বিলাসবহুল পোরশা গাড়ির ৫ অজানা তথ্য

বিলাশবহুল পোর্শা গাড়ির ৫ অজানা তথ্য
ছবি: পোর্শার ওয়েবসাইট থেকে

বিশ্বব্যাপী বিলাসবহুল স্পোর্টস কার নির্মাতা হিসেবে জার্মান গাড়িনির্মাতা পোরশা সবার কাছেই অত্যন্ত জনপ্রিয়। তবে এই জার্মান অটোমোবাইল কোম্পানি সম্পর্কে অনেক তথ্যই রয়েছে সকলের অজানা।

পোরশা সম্পর্কে এমন ৫টি অজানা তথ্য হলো- 

ডায়াল ৯১১

পোরশা ৯১১ হলো সর্বকালের সবচেয়ে জনপ্রিয় স্পোর্টস কারগুলোর মধ্যে অন্যতম। পোরশা সবচেয়ে সফল মডেলগুলোর একটি হলো এই ৯১১, কিন্তু এই গাড়িটির নাম কিন্তু নির্মাতারা শুরুতে অন্যকিছুই রাখতে চেয়েছিলেন।

১৯৬৩ সালে ফ্রাংকফুর্ট আন্তর্জাতিক মোটর উৎসবে ৬ সিলিন্ডারের ইঞ্জিনবিশিষ্ট এই নতুন গাড়ি এনে পোরশা সর্বপ্রথম আলোড়ন সৃষ্টি করে। সেসময় নির্মাতারা এর নাম রাখতে চান ৯০১। কিন্তু জানা যায় ফ্রেঞ্চ কোম্পানি পিউগট ইতোমধ্যেই 'ডিজিট-শূন্য-ডিজিট' ধারার সবগুলো সংখ্যা নিজেদের ট্রেডমার্ক করে রেখেছে। ফলে উপায় না পেয়ে পোরশা তদের গাড়ির নাম দেয় ৯১১।

বর্তমানে এই ৯১১ সংখ্যাটি পোরশা সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে পড়েছে। এই কোম্পানির সব কয়টি ফোন নম্বর স্থানীয় ডায়াল কোডের পরে ৯১১ সংখ্যাটি দিয়ে শুরু হয়। শুধু তাই নয়, বর্তমানে কোম্পানির মূলধনের পরিমাণ ৯১১ মিলিয়ন শেয়ার, এবং এর শেয়ারগুলো পি৯১১ কোডের অধীনে তাদের ব্যবসা পরিচালনা করতে চলেছে।

বৈদ্যুতিক গাড়ির জনক

সম্প্রতি পোরশার মূল কোম্পানি ভক্সওয়াগন বেশ জোরেশোরেই গ্যাসচালিত গাড়ি তৈরি বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। তবে অনেকেই জানেন না, এই কোম্পানিটিই বিশ্বের প্রথম বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা।

১৮৯৮ সালে কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা ফারদিনান্দ পোরশা তৈরি 'এগার-লোহনার সি২ ফোটন' গাড়িটি বিদ্যুৎচালিত ছিল। এটিই ইতিহাসের প্রথম সম্পূর্ণ বৈদ্যুতিক শক্তিতে চালিত গাড়ি।

এর ২ বছর পর কোম্পানিটি 'লোহনার-পোরশা' নামে একটি নতুন মডেলের উদ্ভাবন করে, যেটি ছিল একইসঙ্গে বিদ্যুৎ এবং পেট্রোলে চালিত।

রূপালি পর্দায় পোরশা

রূপালি পর্দায় পোরশার উপস্থিতি নিয়মিতভাবেই চোখে পড়ে। ১৯৭১ সালে মুক্তি পাওয়া চলচ্চিত্র 'লা মাঁস'-এর সবচেয়ে জনপ্রিয় উদাহরণ। এই চলচ্চিত্রে মাইকেল ডিলানি চরিত্রে অভিনেতা স্টিভ ম্যাককুইনকে দেখা যায় ফ্রান্সের বিখ্যাত ২৪ ঘণ্টাব্যাপী গাড়ি প্রতিযোগিতায় এক ফেরারিচালক জার্মান প্রতিদ্বন্দ্বির বিপক্ষে পোর্শে ৯১৭ গাড়িটি চালাতে।

১৯৯৫ সালের চলচ্চিত্র 'ব্যাড বয়েজ'-এ উইল স্মিথের চরিত্রটিকে তার এক সহকর্মী গোয়েন্দার সঙ্গে বিপুল পরিমাণ হেরোইন চুরির তদন্ত করার সময়ে একটি টার্বো ৯১১ চালাতে দেখা যায়।

টপ গান চলচ্চিত্রে পোর্শা ৩৫৬ মডেলের গাড়ি। ছবি: সংগৃহীত

 
হলিউড তারকা টম ক্রুজ অভিনীত কমেডি ধারার চলচ্চিত্র 'রিস্কি বিজনেস' মুভিতে এ পোরশা ৯২৮ গাড়িটির দেখা মেলে। টম ক্রুজের চরিত্রটিকে তার অভিভাবকেরা বাড়ি না ফেরা পর্যন্ত তাদের গাড়িটি চালাতে নিষেধ করে। কিন্তু সে নিষেধ না মেনে গাড়িটি চালায় এবং দুর্ভাগ্যজনকভাবে এক দুর্ঘটনায় গাড়িটি হ্রদে ডুবে যায়।
 
