আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০২৩

ভারতের রাজত্বে রেকর্ড হারে প্রোটিয়ারাও বনে গেল প্রজা

পূর্ণ ১৬ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে থাকাও নিশ্চিত করে ফেলেছে রোহিত শর্মার দল। পরের ম্যাচে হারলেও তাদের অবস্থানের নড়চড় হবে না।

ভারতের রাজত্বে রেকর্ড হারে প্রোটিয়ারাও বনে গেল প্রজা

ভারত বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা
ছবি: এএফপি

ম্যাচের ফল দেখে কে বলবে তালিকার শীর্ষে থাকা দুই দল মুখোমুখি হয়েছিল! এতটাই একপেশে লড়াই হয়েছে ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার। ২৪৩ রানের হারে প্রোটিয়ারা তাদের ওয়ানডে ইতিহাসেরই সবচেয়ে বড় হার পেল। বিরাট কোহলির সেঞ্চুরিতে ৩২৬ রানের পুঁজি নিয়ে রবীন্দ্র জাদেজার ফাইফারে স্রেফ ৮৩ রানেই প্রতিপক্ষকে অলআউট করে দিল ভারতীয়রা।

রোববার কলকাতায় ২৭.১ ওভারেই দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুটিয়ে দিয়ে জয়রথ বজায় রেখেছে বিশ্বকাপের স্বাগতিক ভারত। আট ম্যাচে অষ্টম জয় পেয়েছে তারা। পূর্ণ ১৬ পয়েন্ট নিয়ে তাই পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে থাকাও নিশ্চিত করে ফেলেছে রোহিত শর্মার দল। পরের ম্যাচে হারলেও তাদের অবস্থানের নড়চড় হবে না। অন্যদিকে, প্রোটিয়ারা বিশ্বকাপে নিজেদের সর্বনিম্ন রানে অলআউট হওয়ার অভিজ্ঞতা পেয়েছে। সব ওয়ানডে মিলিয়ে যা তাদের দ্বিতীয় সর্বনিম্ন। ১২ পয়েন্টে থাকা প্রোটিয়ারাও ভারতের মত আগেই সেমি নিশ্চিত করেছে। তবে অসহায়ের মতো এমন হার নিঃসন্দেহে দুশ্চিন্তায় ফেলবে তাদের।

স্পিনারদের জন্য কলকাতার পিচে সহায়তা মজুদ ছিল অনেক। ভালো শুরুর প্রয়োজনটা আরও বেশি হয়ে গিয়েছিল তাই। কিন্তু প্রোটিয়াদের ভরসা ইনফর্ম ব্যাটার কুইন্টন ডি কককে ফিরে যেতে হয় দ্বিতীয় ওভারেই। ইনসাইড এজে এক অঙ্কেই আউট হয়ে যান কক। মোহাম্মদ সিরাজ ও জাসপ্রিত বুমরাহর নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে কুলিয়ে উঠতে পারেনি প্রোটিয়ারা। তাদের দুজনে আর কোন উইকেট নিতে না পারলেও ৮ ওভারে দেন ২১ রান। জাদেজা ও শামি এসে এরপর উইকেটের ঝাপি খুলে বসেন। টেম্বা বাভুমাকে বোল্ড করে জাদেজা ফেরান ১৯ বলে ১১ রানে। 

শামি যেন উইকেট পাওয়ার কোন গোপন মন্ত্রই পেয়ে গেছেন। নিজের করা প্রথম ওভারেই এইডেন মার্করামকে এক অঙ্কে ফিরিয়ে দেন। ৩৫ রানেই তিন উইকেট খুইয়ে লক্ষ্য তাড়ায় দিশেহারা হয়ে পড়া প্রোটিয়াদের বিপদ আরও বাড়ে। হেইনরিখ ক্লাসেন জাদেজার ফুল বলে সুইপ করতে গিয়ে এলবিডাব্লিউ হয়ে যান। আর কোন রান যোগ না করেই দক্ষিণ আফ্রিকার উইকেটের খাতায় বেড়ে যায় সংখ্যা। শামির দুর্দান্ত ইনসুইঙ্গারে এলবিডাব্লিউ হলে রাসি ফন ডার ডুসেনের ৩২ বলে ১৩ রানের ইনিংসের ভোগান্তি শেষ হয়। ৪০ রানেই অর্ধেক উইকেট হারিয়ে ফেলা প্রোটিয়া সমর্থকেরা হজম করার সময়ই যেন পাচ্ছিলেন না। ৫৯ রানে প্যাডল সুইপ করতে গিয়ে মিলারও হয়ে যান জাদেজার বলে বোল্ড। 

কিছুক্ষণ পর মহারাজকেও বোল্ড করে দিয়ে চতুর্থ উইকেট পেয়ে যান জাদেজা। ৬৭ রানে সাত উইকেট হারানো দক্ষিণ আফ্রিকা মার্কো ইয়ানসেন ও কাগিসো রাবাদার জুটিতে আনুষ্ঠানিকতা দূরে রাখলেও বেশি দেরি হয়নি। দলের সর্বোচ্চ ১৪ রান করে ২৬তম ওভারে ইয়ানসেন আউট হয়ে যান। জাদেজা বিশ্বকাপে নিজের প্রথম ফাইফার পেয়ে যান। কুলদীপ এসে কফিনে শেষ পেরেক টুকে দেন এনগিডিকে আউট করে। 

