ক্যারিয়ারে বিরতির পর নতুন করে চাকরি খুঁজবেন যেভাবে
জর্জ এলিয়টের একটি বিখ্যাত কথা আছে, 'ইটস নেভার টু লেট টু বি হোয়াট ইউ মাইট হ্যাভ বিন'। বিভিন্ন কারণে অনেকের ক্যারিয়ার শুরু করতে কিছুটা দেরি হতে বা বিরতি নিতে হতে পারে। তাই বলে সেটা পুনরায় শুরু করা যাবে না এমন কোনো কথা নেই।
চাকরি বা ক্যারিয়ারে বিরতি নেওয়ার বিভিন্ন রকমের কারণ থাকতে পারে, যেমন- সেশন জট কিংবা শিক্ষা সংক্রান্ত কোনো জটিলতা, বিয়ে ও ব্যক্তিগত কারণ, ছোট বাচ্চার লালন-পালন, বাবা-মায়ের শারীরিক অসুস্থতায় তাদের পাশে থাকা, কিংবা অন্য কোনো কারণ।
ক্যারিয়ারে বিরতি নেওয়ার পর যদি অনেকটা সময় পেরিয়ে যায় তাহলে হতাশ হয়ে পড়বেন না। আপনি চাইলে আবারও পুরো উদ্যমে ক্যারিয়ার শুরু করতে পারেন। সঠিক কৌশল ও পরিকল্পনা অনুসরণে সেই সিদ্ধান্ত হয়ে উঠতে পারে যুগান্তকারী।
দীর্ঘ বিরতির পরে আপনি পুনরায় কীভাবে শুরু করবেন? কীভাবে আপনার জন্য সঠিক চাকরি খুঁজে পাবেন? কীভাবে সিভি তৈরি করেবেন? এসব প্রশ্নগুলোর পরিপূর্ণ উত্তর নিয়েই এই লেখাটি।
যুক্ত হোন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম গ্রুপগুলোতে
বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম চাকরি খোঁজার ক্ষেত্রে বেশ শক্তিশালী একটি মাধ্যম। পত্রিকা টুকে চাকরির খোঁজ পাওয়ার দিন আর নেই। বর্তমানে চাকরির বিজ্ঞপ্তি সবার আগে সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে পোস্ট করা হয়। বিভিন্ন ধরনের চাকরির জন্য রয়েছে বিভিন্ন গ্রুপ। সরকারি, বেসরকারি, ব্যাংক, বিভিন্ন এনজিও ও আইএনজিও ছাড়াও প্রত্যেক বিভাগের আলাদা চাকরির জন্যেও বর্তমানে অনেকগুলো গ্রুপ রয়েছে। ক্যারিয়ার শুরুর আগে এসব গ্রুপগুলোতে জয়েন করতে পারেন। কেন না বিজ্ঞপ্তি না দেখলে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চাকরির বিষয়ে সম্পূর্ণ বর্ণনার পাশাপাশি প্রার্থীর যোগ্যতা সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়া থাকে। সেই সঙ্গে ইন্টারভিউয়ের সম্ভাব্য তারিখ দেওয়া থাকতে পারে। অনেক চাকরি কেবল সিভি চেয়ে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে থাকে সেক্ষেত্রে পোস্ট না দেখলে সিভি পাঠানো সম্ভব হয়ে উঠে না। তাই নিজের জন্য সঠিক সোশ্যাল মিডিয়া সাইট নির্বাচন করুন।
লিংকডইন
চাকরি খোঁজার জন্য লিংকডইন অনেক ভালো একটি মাধ্যম হতে পারে। সেখানে যোগ্যতা অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের চাকরির জন্য আবেদন করা যায়। নির্দিষ্ট কোনো পেশা পছন্দ হলে শুধু সে সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি পাওয়া যায়। নিজের স্কিল ও যোগ্যতা তুলে ধরার এক অনন্য মাধ্যম লিংকডইন।
ফেসবুক
নিজের কর্মক্ষেত্রের বিভিন্ন ধরনের চাকরির জন্য ফেসবুক হতে পারে অনন্য মাধ্যম। সেক্ষেত্রে বিভিন্ন গ্রুপে জয়েন করা যেতে পারে। যেগুলোতে নিয়মিত চাকরির বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়।
