চলতি বছরের কাঙিক্ষত ৫ গ্যাজেট

খুব স্বাভাবিকভাবেই তাই প্রশ্ন উঠেছে, ২০২৩ সাল প্রযুক্তিপ্রেমীদের জন্য কী উপহার দিতে যাচ্ছে? নতুন কী চমক আসছে প্রযুক্তি জগতে? আদৌ কি আসবে কোনো নতুন পরিবর্তন? চলুন তবে দেখে আসি, ২০২৩-এর কোন গেজেটগুলো হাতে পাওয়ার জন্য অধীর অপেক্ষায় আছে প্রযুক্তিপ্রেমীরা।
 চলতি বছরের কাঙিক্ষত ৫ গ্যাজেট
ছবি: সংগৃহীত

২০২২ সাল ছিল প্রযুক্তি গেজেটের জয়জয়কারে ভরা একটি বছর। আইফোন ১৪ প্রো সিরিজ, স্যামসাং গ্যালাক্সি এস ২২ আলট্রা, পিক্সেল সেভেন প্রো স্মার্টফোন; ম্যাকবুক এয়ার এম ২ এর মতো ল্যাপটপ; কিংবা মেটা কোয়েস্ট ২-এর মতো ভিআর হেডসেট- ২০২২-এর মতো নতুন নতুন প্রযুক্তির এত পণ্য বাজারে এসেছে যা  লিখে শেষ করা যাবে না।

খুব স্বাভাবিকভাবেই তাই প্রশ্ন উঠেছে, ২০২৩ সাল প্রযুক্তিপ্রেমীদের জন্য কী উপহার দিতে যাচ্ছে? নতুন কী চমক আসছে প্রযুক্তি জগতে? আদৌ কি আসবে কোনো নতুন পরিবর্তন? চলুন তবে দেখে আসি, ২০২৩-এর কোন গেজেটগুলো হাতে পাওয়ার জন্য অধীর অপেক্ষায় আছে প্রযুক্তিপ্রেমীরা।

 চলতি বছরের কাঙিক্ষত ৫ গ্যাজেট

ডায়সন জোন 

প্রথমবার দেখলে হয়তো মনে হবে সায়েন্স ফিকশন মুভির দৃশ্য থেকে উঠে আসা ফিউচারিস্টিক কোনো যন্ত্র, কিন্তু ডায়সন জোন হেডফোনটি পাওয়া যাবে বাস্তবেই। শুধু দেখতেই না, ফিচারেও রয়েছে ফিউচারিস্টিক ছোঁয়া। ওয়ারলেস টেকনোলজি, নয়েজ ক্যান্সেলেশনের পাশাপাশি থাকবে বাতাস ফিল্টার করার প্রযুক্তিও। 

এই হেডফোনটিতে থাকা ফিল্টার বাতাসে থাকা দশমিক ১ মাইক্রন আকার পর্যন্ত ধুলোবালি পরিশুদ্ধ করতে পারবে, এবং নাক ও মুখ স্পর্শ করা ছাড়াই দেবে বিশুদ্ধ বাতাস। আর শুধু বায়ু বিশুদ্ধিকরণই নয়, এই হেডফোনটিতে আরও থাকছে ১৬ ওহমের ৪০ মিলিমিটার নিওডিয়াম স্পিকার ড্রাইভার, যা বাজারের অন্য যেকোনো প্রিমিয়াম হেডফোন থেকে আরও পরিষ্কার শব্দ উৎপাদন করবে বলে দাবি করা হচ্ছে। 

কোনো শিল্পী যদি কোনো সুর কম্পোজ করেন, তা ঠিক যেভাবে শ্রোতাদের কাছে পৌঁছাতে চান, এই হেডফোন দিয়ে ঠিক সেভাবেই তা শোনা যাবে- এমনটাই আশা করা হচ্ছে ডায়সন জোন হেডফোনটি নিয়ে। 

আইফোন-১৫ সিরিজ

নচের বিকল্প হিসেবে ডায়নামিক আইল্যান্ড, ক্র্যাশ ডিটেকশন ও স্যাটেলাইটের মাধ্যমে এসওএস বার্তা পাঠানো, ৪ ন্যানোমিটারের এ১৬ বায়োনিক চিপসেট (যা এখন পর্যন্ত স্মার্টফোনের চিপসেটগুলোর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী)- সব মিলিয়ে আইফোন ১৪ সিরিজের প্রিমিয়াম মডেল দুটো ছিল ২০২২ এর দারুণ জনপ্রিয় একটি স্মার্টফোন। 

