পুরোনো গাড়ি ভালো দামে বিক্রির জন্য যা করবেন

কিছু সাধারণ সাবধানতা মেনে চললে পুরোনো গাড়ি বেশ ভালো দামে বিক্রি করা সম্ভব। 
ছবি: সংগৃহীত

নানা কারণে আপনার পুরোনো গাড়িটি বিক্রি করে দেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। হয়তো নতুন আরেকটি গাড়ি পছন্দ হয়েছে, কিংবা পরিবারে সদস্য সংখ্যা বেড়েছে, তাই আরও বেশি আসনের গাড়ি দরকার। 

একটি ব্যক্তিমালিকানাধীন গাড়ি বিক্রি করতে নানা রকম ঝক্কিঝামেলা পোহাতে হয়। নানা চড়াই-উৎরাইয়ের পরও অনেক সময় দেখা যায় পছন্দসহ দাম পাওয়া যাচ্ছে না। তখন মন খারাপ হয়। 

তবে কিছু সাধারণ সাবধানতা ও পরামর্শ মেনে চললে পুরোনো গাড়ি বেশ ভালো দামে বিক্রি করা সম্ভব। 

গাড়ির দাম কীভাবে নির্ধারণ করবেন?

ধরুন, একটি নতুন গাড়ি কেনার পর ৫ বছর চালিয়ে এখন বিক্রি করতে চাচ্ছেন। প্রথমেই আপনার মাথায় আসবে গাড়িটির বিক্রয়মূল্য কত হতে পারে। এটা নির্ভর করে অনেক কিছুর ওপর। আপনার গাড়িটির এখন কী অবস্থা, কত কিলোমিটার চলেছে, ইঞ্জিন, কাঁচসহ গাড়ির গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলোর কী অবস্থা কিংবা একই মডেলের নতুন একটি গাড়ির বর্তমান ক্রয়মূল্য কত- এসব কিছুর ওপর নির্ভর করে দাম নির্ধারিত হতে পারে। একই রকম ব্যবহৃত হয়েছে, এরকম আরও কিছু গাড়ির বিক্রয়মূল্য থেকেও আপনার গাড়ির সম্ভাব্য দাম অনুমান করতে পারবেন। 

এ ছাড়া অনলাইনে বিভিন্ন ওয়েবসাইটে, মার্কেটপ্লেসে কিংবা সামাজিক যোগাযোগেরমাধ্যম থেকেও একটা সম্ভাব্য দাম আন্দাজ করা যেতে পারে। 

কীভাবে সবচেয়ে ভালো দাম পাওয়া যাবে? কিছু পরামর্শ মেনে চললে এটা বোঝা যাবে। 

একাধিক ক্রেতাকে দেখান

গাড়িটি একাধিক ক্রেতাকে দেখান। কে কেমন দাম বলে, সেটি দেখুন। একজন বা দুজন ক্রেতাকে দেখালে ভালো দাম নাও বলতে পারে। কয়েকজনকে দেখালে ভিন্ন ভিন্ন দাম যেমন পেতে পারেন, তেমনি নিজের গাড়ির বিক্রয়মূল্য সম্পর্কেও আপনার আরও ভালো ধারণা তৈরি হবে। যাকেই গাড়ি দেখান, তার অফারকৃত দাম ও অন্যান্য মতামত লিপিবদ্ধ করে রাখুন, যাতে পরবর্তীতে দরাদরি করতে সুবিধা হয়। গাড়ির কোনো কিছু দ্রুত মোরমতযোগ্য হলে সেটি সারিয়ে ফেলুন। 

একাধিক ক্রেতাকে দেখালে কয়েকটি সুবিধা আছে। গাড়ির সবচেয়ে ভালো বিক্রয়মূল্য পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। গাড়ির মূল্য নিয়ে মীমাংসার সময়ও এটি কাজে আসবে। একাধিক ক্রেতার কাছ থেকে গাড়ির ভালো ও মন্দ দিকগুলো সম্পর্কে জানার পর নতুন কাউকে বলার সময় আপনি আরও ভালোভাবে গাড়িটিকে উপস্থাপন করতে পারবেন। দেখা গেছে, একজন ক্রেতা আপনার গাড়ির এমন একটি ভালো দিকের কথা বললো, যেটা আপনার মাথাতেই ছিল না। তখন সেটিকে পুঁজি করে আরও বেশি দামে গাড়িটি বিক্রির সুযোগ তৈরি হতে পারে। 

