ডিটিউব কি ইউটিউবের বিকল্প হতে চলেছে

ডিটিউব কি ইউটিউবের বিকল্প হতে চলেছে
ছবি: ডিটিউব

ভিডিও-ভিত্তিক জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইউটিউবের প্রতিদ্বন্দ্বী হবার প্রতিযোগিতায় নেমেছে 'ডিটিউব' নামের আরেকটি অ্যাপ। যেটি দেখতে মোটামুটি একই রকমের। 

ডিটিউব স্টিমিট সাইটের মধ্যে নির্মিত একটি প্ল্যাটফর্ম। স্টিমিট হচ্ছে রেডিটের মতোই আরেকটি ব্লকচেইনভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ওয়েবসাইট। 

ভিডিও প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ইংরেজি বর্ণমালায় 'ইউ' থেকে 'ডি' পর্যন্ত যাত্রা ঠিক কী কী কারণে সুখকর হতে পারে ডিজিটাল কনটেন্ট ভোক্তাদের জন্য, সে নিয়েই আজকের এ লেখা। 

ডিটিউব কি ইউটিউবের বিকল্প হতে চলেছে
ছবি: ডিটিউব

ডিসেন্ট্রালাইজড বা বিকেন্দ্রীভূত প্ল্যাটফর্ম

ডিটিউব নামের পরিপূর্ণ রূপ হচ্ছে 'ডিসেন্ট্রালাইজড টিউব'। এর কোনো কেন্দ্রীয় সার্ভার নেই এবং সব কনটেন্ট একটি ব্লকচেইনে মজুদ করা থাকে। এবং সাধারণত ব্লকচেইনের তথ্যগুলো এতে থাকা সব সদস্যের মধ্যেই যাচাই করে নেওয়া হয়। এতে বিদ্যমান সব তথ্যের 'পিয়ার-টু-পিয়ার টরেন্টিং' করা হয়। এতে করে ডিটিউবে থাকা ভিডিওগুলোতে অন্য কোনোরূপ হস্তক্ষেপ কঠিন হয়ে পড়ে এবং কনটেন্ট নির্মাতারা বেশ ভালোরকম স্বাধীনতা ভোগ করতে পারেন। 

ব্লকচেইন ব্যবস্থা ইতোমধ্যেই  প্রযুক্তিতে বেশ কিছু ইতিবাচক পরিবার্তন এনেছে। এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ডিটিউবও ব্লকচেইন বিপ্লবের অংশ হয়ে উঠছে। 

ডিটিউব অন্যভাবেও প্রযুক্তির কেন্দ্র থেকে সরে নিজের জায়গা করে নিয়েছে। গুগল, অ্যামাজন, ফেসবুক, মাইক্রোসফট এবং অ্যাপলের মতো প্রযুক্তিদানবদের নিয়ন্ত্রণের ভিড়ে নিজের একটি আলাদা অস্তিত্ব গড়ে তোলা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। কেন না এখন এমন প্ল্যাটফর্ম খুঁজে পাওয়াই মুশকিল, যারা এই ৫ কোম্পানির সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে যুক্ত নয়। 

ব্যবহারকারীর তথ্যের নিরাপত্তা

ডিটিউবে কোনো কেন্দ্রীয় সার্ভার না থাকার কারণে কোনো একটি নির্দিষ্ট স্থানে ব্যবহারকারীর তথ্য জড়ো করে রাখা হচ্ছে না যাতে চাইলেই কোনো পটু হ্যাকার তা হাতিয়ে নিতে পারে। এখানে সবাই ছদ্মনামে কনটেন্ট আপলোড করে এবং তথাকথিত লগ-ইনের ঝক্কিও পোহাতে হয় না। তথ্য পাচার হয়ে যাবার কোনো সম্ভাবনা নেই ডিটিউবে, তাই ব্যবহারকারীদের জন্য এটি বেশ নিরাপদ ও নিশ্চিন্ত। 

