যে কারণে অ্যাপলের পণ্যে সাদার আধিক্য

জন্মলগ্ন থেকেই অ্যাপলের পণ্যে সাদা রঙের আধিক্য দেখা যায়। ছবি: সংগৃহীত
জন্মলগ্ন থেকেই অ্যাপলের পণ্যে সাদা রঙের আধিক্য দেখা যায়। ছবি: সংগৃহীত

অ্যাপলের কীবোর্ড, ক্যাবল, আইফোনের বক্স, অ্যাডাপটর, আইপড, এয়ারপড- সবগুলো পণ্যই সাদা রঙের। বিষয়টা বেশ মজারই বটে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অ্যাপল অবশ্য বিভিন্ন রঙের আইফোন ও আইম্যাক বাজারে ছেড়েছে। তারপরও অ্যাপলের সঙ্গে সাদা রঙের নিবিড় সম্পর্ক কারও চোখ এড়িয়ে যায় না।

২০১১ সাল থেকে অ্যাপল সব সাদা রঙের পণ্য তৈরি শুরু করে। এমনকি অ্যাপলের প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবসও এই ধারণা পছন্দ করতেন না।

লেখক লিন্ডার কেনেডি তার লেখা বই 'জনি আইভ, দ্য জিনিয়াস বিহাইন্ড অ্যাপল'স গ্রেটেস্ট প্রোডাক্টস' বইতে লিখেন, 'প্রাথমিকভাবে, স্টিভ জবস সাদা রঙের পণ্যের বিরোধিতা করেছিলেন।'

কিন্তু অ্যাপলের প্রধান ডিজাইনার সাদা রঙের পণ্যের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। সেই স্কুল জীবন থেকে সাদা প্লাস্টিক দিয়ে পণ্য তৈরি করতে শুরু করেন জনি আইভ।

অ্যাপলের তৈরি স্বচ্ছ প্লাস্টিকের আইম্যাকের প্রতিক্রিয়ায় আইভ সাদা অ্যাপল পণ্যের দিকে ঝুঁকেছিলেন।

জন্মলগ্ন থেকেই অ্যাপলের পণ্যে সাদা রঙের আধিক্য দেখা যায়। ছবি: সংগৃহীত
জন্মলগ্ন থেকেই অ্যাপলের পণ্যে সাদা রঙের আধিক্য দেখা যায়। ছবি: সংগৃহীত

১৯৯৮ সালে প্রথম আইম্যাক উন্মোচন করে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল অ্যাপল। এই কম্পিউটারটি ছিল নীল (বন্ডি বিচের সঙ্গে নাম মিলিয়ে বন্ডি ব্লু) রঙের।

পরবর্তীতে আরও বিভিন্ন রঙের আইম্যাক উন্মোচন করেছিল অ্যাপল।

এরপর সাদা প্লাস্টিকের তৈরি আইবুক বাজারে ছাড়ে অ্যাপল। আইপডের ক্ষেত্রেও একই রং পছন্দ করেছিলেন আইভ।

আইপড সম্পর্কে আইভ বলেন, 'প্রথম থেকেই আমরা যখন পণ্যটি সম্পর্কে ভাবতে শুরু করলাম, আমরা এটিকে (আইপড) সাদা এবং স্টেইনলেস স্টিলের পণ্য হিসেবে দেখতে চেয়েছি। এটা ছিল খুবই সহজ। এটা কোনো রং নয়। এই রংটা একটা নিরপেক্ষ রং, সন্দেহাতীতভাবে নিরপেক্ষ।'

অ্যাপলের ডিজাইনাররা যখন স্টিভ জবসকে পণ্যের নমুনা দেখাতে শুরু করেন, তখন জবস নিজেও প্রথম দিকে সাদা রং নিয়ে স্বচ্ছন্দ ছিলেন না। তিনি বরং এই রংটি অপছন্দই করেছেন। তাই অ্যাপলের ডিজাইনাররা জবসকে খুশি করতে ভিন্ন রং প্রস্তাব করা  শুরু করেন। তাদের প্রস্তাবিত রংগুলো সাদা না হলেও সাদার কাছাকাছিই ছিল। তারা ক্লাউড হোয়াইট, স্নো হোয়াইট, গ্লেসিয়াল হোয়াইট, মুন গ্রে ইত্যাদি রং প্রস্তাব করেছিল। এই রংগুলো দেখতে সাদার মতো হলেও পুরোপুরি সাদা নয়। জবস 'মুন গ্রে' রং বাছাই করেন এবং কীবোর্ডে এই রং ব্যবহারের নির্দেশ দেন।

আইপডের ইয়ারফোনেও মুন গ্রে রংটাই ব্যবহার করা হয়েছিল, যদিও বেশিরভাগ মানুষ মনে করেছেন এটি সাদা রং।

অ্যাপলের ডিজাইনার দলে কাজ করা ডাগ সাটর্জগার বলেন, 'মুন গ্রে এবং সিশেল গ্রে রংগুলো আমরা প্রস্তাব করেছিলাম। এই রঙগুলো সাদার এত কাছাকাছি ছিল যে দেখে মনে হতো সাদা, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এগুলো ছিল ধূসর।

তবে দীর্ঘ প্রায় ২০ বছর পর অ্যাপল পণ্যের রঙের ক্ষেত্রে গতানুগতিক সাদা ও ধূসর রং থেকে বেরিয়ে আসতে শুরু করে। ২০১৯ সালে ছয়টি ভিন্ন ভিন্ন রঙে আইফোন ১১ উন্মোচন করা  হয়।

সন্দেহাতীতভাবে বলা যায়, অ্যাপলের এই 'সাদা বিপ্লবের' অন্যতম কারিগর জনি আইভ। শুধু রং নয়, প্রযুক্তি পণ্যের ডিজাইনের ক্ষেত্রেও বিপ্লব এনেছেন তিনি। প্রযুক্তি বিশ্বে তিনি কিংবদন্তী ডিজাইনারের খেতাব পেয়েছেন। তিনি একজন সর্বজনশ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব।

মার্কিন কোম্পানি প্যান্টন কালার ইনস্টিটিউটের ভাইস প্রেসিডেন্ট লরি প্রেসম্যান অ্যাপলের পরিবর্তিত সিদ্ধান্ত সম্পর্কে বলেন,  'অ্যাপল আইফোনকে প্রযুক্তির বদলে প্রয়োজনীয় পণ্য হিসেবে উপস্থাপন করতে চাইছে। আর বর্তমানে রঙিন জিনিস মানুষ পছন্দও করছে।'

সূত্র: বিজনেস ইনসাইডার, ফাস্টকোম্পানি

গ্রন্থনা: আহমেদ হিমেল

 

Comments

The Daily Star  | English
Prof Yunus in Time magazine's 100 list 2025

Time’s List: Yunus among 100 most influential people

Chief Adviser Prof Muhammad Yunus has been named among TIME magazine’s 100 Most Influential People of 2025.

2h ago