প্রযুক্তি

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কারণে কি কাজ হারানোর আশঙ্কায় বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সাররা

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কারণে কি কাজ হারানোর আশঙ্কায় বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সাররা
ছবি: স্টার

গত কয়েক দশকে বিশ্বের গতিবিধিতে এসেছে অনেক নাটকীয় পালাবদল। আর বর্তমানে বয়ে যাওয়া শিল্প বিপ্লবের চতুর্থ ঢেউয়ের ফলে আমাদের চেনাজানা জীবনটা আবারও বদলের সম্মুখীন হয়েছে।

এই বদলের অন্যতম প্রধান বিষয়টি হচ্ছে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার গতিময় চলাচল। সম্প্রতি এ নিয়ে চায়ের কাপে ঝড় তোলা বহু জল্পনা-কল্পনা ও আলোচনাই উঠে আসছে। 

কেমন করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ধীরে ধীরে আমাদের লেখালেখি, কনটেন্ট নির্মাণ এবং অন্য সব সৃজনশীল ক্ষেত্রের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে– মূল আলাপটা সে নিয়েই। আর সে আলাপ জন্ম দিচ্ছে এমন এক ভয়ের, যাতে ভাবনায় পড়তে হচ্ছে যে এসব কাজের জায়গায় মানুষের জায়গা নিয়ে নেবে কি না। 

চলমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে বলা যায়, বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সিং জগতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দাপট প্রভাব ফেলতে পারে। এর ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির কারণে বাংলাদেশে কনটেন্ট ডেভেলপমেন্ট, গ্রাফিক ডিজাইন, সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট এবং ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের মতো বিভিন্ন ধরনের পরিষেবার একটি কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ ফ্রিল্যান্সার ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি তথা বিএফডিএসের তথ্যমতে, বর্তমানে দেশে কম করে হলেও সাড়ে ১০ লাখ সক্রিয় ফ্রিল্যান্সার রয়েছেন। এ হিসেবের বাইরে আরও অনেকেই যে রয়েছেন, সেটুকু অনুমান করে নেওয়া যায়। 

পায়োনিয়ারের একটি জরিপ থেকে জানা যায়, ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্মে বাংলাদেশ নিয়মিতই কর্মদাতাদের পছন্দের শীর্ষ তালিকায় থাকে। এ ছাড়া ২০১৯ সালে অনলাইন শ্রমের অষ্টম বৃহৎ উৎস ছিল বাংলাদেশ। তথ্য ও প্রযুক্তি বিভাগের তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সারদের মোট বার্ষিক আয়ের পরিমাণ ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি। 

তবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাথা চাড়া দিয়ে ওঠায় বেশ ভালোমতো ভুগতে পারে এই মিলিয়ন ডলার ইন্ডাস্ট্রি। ডাল-ই বা ও মিডজার্নির মতো ছবি তৈরি করার প্রোগ্রাম এখন ঘরে বসেই অনেককে 'আঁকিয়ে' বানিয়ে দিচ্ছে। আর চ্যাটজিপিটি তো ইতোমধ্যেই প্রয়োজনীয় প্রম্পট দেবার পর বিভিন্ন স্ক্রিপ্ট, ন্যারেটিভ এবং সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টের কোড লিখে এর লেখালেখির চমক দেখিয়েছে।

প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছিল, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও অটোমেশন প্রযুক্তির উন্নয়ন ঘটানোর মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সিং ক্ষেত্রে লোকবল কমাতে সহায়ক হবে। তবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ক্রমশ উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে দেখা গেল, এটি আরও অনেক কাজ করতে সক্ষম। বিশেষত কনটেন্ট লেখা, গ্রাফিক ডিজাইনিং, প্রোগ্রামিং, অ্যানালিসিস ও রিপোর্টিংয়ের মতো কাজগুলোতে এর অটোমেশনের পারদর্শিতা চোখের পড়ার মতো। তাই এসব কাজের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সারদের জন্য এটি বেশ বড়সড় ক্ষতি হয়ে দেখা দিতে পারে। 

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নকশাটা এমনভাবে করা হয়েছে, যাতে এর মাধ্যমে মানুষের জীবন ও কাজ আরও সহজ করা যায়। মূলত এই প্রযুক্তির উদ্দেশ্য হওয়া উচিত মানুষের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা, সেগুলোকে প্রতিস্থাপন করা নয়। যেকোনো কাজের ক্ষেত্রেই কোনো ধরনের পক্ষপাত বা ভুল এড়ানোর জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সিস্টেমগুলোকে প্রতিনিয়ত হালনাগাদ করতে হয় ও নজরদারিতে রাখতে হয়। অর্থাৎ, এই প্রযুক্তিটিরও দরকার মানুষের তত্ত্বাবধান ও পরিচালনা। ফলে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার ও বাস্তবায়নের জন্য হলেও সবসময়ই এ বিষয়ে দক্ষ ও ওয়াকিবহাল মানুষের প্রয়োজন হবে। 

যদিও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নানাবিধ সম্ভাব্য প্রয়োগ রয়েছে, তবু সব ধরনের কাজে এটি কার্যকর হবে না। বিভিন্ন ধরনের কর্মক্ষেত্র ও পেশার ওপর ভিত্তি করে শ্রমবাজারে এর প্রভাব পড়বে। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, এই প্রযুক্তিটি শুধুমাত্র কখনো কখনো সার্বজনীন সমস্যার সমাধান হতে পারে– সবসময় নয়। 

শিল্প-কারখানায় অটোমেশন এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সূচকীয় বৃদ্ধির ফলে এখন যে পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে, তাতে গণমালিকানাধীন ও ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মচারী-কর্মকর্তাদের অবশ্যই উন্নত প্রযুক্তি সম্পর্কিত বিভিন্ন শিক্ষামূলক ও প্রশিক্ষণ প্রোগ্রামের আওতায় আনতে হবে। মনে রাখা জরুরি যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানুষের জন্য শুধুমাত্র সহায়ক একটি ব্যবস্থা, মানুষের বিকল্প নয়। তাই কর্মজীবী মানুষকে সব সময়ই এসব প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে, যাতে তারা কখনো পিছিয়ে না পড়ে। 

অনুবাদ: অনিন্দিতা চৌধুরী

 

Comments

The Daily Star  | English

Correction Before Election?

In recent times, the liberated and much-buoyed Bangladesh Nationalist Party (BNP) has filled the air with demands for an election as early as December 2025. According to the decision of the Interim Government (IG), the election was originally scheduled for April 2026.

34m ago