সঠিক অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র নির্বাচন ও ব্যবহারের উপায়

বাজারে বিভিন্ন ধরনের অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র কিনতে পাওয়া যায়। কোনটি কোন ধরনের আগুনের জন্য কার্যকর সেটি জানা খুবই জরুরি।
আগুনের ধরন অনুযায়ী সঠিক অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র বেছে নেওয়া খুবই জরুরি। ছবি: পিওতর ক্রোবট/আনস্প্ল্যাশ
আগুনের ধরন অনুযায়ী সঠিক অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র বেছে নেওয়া খুবই জরুরি। ছবি: পিওতর ক্রোবট/আনস্প্ল্যাশ

অগ্নিদুর্ঘটনা থেকে নিরাপদ থাকতে ফায়ার এক্সটিংগুইশার বা অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রের সঠিক ব্যবহার জানা ও বিষয়টি ভালো করে বোঝা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষত, সাম্প্রতিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাগুলোয় এ বিষয়টির গুরুত্ব আবার সামনে এসেছে।

অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রগুলো সাধারণত জরুরী পরিস্থিতিতে ছোট আকারের আগুন নেভাতে বা নিয়ন্ত্রণ করতে বেশ কার্যকরী। তবে বড় আকারে আগুন ছড়িয়ে পড়লে এসব যন্ত্র খুব একটা কাজে আসে না।

অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রের প্রকারভেদ এবং এগুলোর ব্যবহার

বিভিন্ন ধরনের অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র। ছবি: সংগৃহীত
বিভিন্ন ধরনের অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র। ছবি: সংগৃহীত

বাজারে বিভিন্ন ধরনের অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র কিনতে পাওয়া যায়। কোনটি কোন ধরনের আগুনের জন্য কার্যকর সেটি জানা খুবই জরুরি।

মূলত পাঁচ ধরনের অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র রয়েছে। প্রতিটি যন্ত্রই ভিন্ন ভিন্ন ধরণের আগুন নেভানোর জন্য তৈরি। কাগজ, কাঠ, কাপড়, দাহ্য তরল ও বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের মতো বিভিন্ন উপকরণের আগুন নেভানোর জন্য রয়েছে সুনির্দিষ্ট যন্ত্র; যেগুলো ভিন্ন ভিন্ন রঙ বা লেবেলে চিহ্নিত করা থাকে।

পানি, পানি থেকে সৃষ্ট কুয়াশা বা পানির স্প্রের অগ্নিনির্বাপক (লাল লেবেল):

ওয়াটার স্প্রে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র। ছবি: সংগৃহীত
ওয়াটার স্প্রে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র। ছবি: সংগৃহীত

কার্বন-ভিত্তিক কঠিন দাহ্য পদার্থ যেমন, কাগজ, কাঠ বা টেক্সটাইলের মত ক্লাস এ শ্রেণীভুক্ত আগুন নেভানোর জন্য এই নির্বাপকযন্ত্রগুলো বেশ উপযোগী। এগুলো পানি দিয়ে দাহ্য উপকরণকে ভিজিয়ে ঠাণ্ডা করার মাধ্যমে আগুন নিভিয়ে থাকে। তবে এটি তেল, ধাতু, তরল বা বৈদ্যুতিক উৎস থেকে সৃষ্ট আগুন নেভানোর উপযোগী নয়।

ফোম অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র (ক্রিম লেবেল):

ফোম ভিত্তিক অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র। ছবি: সংগৃহীত
ফোম ভিত্তিক অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র। ছবি: সংগৃহীত

এই ধরনের নির্বাপক যন্ত্রগুলো কঠিন পদার্থ এবং জ্বলন্ত তরল যেমন, পেট্রোল, পেইন্ট বা টারপেনটাইন থেকে সৃষ্ট এ এবং বি শ্রেণীভুক্ত আগুন নেভাতে কার্যকর। নিরাপদ দূরত্বে থেকে এগুলো কিছু বৈদ্যুতিক আগুন নিয়ন্ত্রণেও ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে সেক্ষেত্রে ওই ধরনের বৈদ্যুতিক আগুনের জন্যে এটি উপযোগী কিনা সেটি আগে থেকে পরীক্ষিত হতে হবে।

ড্রাই পাউডার অগ্নিনির্বাপক (নীল লেবেল):

ড্রাই পাউডার অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র। ছবি: সংগৃহীত
ড্রাই পাউডার অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র। ছবি: সংগৃহীত

এই অগ্নিনির্বাপকগুলো কঠিন, তরল এবং গ্যাস থেকে সৃষ্টি হওয়া এ, বি ও সি ক্লাস আগুনের জন্য উপযুক্ত বহুমুখী ইউনিট। অপরদিকে ক্লাস ডি বা ধাতব আগুনের জন্যেও বিশেষ ধরনের পাউডার ভিত্তিক নির্বাপক যন্ত্র পাওয়া যায়। এগুলো আগুনের ওপর ফোমের মতো একটি আবরণ তৈরি করে আগুন নিভিয়ে দেয়।

