শর্ট ভিডিও: সামাজিক মাধ্যমে আগামীর কনটেন্ট

ডিজিটাল কনটেন্টের জগতে বর্তমানে স্বল্পদৈর্ঘ্য বা শর্ট ভিডিওরই জয়জয়কার। তাই ধীরে ধীরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ভবিষ্যত হয়ে উঠছে এ ধরনের কনটেন্ট। 
শর্ট ভিডিও: সামাজিক মাধ্যমে আগামীর কনটেন্ট

একবিংশ শতাব্দীর জীবনযাত্রায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অন্যতম একটি অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মানুষের জীবনযাত্রা, যোগাযোগ এবং তথ্যপ্রাপ্তির ধরন পালটে দেওয়ার পেছনের এর ভূমিকা প্রচুর। 

বিশ্বব্যাপী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীর সংখ্যা এখন ৪.৭ বিলিয়ন। এত বিশাল সংখ্যক মানুষের ওপর এর প্রভাব একেবারেই এড়িয়ে যাবার মতো নয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের উপস্থিতির ফলে আগের চেয়ে অনেকগুণে বদলে গেছে মানুষের সঙ্গে মানুষের যোগাযোগের প্রকৃতি।
সামাজিক মাধ্যমে থাকা বিনোদনের ক্ষেত্রগুলোও তাই ব্যবহারকারীদের যুক্ত রাখতে নিত্য-নতুন ফিচার যোগ করছে। এতে সম্পর্ক তৈরি, তথ্য স্থানান্তর ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের মতো বিষয়গুলোও প্রভাবিত হচ্ছে।   

শুধু ব্যক্তিজীবনে নয়, ব্যবসায়িক পণ্য ও সেবার প্রচার-প্রসারের জন্যও সামাজিক মাধ্যমের ওপর অনেকাংশে নির্ভর করতে হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের এখন বিভিন্নভাবে মার্কেটিংয়ের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের দ্বারস্থ হতে হয়, কেন না ক্রোতাদের একটা বিশাল অংশ এর সক্রিয় ব্যবহারকারী। বিশেষত তরুণরা নিজেদের জীবনের খুঁটিনাটি ঘটনা প্রতিদিন শেয়ার করে চলেছে সামাজিক মাধ্যমে। বিভিন্ন চলমান ট্রেন্ডের স্রোতে গা ভাসানো হোক বা অনলাইনে বেচাকেনা হোক– তরুণদের আনাগোনা এখানে সবচেয়ে বেশি। এমনকি এদের অনেকেই বাস্তবের চেয়ে ভার্চুয়াল জগতে বেশি ভালো যোগাযোগ স্থাপন করে থাকে। 

ডিজিটাল কনটেন্টের জগতে বর্তমানে স্বল্পদৈর্ঘ্য বা শর্ট ভিডিওরই জয়জয়কার। তাই ধীরে ধীরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ভবিষ্যত হয়ে উঠছে এ ধরনের কনটেন্ট। 

দ্রুতগতির চাহিদা মেটাতে সহজে উপভোগ করা যায় এই বিনোদন উপকরণটি। মনোযোগ বা সময় দিতে হয় কম। টিকটকের মতো শর্ট ভিডিও মাধ্যমগুলোতে কনটেন্ট নির্মাতাদের জন্যেও নতুন করে জায়গা সৃষ্টি হচ্ছে। ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান, যেকোনো ব্র্যান্ডিংয়ের জন্যই ব্যবহৃত হচ্ছে এসব স্বল্পদৈর্ঘ্য কনটেন্ট ও মাধ্যম। এভাবে কম সময়ে দর্শকের সঙ্গে তথ্য ও বিনোদনের বিনিময় ঘটানো যায়। একঘেয়েমির কোনো সুযোগ থাকে না। 

বিনোদন ও কনটেন্ট নির্মাণের জগতে তাই খুব কম সময়ের মধ্যেই টিকটক বেশ শক্তিশালী একটি ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। এতে বর্তমানে রয়েছে এক বিলিয়নেরও বেশি সক্রিয় ব্যবহারকারী। কনটেন্ট নির্মাণ ও উপভোগ– ২ ক্ষেত্রেই যেন বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটেছে টিকটকের উত্থানে। অন্যসব 'সেকেলে' প্ল্যাটফর্মগুলোর চেয়ে টিকটকের জনপ্রিয়তা বেশি হবার অন্যতম কারণ হচ্ছে এর কম সময়ে দর্শনোদ্দীপক ও বিনোদনমূলক কনটেন্ট। সৃজনশীলতার চর্চাকে একটি নির্দিষ্ট পরিসর থেকে সরিয়ে এনে যেন ব্যবহারকারীদেরকে স্বাধীনভাবে, অনেকটা গণতান্ত্রিকভাবে বিনোদনের চর্চা করতে উদ্বুদ্ধ করেছে এই অ্যাপটি। স্মার্টফোন আর ইন্টারনেট সংযোগ থাকলে কোনোরূপ বাঁধাধরা ছাড়াই এখানে সবাই নিজের প্রতিভার চর্চা করতে পারছে। 

