গাড়ির যত্নে যে ১০ কাজ নিয়মিত করা উচিত

গাড়ির যত্নে যে ১২ কাজ নিয়মিত করা উচিত
ছবি : ফ্রিপিক

সঠিকভাবে গাড়ির যত্ন নিলে যেমন অনেক ধরনের সমস্যা মোকাবিলা করা যায়, তেমনি গাড়ি দীর্ঘদিন ব্যবহারও করা যায়। গাড়ির দীর্ঘস্থায়িত্বের জন্য, যন্ত্রাংশগুলোকে অকালে বিকল হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে কিংবা ঘনঘন মেরামতের ঝামেলা থেকে মুক্ত থাকতে চাইলে কয়েকটি বিষয় মেনে চলা প্রয়োজন। 

গাড়ির যত্নে এই ১২টি বিষয় মেনে চললে গাড়ি যেমন ভালো থাকবে, তেমনি বাড়বে স্থায়ীত্ব। 

গাড়ি প্রতিদিন চালানোর চেষ্টা করুন

সতর্কতার সঙ্গে প্রতিদিন গাড়ি চালান। দেখবেন কোনো ধরনের সমস্যা ছাড়াই গাড়ি দীর্ঘদিন ব্যবহার করতে পারবেন। প্রতিদিন গাড়ি চালানোর ক্ষেত্রে যেসব বিষয় মাথায় রাখা দরকার-

ইঞ্জিন চালু করেই গাড়ির স্পিড খুব দ্রুত অনেক বেশি বাড়াবেন না। এটা ইঞ্জিনের জন্য ক্ষতিকর। ইঞ্জিন গরম করার জন্য পার্কিং লটে গাড়ি চালু করে রাখাটা মোটেও ভালো কাজ নয়। ইঞ্জিনের তাপমাত্রা বাড়লেই যে গাড়ি ভালো কাজ করে, এমন কোনো কথা নেই। বরং ইঞ্জিন চালু করে গাড়ি এভাবে ফেলে রাখলে সেটি ইঞ্জিনের জন্যই ক্ষতির।

বাইরে খুব বেশি গরম বা ঠান্ডা আবহাওয়ায় উচ্চ গতিতে গাড়ি চালানোর সময় খুব দ্রুত এক্সিলারেটরে চাপ দেওয়া উচিত না। 

মানসম্মত পাম্প থেকে জ্বালানী নেওয়ার চেষ্টা করুন

গাড়িতে জ্বালানি নেওয়ার আগে সেটি পাম্পে ফিল্টার করা হয়েছে কি না, আগে জিজ্ঞেস করে নিন। পাম্পগুলো ভালোমতো নিয়মিত ফিল্টার পরিবর্তন করে কি না জেনে নিন। যদি না করে, তাহলে অন্য কোনো ফিলিং স্টেশন থেকে জ্বালানি নিন। অনেক স্টেশনেই ফিল্টার থাকে না। ফলে গাড়িতে নোংরা জ্বালানি ঢুকে যেতে পারে। জ্বালানির মান অক্ষুণ্ন রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে এমন পাম্প থেকে গাড়ির জন্য জ্বালানি কিনুন। 

এ ছাড়া যদি দেখেন ট্যাংকার থেকে পাম্পে জ্বালানি ভরা হচ্ছে, তাহলে সেদিন আর ওই পাম্প থেকে জ্বালানি না নেওয়াই ভালো। কারণ, ট্যাংকার থেকে জ্বালানি ভরার ফলে পাম্পের আন্ডারগ্রাউন্ড ট্যাংকারে ঢেউয়ের সৃষ্টি হয় এবং তখন জ্বালানির সঙ্গে বালি মিশ্রিত হয়ে পড়ে। এমন সময় গাড়িতে জ্বালানি নিলে সেই জ্বালানির মধ্যেও বালি মিশ্রিত থাকতে পারে, যা গাড়ির ফুয়েল ফিল্টার ও ইঞ্জিনের জন্য ক্ষতিকর। তাই পাম্পের ট্যাংকার যেদিন লোড করা হয়, সেদিন জ্বালানি না নেওয়াই ভালো। 

চাকা আটকে গেলে জোরাজুরি করবেন না

কাদায় গাড়ির চাকা আটকে গেলে গাড়ির ব্যয়বহুল যন্ত্রাংশের ক্ষতি করে সমস্যাটিকে আরও খারাপ করবেন না। গাড়িকে ধীরে ধীরে মুক্ত করা চেষ্টা করা যেতে পারে। কিন্তু যদি মনে হয়, চাকা অনেক খারাপভাবে আটকে গেছে, তাহলে অন্য উপায় অবলম্বন করুন। গাড়িকে বারবার সামনে পেছনে নিলে এবং টায়ারকে উচ্চ গতিতে ঘোরালে সেখান থেকে অনেক তাপ উৎপন্ন হতে পারে, যা গাড়ির ট্রান্সমিশন, ক্লাচ এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশের ক্ষতি করতে পারে। গাড়ির মূল্যবান যন্ত্রাংশ নষ্ট না করে টো-ট্রাকের সাহায্য নেওয়া ভালো সিদ্ধান্ত। 

গাড়ি ছায়ায় পার্ক করুন

গাড়ি পার্ক করার জন্য গ্যারেজ সব সময়ই আদর্শ জায়গা। কিন্তু যখন পার্কিংয়ের জন্য গ্যারেজ পাওয়া যাবে না, তখন অবশ্যই ছায়া আছে এমন জায়গায় গাড়ি পার্ক করুন। দীর্ঘ সময় সরাসরি সূর্যের তাপে থাকলে গাড়ির ভেতর ও বাইরের দিকের ক্ষতি হতে পারে। যদি কোনোভাবেই ছায়ায় পার্কিং করার মতো অবস্থা না থাকে, তাহলে অন্তত গাড়িকে কাভার দিয়ে ঢেকে রাখুন। এতে সূর্যের আলট্রাভায়োলেট রশ্মি গাড়ির পেইন্টের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। 