ভালোভাবে দামাদামি করুন

শুধু গাড়ি বিক্রির ক্ষেত্রেই নয়, যেকোনো ব্যবসায় লাভ করতে হলে ভালো নেগোসিয়েশন বা দামাদামির বিকল্প নেই। আপনি যদি ভালো দামাদামি করতে পারেন, তাহলে এমন দামে বিক্রি করতে পারবেন, যাতে আপনি নিজেই অবাক হবেন। তবে দামাদামি শুরু করার আগে আপনার গাড়টি সম্পর্কে যত বেশি সম্ভব জেনে নিন। আপনার গাড়ির সুফলগুলো সহজে বলতে শিখুন। ক্রেতার কাছে কীভাবে উপস্থাপন করছেন, সেটিও গুরুত্বপূর্ণ। কোনো প্রতারণার আশ্রয় নেবেন না। তবে আপনার গাড়ির ভালো দিকগুলো পূর্ণ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ক্রেতাকে বলুন। অন্য গাড়ির চেয়ে কেন আপনারটি আলাদা, কেন একই দামে অন্য গাড়ির চেয়ে আপনারটি ভালো অপশন, সেটি বুঝিয়ে বলুন। মনে দ্বিধা নিয়ে কোনো তথ্য উপস্থাপন করবেন না। 

বিক্রির সময় নির্ধারণে সতর্ক থাকুন

আপনার গাড়টি কখন বিক্রি করবেন, সেই সময়টা নির্ধারন করুন অনেক ভেবে-চিন্তে, চারপাশের খোঁজখবর নিয়ে। যেমন- আপনার গাড়িটি যদি হয় কনভার্টিবল, তাহলে গ্রীষ্ম ও শরতের মাসগুলোতে ভালো দাম পেতে পারেন। 

যদি দেখেন আপনার এলাকায় আপনার গাড়িটির এখন বেশ চাহিদা আছে, তাহলে যত দ্রুত সম্ভব বিক্রি করে দিন। গাড়ির বাজারের দিকেও খেয়াল রাখুন। কখন কোন গাড়ির দাম বাড়ছে, কখন কমছে, সেটি মাথায় রেখে গাড়ি বিক্রি করুন। দেখা গেলো আপনার মডেলের গাড়ির দাম কয়েক মাস পরই অনেক বাড়বে, তাহলে আপনিও কয়েকমাস পর গাড়িটি বিক্রি করুন। এখনকার চেয়ে চেয়ে তখন বেশি ভালো দাম পাবেন। আবার যদি দেখেন গাড়ির দাম কমছে, তাহলে দ্রুত বিক্রি করুন। কারণ পরে বিক্রি করলে আরও কম দামে বিক্রি করতে হতে পারে। 

পুরোনো গাড়ির মূল্য বাড়াতে সাহায্য করবে যেসব কাজ

পুরোনো গাড়ি বিক্রির আগে সবার মাথাতেই থাকে যে কীভাবে গাড়টিকে সর্বোচ্চ দামে বিক্রি করা যায়। তবে কিছু সাধারণ বিষয়ে ঘাটতি থাকায় ক্রেতারা বেশি দাম বলেন না। গাড়িটিকে সর্বোচ্চ দামে বিক্রি করতে হলে- 

গাড়ির যত্ন নিন 

গাড়ি বিক্রির আগে ভালোমতো যত্ন নেওয়া শুরু করুন। পূর্বে গাড়ির যত রক্ষাণাবক্ষেণ করেছেন, সেই রেকর্ড ক্রেতাকে দেখান। এতে প্রমাণ হবে আপনি গাড়ির কতটা যত্ন নিয়েছেন।

গাড়ি ভালোভাবে পরিষ্কার করুন 

ব্যাবহৃত গাড়ি অনেকেই ১-২ মাস পর পর পরিষ্কার করেন। তবে বিক্রির আগে এর চেয়েও ভালো করে গাড়ি পরিষ্কার করা উচিত। গাড়ির প্রতিটি খুঁটিনাটি ভালোভাবে পরিষ্কার করুন। গাড়িকে যথাসম্ভব পরিষ্কার ও ঝকঝকে করে তুলুন। গাড়ির ভেতর অচতেনভাবে পড়ে থাকা ব্যক্তিগত সামগ্রি সরাতে ভুলবেন না।  

প্রয়োজন হলে মৌলিক কিছু মেরামত করুন

কোনো কিছু মেরামত করার দরকার হলে মেরামত করুন। মনে রাখবেন, মেরামতের পেছনে ১০০ টাকা ব্যয় না করলে বিক্রয়মূল্য অন্তত ১০০০ টাকা কমে যেতে পারে। যেমন, গাড়ির বাইরের দিকে যদি কোনো দাগ বা টোল থাকে কিংবা গড়ির রং যদি কোথাও উঠে যায়, তাহলে সেগুলো মেরামত করুন। এসব ছোটখাটো জিনিসের কারণে ক্রেতা বেশি দাম বলতে চান না। গাড়ির কাঁচে যদি ফটল ধরে, তাহলে সেটিও মেরামত করুন। আপনার হয়তো মনে হতে পারে গাড়িতো বিক্রি করেই দিচ্ছি, এখন আর কাঁচ লাগানোর পেছনে এত অর্থ খরচ করবো! কিন্তু দেখা গেল ফাটা কাঁচের কারণে গাড়িটি ২০ হাজার টাকা কম দামে বিক্রি করতে হলো, যেখানে কাঁচ লাগাতে খরচ হতো ১০ হাজার টাকা। 

সূত্র: কার অ্যান্ড ড্রাইভার
গ্রন্থনা: আহমেদ হিমেল

Comments