ভাসমান সোলার প্যানেল যেভাবে বিশ্বের বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান করতে পারে

নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে, সম্ভাবনাময় এই প্রযুক্তির সাহায্যে বিশ্বের হাজার হাজার শহর উপকৃত হতে পারে।
ভাসমান সোলার প্যানেল
পর্তুগালের মোওরা এলাকায় আলকুইভা ড্যামে ভাসমান সোলার প্যানেল। ছবি: রয়টার্স

নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে পানিতে ভেসে থাকবে এমন সোলার প্যানেলের সাহায্যে বিশ্বজুড়ে হাজার হাজার শহরে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব। বর্তমান বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থার তুলনায় এটি হবে আরও সাশ্রয়ী। এর ফলে, পানিও কম বাষ্পীভূত হবে।

পার্কিং লট, খোলা জমি কিংবা বাসার ছাদের পরিবর্তে এই সোলার প্যানেলগুলো পানিতে ভাসমান ভেলার ওপর বসানো হবে। এখনো বড় পরিসরে ও ব্যাপকভাবে পানির ওপর ভাসমান সোলার প্যানেল বসানোর কাজ হয়নি।

২০২০ সালে ভূমিতে থাকা সোলার প্যানেলের সাহায্যে বিশ্বব্যাপী যত বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়েছে, পানিতে ভাসমান সোলার প্যানেলের সাহায্যে উৎপাদিত বিদ্যুতের পরিমাণ ছিল তার চেয়ে ১ শতাংশেরও কম। কিন্তু নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে, সম্ভাবনাময় এই প্রযুক্তির সাহায্যে বিশ্বের হাজার হাজার শহর উপকৃত হতে পারে।

নেচার সাসটেইনিবিলিটি জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের ১২৪টি দেশের ৬ হাজার ২৫৬টি শহরের পুরো বিদ্যুৎ চাহিদা সেগুলোর কাছাকাছি জলাধারে স্থাপন করা ভাসমান সোলার প্যানেল থেকে মেটানো সম্ভব।

বিজ্ঞানীরা বিশ্বের ১ লাখ ১৪ হাজার ৫৫৫টি জলাধারের বিস্তারিত তথ্য ও সেগুলো থেকে সম্ভাব্য কী পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যেতে পারে, এর বিশদ বিশ্লেষণ করেছেন।

নির্দিষ্ট কোনো জলাধারের ৩০ শতাংশ এলাকাজুড়ে থাকবে এই সোলার প্যানেলগুলো। ফলে জলাধারগুলোর সেই অংশে সরাসরি সূর্যের আলো পড়বে না এবং পানিও কম বাষ্পীভূত হবে। এতে প্রচুর পরিমাণ পানি জলাধারেই থেকে যাবে।

খরা মৌসুমে জলাধারে পানির সংকটের কারণে কৃষিকাজে যে সমস্যা হয়, এরও অনেকটা সমাধান সম্ভব। বিজ্ঞানীদের ধারণা, এই প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহারের ফলে বিশ্বজুড়ে জলাধারগুলোর যে পরিমাণ পানি সঞ্চয় করা যাবে, তা দিয়ে বছরে কোটি কোটি মানুষ উপকৃত হবে।

পানিতে ভাসমান এসব সোলার প্যানেলগুলো বিশ্বের অনেক জরুরি সমস্যারও সমাধান করবে। যেমন—খরা মৌসুমে পানির উচ্চতা কমে যাওয়ার কারণে জলবিদ্যুতের উৎপাদন কমে যায়। আবার দাবদাহ সোলার প্যানেলের কার্যক্ষমতা অন্তত ২৫ শতাংশ কমিয়ে ফেলে।

ফলে, স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে একটি সোলার প্যানেল যে পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে, দাবদাহের মধ্যে সেই উৎপাদন কমবে অন্তত ২৫ শতাংশ। কিন্তু দাবদাহের মধ্যে পানির ওপর ভাসমান সোলার প্যানেলগুলো মাটিতে থাকা সোলার প্যানেলের তুলনায় বেশি কার্যকর থাকবে। কারণ, পানির স্বাভাবিকভাবেই প্যানেলগুলোকে ঠান্ডা রাখবে।

