বাংলাদেশে মোবাইল ইন্টারনেট

দাম ফ্রান্স-ইতালি-ভারতের চেয়ে বেশি, গতি শ্রীলঙ্কার চেয়েও কম

বাংলাদেশে মোবাইল ইন্টারনেটের দাম ইতালি, ফ্রান্স ও ভারতের চেয়ে বেশি হলেও গতিতে শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, উগান্ডার মতো দেশগুলোর থেকেও অনেক পিছিয়ে।
স্টার বাংলা অনলাইন গ্রাফিক্স

বাংলাদেশে মোবাইল ইন্টারনেটের দাম ইতালি, ফ্রান্স ও ভারতের চেয়ে বেশি হলেও গতিতে শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, উগান্ডার মতো দেশগুলোর থেকেও অনেক পিছিয়ে।

ইন্টারনেটের দাম ও গতি পর্যালোচনাকারী ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠান 'কেবল ডট কো ডট ইউকে'র এক পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী কম দামে ডেটা প্রাপ্তির দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান ১২তম। বাংলাদেশে গড়ে প্রতি গিগাবাইট (জিবি) মোবাইল ডেটা কিনতে খরচ হয় ৩২ সেন্ট বা প্রায় ৩৩ টাকা।

এই প্রতিষ্ঠানের তথ্য অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়ায় কম দামে মোবাইল ইন্টারনেট পাওয়ার হিসাবে ভারত পঞ্চম, নেপাল দশম, শ্রীলঙ্কা ১১তম, পাকিস্তান ১৩তম, ভুটান ১৯তম, আফগানিস্তান ৬৪তম ও মালদ্বীপ ১৪৫তম অবস্থানে রয়েছে।

ইন্টারনেটের গতি বিষয়ে কাজ করা জনপ্রিয় ওয়েবসাইট 'স্পিডটেস্ট'র ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত বৈশ্বিক সূচক অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে মোবাইল ইন্টারনেটের গতির দিক দিয়ে ১৩৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১২৫তম।

এ তালিকায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশ মালদ্বীপ ২৮তম, নেপাল ১১৫তম, পাকিস্তান ১১৬তম, শ্রীলঙ্কা ১১৭তম, ভারত ১১৮তম ও আফগানিস্তান ১৩৭তম অবস্থানে রয়েছে।

বাংলাদেশের মোবাইল ইন্টারনেটের ধীরগতির বিষয়ে জানতে চাইলে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, '২০১৮ সালে আমরা ফোর-জি-তে গেলেও করোনা ও অন্যান্য কারণে আমাদের ফোর-জি সম্প্রসারণ হয়েছে মূলত ২০২১ সালে। এরপর মোবাইল অপারেটররা টাওয়ারগুলো এক্সপানশন করেছে, কিন্তু তাদের আরও দুটো কাজ বাকি রয়েছে। ২০২১ সালে আমরা যে স্পেকট্রাম দিয়েছি সেটা তারা ব্যবহার করেনি, আবার ২০২২ সালে যেটা দিয়েছি সেটাও টাচ করেনি। ফোর-জি না হওয়া পর্যন্ত স্পিড আসবে কীভাবে?'

তিনি বলেন, 'আপনারা নিশ্চই জানেন, এর ব্যবস্থা হিসেবে আমরা গ্রামীণফোনের নতুন সিম বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছি। অন্যদের সতর্ক করে দিয়েছি। তারা যদি কোয়ালিটি ইমপ্রুভ না করে, তাহলে অবশ্যই জরিমানাসহ যা যা করনীয় আছে তা করবো।'

'আমাদের অপারেটররা জানিয়েছে, ২০২২ সালে যে স্পেকট্রাম নিলাম করা হয়েছে, আগামী নভেম্বরে তারা সেটা ব্যবহার শুরু করবে। এই স্পেকট্রাম ব্যবহার করলে এখন যে স্পিড আছে, সেখানে আমূল পরিবর্তন আসবে', যোগ করেন তিনি।

