আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০২৩

নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে ভারতের পাঁচে পাঁচ

৪ উইকেটের জয়ে ভারতের অপরাজিত যাত্রা অব্যাহত

নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে ভারতের পাঁচে পাঁচ

চেজ মাস্টার বিরাট কোহলির বিশ্বকাপে লক্ষ্যতাড়ায় প্রথম সেঞ্চুরি এসেছিল গেল ম্যাচে। টানা দুই সেঞ্চুরির দ্বারপ্রান্তেই ছিলেন ধর্মশালায়। ৯৫ রানে আউট হয়ে গেলেও তার সে ইনিংসে অবশ্য ভারত ৪ উইকেটের জয় নিশ্চিত করেছে। মোহাম্মদ শামির ফাইফারের সঙ্গে যে জয়ের ভিত্তি তৈরি করে দিয়েছিলেন ভারতের বোলাররা। ম্যাচের আগে চলতি বিশ্বকাপে অপরাজিত দল ছিল দুই, রইল বাকি তাই এক! পাঁচ ম্যাচ শেষে একমাত্র অপরাজিত দল এখন ভারত।

রোববার ধর্মশালার হিমাচল প্রদেশ স্টেডিয়ামে ২৭৪ রান তাড়া করতে নেমে ভারত আরও একটি পাওয়ারপ্লে নিজেদের করে নেয় রোহিতের ব্যাটে। আগ্রাসী রোহিত সেরা ছন্দে থেকে বাউন্ডারি বের করেছেন নিয়মিত। পাওয়ারপ্লের শেষ অংশে শুবমান গিলও যোগ দেন বাউন্ডারি উৎসবে। ভারত পাওয়ারপ্লেতে পেসারদের নয় ওভারের সবকটিতে বাউন্ডারি আনে। প্রথম দশ ওভারে তারা ৬৩ রান আনে বিনা উইকেটে। মিচেল স্যান্টনার এসে কিছুটা লাগাম টেনে ধরেন।

৩৯ রানে থাকা রোহিতের ক্যাচ কিপারে উঠলেও মিস হয়ে যায়। পরের বলেই ছক্কা হাঁকান রোহিত। প্রথম ভারতীয় হিসেবে কোন বছরে ৫০টি ছক্কা মারার রেকর্ড গড়েন। পরের ওভারেই যদিও লোকি ফার্গুসনের বেশ বাইরের বল স্টাম্পে ডেকে এনে ফিরে যান ৪৬ রানেই। অপ্রত্যাশিতভাবে ফিরে যান গিলও, ফার্গুসনের বলেই আপারে কাটে আউট হন ২৬ রানে।

শ্রেয়াস আইয়ার এসে ফার্গুসনের পেসে দুর্দান্তভাবে বাউন্ডারি বের করেছেন একের পর এক। পৌঁছে গিয়েছিলেন ৯ বলেই ২১ রানে! ১৫.৪ ওভারে ১০০ রান পূর্ণ করে ফেলে ভারত। সেখানেই তীব্র কুয়াশায় ধর্মশালা ঘিরে ধরলে আম্পায়াররা খেলা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেন।

কিছুক্ষণ পর খেলা শুরু হয় আবার। স্বচ্ছন্দ্যে খেলতে থাকা আইয়ার কিছুক্ষণ পর আউট হয়ে যান ৩৩ রানেই। বোল্টের বাউন্সারে ক্যাচ দিয়ে আইয়ার ফিরে গেলে কোহলির সঙ্গে রাহুল জুটি বাধেন। পেসে স্বস্তিতে খেলে গেলেও কোহলি স্পিনে স্ট্রাইক বদলে ব্যর্থ হয়ে আটকে যাচ্ছিলেন একপাশে। তবে রাহুল স্বচ্ছন্দ্যে খেলে যান। ১০০ রানের দূরত্বে চলে আসে ভারত, ১৯ ওভার ও সাত উইকেট বাকি থাকতেই।

৯২ রানের প্রয়োজনে যখন, ৬ ওভারে ২৩ রানের স্পেল শেষে স্যান্টনার ফিরে আসেন। রাহুলকে এলবিডাব্লিউ বানিয়ে ফিরিয়ে দেন ২৭ রানেই। একসময় ৪৭ বলে ২৮ রানে থাকা কোহলি পরে ফিফটি পূর্ণ করেন ৬০ বলে। সূর্যকুমার যাদব সুযোগ পেয়েও হয়ে যান রান আউট। কোহলির সাথে ভুল বোঝাবুঝিতে ২ রানে ফিরে যান যখন, ১৯১ রানে ৫ম উইকেট হারায় ভারত। ম্যাচ নিজেদের দিকে টেনে আনার সুযোগ পায় কিউইরা। কিন্তু তখনও যে কোহলির উইকেট বাকি! জাদেজাকে সঙ্গে নিয়ে নিরাপদে খেলে যান কোহলি। ৪ ওভারে ১৯ রানের সমীকরণে গিয়ে বোল্টকে ছক্কার পর চার মেরে ম্যাচ একপক্ষেই এনে ফেলেন। সেঞ্চুরির দ্বারপ্রান্তেই চলে গিয়ে পরে ছক্কা মারতে গেলে ধরা খেয়ে যান বাউন্ডারিতে। ৮ চার ও ২ ছক্কায় ১০৪ বলে ৯৫ রানের ইনিংসে দলকে জয়ের ৫ রান দূরত্বে রেখে যান। ৩৯ রানে অপরাজিত থেকে জাদেজা দুই ওভার হাতে রেখে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন।

