একাধিক রাউটার ব্যবহারের যত সুবিধা

নির্দিষ্ট পরিসীমার মধ্যে রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি প্রদানের মাধ্যমে ওয়াইফাই সিগন্যাল নিশ্চিত করে থাকে রাউটার। ওয়াইফাই রাউটারের পরিসীমা বা নিরাপত্তা বাড়াতে অনেকে একাধিক রাউটার ব্যবহারের বিষয়টি চিন্তা করে থাকেন। 
একাধিক রাউটার ব্যবহারের যত সুবিধা
একাধিক রাউটার ব্যবহারের যত সুবিধা। ছবি: সংগৃহীত

নির্দিষ্ট পরিসীমায় রেডিও ওয়েভের মাধ্যমে ওয়াইফাই সিগন্যাল নিশ্চিত করে রাউটার। তবে ওয়াইফাই রাউটারের স্পিড কমে গেলে সেটা বাড়াতে অনেকে একাধিক রাউটার ব্যবহার করে থাকেন। 

কয়েকটি সুবিধার কারণে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও এতে বেশ কিছু অসুবিধাও রয়েছে এতে। তাই এর সুবিধা ও অসুবিধার দিকটি ভালো করে বিবেচনা করা উচিত। 

সুবিধা 

একাধিক রাউটার ব্যবহারে সিগন্যাল সক্ষমতা ও কভারেজ এরিয়া বৃদ্ধি পেলেও বাড়তি সুবিধা হিসেবে পাওয়া যায় নিরাপত্তা। 

ওয়্যারলেস রেঞ্জ বৃদ্ধি

বাড়িতে বা অফিসে একটি ওয়্যারলেস রাউটার থাকলে অনেক জায়গায় ওয়াইফাই সিগন্যাল পৌঁছায় না। তবে অতিরিক্ত আরেকটি রাউটার ব্যবহার করে অন্যান্য কক্ষ, বাগান বা হোম অফিসের বেডরুমটি সুপারফাস্ট রেডিও ফ্রিকোয়েন্সির আওতায় আনা যেতে পারে। 

এ জন্য তার অথবা ওয়্যারলেস মাধ্যম ব্যবহার করে প্রধান রাউটারের সঙ্গে সংযুক্ত করে একটি অ্যাক্সেস পয়েন্ট হিসেবে দ্বিতীয় রাউটারটি সেটআপ করতে হবে। তারযুক্ত সংযোগের জন্য ইথারনেট ক্যাবলের এক প্রান্ত প্রধান রাউটারের ল্যান পোর্টে এবং অন্য প্রান্তটি দ্বিতীয় রাউটারের ওয়্যান পোর্টের সঙ্গে সংযুক্ত করতে হবে। সম্পূর্ণ সেটআপ প্রক্রিয়া জানতে প্রস্তুতকারকের ডকুমেন্টেশনটি পড়া যেতে পারে।   

একাধিক রাউটার ব্যবহার করলে ট্রান্সমিশন স্পিড বৃদ্ধি পায়। কারণ একটি রাউটার একক সময়ে যতগুলো ডিভাইসে সিগন্যাল দিতে পারে, একাধিক রাউটার সেক্ষেত্রে লোড কমাতে ভূমিকা রাখে।

একাধিক নেটওয়ার্কের কারণে নিরাপত্তা বৃদ্ধি  

এক সঙ্গে দুটি রাউটার ব্যবহার করলে দ্বিতীয় রাউটারটি প্রথম রাউটারের সঙ্গে সংযুক্ত সমস্ত ডিভাইস অ্যাক্সেস করতে সক্ষম হলেও তথ্য আদান-প্রদান করা যাবে না। যার কারণে দ্বিতীয় রাউটারটিতে প্রথমটির তুলনায় আক্রমণের ঝুঁকি কম থাকে এবং নিরাপত্তা জোরদার করে। 

প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত হোম বা অফিস নেটওয়ার্ক সেটআপ করতে হলে ডিভাইসগুলোকে বিভক্ত করে এমন একটি সুরক্ষিত নেটওয়ার্ক থাকাও গুরুত্বপূর্ণ।

নেটওয়ার্কের ডিভাইস বিভক্ত করা
 
শুধু ২টি ভিন্ন রাউটার দিয়ে ওয়াইফাই কার্যকারিতা বাড়ানো যায় না। তবে দ্বিতীয় রাউটারের সঙ্গে দুর্বল ডিভাইসগুলো সংযুক্ত করলে আরও নিরাপদ নেটওয়ার্ক পাওয়া সম্ভব হবে।  

প্রধান রাউটারটির সঙ্গে সংযুক্ত কেউ দ্বিতীয়টির ডিভাইসগুলোতে অ্যাক্সেস করতে সক্ষম হবে না। তাই ভয়েস সহকারী বা স্মার্ট হোম ডিভাইসের মতো দুর্বল সুরক্ষা প্রোটোকল সংবলিত ডিভাইসগুলো এর নাগালের বাইরে থাকে।

