ক্যামেরায় বিপ্লব ঘটিয়ে বাজারে আসতে পারে আইফোন ১৪
'আইফোন হচ্ছে যেকোনো মোবাইলের চেয়ে অন্তত ৫ বছর এগিয়ে থাকা বৈপ্লবিক ও জাদুকরী একটা ফোন।', ২০০৭ সালে আইফোনের পরিচয় ঘটাতে গিয়ে এমন মন্তব্য করেছিলেন অ্যাপল প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবস। প্রতিষ্ঠার কয়েক বছরের মধ্যেই জবসের মন্তব্য বাস্তবে পরিণত হতে শুরু করে।
শিগগিরই প্রযুক্তি দুনিয়ায় ঝড় তুলতে চলেছে স্মার্টফোন দুনিয়ার সম্রাট বনে যাওয়া এই প্রতিষ্ঠানটির আইফোন ১৪ সিরিজ। বিশেষজ্ঞদের মতে, দেড় দশকের ইতিহাস ভেঙে ক্যামেরা ফিচারে অবিশ্বাস্য আপগ্রেড আসতে পারে এই সিরিজে।
ধারণা করা হচ্ছে, গতানুগতিক ১২ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরার গণ্ডি ছেড়ে আইফোন ১৪ সিরিজে এক লাফে ৪৮ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা থাকতে পারে। এমন হলে, এযাবৎকালের সবচেয়ে জনপ্রিয় আইফোনে পরিণত হতে যাচ্ছে আইফোন ১৪ প্রো ম্যাক্স।
তবে, ৪৮ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা সিরিজের সব মডেলগুলোতে থাকার সম্ভাবনা খুব কম। এর পাশাপাশি ১৪ সিরিজের এই ফ্ল্যাগ-শিপ ফোন থেকে ফেস আইডি সার্ভিস তুলে টাচ আইডি সুবিধা চালু করতে পারে অ্যাপল ইন-করপোরেশন। এ ছাড়া, স্যাটেলাইট নেটওয়ার্কের সাহায্যে জরুরি বার্তা পাঠানোর সুবিধা, এ১৬ চিপসেট, অদৃশ্য নচ সুবিধা থাকতে পারে। প্রসেসরসহ প্রায় আরও কিছুতে আপগ্রেড আনার গুঞ্জনও পাওয়া যাচ্ছে।
নতুন কোনো আইফোন মুক্তির আগে কড়া সতর্কতা ও নানা স্তরের গোপনীয়তা বজায় রাখা হয়। তবুও, উৎপাদন প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত বিশ্বের প্রায় ৬টি মহাদেশ, বছরে ২০০ কোটির বেশি ইউনিট বিক্রি হওয়া এই ফোনের কিছু তথ্য আগে থেকেই ফাঁস হয়ে উঠে আসে নানা প্রতিবেদন। সেসব প্রতিবেদনের আলোকে আজকে আইফোন ১৪ সিরিজের আনুমানিক কিছু ফিচার নিয়ে আলোচনা করা হবে।
লাইন-আপ
আইফোনের প্রায় প্রতিটি সিরিজের লাইন আপেই একাধিক মডেল দেখা যায়। আইফোন ১৪ সিরিজের ক্ষেত্রে সামান্য পরিবর্তন আনা হতে পারে। এবারের লাইন আপ থেকে বাদ পড়তে পারে আইফোন ১৪ মিনি মডেলটি, অন্যদিকে সিরিজে যুক্ত হতে পারে আইফোন ১৪ ম্যাক্স।