উইন্ডশিল্ডের ছোট ফাটল দ্রুত মেরামত করুন

গাড়ির উইন্ডশিল্ডের বড় কাঁচ যদি কোনো কারণে সামান্য ফেটে যায় বা ক্র্যাক দেখা যায়, তাহলে দেরি না করে গাড়িটিকে রিপেয়ার শপে নিয়ে যান। পুরো উইন্ডশিল্ড পরিবর্তন না করেও কারিগররা সেই ফাটা দাগ ঠিক করতে পারবেন। ফলে সেটি কাঁচের অন্যত্র ছড়িয়ে পড়বে না। একইসঙ্গে কাঁচের স্থায়িত্বও অক্ষুণ্ন থাকবে।

গাড়ির ছাদে ভারী কিছু নেবেন না

গাড়ির ছাদে কোনো কিছু নেওয়ার আগে ছাদের ওয়েট লিমিট যাচাই করে নিন। গাড়ির ম্যানুয়ালে এটি উল্লেখ করা থাকে। গাড়ির রুফ র‌্যাকের ওয়েট লিমিটও যাচাই করুন। সাধারণত এটি ৭০-৯০ কেজির মধ্যে হয়ে থাকে। নির্ধারিত মাত্রার বেশি ওজন বহন করলে গাড়ির ছাদের ক্ষতি হওয়ার পাশাপাশি টায়ারেরও ক্ষতি হতে পারে। ছাদে মালামাল নেওয়ার আগে যত্ন সহকারে নিন, যাতে ছাদে কোনো দাগ বা টোল না পড়ে। 

গাড়ির রঙ অক্ষুণ্ন রাখতে নিয়মিত পরিষ্কার করুন

গাড়ি ওয়াক্স করলে শুধু দেখতে নতুন লাগে তা-ই নয়। এর আরও নানাবিধ উপকার আছে। ওয়াক্স গাড়ির অক্সিডেশন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্থ করে গাড়ির স্থায়িত্ব বাড়াতে সাহায্য করে। তাছাড়া চকচকে গাড়ি চালানোর বাড়তি মজা তো আছেই। অনেকেই লিকুইড ও স্প্রে ওয়াক্স ব্যবহার করেন। কারণ, রাবার বা পেস্ট ওয়াক্সের তুলনায় লিকুইড ওয়াক্স ব্যবহার করে গাড়িকে চকচকে করা তুলনামূলক অনেক সহজ। কিন্তু ওয়াক্সের দীর্ঘস্থায়ীত্বের জন্য রাবার বা পেস্ট ওয়াক্সই উত্তম। গাড়ির ওয়াক্স মোছার জন্য নরম কাপড় বা মাইক্রোফাইবার কাপড় ব্যবহার করুন। তাহলে গাড়ির গায়ে বাড়তি কোনো আঁচড় লাগবে না।

ইঞ্জিন পরিষ্কার রাখুন

প্রতি এক বা দুই বছর অন্তর ইঞ্জিন পরিষ্কার করার অনেক সুফল আছে। পরিষ্কার ইঞ্জিন নোংরা ইঞ্জনের তুলনায় কম উত্তপ্ত হয়। ইঞ্জিন পরিষ্কারের সময় এয়ার ইনটেক, ডিস্ট্রিবিউটর এবং অ্যান্যান্য ইলেক্ট্রনিক পার্টসগুলো সংরক্ষিত রাখুন। এসব যন্ত্রাংশগুলোকে প্লাস্টিকের ব্যাগে মুড়িয়ে রাখতে পারেন। ইঞ্জিন পরিষ্কার করার জন্য ডিশওয়াশিং লিকুইড বা অন্যান্য ভালো গ্রিস-কাটিং ডিটারজেন্ট ব্যবহার করতে পারেন। 

গাড়ির এসি নিয়মিত ব্যবহার করুন

গাড়ির এসি সচল রাখতে নিয়মিত ব্যবহার করুন। দীর্ঘদিন একটানা ব্যবহার না করলে এসি বিকল হয়ে যেতে পারে বা নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। 

গাড়ির ব্যাটারি নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করুন

গাড়ির ব্যাটারির স্থায়িত্ব বাড়াতে এর নিয়মিত পর্যবেক্ষণের বিকল্প নেই। ব্যাটারি সব সময় পরিচ্ছন্ন রাখুন। ব্যাটারির নোংরা কেস বিদ্যুৎ পরিবহনে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। নরম কাপড় দিয়ে বা প্রয়োজন হলে হালকা ডিটারজেন্টের সাহায্যে ব্যাটারির কেস সবসময় পরিষ্কার রাখুন। ব্যাটারি পোস্ট বা টার্মিনাল পরিষ্কার করার সময় সব সময়ই নেগেটিভ ক্যাবলটির (কালো রঙের কিংবা মাইনাস সাইন) সংযোগ আগে বিচ্ছিন্ন করুন, তারপর লাল রঙের ক্যাবলটি খুলুন। কিন্তু ক্যাবল পুনরায় লাগানোর সময় লাল ক্যাবলটি আগে লাগাবেন। 

সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট
গ্রন্থনা: আহমেদ হিমেল

Comments

The Daily Star  | English

Choking waters: The dangerous decline of oxygen in Dhaka’s peripheral rivers

Bangladesh, often described as a land of rivers, is criss-crossed by more than 230 major and minor waterways.

16h ago