বিজ্ঞাপন নেই

যেকোনো ভিডিও দেখতে গেলে একেবারে মনোযোগ তুঙ্গে থাকা অবস্থায় পর্দায় বিজ্ঞাপন ভেসে ওঠার বিষয়টি নিঃসন্দেহে বিরক্তিকর। এ বিরক্তির মুখোমুখি হতে হবে না ডিটিউবের ক্ষেত্রে। যেহেতু এই মাধ্যমটিতে ব্যবহারকারীরা অর্থ হিসেবে ডিটিউব কয়েন ব্যবহার করে, সেক্ষেত্রে তথাকথিত বিজ্ঞাপনের প্রয়োজনও হয় না। ভিডিওতে 'ভোট'-এর সংখ্যা হিসেব করে কনটেন্ট নির্মাতা আয় করতে পারেন। 

উপার্জন সম্ভব 

'স্টিম' (STEEM) নামের ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে ডিটিউবে উপার্জন করা যায়। তবে এই উপার্জন শুধুমাত্র প্রথম ৭ দিনের হিসেবে জমা হয়। আপলোডকৃত ভিডিওটি প্রথম ৭দিনে যেটুকু উপার্জন করবে, সেটুকুই পাবেন নির্মাতা। 

কোনো সেন্সরশিপ নেই

ভিন্নমত প্রকাশ ও বাকস্বাধীনতার সর্বোচ্চ প্রয়োগ ঘটানো সম্ভব এই প্ল্যাটফর্মে। এই মাধ্যমটি বিকেন্দ্রীভূত হবার কারণে ভিডিওগুলোর ওপর গৎবাঁধা সেন্সরশিপের খড়গও নেমে আসে না। তবে বিপজ্জনক বিষয়াশয় থেকে দূরে থাকতে এই প্ল্যাটফর্মের নিজস্ব নীতি রয়েছে। আর তা গোষ্ঠীগতভাবে নির্ধারণ করেন এর ব্যবহারকারীরা। 

তবে প্রতিটি ভালো জিনিসেরই খারাপ কিছু দিক থাকে। ডিটিউবও ব্যতিক্রম নয়। এতে আপলোডকৃত কোনো কনটেন্ট সম্পাদনা করা যায় না, এমনকি মুছে ফেলাও সম্ভব নয়। তাই আপলোডকারীকে যেকোনো কনটেন্টের ক্ষেত্রেই অনেক বেশি নিশ্চিত হতে হবে। এ ছাড়া কনটেন্ট নির্মাণ ও আপলোডের ক্ষেত্রে সীমাহীন স্বাধীনতার অপব্যবহার ঘটার আশঙ্কাও ফেলে দেয়া যাচ্ছে না। 

ডিটিউব ইতোমধ্যেই একটি ভোক্তাগোষ্ঠী গড়ে তুলেছে, যার মধ্যে নির্মাতা ও অডিয়েন্স উভয়পক্ষই রয়েছে। এর মধ্যে তরুণদের সংখ্যাই বেশি। ইউটিউবের সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে ডিটিউব অবশ্য এখনো অনেক পিছিয়ে। সার্চ রেজাল্টেও ডিটিউবের ভিডিও আসে না বা আসলেও সংখ্যায় তা খুব একটা বেশি নয়। তাই ডিটিউব ইউটিউবের জায়গা নিতে পারে কি না, তা প্রশ্নসাপেক্ষ। তবে এই প্ল্যাটফর্মটির বেশ ভালো সম্ভাবনা রয়েছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। 

তথ্যসূত্র: এমইউও, টেককাল্ট, মশনকিউ

গ্রন্থনা: অনিন্দিতা চৌধুরী
 

Comments

The Daily Star  | English
Dhaka airport third terminal problems

Customs flags hurdles at 3rd terminal of Dhaka airport

The customs authorities have identified a number of operational bottlenecks at the much-anticipated third terminal of Hazrat Shahjalal International Airport (HSIA), widely known as Dhaka airport.

11h ago