হার্ভার্ড অধ্যাপকের ভিনগ্রহের প্রযুক্তি খুঁজে পাওয়ার দাবি

কম্পিউটারের মনিটরে গোলকাকৃতির কিছু উপকরণ দেখা যাচ্ছে, যাকে ভিনগ্রহের প্রযুক্তি হিসেবে দাবি করেছেন হার্ভার্ড বিজ্ঞানী অ্যাভি লোয়েব। ছবি: অ্যাভি লোয়েবের ওয়েবসাইট থেকে সংগৃহীত
কম্পিউটারের মনিটরে গোলকাকৃতির কিছু উপকরণ দেখা যাচ্ছে, যাকে ভিনগ্রহের প্রযুক্তি হিসেবে দাবি করেছেন হার্ভার্ড বিজ্ঞানী অ্যাভি লোয়েব। ছবি: অ্যাভি লোয়েবের ওয়েবসাইট থেকে সংগৃহীত

২০১৪ সালে পাপুয়া নিউ গিনির সমুদ্রসীমা থেকে উদ্ধার করা উল্কাপিণ্ড থেকে পাওয়া কিছু গোলাকার উপকরণকে 'ভিনগ্রহের প্রযুক্তি' বলে অভিহিত করছেন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অ্যাভি লোয়েব।

অধ্যাপক লোয়েব ও তার দল উদ্ধারকৃত এসব অজ্ঞাত বস্তুকে নিয়ে আরো উচ্চতর গবেষণার জন্য হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাগারে নিয়ে এসেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের স্পেস কমান্ড বলেছে, তারা ৯৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ নিশ্চিত যে এই বস্তুগুলো ভিনগ্রহ থেকে এসেছে। 

যুক্তরাষ্ট্র সরকার প্রায় ১০ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের একটি অঞ্চল শনাক্ত করেছে যেখানে উল্কাপাত হয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

পাপুয়া নিউগিনির অভিযাত্রীদের সঙ্গে অ্যাভি লোয়েব। ছবি: লোয়েবের ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া
পাপুয়া নিউগিনির অভিযাত্রীদের সঙ্গে অ্যাভি লোয়েব। ছবি: লোয়েবের ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া

'এই সীমানার মধ্যেই উল্কাপাতের ঘটনা ঘটেছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে মার্কিন সরকার এ বিষয়ে ধারণা পেয়েছে। এটি একটি বিশাল অঞ্চল--প্রায় বোস্টনের সমান। আমরা স্থানটিকে আরো সুনির্দিষ্টভাবে শনাক্তের চেষ্টা চালাচ্ছি।'

অধ্যাপক লোয়েবের দলটি সিলভার স্টার নামের একটি নৌযানে করে এ ধরণের আরও উপাদানের সন্ধানে সমুদ্রের তলদেশে চিরুনি অভিযান চালিয়েছেন। নৌকার সঙ্গে চুম্বক যুক্ত করা হয়েছিল।

গবেষকরা হিসেব করে উল্কাটির পৃথিবীতে আসার সম্ভাব্য পথ নির্ণয় করেছেন। সে অনুযায়ী নতুন এ অভিযানটি পরিচালন করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, 'আমরা ১০টি ছোট আকারের গোলক পেয়েছি। এগুলো প্রায় নিখুঁত গোলক বা ধাতব মার্বেল। আপনি যখন এগুলোকে মাইক্রোস্কোপের মাধ্যমে দেখবেন, তখন সম্পূর্ণ ভিন্ন দেখায়। গোলকগুলোতে সোনালি, নীল ও বাদামী রং রয়েছে এবং কিছু কিছু গোলক দেখতে পৃথিবীর ক্ষুদ্রাকার প্রতিরূপের মতো।'