এ ছাড়া বিখ্যাত 'টপ গান' চলচ্চিত্রটিতেও টম ক্রুজকে পোরশা ৩৬৫ স্পাইডার মডেলের একটি গাড়িতে দেখা যায়।
জনপ্রিয় 'স্কারফেস' চলচ্চিত্রে আল পাচিনো একজন কিউবান অভিবাসীর চরিত্রে অভিনয় করেন যিনি পরবর্তীতে মিয়ামির একজন শক্তিশালী ড্রাগ লর্ড হয়ে ওঠেন। এই চলচ্চিত্রে তাকেও একটি পোরশা ৯২৮ চালাতে দেখা যায়।

মোটর স্পোর্টসে অংশগ্রহণ

বিশ্বের বৃহত্তম রেস কার প্রস্তুতকারকদের মধ্যে অন্যতম পোরশা। ১৯৫০-৬০-এর দশকে দূরপাল্লার প্রতিযোগিতাগুলোতে খুব বড় আকারের সাফল্যের মুখ দেখেনি পোরশা প্রথমদিককার মডেলগুলো। তবে ১৯৭০ সালে ফ্রান্সের বিখ্যাত '২৪ হাওয়ার লা মাঁস' প্রতিযোগিতায় প্রথম বিজয়ী হয় পোরশা ৯১৭ এবং এরপর থেকে নিয়মিতভাবে তারাই বিজয়ী হয়ে আসছে এই প্রতিযোগিতায়।

মন্টে কার্লোসহ ঐতিহাসিক সব র‍্যালিগুলোতেও বেশ কৃতিত্বের ছাপ রেখেছে তাদের ৯১১ গাড়িটি।

এ ছাড়া ফর্মুলা ওয়ানেও অংশ নিয়েছে তারা। ১৯৫৭-৬২ সাল পর্যন্ত তাদের একটি দল ছিল। তবে তারা শুধু ১৯৬১ এবং ১৯৬২ সালে দুটি পূর্ণ মৌসুমে প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। তবে শুধু ১৯৬২ সালেই একবার বিখ্যাত রেসিং কারচালক ড্যান গার্নির হাত ধরে ফ্রেঞ্চ গ্র্যান্ড প্রিক্সেতে বিজয়ী হয় পোরশা।

তারা ১৯৮৩ সালে ব্রিটিশ মোটর রেসিং দল ম্যাকলারেনকে ইঞ্জিন সরবরাহ করার মাধ্যমে পুনরায় প্রতিযোগিতায় ফিরে আসে এবং দুর্দান্ত সাফল্য উপভোগ করে। ম্যাকলারেন ১৯৮৪ এবং ১৯৮৫ সালে পরপর দুটি কনস্ট্রাক্টর চ্যাম্পিয়নশিপ জিতে নেয়।

যাইহোক, এই মাসের শুরুতে রেসিং দল রেড বুলের সঙ্গে পোরশার একটি পার্টনারশিপের উদ্যোগ ব্যর্থ হয়। এই উদ্যোগটি সফল হলে পোর্শে পুনরায় ফর্মুলা ওয়ানে ফিরতে সমর্থ হতো।

 
পোরশা ও পিখ

পোরশা-পিখ পরিবার হলো ভক্সওয়াগন গ্রুপের প্রধান শেয়ারহোল্ডার। জার্মানির গাড়ি শিল্পে তাদের রয়েছে কয়েক দশকের বিস্তৃত ইতিহাস।

ফার্দিনান্দ পোরশা নামের এক অস্ট্রিয়ান বংশোদ্ভূত প্রকৌশলী তার নাম বহনকারী এই বিলাসবহুল গাড়ির ব্র্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। এ ছাড়া তিনি ভক্সওয়াগন বিটল তৈরি করেছিলেন এবং একইসঙ্গে নামকরা ওপেন-টপ মার্সিডিজ-বেঞ্জ এসএসকে স্পোর্টস কারটিও ডিজাইন করেছিলেন।

তিনি ছিলেন নাৎসি দলের সদস্য এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি অস্ত্র উৎপাদনে সহায়তা করে জার্মান যুদ্ধে অবদান রেখেছিলেন। তিনি ১৯৫১ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

অন্যদিকে ফার্দিনান্দ পিখ হলেন ফার্দিনান্দ পোরশার নাতি। তিনি ১৯৯৩ থেকে ২০০২ পর্যন্ত ভক্সওয়াগনের প্রধান নির্বাহীর ভূমিকা পালন করেন। তিনি এই কোম্পানিকে এশিয়ার বড় বড় প্রতিদ্বন্দ্বিদের সঙ্গে তুমূল প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে একটি গ্লোবাল অটো জায়ান্টে পরিণত করতে সক্ষম হন। 

এ ছাড়া তিনি কোম্পানিটিকে পুনর্গঠিত করেছিলেন এবং প্রায় ১০ হাজারের অধিক কর্মী ছাঁটাইয়ের মাধ্যমে কোম্পানির আয়-ব্যায়ের ভারসাম্য ফিরিয়ে এনেছিলেন। খুব কঠোর স্বভাবের একজন ম্যানেজার হিসেবে তার কিছুটা কুখ্যাতিও জুটেছিল। এ কারণেই জার্মান মিডিয়ায় তাকে ডাকা হতো 'দ্য এমপেরর' এবং 'দি প্যাট্রিয়ার্ক' বা কর্তা হিসেবে। ২০১৯ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

 

অনুবাদ করেছেন নাফিসা ইসলাম মেঘা

 

Comments

The Daily Star  | English

No price too high for mass deportations

US President-elect Donald Trump has doubled down on his campaign promise of the mass deportation of illegal immigrants, saying the cost of doing so will not be a deterrent.

4h ago