‘বাতাস থেকে পানি’ উৎপাদন করছে ভারতের স্টার্টআপ উরাভু ল্যাবস

উরাভু ল্যাবসের ৪ উদ্যোক্তা। ছবি: উরাভু ল্যাবসের সৌজন্যে
উরাভু ল্যাবসের ৪ উদ্যোক্তা। ছবি: উরাভু ল্যাবসের সৌজন্যে

ভারতে খাদ্যনিরাপত্তা ও সুপেয় পানি নিশ্চিতে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু ভারতে ভুগর্ভস্থ পানির স্তর ইতোমধ্যে নিচে নামতে শুরু করেছে। ফলে দেশটির জন্য পানির টেকসই বিকল্প নিশ্চিত করা জরুরী হয়ে পড়েছে।

বাতাস থেকে পানি তৈরি এক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিকল্প হতে পারে। শুনতে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর মতো মনে হলেও ভারতের একটি স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান ঠিক এই কাজটিই করে দেখিয়েছে। 

উরাভু ল্যাবস সফল হলে শুধু যে ভারতের পানির সমস্যার সমাধান হবে তা নয়, সমগ্র বিশ্ববাসীর উপকারে আসতে পারে এটি।  জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালের মধ্যে বিশ্বের অর্ধেক মানুষ এমন এলাকায় বাস করবে, যেখানে পানির সংকট থাকবে।

বাতাস থেকে পানি উৎপাদন প্রক্রিয়া কীভাবে কাজ করে?

এই পদ্ধতিতে বাতাস থেকে আর্দ্রতা অপসারণের জন্য একটি ডিহিউমিডিফায়ার ব্যবহার করা হয়।

এটি বিভিন্ন উপায়ে করা যেতে পারে। আর্দ্র বাতাস শীতল করাটা হচ্ছে সবচেয়ে প্রচলিত উপায়। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বায়ু আর্দ্রতা ধরে রাখার ক্ষমতা হারায়, যার ফলে জলীয় বাষ্প পানির ফোঁটায় পরিণত হয়। এয়ার কন্ডিশনার এভাবেই কাজ করে।

ভারতের বেঙ্গালুরুভিত্তিক এই স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান বাতাসের আর্দ্রতা আলাদা করার একটি ডিভাইস তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। তবে তারা কিছুটা ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করেছে। তারা বাতাস থেকে আর্দ্রতা অপসারণের জন্য ব্রাইন নামে একটি লবণাক্ত পানির দ্রবণ ব্যবহার করেছে। বাতাস যখন ব্রাইনের ওপর দিয়ে যায়, তখন এই দ্রবণ বাতাসের আর্দ্রতা শোষণ করে। তারপর ব্রাইনটি সৌরশক্তির সাহায্যে গরম করা হয় এবং ফলস্বরূপ যে জলীয়বাষ্প তৈরি হয়, তা সংগ্রহ করা হয়।

উরাভু ল্যাবসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা স্বপ্নিল শ্রীবাস্তু জানান, তাদের পদ্ধতি পরিবেশবান্ধব ও টেকসই।

'আমাদের বাতাস থেকে পানি তৈরির প্রক্রিয়া শক্তি সাশ্রয়ী (প্রতি লিটারে ৩০০ ওয়াট-ঘন্টা)',  যোগ করেন তিনি।

উরাভু ল্যাবস বেঙ্গালুরুর নিজস্ব ফ্যাসিলিটি থেকে আপাতত বিভিন্ন ক্যাফে, পানীয় শিল্প ও আতিথেয়তা শিল্পে বোতলজাত পানি সরবরাহ করে। এপ্রিলের শেষদিকে তাদের সক্ষমতা ছিল দৈনিক ১ হাজার লিটার। প্রতি লিটার পানি উৎপাদনে তাদের খরচ হচ্ছে ৫-৬ টাকা। দুই বছরের মধ্যে দৈনিক ১ লাখ লিটার পানি উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জন ও উৎপাদন খরচ আরও কমানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে তারা। 

যেহেতু ডিভাইসটি বাতাসে থেকে পানি নিষ্কাশন করে, তাই বাতাসে পর্যাপ্ত আর্দ্রতার সঙ্গে উপযোগী আবহাওয়াও প্রয়োজন। শুষ্ক এবং ঠান্ডা বাতাসে এই পদ্ধতি কাজ নাও করতে পারে। আবার বাড়তি আর্দ্রতার মধ্যেও ডিভাইসটি ঠিকমতো কাজ করতে পারে না।

ডিভাইসটির সঠিক কার্যক্ষমতার জন্য ১২ থেকে ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রা এবং ২৫ থেকে ৩০ শতাংশেরও বেশি আর্দ্রতা প্রয়োজন।

আকার, দাম, রক্ষণাবেক্ষণের খরচ—এসব মিলিয়ে এই ডিভাইসটি এখনো বড় পরিসরে ব্যবহারের উপযোগী নয়। স্বপ্নিল বলেন, আপাতত পানীয় শিল্পের মতো যাদের সুপেয় পানির প্রয়োজন বেশি, তারাই উরাভু ল্যাবসের গ্রাহক। তবে জনপরিসরে এর ব্যপ্তি বাড়াতে তারা কাজ করছে বলে জানান তিনি।

উরাভু ল্যাবস এখন পর্যন্ত আড়াই মিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি বিনিয়োগ পেয়েছে। এই বিনিয়োগ তাদের প্রযুক্তির আরও উৎকর্ষ সাধনে ব্যয় করছে তারা।

সূত্র: হিন্দুস্থান টাইমস

গ্রন্থনা: আহমেদ হিমেল

 

Comments

The Daily Star  | English
chief adviser yunus confirms election date

Election in February

Chief Adviser Prof Muhammad Yunus last night announced that the general election will be held before Ramadan in February 2026, kickstarting the process of handing over the power to an elected government.

6h ago