প্রযুক্তির দুঃস্বপ্নের একটি বছরের শেষে বাজারে এসে বেশ দাপটের সঙ্গেই লড়াই চালিয়েছে আইফোন ১৪। পূর্বসূরির জনপ্রিয়তা দেখলে কিংবা প্রযুক্তি বিশ্লেষকদের গুঞ্জন শুনলেই আইফোন ১৫ সিরিজের জমজমাট আগমনী বার্তা পাওয়া যাচ্ছে। এটা হতে যাচ্ছে চলতি বছরের এর আরেকটি বিপুল আকাঙ্ক্ষিত গেজেট।

আইফোন তাদের ফোন নিয়ে বরাবরই রহস্যে ঘেরা, তবুও এখন পর্যন্ত বেশ কিছু গুঞ্জন গণমাধ্যমে জোরালোভাবে প্রচার হয়েছে। যার মধ্যে অন্যতম অ্যাপলের স্মার্টফোন সেগমেন্টে যুক্ত হতে যাওয়া ইউএসবি সি পোর্ট। ফলে থার্ড পার্টি চার্জার কিংবা ডাটা ট্রান্সফার হবে আরও সহজ, লাইটনিং ক্যাবলের তুলনামূলক দুষ্প্রাপ্যতায় যা বয়ে আনবে স্বস্তির হাওয়া। 

সিরিজের প্রিমিয়াম মডেলগুলোতে আরও যোগ করা হতে পারে ৩ ন্যানোমিটারের শক্তিশালী এ১৭ চিপ, কোয়ালকম এক্স৭০ মডেম ও রিভার্স চার্জিং সুবিধা। ফটোগ্রাফার বা সিনেমাটোগ্রাফারদের জন্য এই সিরিজে থাকতে পারে সনির স্টেট-অফ-দ্য-আর্ট' ইমেজ সেন্সর, পেরিস্কোপ জুম। ফলে, আইফোন ব্যবহারকারীদের সস্তির ক্যামেরায় যুক্ত হবে আরও দুর্দান্ত কিছু মাইলফলক। তা ছাড়া, অন্যতম আকর্ষণ হিসেবে থাকতে পারে নতুন 'আলট্রা' নামের একটি মডেল।

 চলতি বছরের কাঙিক্ষত ৫ গ্যাজেট

স্যামসাং গ্যালাক্সি এস ২৩ ও স্যামসাং গ্যালাক্সি ফোল্ড ৫

আইফোনের পাশাপাশি গত বছরে বাজারে শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রাখা দক্ষিণ কোরীয় প্রযুক্তি জায়ান্ট স্যামসাং ও নতুন বছরে পিছিয়ে নেই। ফেব্রুয়ারির ১৭ তারিখেই বহু আকাঙ্খিত এই ফোনটি মুক্তি দিয়েছে স্যামসাং। ফোনটির প্রসেসর হিসেবে আছে কোয়ালকমের এখন পর্যন্ত সবচেয়ে শক্তিশালী প্রসেসর, স্ন্যাপড্রাগন ৮ জেন ২কে।

ফোনটির প্রাথমিক ক্যামেরা হিসেবে আছে ২০০ মেগাপিক্সেলের আইসোসেল এইচপি১ সেন্সর, যার আবিষ্কারক স্যামসাং নিজেই। ফোনটি বাজারে পাওয়া যাচ্ছে ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ২০০ মার্কিন ডলারে।
ফোল্ড ফাইভও একই সঙ্গে দেখার কথা থাকলেও এটা মুক্তি পেতে পারে আগামী মার্চে। এই ফোনেও দেখা যেতে পারে একই প্রসেসর, তবে ধারণা করা হচ্ছে যে ক্যামেরার ক্ষেত্রে একটু পিছিয়ে থাকবে এই ফোন। তবে যেসব গ্রাহকের মূল আগ্রহ ফোল্ড করার সক্ষমতা নিয়ে, তাদের জন্য সুখবর নিয়ে আসতে পারে ফোনটি। ধারণা করা হচ্ছে এবারের ফোল্ড ফোনটি হবে আরও নিখুঁত, ফলে ভাঁজ চোখে না পড়ার সম্ভাবনাই বেশি। তবে ফোনটির দাম না কমানোর যে সম্ভাবনা, তা ভাঁজ ফেলে দিতে পারে গ্রাহকের কপালেই।  