বিজনেস ইনসাডারের তথ্যসূত্রে, মূলত আইফোন ১২ মিনির ব্যর্থতার কারণে প্রতিষ্ঠানটি তার ১৪-এর লাইন আপ থেকে এই মডেলটিকে বাদ দিতে যাচ্ছে। আইফোন ১৪ ম্যাক্সের পাশাপাশি এই সিরিজের লাইন আপে থাকছে আইফোন ১৪, আইফোন ১৪ প্রো, আইফোন ১৪ প্রো ম্যাক্স।
ডিসপ্লে
ডিসপ্লের ক্ষেত্রে তেমন কোনো নতুনত্ব দেখা নাও যেতে পারে। মিনি মডেল বাদ পড়ায় বাকিগুলো ৬ ইঞ্চির বড় ডিসপ্লের হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিজনেস ইনসাইডার বলছে, আইফোন ১৪ এবং আইফোন ১৪ প্রো এর ক্ষেত্রে ডিসপ্লের আকার হতে পারে ৬ দশমিক ১ ইঞ্চি। অন্যদিকে আইফোন ১৪ ম্যাক্স এবং আইফোন ১৪ ম্যাক্স প্রো এর অনুমিত ডিসপ্লে আকার হতে পারে ৬ দশমিক ৭ ইঞ্চি।
আইফোনের সবশেষ ১৩ সিরিজের ফোনগুলোর রিফ্রেশ রেট রাখা হয়েছিল ১২০ হার্জ। পরবর্তী সিরিজে অর্থাৎ আইফোন ১৪-তেও ১২০ হার্জ রিফ্রেশ রেট রাখা হতে পারে। এ ছাড়া এই সিরিজে যুক্ত হতে পারে অলওয়েজ-অন ডিসপ্লে সুবিধাটি।
ব্লুমবার্গ তথ্যসূত্রে, অ্যাপল ওয়াচের মতো আইফোন ১৪ প্রো কম ব্রাইটনেস ও কম ফ্রেম রেটেও আবহাওয়া, ক্যালেন্ডার, স্টক, ক্রিয়াকলাপ এবং অন্যান্য ডাটা প্রদর্শনকারী উইজেটগুলো দেখাতে সক্ষম হবে। এ ছাড়া ডিসপ্লেতে একটি পাঞ্চ-হোল টাইপ ক্যামেরা হাউজিংয়ের ব্যবস্থা রাখা হতে পারে।
টাচ আইডি
আইফোন এক্স সিরিজে টাচ আইডি বাতিল করে ফেস আইডি চালু করেছিল অ্যাপল। সম্প্রতি ফাঁস হওয়া বেশ কিছু তথ্য থেকে জানা যায়, আইফোন ১৪ সিরিজে পাওয়ার বাটনের সঙ্গে একত্র করে টাচ আইডি ফিচারটিও ফিরিয়ে আনা হতে পারে।
যদিও বিভিন্ন মহলের দাবি, অ্যাপল তাদের নতুন এই সিরিজে টাচ আইডি ও ফেস আইডি দুই সুবিধা রাখতে চেয়েছিল। কিন্তু কারিগরিভাবে এটা বাস্তবায়ন কঠিন বলে মনে করছেন বিখ্যাত সাপ্লাই চেইন এনালিস্ট মিং চি কুও। প্রথমে ডিসপ্লের নিচে ফেইস আইডি সেন্সর লুকিয়ে রাখার পরিকল্পনা থাকলেও ২০২৪-এর আগে তা সম্ভব না বলে মনে করছেন সাপ্লাই চেইন এনালিস্ট রস ইয়ং ও।
ক্যামেরা
অ্যাপলের এই ফ্ল্যাগ-শিপ ফোনের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হতে পারে ৪৮ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা। গুঞ্জন অনুযায়ী, আইফোন ১৪ প্রো ম্যাক্স ও আইফোন ১৪ ম্যাক্সের পেছনের ক্যামেরায় ৪৮ মেগাপিক্সেলের প্রাইমারি সেন্সর দেওয়া হবে। প্রতিষ্ঠানটির ১৫ বছরের ধারাতে এটা হতে পারে বৈপ্লবিক এক পরিবর্তন।
