষিণ আফ্রিকাকে ২০৭ রানে অলআউট করে ধর্মশালায় ডাচরা মেতেছে কমলা উৎসবে। দক্ষিণ আফ্রিকার ৩৮ রানের হারে বেজেছে আরেকটি আপসেটের সুর!
সাম্প্রতিককালে দক্ষিণ আফ্রিকার সাফল্যের বড় কারিগর ওপেনিং জুটি। ২৪৬ রানের লক্ষ্যে শুরুটা ধীরেসুস্থে করে তারা। লগান ফন বিকের এক ওভারের পর নেদারল্যান্ডস অধিনায়ক দুই প্রান্তেই অফস্পিন আনেন। পিচে স্পিনারদের জন্য থাকা যথেষ্ট সহায়তা কাজে লাগান তারা দুর্দান্তভাবে। সময়ের সাথে বাভুমা বন্দী হতে থাকেন, স্ট্রাইক বদলে ব্যর্থ হয়ে একপাশেই আটকে যাচ্ছিলেন। ডি কক নিরাপদে খেলে গেলেও হুট করে সুইপে গড়বড় বাধিয়ে ফেলেন। কিপারে ক্যাচ তুলে ফিরে যান ২২ বলে ২০ রান করে। নয় ওভারের পাওয়ারপ্লেতে ৩৯ রান আনার পরপরই বাভুমাও একই পথ ধরেন।
মারওয়ের বলে বোল্ড হয়ে যান ১৬ রান করে, ৩১ বলের ইনিংসে যেখানে ২৭টি ডট ছিল। বাভুমা যেতে না যেতেই পরের ওভারে এইডেন মার্করামও বোল্ড। মিকারেনের বলে মার্করাম আউট হওয়ার পরের ওভারে ডুসেনের গন্তব্যও হয়ে যায় ড্রেসিং রুম। মারওয়েকে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে পয়েন্টের হাতে বল তুলে দিয়ে ফিরে যান এক অঙ্কে।
৪৪ রানে ৪ উইকেট তুলে নেওয়া ডাচরা চেপে ধরে দক্ষিণ আফ্রিকাকে। ক্লাসেন-মিলার জুটি নিরাপদে কিন্তু প্রতি-আক্রমণে ম্যাচ নাগালের বাইরে যেতে দিচ্ছিলেন না। বাউন্ডারি বল পেলেই চড়াও হয়েছেন মিলার ও ক্লাসেন। কিন্তু হুট করেই লেগ স্টাম্পের বাইরের এক বলে ক্লাসেন ক্যাচ দিয়ে বসেন সোজা ফাইন লেগে। ২৮ রানে দলকে ৮৯ রানে রেখে পঞ্চম উইকেট হয়ে ক্লাসেন ফিরছেন যখন, ধর্মশালা যেন আপসেটের আগমনী বার্তায় ছেয়ে গিয়েছিল।
এডওয়ার্ডস তার মূল অস্ত্র মিকেরেন ও মারওয়ে দিয়ে আক্রমণ চালিয়ে যান। ক্রস-সিমে হালকা নিচু হওয়া বলে ইয়ানসেনকে বোল্ড করে ফেলেন মিকেরেন। ১০৯ রানে ৬ উইকেট তুলে নেয় ডাচরা। আপসেটের আশা তখন বিশ্বাসের দিকেই তখন পতিত হচ্ছিল।
তখনও তাদের পথের একমাত্র কাটা হয়ে ছিলেন ডেভিড মিলার। মিলারের খেলও খতম হয়ে যেত, ২৩ রানে মারওয়ের বলে আকাশে তুলেছিলেন বল, ক্যাচটা তালুবন্দী করতে পারেননি বাস ডি লিড। ডাচদের সে আক্ষেপ বাড়াতে থাকেন মিলার পরে। তবে বেশিক্ষণ থাকেনি তা, ৪৩ রানে মিলার বোল্ড হয়ে যান ভন বিকের বলে। ১৪৫ রানে ৭ উইকেট তুলে নেওয়া ডাচদের উৎসবের অপেক্ষা পরে অনেক বাড়িয়ে দিয়েছেন মাহরেজ, ৪০ রানে তিনি আউ৫ হলে এক বল বাকি থাকতে অলআউট হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা।
