ইন্টারনেটে হাইপারলিংকের রং যে কারণে নীল

হাইপারলিংক। প্রতিকী ছবি: সংগৃহীত
হাইপারলিংক। প্রতিকী ছবি: সংগৃহীত

ইন্টারনেটে অনেক সময়ই আমরা ওয়েব সাইটের লিংক দেখতে পাই। ফেসবুক প্রোফাইলে ওয়েবসাইটের লিংক, বা ওয়েবসাইটে ফেসবুকের লিংক। এসব ক্ষেত্রে ভাল করে খেয়াল করলে দেখবেন, এই 'হাইপারলিংক' গুলো সবসময়ই নীল রঙের হয়।

হাইপারলিংকের রংকে নীল হিসেবে নির্বাচনের সুনিদৃষ্ট কারণ ও ইতিহাস আছে।

ইউএক্স ডিজাইনার এলিস ব্লানচার্ড এই রহস্যের সমাধান করেছেন। তিনি ইন্টারনেটের ইতিহাস ঘেটে এ বিষয়ে নানা তথ্য সংগ্রহ করেন। এসব তথ্য ও উপাত্ত নিয়ে ২০২১ ও ২০২২ সালে মজিলা ব্লগে তিনি দুইটি প্রবন্ধ লেখেন।

হাইপারলিংকের রং কী হতে পারে, সে বিষয়টি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা শুরু হয় ১৯৮৫ সালে। সে সময় যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্সের অধ্যাপক বেন শ্নেইডারম্যানের অধীনে একদল শিক্ষার্থী একটি গবেষণা চালায়। কোন রঙের হাইপারলিংক ব্যবহারকারীকে কীভাবে প্রভাবিত করে, সেটা নিয়েই চলে এই গবেষণা।

শ্নেইডারম্যান বলেন, 'লাল রং লিংককে আরও দৃশ্যমান করে তোলে ঠিকই, তবে এই রংটি ব্যবহারকারীর টেক্সটের প্রসঙ্গ পড়ার এবং মনোযোগ ধরে রাখার ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। কিন্তু নীল রঙের ক্ষেত্রে এই সমস্যা নেই। সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডেও এই রং যথেষ্ঠ উজ্জ্বল ভাবে দেখা যায়। আবার কালো ব্যাকগ্রাউন্ডেও এই রং স্পষ্টভাবে দেখা যায়। এই রং পাঠকদের মনোযোগেও বিঘ্ন ঘটায় না।

আশির দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে ওই দশকের শেষ পর্যন্ত এক গুরুত্বপূর্ণ বিতর্কের বিষয় ছিল ইন্টারনেটের ইউজার ইন্টারফেস। ওয়েবসাইট তৈরির ক্ষেত্রে কোন ধরনের ডিজাইন বেশি উপযোগী, কিংবা কোন ডিজাইনটি মানদণ্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে, তা নিয়ে ওয়েবসাইট নির্মাতারা যথেষ্ঠ আগ্রহী ছিলেন।

এসব কারণে হাইপারলিংকের রং কেমন হবে কিংবা হাইপারটেক্সট দেখতে কেমন হবে- তা নিয়ে শ্নেইডারম্যান ও তার শিক্ষার্থীদের গবেষণা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা গুরুত্বপূর্ণ সাময়িকী ও সম্মেলনে ব্যাপকভাবে তুলে ধরা হয়।

হাইপারলিংকের জন্য নীল রঙের ধারণাটিই বেশি জনপ্রিয়তা পায়।

নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝিতে টিম বার্নার্স-লি'র ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব ব্রাউজার এবং মার্ক অ্যান্ড্রেসেন ও এরিক বিনার মোজাইক ব্রাউজারের মতো গুরুত্বপূর্ণ কিছু সফটওয়্যারে নীল রঙের হাইপারলিংকের ব্যবহার দেখা আয়।  

মোজাইক ব্রাউজারের কোড ব্যবহার করেই মাইক্রোসফট তাদের ওয়েব ব্রাউজার ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার তৈরি করে। ইন্টারনেট এক্সপ্লোরারেও নীল রঙের হাইপারলিংক ব্যবহার করা হয়। এক কালে বহুল ব্যবহৃত এই ব্রাউজারই মূলত হাইপারলিংকের রং নিয়ে সব ধরনের জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটায়। সে সময় থেকেই এই রং স্থায়ী রূপ পায়।

বর্তমানে ইন্টারনেট অনেক ব্যাপক ও বিস্তৃত। ফলে বিভিন্ন ওয়েবসাইট তাদের ব্র্যান্ডের সঙ্গে তাল মিলিয়ে হাইপারলিংকের রং নির্বাচন করে। এজন্য এখন বিভিন্ন ওয়েবসাইটে কমলা, বেগুনী, কালো, হলুদ বিভিন্ন রঙের হাইপারলিংক দেখতে পাওয়া যায়।

তা সত্ত্বেও, এত বছর পরেও বেশিরভাগ ওয়েবসাইট এখনো নীল রঙের হাইপারলিংক ব্যবহার করে।

সূত্র: মেন্টালফ্লস

গ্রন্থনা: আহমেদ হিমেল

Comments

The Daily Star  | English

18 lower court judges sent into forced retirement

A circular was issued in this regard tonight by Branch-3 of the Judicial Division under the Law and Justice Division

1h ago