স্পিডটেস্টের পরিসংখ্যান অনুযায়ী দক্ষিণ এশিয়ায় আফগানিস্তান ছাড়া বাকি দেশগুলোতে বাংলাদেশের চেয়ে দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবা পাওয়া যায়। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে গতিতে শীর্ষে রয়েছে মালদ্বীপ। সেখানে ৬২ দশমিক ৩২ এমবিপিএস ইন্টারনেট সরবারহ করা হয়। যেখানে বাংলাদেশের গতি ১১ দশমিক ৭১ এমবিপিএস।

এ ছাড়া, দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবায় আফ্রিকার দেশ উগান্ডা, অ্যাঙ্গোলা, নামিবিয়া, কঙ্গো প্রজাতন্ত্র ও ইথিওপিয়ার মতো দেশগুলোও বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে।

স্টার বাংলা অনলাইন গ্রাফিক্স

২৩৩টি দেশ ও অঞ্চলের কয়েক হাজার মোবাইল ডেটার মূল্য ও তথ্য বিশ্লেষণ করে 'ক্যাবল ডট কো ডট ইউকে' ২০২২ সালের বৈশ্বিক মোবাইল ডাটার দাম নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। যেখানে বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল ও কম দামের মোবাইল ডেটার তথ্য-উপাত্ত দেখানো হয়েছে।

ওপেন টেকনোলোজি ইনস্টিটিউট, গুগল ইনকরপোরেশন, প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্ল্যানেট ল্যাবসহ বেশ কিছু সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।

এ বিষয়ে ফোর্বসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালে বাংলাদেশে ৮৬ মিলিয়ন মোবাইল সাবস্ক্রিপশন ছিল, যা বর্তমানে ১৭৮ মিলিয়নে পৌঁছেছে। এ ছাড়া, বাংলাদেশের ৯৫ শতাংশ এলাকা ফোর-জি নেটওয়ার্কের আওতাধীন, অথচ দেশের মোবাইল ইন্টারনেটের গতি প্রতি ১১.৭১ এমবিপিএস। যেখানে বিশ্বের গড় মোবাইল ইন্টারনেটের গড় গতি ৩৩ এমবিপিএসের বেশি।

দৈনন্দিন জীবনে ইন্টারনেটের ক্রমবর্ধমান ব্যবহারের ফলে এর দাম ও গতির ওপর নির্ভরশীলতা বেড়ে চলেছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হিসেবে সম্প্রতি যোগ হয়েছে ফ্রিল্যান্সিং; যেখানে ইন্টারনেটের বিকল্প নেই।

এ বিষয়ে ফোর্বসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মোবাইল প্রযুক্তি ও সেবার মাধ্যমে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দেশের জিডিপির ৫ শতাংশ অর্জিত হয়। অর্থাৎ, ইন্টারনেট প্যাকেজের দাম দেশের অর্থনীতির সঙ্গে সরাসরি জড়িত।

২০২২ সালে সেপ্টেম্বর মাসে গড়ে ১২৬ দশমিক ৯৬ এমবিপিএস ইন্টারনেট সরবারহের মাধ্যমে গতির দিক দিয়ে শীর্ষে রয়েছে নরওয়ে। এরপরের অবস্থানে থাকা সংযুক্ত আরব আমিরাতে ইন্টারনেট স্পিড ১২৬ দশমিক ৮৬ এমবিপিএস, কাতারে ১২৪ দশমিক ২৯ এমবিপিএস, চীনে ১১৬ দশমিক ৪২ ও নেদারল্যান্ডসে ১০৫ দশমিক ৫২ এমবিপিএস।

সবচেয়ে কম দামের মোবাইল ডেটা

প্রতি জিবি মাত্র ৪ সেন্ট বা ৪ টাকার সামান্য বেশি দামে বিশ্বে সবচেয়ে কম মূল্যের মোবাইল ইন্টারনেট সরবরাহ করা হয় ইসরায়েলে। প্রতি জিবি ১২ সেন্টের সামান্য বেশি দাম নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে ইউরোপের দেশ ইতালি। এ ছাড়া, প্রতি জিবি ইন্টারনেটের দাম স্যান মারিনোতে ১৪ সেন্ট, ফিজিতে ১৫ সেন্ট ও ভারতে ১৭ সেন্ট। দামের দিক থেকে এরপরেই রয়েছে কিরগিজস্তান, ফ্রান্স, মালদোভা, উরুগুয়ে ও নেপাল।