জলাধারগুলোয় যদি পরিকল্পনামতো সোলার প্যানেল বসানো যায়, তাহলে গ্রীষ্মকালে প্যানেলের কার্যক্ষমতাও অক্ষুণ্ণ থাকবে। সঞ্চিত পানির সাহায্যে জলবিদ্যুতের স্থাপনায় প্রয়োজনীয় পানির সরবরাহ অক্ষুণ্ণ থাকবে, বিদ্যুৎ উৎপাদনে ঘাটতি না হয়ে বরং উৎপাদন বাড়বে। গ্রীষ্ম মৌসুমে বাড়তি বিদ্যুতের চাহিদাও অনেকাংশে মেটানো যাবে।

এর বাইরে আরও বেশকিছু ইতিবাচক আছে। সোলার প্যানেল জলাধারে স্থাপন করলে মাটিতে আরও বেশি কৃষিকাজ করা যাবে। মানুষের আবাসনসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাজে ভূমির ব্যবহার বাড়ানো সম্ভব।

তবে এই প্রযুক্তি নিয়ে আরও গবেষণার প্রয়োজন। যেমন, নির্দিষ্ট জলাধার থেকে ঠিক কী পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব, এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কেমন হতে পারে, ইত্যাদি।

কোনো জলাধারে বেশি সোলার প্যানেল স্থাপন করলে পানিতে অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থার ঘাটতি দেখা দিতে পারে, যা মাছসহ অন্যান্য জলজ প্রাণীর জন্য হুমকি হতে পারে।

গবেষকরা বলেছেন, কৃত্রিম জলাধার তৈরির চেয়ে প্রাকৃতিক জলাধার ব্যবহার করাটাই উপযুক্ত হবে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি উপযোগী জলাধার আছে যুক্তরাষ্ট্রে, এরপর আছে চীন ও ব্রাজিলে।

এই প্রযুক্তি সেসব শহর বা লোকালয়ের মানুষের জন্য সবচেয়ে উপকারী হবে, যাদের খুব কাছেই বড় জলাধার আছে। তবে শহর বা লোকালয় যদি তুলনামূলক ছোট হয় বা এর জনসংখ্যা যদি ৫০ হাজারের কম, তাহলে এই এসব জলাধার থেকে উৎপাদিত বিদ্যুতের মাধ্যমে তাদের চাহিদা মেটানো সম্ভব।

এই গবেষণায় যেসব শহরের তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে, এর মধ্যে ১০ লাখের বেশি জনসংখ্যার ১৫ শতাংশ শহর এসব ভাসমান সোলার প্যানেলের সাহায্যে তাদের পুরো চাহিদা মেটাতে পারবে।

ভাসমান সোলার প্যানেল বসানোর কাজ কিছুকিছু ক্ষেত্রে শুরু হয়েছে। গতবছর জুনে মার্কিন সেনাবাহিনী নর্থ ক্যারোলাইনার ফোর্ট ব্র্যাগে এরকম একটি ভাসমান সোলার প্যানেল বসিয়েছে।

এ ছাড়াও, চীনের শ্যানডং প্রদেশে বিশালাকার ভাসমান সোলার প্যানেল বসানো হয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার হাপচেওনেও পানির ওপর ৯২ হাজার সোলার প্যানেল বসানো হয়েছে। এসব সোলার প্যানেল বিশ্বের বিদ্যুৎ সমস্যার অনেকখানি সমাধান করতে পারে বলে মনে করছেন জ্বালানি বিশ্লেষকরা।

সূত্র: দ্য ভার্জ

গ্রন্থনা: আহমেদ হিমেল

Comments

The Daily Star  | English

Mob beating at DU: Six students confess involvement

Six students of Dhaka University, who were arrested in connection with killing of 35-year-old Tofazzal Hossain inside their hall on Wednesday, confessed to their involvement in the crime before a magistrate

6h ago