 চলতি বছরের কাঙিক্ষত ৫ গ্যাজেট

প্লেস্টেশন ভিআর-২

গেমিং জগত ক্রমাগত পাল্টে যাচ্ছে, নিত্য নতুন প্রসেসর আর গ্রাফিক্স কার্ড আসার কল্যাণে নতুন অভিজ্ঞতা পাচ্ছেন গেমাররা। এই অভিজ্ঞতাকে আরও দারুণভাবে অনুভব করার জন্য সনি নিয়ে আসছে প্লেস্টেশন ভিআর-২। গেমারদের ভার্চুয়াল রিয়েলিটির অভিজ্ঞতা দিতে সনি ৬ বছর আগেই নিয়ে এসেছিল তাদের ভিআর হেডসেট। সময় পাল্টেছে, বাজারে এসেছে অনেক কোম্পানির অনেক নতুন ভিআর প্রযুক্তি। তবে নামটা যেহেতু সনি, তাই নিশ্চয়তা দিয়েই বলা যায়, দারুণ একটা কিছু পেতে যাচ্ছে গেমার কমিউনিটি।
 
স্পেসিফিকেশনের দিকে তাকালে দেখা যাবে, প্রতি চোখের জন্য রয়েছে ওএলইডি প্যানেল, যার রেজ্যুলেশন রাখা হচ্ছে ২০০০ গুণ ২০৪০, সঙ্গে থাকছে ১২০ হার্টজ পর্যন্ত রিফ্রেশ রেট। আরও ভালো মোশন সেন্সর আনা হয়েছে, যার সঙ্গে আছে ৪টি ক্যামেরা, যা হেডসেট ও কন্ট্রোলার নিয়ন্ত্রণকে করবে আরও সহজ। ১১০ ডিগ্রি ফিল্ড অব ভিউ থাকায় এখন শুধু সামনে না, পাশেও দেখতে পারবেন আরও সহজেই।

দামের দিক দিয়েও থাকছে চমক। মেটা কোয়েস্ট প্রো-এর মতো সম্প্রতিকালে রিলিজ পাওয়া ভিআর হেডসেটের প্রায় ৩ ভাগের একভাগ দামে বাজারে আসবে পিএসভিআর-২। ফলে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি গেমিং থাকবে হাতের নাগালেই।

 চলতি বছরের কাঙিক্ষত ৫ গ্যাজেট

দ্বিতীয় প্রজন্মের কিউডি-ওএলএইডি টেলিভিশন
 
স্যামসাং ২০২২ সালে নিয়ে এসেছিলো তাদের প্রথম প্রজন্মের কোয়ান্টাম-ডট ওএলইডি (কিউডি ওলেড) টেলিভিশন। আরও বেশি ব্রাইটনেস ও স্যাচুরেশন, নিখুঁত পিক্সেল এবং দারুণ রঙ; সনি ও এলজির মতো ব্র্যান্ডের টিভির সঙ্গে পাল্লা দিয়েছে সমানে সমানে। আগের প্রজন্মের টিভির স্ক্রিনের আকার ছিল ৫৫ ও ৬৫ ইঞ্চি, যার ধারাবাহিকতায় এবার স্যামসাং নিয়ে আসছে ৭৭ ইঞ্চির দ্বিতীয় প্রজন্মের কিউডি ওলেড টিভি। 

দ্বিতীয় প্রজন্মের টিভিগুলো আরও ভালো ব্রাইটনেস দেবে, সেই সঙ্গে হবে আরও মজবুত, সঙ্গে সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ খরচ-এরকমটাই দাবি করছে স্যামসাং। এ ছাড়া প্রথমবারের মতো কোনো ওলেড টিভিতে থাকছে এএমডি ফ্রিসিঙ্ক প্রিমিয়াম প্রো সার্টিফিকেট, যা ওলেড টিভিতে সত্যিকারের গেম খেলার অভিজ্ঞতা দেবে। আরও থাকছে ডলবি এটমোস স্পিকার, ফলে যেকোনো শব্দই শোনা যাবে আরও ভালোভাবে। আর এই টিভি কিনতে গ্রাহককে গুণতে হবে সাড়ে ৪ হাজার মার্কিন ডলার।
  
করোনা, যুদ্ধ, মন্দার বছর বাইশে সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা লেগেছিল প্রযুক্তি বাজারে। হাজার হাজার কর্মী ছাঁটাই, ধনীদের এলিট ক্লাবে তালিকার কাঁটাছেড়া, একের-পর এক কোম্পানির শেয়ারদর, বাজারদর কমে আসে গত বছর। তবে, এসব তো আর বিজ্ঞান-প্রযুক্তিকে থামাতে পারে না, আবিষ্কারের চাকা চলতে থাকে আপন গতিতে। চলতি বছরে আরও নতুন নতুন গেজেট আসবে বাজারে, যার কোনটি হয়তো আমূলে বদলে দিতে পারে প্রযুক্তির ব্যবহারকেই।
 
তথ্য সূত্র: টেক হার্ডার, দ্য পিক ম্যাগাজিন, দ্য ভার্জ, নিক্কেই এশিয়া
 

Comments