ইনস্টাগ্রাম
ইনস্টাগ্রামেও বিভিন্ন ধরনের চাকরির বিজ্ঞপ্তি পাওয়া যায়। কেউ আগ্রহী হলে সেখান থেকে আবেদন করতে পারেন।
টুইটার
অনেক কোম্পানির সেমিনার ও ইনসাইটগুলো জানার জন্য টুইটার হতে পারে ভালো মাধ্যম।
অনলাইন প্রোফাইল আপডেট রাখা
অনেক দিন পরে যদি আপনারা নতুন করে ক্যারিয়ার শুরু করতে যান তাহলে অবশ্যই প্রোফাইল আপডেট করতে হবে। লিংকডইন জাতীয় সাইটগুলোর জন্য এটি বিশেষভাবে প্রয়োজনীয়। যে বিষয়গুলোতে মূল ফোকাস রাখবেন সেগুলো হলো-
- সদ্যতোলা কোনো প্রফেশনাল ছবি প্রোফাইলে ব্যবহার করা।
- যোগাযোগের তথ্য যেমন ই-মেইল কিংবা ফোন নাম্বার ইত্যাদি আপডেট করা।
- যদি কোনো ওয়েবসাইট কিংবা কাজের ছবি বা নমুনা থাকে সেগুলো আপলোড করা।
- সোস্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন লিংকগুলো যদি প্রফেশনাল হয় সেগুলো যুক্ত করে দেওয়া।
- আগে যে কোম্পানিগুলোতে কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে সেগুলো বিস্তারিত তুলে ধরা।
- যদি এই বিরতির মধ্যে কোনো নতুন কাজ বা স্কিল শিখে থাকেন তাহলে সেটিও যুক্ত করে দেওয়া।
- বেশি বয়সী পার্থীদের সুযোগ দেয় এমন কোম্পানির খোঁজ করুন।
আমরা ভাবি ইন্টার্নশিপ প্রোগ্রাম শুধু ফ্রেশার বা সদ্য পাশ করা পার্থীদের জন্য প্রযোজ্য হয়ে থাকে। কিন্তু বর্তমানে অনেক বড় কোম্পানিই অ্যাডাল্ট ইন্টার্নশিপ বা বড়দের জন্য এমন সুযোগ দেন, যাতে তারা নতুন করে তাদের ক্যারিয়ারকে শুরু করতে পারেন।
তবে এমন কোনো কোম্পানি যদি খুঁজে না পাওয়া যায় তাহলে সেসব কোম্পানিতে আবেদন করুন যারা নিয়োগের ক্ষেত্রে বয়সের জন্য কোনো পার্থক্য করবে না। অথবা তারা অভিজ্ঞ কাউকেই যাচ্ছে সেই নির্দিষ্ট পজিশনের জন্য।
হাইব্রিড সিভি বা স্কিল সমৃদ্ধ সিভি তৈরি করুন
সিভি বানানোর মতো অসংখ্য ফরমেট পাওয়া যায় এখন। সেখানে থেকে যাদের ক্যারিয়ারে একটা দীর্ঘ বিরতি চলে এসেছে তাদের জন্য হাইব্রিড সিভিই সবচেয়ে বেশি কার্যকরী। কেন না এই সিভিতে আপনার পূর্বের কাজের অভিজ্ঞতার চেয়ে আপনার দক্ষতা ও শিক্ষাগত যোগ্যতা বেশি হাইলাইটেড থাকে। এতে, যে নিয়োগকারী হয়তো আপনার এই বিরতিতে খুব একটা মনযোগ দেবে না। তাই সিভির ধরন নির্বাচন করতে হবে সতর্কতার সঙ্গে।
স্কিলগুলো আরও আপডেট করুন
যদি ক্যারিয়ার এ বিরতির পরে নতুন করে ক্যারিয়ার শুরু করতে অবশ্যই প্রয়োজন হবে নতুন স্কিল ও নতুন সব ধারনার। কেন না এখন প্রতিনিয়ত কাজের ধরণ পরিবর্তিত হচ্ছে। যুক্ত হচ্ছে নতুন অনেক সফট স্কিল সমৃদ্ধ কাজ। তাই নিজেকে সেভাবে স্কিলফুল করতে হবে।
যদি আপনি আপনার ফিল্ড পরিবর্তন করে অন্য কোনো প্রফেশনে যেতে চান তাহলে সেজন্য আপনার দরকার হবে সেই প্রফেশনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ স্কিল। তাহলেও নতুন ক্যারিয়ারে ভালো অবস্থান তৈরি করা সম্ভব।