এর আগে হাই-ভোল্টেজ ম্যাচের শুরুটা হয় আগ্রাসী। রোহিত তার শটের পসরা মেলে ধরেন। দক্ষিণ আফ্রিকার সফল পেস আক্রমণ বাউন্ডারির স্রোত আটকাতে হিমশিম খায়। মার্কো ইয়ানসেন স্নায়ুযুদ্ধে হেরে শুরুই করেন ওয়াইড-বাইয়ে পাঁচ রান দিয়ে। ইয়ানসেন নয় বলের প্রথম ওভার শেষ করেন ১৭ রান দিয়ে। শুবমান গিল তার প্রথম ২২ রানই আনেন বাউন্ডারি থেকে। রোহিত শর্মাকে অপর প্রান্তে থামানোর উপায় খুঁজে পাচ্ছিল না প্রোটিয়ারা। আক্রমণাত্মক রোহিত আর গিলের ব্যাটে ২৭ বলেই ফিফটি পেয়ে যায় ভারত। 

ষষ্ঠ ওভারেই বোলিংয়ে পরিবর্তন আনেন অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা। কাগিসো রাবাদা এসে রোহিতের উইকেট শিকার করেন যখন, ভারত পৌঁছে গেছে ৬২ রানে। ২৪ বলে ৬টি চার ও ১ ছক্কার ৪০ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে ফিরে যান রোহিত। কোহলিও এসেও পাওয়ারপ্লেতে চারটি বাউন্ডারি হাঁকিয়ে উড়ন্ত শুরু পেয়ে যান। ১৪ চার ও ৩ ছক্কায় ভারত পাওয়ারপ্লেতেই এনে ফেলে ৯১ রান। ইয়ানসেন ৪ ওভারেই ৪৩ রান দিয়ে প্রথমবারের মতো এই বিশ্বকাপে পাওয়ার প্লেতে উইকেটশূন্য থাকেন। 

পাওয়ার প্লের পরই ঝড় থেমে গিয়ে শীতলতা নেমে আসে কলকাতায়। কেশব মহারাজ বাঁহাতি স্পিনারদের স্বপ্নের ডেলিভারীতে বোল্ড করে দেন গিলকে। লেগ স্টাম্পের বাইরে পড়া বল টার্ন করে ভেঙ্গে দেয় গিলের স্টাম্প। ২৪ বলে ৪টি চার ও ১ ছক্কায় ২৩ রানের ইনিংস খেলেই থেমে যেতে হয় গিলকে। কলকাতার স্লো টার্নিং উইকেটে দুর্দান্ত আঁটসাঁট লাইন-লেংথে মহারাজ চেপে ধরেন ভারতকে। রাবাদাও ঝড় থামানো ৫ ওভারের স্পেল শেষ করেন ১৯ রানে। শ্রেয়ার আইয়ার শুরুতে বেশ ভোগান্তিতেই পড়েছিলেন। একসময় ৩৫ বলে ১২ রানে থাকা আইয়ার পরে একাদশে ফেরা তাব্রেইজ শামসির উপর চড়াও হন। শামসিকে কয়েকটি বাউন্ডারি মারেন আইয়ার৷ তবে একপ্রান্তে নিঁখুত বোলিংয়ে বাউন্ডারিহীন দশ ওভারের স্পেল করেন মহারাজ ৩০ রান দিয়ে।

কোহলি-আইয়ারের জুটি যদিও ভাঙ্গতে পারছিল না প্রোটিয়ারা। ৩৬ রানে থাকা অবস্থায় শামসির লেগ স্টাম্প থেকে বেরিয়ে যাওয়া বলে ব্যাটের কানা লেগেছিল কোহলির, কিন্তু উইকেটরক্ষক কুইন্টন ডি ককের হাতে জমা পড়েনি তা। ১২৩ বলে চতুর্থ উইকেট জুটি শতরানের হয়ে যায়। কোহলি তার ফিফটি পূর্ণ করেন ৬৭ বলে। আইয়ারও পেয়ে যান ফিফটি ৬৪ বলে। ৩৪তম ওভারে দুইশ পেরিয়ে যায় ভারত। শ্রেয়ার আইয়ার পরে আক্রমণের পথ বেছে নিতে গিয়ে এনগিডির বলে ক্যাচ তুলেন। ৭ চার ও ২ ছক্কায় ৮৭ বলে ৭৭ রানের ইনিংস খেলে যখন ফিরছেন, ভারত ২২৭ রানে তৃতীয় উইকেট হারায়। লোকেশ রাহুল ১৭ বলে ৮ রান করে বাউন্ডারিতে ধরা পড়ে গেলে ২৪৯ রানেই চতুর্থ উইকেট পড়ে ভারতের। 

সূর্যকুমার যাদব এসে তাণ্ডবের ইঙ্গিত দিলেও ১৪ বলে ৫ চারে ২২ রানের ক্যামিও খেলে ফিরে যান। ওদিকে কোহলি সেঞ্চুরির দেখা পেয়ে যান ১১৯ বলে। তার সেঞ্চুরির উৎসব আরও বাড়িয়ে দেন শেষের দিকে রবীন্দ্র জাদেজা ঝড় তুলে। ৩ চার ও ১ ছয়ে ১৫ বলে ২৯ রানে অপরাজিত থাকেন জাদেজা। ১০ চারে কোহলি অপরাজিত থাকেন ১২১ বলে ১০১ রানে।

Comments

The Daily Star  | English

JP central office vandalised, set ablaze

A group of unidentified people set fire to the central office of Jatiyo Party in Dhaka's Kakrail area this evening

41m ago