বেশি দামের মোবাইল ডেটা

২০২২ সালের হিসাবে, গিগাবাইটপ্রতি ৪১.০৬ ডলার ব্যয় করে বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল মোবাইল ডেটা ব্যবহার করতে হয় সেন্ট হেলেনা দ্বীপবাসীকে। এ ছাড়া, ফকল্যান্ড দ্বীপে প্রতি জিবি মোবাইল ডেটার গড় দাম ৩৮.৪৫ ডলার, সেন্ট্রাল আফ্রিকার দ্বীপ সাও তোম ও প্রিন্সিপিতে ২৯.৪৯ ডলার, পলিনেশীয় দ্বীপ তোকিনাউতে ১৭.৮৮ ডলার। এর পরের অবস্থানে রয়েছে, বতসোয়ানা, তুর্কেমেনিস্তান, টোগো, সিসিলিস ও দক্ষিণ কোরিয়া।

গিগাবাইট প্রতি মোবাইল ইন্টারনেটের সবচেয়ে বেশি ব্যয় করা ৫টি দেশের মধ্যে ৪টি দ্বীপরাষ্ট্র এবং অপরটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ। দ্বীপরাষ্ট্রের অবকাঠামোগত দুর্বলতা এসব অঞ্চলকে শীর্ষ অবস্থানে রেখেছে।

অঞ্চলের দিক থেকে উত্তর আফ্রিকায় মোবাইল ডেটার মূল্য চেয়ে কম, যেখানে গড়ে প্রতি গিগাবাইট মোবাইল ডেটা কিনতে খরচ করতে হয় ১.০৫ ডলার। গিগাবাইট প্রতি ১.৪৭ ডলার দাম নিয়ে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন অবস্থানে আছে এশিয়া।

তবে, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশগুলো সর্বোচ্চ ব্যয়ের দেশের তালিকায় রয়েছে। অন্যদিকে, গিগাবাইটপ্রতি প্রায় ৫ ডলার (৪.৯৮) নিয়ে উত্তর আমেরিকা বিশ্বের সবেচেয়ে ব্যয়বহুল মোবাইল ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী অঞ্চল।

যেসব কারণে দামের পার্থক্য

মোবাইল ডেটার দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে বেশ কিছু বিষয় কাজ করে, যার মধ্যে অবকাঠামো অন্যতম। মোবাইল নেটওয়ার্ক সাধারণত ফিক্সড-লাইন কানেকশনের ওপর বেশি নির্ভরশীল। ইতালি ও ভারতে মোবাইল নেটওয়ার্কের জন্য শক্তিশালী অবকাঠামো রয়েছে। তাই এ দুটি দেশে মোবাইল ডেটা তুলনামূলক সস্তা। অন্যদিকে দুর্বল অবকাঠামো বা বিদ্যমান অবকাঠামোর অপ্রতুলতায় মোবাইল নেটওয়ার্কের জন্যে স্যাটেলাইটের মতো বিকল্প ব্যবস্থার ওপর নির্ভরশীল দেশগুলোর ডেটার মূল্য অনেক বেশি।

যেসব দেশে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের চেয়ে মোবাইল ডেটা ব্যবহারের হার বেশি, সেখানেও মোবাইল ডেটার দাম কম। তবে, যেসব স্থানে মোবাইল ডেটার ব্যবহারকারী তুলনামূলক কম সেখানে দাম বেশি। আবার, যেসব দেশে মাথাপিছু আয় বেশি, তাদের মোবাইল ডাটা ক্রয়ের সামর্থ্য ও মূল্য দুটোই বেশি। কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র কিংবা ফিনল্যান্ডের মতো ধনী দেশগুলোতে মোবাইল ডেটার দাম ইয়েমেন, সিরিয়া, কিংবা স্যানমারিনোর চেয়ে বেশি। 

Comments

The Daily Star  | English
Record Store Day: Bringing back the vintage era

Record Store Day: Bringing back the vintage era

World Record Store Day was founded by Chris Brown, who owned American Bull Moose Music, and Eric Levine, the owner of Criminal Records. Thanks to their collaboration, the inaugural World Record Store Day took place in 2007. Since then, it has become a globally recognised and celebrated event.

1h ago