সোশ্যাল সার্কেলের পরিচিত মানুষদের আপনার পুনরায় ক্যারিয়ারে ফেরার সিদ্ধান্ত সম্পর্কে সবার আগে জানানো উচিত। পরিবার ও বন্ধুদের জানানোর পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়ার মানুষদেরও জানানো উচিত। কোন উৎস থেকে আপনার চাকরি হয়ে যেতে পারে তা আপনি জানেন না।
সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন গ্রুপগুলোতে আপনি সবকিছু বিস্তারিত লিখে পোস্ট করতে পারেন। চাইলে কোনো নিয়োগ প্রতিষ্ঠানকে মেসেজ ও করতে পারেন।
ক্যারিয়ার বিরতি নিয়ে সৎ থাকুন
আপনার বিরতির বিষয় নিয়ে সৎ থাকুন। সঠিকভাবে তাদেরকে বিরতির কারণগুলো সিভিতে উল্লেখ করুন। ইন্টারভিউ হলে তাদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করুন।
বিরতির কারণ লুকানোর চেষ্টা করবেন না। সেক্ষেত্রে আপনার সম্পর্কে বিরূপ দৃষ্টিভঙ্গি সৃষ্টি হতে পারে। তাই বিরতির কারণ সততার সঙ্গে উপস্থাপন করতে চেষ্টা করবেন।
ক্যারিয়ার ব্রেককে নতুন সুযোগে পরিণত করুন
মনে হতে পারে, ক্যারিয়ার ব্রেক আপনার অনেক বেশি ক্ষতি করেছে কিন্তু আবার এটাও হতে পারে, এটা আপনার জন্য নতুন কোনো সুযোগ। সঠিক পরিকল্পনা ও নতুন সব কৌশল অবলম্বন করলে এই বিরতি এনে দিতে পারে নতুন কোনো সুযোগ। হয়তো পুরনো চাকরির চেয়ে নতুন আরও ভালো কোনো জায়গায় চাকরি করবেন আপনি।
যদি নতুন কোনো দক্ষতা যুক্ত করতে পারেন তাইলে সেই স্কিল অনুযায়ী নতুন অনেক চাকরির সুযোগ তৈরি হতে পারে আপনার জন্য। তাই ক্যারিয়ারের বিরতি হওয়ায় হতাশ না হয়ে সেটাকে কীভাবে ভালো সুযোগে পরিণত করবেন সেগুলো নিয়ে ভাবুন।
ইন্টার্ভিউয়ের জন্য ভালো করে তৈরি হোন
ইন্টারভিউ দেবার পূর্বে নিজেকে ভালোভাবে তৈরি করে নিন। কারণ ইন্টারভিউ ভালো হলে আপনার ক্যারিয়ারের বিরতি কোনো মুখ্য বিবেচ্য বিষয় হবে না। যেসব প্রশ্ন প্রায়ই ইন্টারভিউতে জিজ্ঞেস করে থাকে সেগুলোর উত্তর নিজের মতো করে সাজানো যেতে পারে। অন্যের প্রশ্ন উত্তর মুখস্ত করে গেলে তা সহজেই ধরা পড়ে যেতে পারেন।
সেই সঙ্গে কেন ক্যারিয়ার বিরতি হলো সেই সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে যেন উত্তর দিতে পারেন সেভাবে প্রস্তুতি গ্রহণ করবেন। আবার কেন আপনি অন্য প্রার্থীদের থেকে আলাদা সেগুলো নিয়েও কিছুটা প্রস্তুতি থাকতে হবে। সাবলীলভাবে কথা বলতে চেষ্টা করবেন। যদি কোথাও আটকে যান তাহলে কয়েক সেকেন্ড বিরতি দিয়ে আবার কথা বলার চেষ্টা করবেন।
শুধু এসব প্রস্তুতি নয়। আপনার পোশাক ও আপনার বাহ্যিক গঠনও জরুরি। পোশাক পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও সর্বাপরি ফর্মালভাবে আপনাকে যেতে হবে। আপনাকে দেখে যেন মনে হয় আপনি তাদের কোম্পানিতে কাজ করতে ইচ্ছুক।
তথ্যসূত্র: এমইউও, সিম্পললার্ন ও ডাটা ট্রেইন.কম
গ্রন্থনা: আরউইন আহমেদ মিতু
Comments