টসে জিতে বোলিং নেওয়ার পর বুমরাহ বিশ্বকাপের ফর্ম ধরে রেখে এদিনও পাওয়ারপ্লেতে নিয়ন্ত্রিত বোলিং করেন। চার ওভারের স্পেল শেষ করেন ১১ রানে। সিরাজও নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে পাঁচ ওভারের স্পেলে ১৬ রান দেন। দুজনের আঁটসাঁট বোলিংয়ে কুলিয়ে উঠতে পারেনি কিউইরা।

৯ বলে ইনফর্ম ব্যাটার ডেভন কনওয়ে সিরাজের বলে আউট হয়ে যান শূন্য রানে। উইল ইয়াং দুই অঙ্কে চলে গেলেও ইনিংস ১৭ রানের বড় করতে পারেননি। একাদশে সুযোগ পেয়েই শামি প্রথম বলেই পেয়ে যান উইকেট। ইয়াংয়ের বোল্ড হয়ে ফেরার পর পাওয়ারপ্লে শেষ করে তারা ৩৪ রানে। উইকেটের খাতায় দুইয়ের জায়গায় তিন বসে যেত কিছুক্ষণ পরই। শামির বলে রাবিন্দ্রর ক্যাচ উঠে পয়েন্টে। কিন্তু সেটি অবিশ্বাস্যভাবে তালুবন্দী করতে পারেন না রবিন্দ্র জাদেজা!

১২ রানে জীবন পাওয়া রবিন্দ্র এরপর দুই স্পিনারকে বেশ আত্মবিশ্বাসের সাথে খেলে যান। জাদেজার বলে নিয়মিত স্ট্রাইক বদল করে যাচ্ছিলেন রবিন্দ্র। মিচেল শুরু থেকেই আগ্রাসী মনোভাবে খেলতে থাকেন।

একপ্রান্তে জাদেজাকে দিয়ে টানা দশ ওভার করিয়ে ফেলেন রোহিত। জাদেজা তার স্পেল শেষ করেন ৪৮ রানে। বাঁহাতি এই স্পিনারের শেষ ওভারে মিচেলের ক্যাচ উঠে কিপারে। ৫৯ রানে থাকা মিচেলকে ফেরাতে পারেননি রাহুল। ১০২ বলে মিচেল-রবিন্দ্রর জুটি শতরান পেরিয়ে যাওয়ার পর শেষমেশ তাদের জুটি থামে ১৫৯ রানে। শামির স্লোয়ারে রবিন্দ্র সোজা ক্যাচ তুলে দেন লং অনের হাতে। ৬ চার ও ১ ছক্কার ৭৫ রানের ইনিংসে আউট হন যখন, নিউজিল্যান্ড ৩৪তম ওভারে ১৭৮ রানে। আগের ওভারেই মিচেলরও ক্যাচ উঠেছিল, কুলদীপের বলে সেবার লং অফে থাকা বুমরাহ সহজ ক্যাচ মিস দিলে ৬৯ রানে জীবন পান মিচেল।

এরপর মিচেল শতক পেয়ে যান ১০০ বলে। ৩৭তম ওভারে ২০০ পেরিয়ে যাওয়া নিউজিল্যান্ড ওই ওভারেই হারিয়ে ফেলে উইকেট। টম ল্যাথামকে এলবিডাব্লিউ বানিয়ে এক অঙ্কেই ফেরান কুলদীপ। নিজের শেষ ওভারে এসে গ্লেন ফিলিপসকেও ফিরিয়ে দেন কুলদীপ। ২৩ রানে ফিলিপসকে আউট করে নিজের দশ ওভারের খরচ ৭৩ রানে রাখতে পারেন তিনি।

শেষ দশ ওভারে কিউইরা প্রবেশ করে ২১৯ রান নিয়ে। ভারতীয় পেসারদের দুর্দান্ত রক্ষণাত্মক বোলিংয়ে ভারত আটকে রাখে নিউজিল্যান্ডকে। ২৪৩ রানে পঞ্চম উইকেট হারানোর পর ১৭ রানেই আরও তিন উইকেট খুইয়ে ফেলে কিউরা। পরপর দুই বলে দুই উইকেট নেন শামি, শেষ ওভারে এসে মিচেলকে আউট করলে শামি পেয়ে যান ফাইফার। ১২৭ বলে ৯ চার ও ৫ ছক্কায় ১৩০ রানে থেমে যায় মিচেলের ইনিংস। শেষ দশ ওভারে মাত্র ৫৯ রান দিয়ে ৬ উইকেট তুলে নেয় ভারত। শেষমেশ নিউজিল্যান্ডের ২৭৩ রান ৬ উইকেটে তাড়া করে পাঁচে পাঁচ জয় নিশ্চিত করে ভারত।

Comments

The Daily Star  | English

Pathways to the downfall of a regime

The erosion in the credibility of the Sheikh Hasina regime did not begin in July 2024.

9h ago