টিকটকে বিভিন্ন ভিজুয়াল ও সাউন্ড ইফেক্টসহ ১০ থেকে ১৫ সেকেন্ডের ছোট ভিডিও তৈরি করা যায়। নাচ, গান, সংবাদ, ভ্রমণ, শিক্ষা ইত্যাদি বৈচিত্র্যময় ভ্লগ বা ভিডিও ব্লগ তৈরি করার বিশাল একটি ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে এখানে। কনটেন্ট নির্মাণ ও উপভোগের জন্য যে যার পছন্দের বিষয় বেছে নিতে পারছে। নির্মাণের ক্ষেত্রে বিভিন্ন এডিটিং টুল, গানের ক্লিপ, সাউন্ড ইফেক্ট, ফিল্টার ইত্যাদি ফিচার রয়েছে– যাতে ভিডিওগুলো অনেক আকর্ষণীয়ভাবে তৈরি করা যায়। এসব ফিচারের মোটামুটি সীমাহীন অপশন থাকায় বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগও থাকে, যার ফলে নিত্য-নতুন ট্রেন্ডের দেখা মেলে। এসবের ফলাফলস্বরূপ, টিকটক ইতোমধ্যেই এক নতুন সেলিব্রেটি ও ইনফ্লুয়েন্সার প্রজন্মের জন্ম দিয়েছে। মার্কেটিংয়ের অন্যতম মাধ্যম হিসেবেও এর ভবিষ্যত অত্যন্ত সম্ভাবনাময়।

তরুণদের মধ্যে টিকটকের জনপ্রিয়তা আকাশছোঁয়া। তবে বাবা-মায়ের কাছেও অনেক সেফটি ফিচার থাকার কারণে এর গ্রহণযোগ্যতা দিনদিন বেড়ে চলেছে। যেমন টিকটকে রয়েছে ফ্যামিলি পেয়ারিং ফিচার। এর মাধ্যমে সন্তান কতটা 'স্ক্রিনটাইম' কাটাচ্ছে, কী কী দেখছে ইত্যাদি বিষয়ে নজরদারি রাখতে পারেন বাবা-মা। তারা চাইলে সময় ও দেখার পরিধি, দুটোই বেঁধে দিতে পারেন এই অ্যাপে। উঠতি বয়সের কিশোর-কিশোরীদের দুশ্চিন্তাগ্রস্ত বাবা-মায়ের জন্য এই ফিচারগুলো সবচেয়ে বেশি কাজে দেয়। 

এ ছাড়া বাংলাদেশেও টিকটক একটি নিরাপদ ও ইতিবাচক পরিসর নির্মাণের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন স্থানীয় গোষ্ঠীর সঙ্গে সক্রিয়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সম্প্রতি বাংলাদেশে টিকটক একটি সেইফটি অ্যাম্বাসেডর প্রোগ্রাম চালু করে, যেখানে সমাজের বিভিন্ন পরিসরের পরিবর্তনকামী ব্যক্তিরা এসে টিকটকের নিরাপদ পরিবেশ নির্মাণের প্রতিশ্রুতিকে সমর্থন করেন। এই অ্যাম্বাসেডররা সবাইকে নিজস্ব সৃজনশীল চর্চার মাধ্যমে সমাজের উন্নয়ন করতে আহ্বান জানান।

সব সামাজিক মাধ্যমেরই কিছু ভালো দিক, মন্দ দিক রয়েছে। তা নির্ভর করে মূলত লোকে এটি ব্যবহার করছে, তার ওপর। খুব কম সময়ের মধ্যে টিকটকের উন্নয়ন ঘটেছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। আর এই কম সময়ে বিভিন্ন বয়সের মানুষই এতে সাড়া দিয়েছে। এর খাপ খাইয়ে নেবার প্রবণতা ও সহজে ব্যবহারযোগ্যতার জন্য টিকটক যে অচিরেই কনটেন্ট জগতের ভবিষ্যত হতে যাচ্ছে, এ নিয়ে সন্দেহ নেই। বছরের পর বছর ধরে ভোক্তাদের চাহিদা অনুযায়ী বদলানোর সম্ভাবনাও এর মাঝে রয়েছে। আর এতেই এর টিকে থাকবার বিষয়টি যেন আরও পোক্ত হয়। 

ব্যবহারকারী হিসেবে আমাদের উচিত নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী এর ইতিবাচক ফিচারগুলো ব্যবহার করা। কেন না ইতিবাচক ব্যবহারের ফলে টিকটক সমর্থন করলেই এই ক্ষেত্রটি আরও ভালোভাবে বেড়ে উঠবে ও কনটেন্ট জগতের উন্নয়ন ঘটবে। 

অনুবাদ অনিন্দিতা চৌধুরী

 

Comments

The Daily Star  | English

DMCH doctors threaten strike after assault on colleague

A doctor at Dhaka Medical College Hospital (DMCH) was allegedly assaulted yesterday after the death of a private university student there, with some of his peers accusing the physicians of neglecting their duty in his treatment

4h ago