এআই প্রযুক্তির দৌড়ে পিছিয়ে পড়ছে ভারত

সার্বিকভাবে ভারত প্রযুক্তি খাতে সাম্প্রতিক সময়ে সাফল্য দেখালেও এআই নিয়ে দেশটির প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো বিশ্বের সঙ্গে এখনো তাল মিলিয়ে আগাতে পারছে না।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। প্রতিকী ছবি: সংগৃহীত
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। প্রতিকী ছবি: সংগৃহীত

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তি নিয়ে সারা বিশ্বে চলছে উন্মাদনা। বিশেষত, চ্যাটজিপিটি ও অন্যান্য জেনারেটিভ এআই নির্ভর প্রযুক্তি নিয়ে বিশ্বের অনেক দেশ মেতে আছে। তবে জেনারেটিভ এআই বা সার্বিকভাবে, এইআই প্রযুক্তির দৌড়ে পিছিয়ে আছে ভারত। 

সার্বিকভাবে ভারত প্রযুক্তি খাতে সাম্প্রতিক সময়ে সাফল্য দেখালেও এআই নিয়ে দেশটির প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো বিশ্বের সঙ্গে এখনো তাল মিলিয়ে আগাতে পারছে না।

ভারতের কোনো প্রতিষ্ঠান এখনো চ্যাটজিপিটি, অ্যানথ্রোপিক অথবা বার্ডের মতো প্রতিষ্ঠিত জেনারেটিভ এআই প্ল্যাটফর্মের প্রতি চ্যালেঞ্জ জানানোর মতো প্রযুক্তি বাজারে আনতে পারেনি।

আর্থিক ও বিনিয়োগ বিশ্লেষণী প্রতিষ্ঠান স্যানফোর্ড সি বার্নস্টেইনের বিশ্লেষকরা বলেন, 'ভারতে দেড় হাজারেরও বেশি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক স্টার্টআপ আছে। এগুলোতে সম্মিলিতভাবে চার বিলিয়ন ডলারেরও বেশি বিনিয়োগ করা হয়েছে। তা স্বত্তেও দেশটি এআই প্রযুক্তিতে পিছিয়ে আছে।'

বিশ্লেষকদের মতে, ভারতীয় প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের ব্যবসার কার্যক্রমকে আরও গতিময় ও কার্যকর করতে জেনারেটিভ এআই নয়, বরং মেশিন লার্নিংয়ের দিকে বেশি মনোযোগ দিচ্ছে।

জেনারেটিভ এআই। প্রতিকী ছবি: সংগৃহীতজেনারেটিভ এআই। প্রতিকী ছবি: সংগৃহীত
জেনারেটিভ এআই। প্রতিকী ছবি: সংগৃহীত

দেশটির অন্যতম শীর্ষ ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ফ্লিপকার্ট ক্রেতাদের শপিং অভিজ্ঞতা আরও উন্নত করতে মেশিন লার্নিং ব্যবহার করছে। আবার লেনদেনের ক্ষেত্রে প্রতারণা এড়াতে রেজর পে এআই প্রযুক্তির সাহায্য নিচ্ছে।

কয়েকটি প্রতিষ্ঠান লাইভ ক্লাসে এআই সংযুক্ত করেছে, যার ফলে ক্লাস পরিচালনার খরচ কমেছে ও শিক্ষার্থীদের আরও কম অর্থ খরচ করতে হচ্ছে।

ভারতের প্রযুক্তি খাতের বিশ্লেষকরা বলছেন, কর্মীদের দক্ষতার ঘাটতির কারণেই দেশটির এআই স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠানগুলো এখনো আশানরুপ সাফল্য পাচ্ছে না।

এখন জেনারেটিভ এআই'র উত্থানের কারণে দেশটির সেবা খাতের অনেক চাকরি হুমকির মুখে পড়ছে।

স্যানফোর্ড সি বার্নস্টেইনের বিশ্লেষকদের মতে, 'ভারতের আইটি খাতের ৫০ লাখ কর্মীর অধিকাংশই বিপিও (বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং) বা সিস্টেম মেইনট্যানেন্স কর্মী। এআই প্রযুক্তি এখনো এসব চাকরিকে প্রতিস্থাপনের পর্যায়ে আসেনি। তবে এই প্রযুক্তি খুব দ্রুত উন্নতি করছে।'

লাাইটস্পিড ভেঞ্চার পার্টনার্স ইন্ডিয়ার এক পার্টনার দেভ খারে ভারতের কোন কোন খাতে এআই প্রযুক্তির প্রভাব পড়তে যাচ্ছে, তার ধারণা দিয়েছেন। তার মতে- বাজার বিশ্লেষণ, কনটেন্ট তৈরি, আইনি বিশ্লেষণ, আর্থিক বিশ্লেষণ ও আইটি শিল্পের আরও অনেক খাতে এআই প্রযুক্তির প্রভাব পড়বে।