কার্বন ডাই অক্সাইড (CO2) অগ্নিনির্বাপক (কালো লেবেল):

কার্বন ডাই অক্সাইড অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র। ছবি: সংগৃহীত
কার্বন ডাই অক্সাইড অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র। ছবি: সংগৃহীত

এটি দাহ্য তরল এবং বৈদ্যুতিক আগুনের জন্য সবচেয়ে উপযোগী। এটি অক্সিজেনকে সরিয়ে দেয়, যার ফলে আগুন জ্বলতে পারে না। যেহেতু এগুলো ক্ষতিকর নয় এবং ব্যবহারের পর কোনো অবশিষ্টাংশ তৈরি করে না, তাই বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের আশেপাশে ব্যবহারের জন্য এগুলো বেশ উপযোগী।

ওয়েট কেমিক্যাল অগ্নিনির্বাপক (হলুদ লেবেল):

ওয়েট কেমিকেল অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র। ছবি: সংগৃহীত
ওয়েট কেমিকেল অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র। ছবি: সংগৃহীত

এগুলো রান্নার তেল এবং চর্বি দ্বারা সৃষ্ট এফ শ্রেণীভুক্ত আগুনের জন্য বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে। এই অগ্নিনির্বাপকগুলো আগুনকে ঠাণ্ডা করে এবং পুনরায় জ্বলে ঠেকায়। এগুলো কঠিন এবং তরল উভয় ধরনের দাহ্য পদার্থের ক্ষেত্রেও কার্যকর।

অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র ব্যবহার করবেন যেভাবে

৪টি সহজ ধাপে একটি অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র কার্যকরভাবে ব্যবহার করা যায়।

অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র। ছবি: সংগৃহীত
অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র। ছবি: সংগৃহীত

ইংরেজিতে পিএএসএস টেকনিক (পুল, এইম, স্কুইজ অ্যান্ড সুইপ) নামে পরিচিত এক বিশেষ কৌশলের মাধ্যমে খুব সহজেই এগুলো ব্যবহার করা যায়।

প্রথম ধাপে পিনটি টানুন (পুল), তারপর আগুনের গোড়ার দিকে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রটি তাক (এইম) করুন। এরপর হ্যান্ডেলটি চেপে (স্কুইজ) ধরুন এবং ঘর ঝাড়ু দেওয়ার মতো করে একপাশ থেকে আরেকপাশে স্প্রে করতে থাকুন (সুইপ)।

আগুনের ধরন অনুযায়ী উপযুক্ত অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র নির্বাচন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রগুলো বের হওয়ার রাস্তা বা বিপদ ঘটার সম্ভাবনা আছে এরকম জায়গার কাছাকাছি রাখা উচিত। তবে এগুলো ব্যবহারের আগে পরিস্থিতি মূল্যায়ন করা অত্যন্ত জরুরি। এক্ষেত্রে আগে বের হওয়ার একটি নিরাপদ পথ রয়েছে কী না তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

বাসা-বাড়ির জন্য সঠিক অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র নির্বাচন

আগুন
প্রতীকী ছবি

বাংলাদেশে বাসা-বাড়িতে ব্যবহারের জন্য, বৈদ্যুতিক সহ বিভিন্ন ধরনের অগ্নিকাণ্ডের জন্য উপযোগী বহুমুখী ড্রাই পাউডার অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়। অপরদিকে বিভিন্ন শ্রেণীর আগুন ও বৈদ্যুতিক সরঞ্জামগুলোতে নিরাপদ ব্যবহারের জন্য পানির কুয়াশা বা ওয়াটার মিস্ট নির্বাপক যন্ত্রগুলোকেও সুপারিশ করা হয়।

তবে অগ্নি নির্বাপক যন্ত্রগুলো যেন সহজেই হাতের নাগালে পাওয়া যায় এবং পরিবারের সদস্যরা এগুলো সঠিকভাবে ব্যবহার করতে জানে কিনা সেটি আগে নিশ্চিত করুন।

মনে রাখবেন, প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ উত্তম। অগ্নি নিরাপত্তা প্রতিরোধের মাধ্যমেই শুরু হয়। নিয়মিতভাবে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রগুলোর কার্যকারিতা পরীক্ষা করুন এবং রক্ষণাবেক্ষণ করুন। পাশাপাশি নিশ্চিত করুন যে ধোঁয়া বা স্মোক অ্যালার্ম সঠিকভাবে কাজ করছে। অগ্নিকাণ্ডের সময় নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দিন এবং আগুন নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে বা এটি কোনো ঝুঁকি তৈরি করলে অবিলম্বে সেখান থেকে সরে পড়ুন।

ইংরেজি থেকে ভাবানুবাদ করেছেন আহমেদ বিন কাদের অনি

Comments