নির্ধারিত সময়ের দুই ঘণ্টা দেরিতে শুরু হওয়া খেলা নেমে এসেছিল ৪৩ ওভারে। টসে জিতে বোলিং নেওয়া দক্ষিণ আফ্রিকার সামনে সুইংময় কন্ডিশনে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি ডাচ দুই ওপেনার।
৭ম ওভারে বিক্রমজিত সিং ১৬ বলে ২ রান করে রাবাদার বলে ক্লাসেনের দুর্দান্ত ক্যাচে ফিরে যান। পরের ওভারেই কিপারে ক্যাচ বানিয়ে ও'ডাউডকেও ফিরিয়ে দেন মার্কো ইয়ানসেন। নয় ওভারের প্রথম পাওয়ারপ্লেতে আর কোন উইকেট না হারিয়ে নেদারল্যান্ডস তুলে ২৮ রান। তবে কিছুক্ষণ পরই তাদের ইনফর্ম ব্যাটারকে প্যাভিলিয়নের পথ দেখান রাবাদা। বাস ডি লিড ২ রানে এলবিডাব্লিউ হয়ে যান রাবাদার ভেতরে আসা বলে। ৫ ওভারে ১৮ রানে দুই উইকেট নিয়ে নিজের স্পেল শেষ করেন রাবাদা।
অপরপ্রান্তে আসা জেরাল্ড কোয়েটজের বল স্টাম্পে ডেকে এনে কলিন অ্যাকারম্যানও আউট হয়ে যান ১২ রান করে। ৫০ রানেই চতুর্থ উইকেট হারিয়ে ফেলে ডাচরা। নিদামানুরু-এঙ্গেলব্রেখট জুটিতে তাদের ব্যাটিংয়ে এরপর স্বস্তির নি:শ্বাস ফিরে আসে। তবে ১৯ রানে এঙ্গেলব্রেখট এনগিদির বলে পুল করতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দেন, জুটিটা ৩২ রানের বড় হয়নি তাই।
পাঁচ ওভারে ১৩ রানের দুর্দান্ত প্রথম স্পেলের পর ফিরে আসেন ইয়ানসেন, নিদামানুরুকে ২০ রানে ফিরিয়ে দেন ইয়র্কারে এলবিডাব্লিউ বানিয়ে। ১১২ রানেই ষষ্ট উইকেট খুইয়ে ফেলা ডাচদের তরী এগিয়ে নিতে অধিনায়কই শেষ ভরসা তখন। ২৮ রানের জুটিতে সঙ্গ দিয়ে লগান ফন বিকও আউট হয়ে যান। এরপর ভ্যান দার মারওয়ে এসে যেন প্রাণ সঞ্চার করেন ডাচ ইনিংসে। তিন চার ও এক ছয়ে ১৯ বলে ২৯ রানের ক্যামিও খেলে যখন ফিরছেন, ৬৪ রানের জুটিতে নেদারল্যান্ডস পেরিয়ে গেছে দুইশ।
একপাশে দলকে আগলে রাখা এডওয়ার্ডস ৫৩ বলে ফিফটি ছুঁয়ে ফেলেন। মাহরেজের স্পিনে দারুণ সুইপে ৫টি চার মারেন। শেষে এসে পেসারদের বিপক্ষেও গিয়ার পাল্টে ৬৯ বলে ৭৮ রানে অপরাজিত থেকেছেন এডওয়ার্ডস। আরিয়ান দত্ত তিন স্লোয়ারে তিনটি ছক্কা মেরে ৯ বলে ২৩ রানের ক্যামিও খেলে যোগ্য সঙ্গ দেন। শেষ পাঁচ ওভারে ৬৪ রান এনে ২৪৫ রানের পুঁজিতে ম্যাচে প্রাণ ফিরে পায় নেদারল্যান্ডস। এরপর ম্যাচটাই নিজেদের করে নিয়ে ইতিহাস গড়েছে নেদারল্যান্ডস।
Comments