একটি ভারতীয় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান। ছবি: সংগৃহীত
একটি ভারতীয় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান। ছবি: সংগৃহীত

তবে ভারতে যেহেতু খুব সস্তায় শ্রম পাওয়া যায়, তাই অনেক খাত হয়তো এখনই স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থায় রূপান্তরিত হবে না।

অন্যান্য বিশ্লেষকদের মতে, এআই প্রযুক্তির সাহায্যে কম জনশক্তি ব্যবহার করে বেশি কাজ করানোর সম্ভাবনা থাকায় ভারতের সেবা খাত সবচেয়ে বেশি লাভবান হতে যাচ্ছে।

দেশটির বড় বড় কনসালটিং প্রতিষ্ঠানগুলো ইতোমধ্যে এআই প্রযুক্তি ব্যবহার শুরু করেছে। যেমন, ইনফোসিস স্বীকার করেছে যে তারা গ্রাহকদের নির্দিষ্ট কিছু জিজ্ঞাসার উত্তর দিতে এআই ব্যবহার করছে। টাটা কনসাল্টিং সার্ভিস বা টিসিএসও জানিয়েছে, তারা কনটেন্ট তৈরি, কোড তৈরি, কপিরাইটিং এবং মার্কেটিং উপকরণ তৈরির জন্য এআই ব্যবহার করছে।

এমন পরিস্থিতিতে ভারত সরকার ঘোষণা করেছে তারা এআই প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রণে কোনো আইন চালু করবে না। ভারতের এই অবস্থান বিশ্বের অনেক উন্নত দেশের চেয়ে আলাদা। অনেক দেশেই

গত এপ্রিল মাসে এক বিবৃতিতে ভারতের ইলেক্ট্রনিকস অ্যান্ড আইটি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, 'ডিজিটাল অর্থনীতি এবং ইনোভেটিভ ইকোসিস্টেমকে আরও গতিময় করবে এআই। সরকার এআই ব্যবহার করে ডিজিটাল পাবলিক প্ল্যাটফর্মে জনগনকে আরও ভালো সেবা কীভাবে দেওয়া যায়, সেই সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছে।'

ভারতের প্রতিষ্ঠিত স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের নিজস্ব এআই উদ্ভাবন নিয়ে নিরব থাকলেও নতুন প্রতিষ্ঠানগুলো ঘুমিয়ে নেই। নতুন কিছু স্টার্টআপ, যেমন গ্যান, ট্রুফাউন্ড্রি ও কিউব এআই নিয়ে কাজ করছে।

সেকোয়া ক্যাপিটাল ইন্ডিয়ার কর্মকর্তা আনন্দময় রয়চৌধুরী বলেন, ভারতের বেশিরভাগ স্টার্টআপ সাম্প্রতিক সময়ে জেনারেটিভ এআই প্রযুক্তি নিয়ে কাজ শুরু করেছে। তবে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বেশ আগে থেকেই এই প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে।

জেনারেটিভ এআই। প্রতিকী ছবি: সংগৃহীত
জেনারেটিভ এআই। প্রতিকী ছবি: সংগৃহীত

'চ্যাটজিপিটি চালু হওয়ার পর এআই প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন প্রজেক্ট ও স্টার্টআপ যে গতিতে বাড়ছে, সেটি অভাবনীয়। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। সেকোয়া ইন্ডিয়া এই মিছিলে কিছুটা আগেই যোগ দিয়েছে। আমরা ইতিমধ্যে ৭-৮টি এআই স্টার্টআপের সঙ্গে কাজ করছি', যোগ করেন আনন্দময়।

এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ভারতে সুনামের সঙ্গে কাজ করা ভেঞ্চার ফার্ম অ্যাকসেল বলেছে, তারাও এআই প্রযুক্তির দিকে বাড়তি মনোযোগ দিয়েছে।

কয়েকজন ভারতীয় উদ্যোক্তা ইতোমধ্যে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে এসব এআই স্টার্টআপ আদৌ নিজেদের তৈরি লার্জ ল্যাংগুয়েজ মডেল তৈরি করতে পারবে কী না।

শঙ্কার কারণ হিসেবে উদ্যোক্তারা বিনিয়োগ স্বল্পতা, বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের অভাব ও অবকাঠামোগত দুর্বলতার কথা উল্লেখ করেন।

সূত্র: টেকক্রাঞ্চ

গ্রন্থনা: আহমেদ হিমেল

 

Comments

The Daily Star  | English

S Alam sons: They used fake pay orders even to legalise black money

Ashraful Alam and Asadul Alam Mahir, two sons of controversial businessman Mohammed Saiful Alam, deprived the state of Tk 75 crore in taxes by legalising Tk 500 crore in undisclosed income, documents obtained by The Daily Star have revealed.

2h ago