গোলকগুলো বিশ্লেষণে দেখা গেছে যে এগুলো ৮৪ শতাংশ লোহা, ৮ শতাংশ সিলিকন, ৪ শতাংশ ম্যাগনেসিয়াম ও ২ শতাংশ টাইটানিয়াম দিয়ে তৈরি। এগুলো আকারে ১ মিলিমিটারেরও কম। সব মিলিয়ে জাহাজের ক্রুরা ৫০টি গোলক উদ্ধার করেছেন।

অধ্যাপক লোয়েব বলেন, 'উপাদানগুলো এর আগে পাওয়া এবং নাসার নথিতে থাকা যেকোনো স্পেস রকের চেয়ে শক্ত। আমরা সৌরজগতের বাইরে এর গতি গণনা করেছি। প্রতি সেকেন্ডে এর গতি ছিল প্রতি সেকেন্ডে ৬০ কিলোমিটার, যা সূর্যের আশেপাশের ৯৫ শতাংশ নক্ষত্রের চেয়ে দ্রুত।'

'যেহেতু উপাদানগুলো লোহার উল্কাপিণ্ডের চেয়েও শক্ত এবং এগুলো সূর্যের চারপাশের ৯৫ শতাংশ নক্ষত্রের চেয়েও দ্রুতগতিতে ঘুরছিল, তাই আন্দাজ করা যায় এগুলো অন্য কোনো সভ্যতার মহাশূন্যযান অথবা কোনো প্রযুক্তি হতে পারে,' বলেন অধ্যাপক লোয়েব।

সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন হার্ভার্ড বিজ্ঞানী অ্যাভি লোয়েব। ছবি: লোয়েবের ওয়েবসাইট থেকে সংগৃহীত
সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন হার্ভার্ড বিজ্ঞানী অ্যাভি লোয়েব। ছবি: লোয়েবের ওয়েবসাইট থেকে সংগৃহীত

তিনি সার্বিকভাবে এ ঘটনাকে নাসার ভয়েজার মহাকাশযানের যাত্রার সঙ্গে তুলনা করেন।

হার্ভার্ডের গবেষণাগারে ইতোমধ্যে এসব বিষয় নিয়ে গবেষণা মাত্র শুরু হয়েছে। গোলকগুলো কৃত্রিম না প্রাকৃতিক, এ বিষয়টিই লোয়েব প্রথমে নিশ্চিত হতে চাইবেন। যদি এগুলো প্রাকৃতিক বলে নিশ্চিত হওয়া যায়, তাহলে আমাদের সৌরজগতের বাইরে কী কী উপাদান আছে, তা সম্পর্কে গবেষকরা কিছুটা ধারণা পাবেন। আর যদি এগুলো কৃত্রিম বলে নিশ্চিত হওয়া যায় হয়, সে ক্ষেত্রেও অনেক প্রশ্নের জন্ম নেবে।

'বর্তমানে পৃথিবীতে যেসব মহাকাশযান আছে, সেগুলো দিয়ে আমাদের সৌরজগতের বাইরে অন্য নক্ষত্রে যেতে হাজারো বছর সময় লাগবে। এই উপাদানগুলো যেহেতু ইতোমধ্যে পৃথিবীতে এসেছে, তাই ধারণা করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে যে এগুলো দীর্ঘ সময় পাড়ি দিয়ে আমাদের কাছে পৌঁছেছে।'

তবে এই গবেষণার এখনো অনেকদূর বাকী আছে। সমুদ্রের তলদেশে অভিযান চালানোর সময় ক্যামেরায় যেসব দৃশ্য ধারণ করা হয়েছে, সেগুলোও অধ্যাপক লোয়েবের দল এখনো দেখে শেষ করতে পারেননি। তিনি ধারণা করছেন, এই গোলকগুলো বড় কোনো কিছু আবিষ্কারের প্রাথমিক ধাপ।

 

সূত্র: সিবিএসনিউজ

গ্রন্থনা: আহমেদ হিমেল

Comments

The Daily Star  | English

Tribute to July uprising: Drone show lights up Dhaka's sky

In 12 vivid motifs, the July uprising came alive, tracing the heroism of Abu Sayed and the stirring role of women in the movement

12h ago