বর্তমান স্মার্টফোন দুনিয়ায়, ১০৮ মেগাপিক্সেলের অসংখ্য মোবাইল ডিভাইস থাকলেও আইফোন ছিল এর থেকে ব্যতিক্রম। রেকর্ড সংখ্যক বিক্রি হওয়া সর্বশেষ ১৩ সিরিজের ফোনেও ছিল ১২ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা। এবার আগের থেকে আরও ভালো ক্ষমতার ও উন্নত অপটিক্যাল জুমসহ টেলিফটো লেন্স সুবিধা আসতে পারে। সামনের ও পেছনের ক্যামেরার ডিজাইনে কিছু পরিবর্তন আসতে পারে।
ফোর্বস তথ্যসূত্রে, আইফোন ১৫'র জন্য যে ক্যামেরা মডিউল ব্যবহারের কথা ছিল, ১৪ সিরিজেই তার পরিচয় ঘটতে পারে। ১৪ সিরিজের ফ্রন্ট ক্যামেরা পরীক্ষার সময় চীনা নির্মাতাদের গুণমাণের সমস্যা পায় অ্যাপল, পরে পরিকল্পনা পরিবর্তন করে একটি এলজি ইনোটেক ক্যামেরা মডিউল ইনস্টল করার সম্ভাবনা তৈরি হয়।
এই মডিউলে অটো-ফোকাস সুবিধাসহ অ্যাডভান্সড ফাংশন রয়েছে, যা অতীতের ফোনগুলোতে ছিল না। মিং চি কুও'র বরাত দিয়ে ফোর্বস বলছে, পোর্ট্রেট মোড এবং ভিডিও কলের সুবিধা বাড়াতে আরও ভালো ডেপথ-অব-ফিল্ডের জন্য একটি উন্নত অ্যাপারচারের পাশাপাশি অটো-ফোকাস সুবিধা যুক্ত করতে পারে প্রতিষ্ঠানটি।
দাম
১৪ সিরিজের উন্নত ক্যামেরা প্রযুক্তি দামের ক্ষেত্রে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে ফোর্বস। নানাবিধ আপগ্রেড ও নতুন সুবিধা প্রদানের পাশাপাশি মূল্য নির্ধারণে বৈশ্বিক সাপ্লাই-চেইন ব্যবস্থায় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের গুরুতর প্রভাবও দেখা যেতে পারে।
ফোর্বস সূত্রে, আইফোন ১৩ মিনির এন্ট্রি লেভেলের দাম রাখা হয়েছিল ৬৯৯ ডলার, কিন্তু আইফোন ১৪-এর জন্য খরচ করতে হতে পারে ৭৯৯ ডলার। আইফোন ১৪ ম্যাক্স এর দাম হতে পারে ৮৯৯ ডলার। ১৪ প্রো'র দাম ১ হাজার ৯৯ ডলার ও ১৪ প্রো ম্যাক্সের দাম ১ হাজার ১৯৯ ডলার হতে পারে। যেখানে ১৩ প্রো ম্যাক্স-এর দাম রাখা হয়েছিল ১ হাজার ৯৯ ডলার।
অর্থাৎ, আইফোন ১৪-এর প্রতিটা মডেলের দাম আগের ১৩ সিরিজের মডেলগুলোর চেয়ে ১০০ থেকে ৩০০ ডলার পর্যন্ত বাড়তে পারে। আনুমানিক এসব দাম আন্তর্জাতিক বাজারের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। তবে ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশি বাজারে এর দাম আরও বেশি হবার সম্ভাবনা রয়েছে। আগামী সেপ্টেম্বর মাসে নতুন এই আইফোন মুক্তি পাওয়ার মাধ্যমে অবসান ঘটবে এসব রহস্যের।
তথ্যসূত্র: ফোর্বস, ব্লুমবার্গ, বিজনেস ইনসাইডার, অ্যাপল ইনসাইডার
Comments