স্মার্ট টেলিভিশন এবং গেমিং কনসোলের মতো ডিভাইসে উচ্চগতির ইন্টারনেটের প্রয়োজন হয়। এ ধরনের ডিভাইসের জন্য আলাদা ওয়াই-ফাই রাউটার রাখা যেতে পারে। এভাবে নির্দিষ্ট এলাকার সব ডিভাইস একটি রাউটারের আওতায় থেকে ওভারলোড না হয়ে অতিরিক্ত রাউটার শুধুমাত্র নির্দিষ্ট ডিভাইসে ডেটা প্যাকেট সরবরাহ করবে।  

ডাউনটাইম হ্রাস করা 

কম্পিউটারে ছোট সার্ভার বা একটি অ্যাপ্লিকেশন হোস্ট করা থাকলে একাধিক রাউটার সেটআপ করে আপটাইম বাড়ানো যেতে পারে, যাতে প্রথমটি ব্যর্থ হলেও ডিভাইসটি সেকেন্ডারি রাউটারের সঙ্গে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংযুক্ত হতে পারে। আর্থিক বা বিশ্বাসযোগ্যতার ক্ষেত্রে ডাউনটাইম ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে, এমন প্রতিষ্ঠান এবং ব্যবসার জন্য এটি বেশ উপযোগী।  

ইথারনেট পোর্ট বাড়ানো 

ওয়্যারলেস রাউটারে থাকা ল্যান পোর্ট ক্যাবল ব্যবহার করে ডিভাইস সংযুক্ত করা যায়। যেহেতু একটি রাউটারে স্বল্প সংখ্যক পোর্ট থাকে, একটি অতিরিক্ত রাউটার ইনস্টল করলে নেটওয়ার্কের সঙ্গে সংযোগ করতে পারে এমন তারযুক্ত ডিভাইসের সংখ্যার সীমাবদ্ধতাও বাড়বে। 

অসুবিধা 

নানাবিধ ভালো দিকের পাশাপাশি প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী বিষয়গুলোও বিবেচনায় রাখা উচিত। 

একাধিক রাউটার সুইচের ঝামেলা 

প্রতিটি রাউটারের একটি পৃথক এসএসআইডি রয়েছে, যা ব্যবহারকারীকে তার নেটওয়ার্ককে অন্যান্য নেটওয়ার্ক থেকে আলাদা করতে সহায়তা করে। একাধিক রাউটার ব্যবহার করলে কোনো একটি রাউটারের কভারেজ পরিসর থেকে অন্য রাউটারে স্থানান্তর করতে স্মার্টফোন বা ল্যাপটপ আগের রাউটার থেকে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে নতুনটির সঙ্গে সংযোগ করতে হয়। যার ফলে বিলম্ব এবং ডাউনটাইম ঘটে, যা আপটাইম ও প্রাপ্যতা অগ্রাধিকারযোগ্য কিছু ব্যবসার জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। 

এ ক্ষেত্রে যদি দুটি রাউটারের সংযোগের পরিসীমা দুর্বল থাকে এবং ডিভাইস থেকে প্রায় সমান দূরত্বে থাকে তাহলে প্রতিবার এমন সংযোগ সুইচের মুখোমুখি হতে হবে। 

সিগন্যালে বাধা  
 
প্রায় সব রাউটার একই ফ্রিকোয়েন্সিতে কাজ করে, যা চ্যানেল নামে পরিচিত। একই চ্যানেল ব্যবহারকারী একাধিক রাউটার কাছাকাছি অবস্থান করলে সিগন্যাল বাধাগ্রস্ত হতে পারে।  

এ সমস্যার সমাধান করতে রাউটার কভারেজ পরিসীমা সম্পর্কে তথ্য প্রয়োজন হবে। তারপর সে মোতাবেক রাউটারগুলো বিভিন্ন স্থানে রেখে কভারেজ পরিসীমা ওভারল্যাপ না হওয়ার ব্যাপারটি নিশ্চিত হতে হবে। একেবারে ওভারল্যাপ হবে না এমনটি আশা করা যদিও সম্ভব নয়, তাই এটি যেন সবচেয়ে কম হয় সেটা নিশ্চিত করতে হবে।

সেটআপের জটিলতা  

একাধিক রাউটার ইনস্টল করার সবচেয়ে বড় অসুবিধার বিষয়টি প্রায় অনেকে এড়িয়ে চলেন। নেটওয়ার্কিং নিজেই একটি জটিল ধারণা এবং বাস্তব জীবনের হার্ডওয়্যারের সঙ্গে যুক্ত করা এটিকে আরও কঠিন করে তোলে। 

এ ছাড়া একাধিক রাউটার থাকার সর্বোত্তম অভিজ্ঞতা পাওয়ার পরিকল্পনায় ইথারনেট তারের সঙ্গে সংযুক্ত করতে চাইলে সেটআপ করার খরচ বাড়বে এবং পেশাদারের সাহায্যে অতিরিক্ত রাউটার কনফিগার করতে চাইলেও বেশি খরচ হতে পারে।

 

তথ্যসূত্র: মেইক ইউজ অব 

গ্রন্থনা: আসরিফা সুলতানা রিয়া

 

Comments