যে ৫ কারণে অনন্য প্রথম আইফোন

২০২৩ সালে এসে প্রথম কিংবা ‘আদি’ আইফোনের ফিচার তালিকায় চোখ রাখলে মনে হবে, প্রযুক্তিতে বেশ এগিয়ে এসেছি আমরা। কিন্তু সময়ের হিসেবে ফোনটি অনেকখানি এগিয়ে ছিল, অন্তত ডিজাইনের দিক দিয়ে। আইফোনের আগমনে বিশ্বব্যাপী মোবাইল ফোন ব্যবহারের ধ্যান-ধারণা অনেকাংশেই পালটে যায়।
২০০৭ সালে আইফোনের প্রথম মডেলের ঘোষণা দেন তৎকালীন প্রধান নির্বাহী স্টিভ জবস। ফাইল ছবি: রয়টার্স
২০০৭ সালে আইফোনের প্রথম মডেলের ঘোষণা দেন তৎকালীন প্রধান নির্বাহী স্টিভ জবস। ফাইল ছবি: রয়টার্স

প্রতিনিয়তই আসছে নতুন নতুন ফোনের ব্র্যান্ড ও মডেল। তা সত্ত্বেও, বছরের পর বছর ভোক্তাদের পছন্দের তালিকার শীর্ষে রয়েছে আইফোনের নতুন মডেলগুলো।

যাত্রা শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত বাজারে আইফোনের অনেকগুলো সংস্করণই এসেছে। সর্বশেষ এসেছে আইফোন ১৪ প্রো ম্যাক্স।

২০২৩ সালে এসে প্রথম কিংবা 'আদি' আইফোনের ফিচার তালিকায় চোখ রাখলে মনে হবে, প্রযুক্তিতে বেশ এগিয়ে এসেছি আমরা। কিন্তু সময়ের হিসেবে ফোনটি অনেকখানি এগিয়ে ছিল, অন্তত ডিজাইনের দিক দিয়ে। আইফোনের আগমনে বিশ্বব্যাপী মোবাইল ফোন ব্যবহারের ধ্যান-ধারণা অনেকাংশেই পালটে যায়।

অ্যাপলের বৈপ্লবিক আইফোন ডিজাইন আমাদেরকে শিখিয়েছিল, একটি ফোন আসলে ঠিক কতটা 'স্মার্ট' হতে পারে।

দেখে নেয়া যাক– কী কী কারণে আইফোনের প্রথম সংস্করণ এতটা অনন্য ছিল।

১. ছিমছাম ডিজাইন

ফ্লিপ ফোনের যুগে আইফোন এসেছিল ফ্যাশন আইকন হয়ে। অন্য ফোন প্রতিষ্ঠানগুলো যখন সস্তা প্লাস্টিকের আবরণ নিয়েই সন্তুষ্ট, সে সময় আইফোন তৈরি করা হয় কাঁচ ও অ্যালুমিনিয়ামের মতো দামী উপকরণ দিয়ে। দেখতে ছিমছাম, ওজনে হালকা কিন্তু চেহারায় অভিজাত– এসব কারণেই আইফোন হয়ে উঠতে পেরেছিল গ্যাজেটপ্রেমীদের জন্য এক সমৃদ্ধ রুচির বাহক।

২. সংবেদনশীল টাচ স্ক্রিন

অনন্য ডিজাইনের জন্য বিশেষ জনপ্রিয়তা পায় আইফোন। ছবি: সংগৃহীত
অনন্য ডিজাইনের জন্য বিশেষ জনপ্রিয়তা পায় আইফোন। ছবি: সংগৃহীত

আইফোনের আগে যেসব ফোনে টাচ স্ক্রিন ব্যবহারের সুযোগ ছিল, সেগুলোর বেশিরভাগেই থাকতো 'স্টাইলাস' নামের বাড়তি একটি অংশ। স্টাইলাস মূলত কলম আকৃতির একটি বস্তু, যার মাথায় গোল রাবার আটকানো থাকে। টাচ স্ক্রিনগুলো যথেষ্ট সংবেদনশীল না হবার কারণে স্টাইলাস দিয়ে কাজ চালাতে হতো। তবে আইফোনের টাচস্ক্রিণ অনেক উন্নত মানের হওয়াতে স্টাইলাসের প্রয়োজনীয়তা ফুরায়।

আইফোনে ব্যবহার করা হয় 'ক্যাপাসিটিভ' টাচ স্ক্রিন। এ ধরনের ডিজিটাল স্ক্রিন অত্যন্ত সংবেদনশীল ও ব্যবহারকারীর জন্য আরামদায়ক। এছাড়াও একই সময়ে মাল্টিটাচ ইউজার ইন্টারফেস থাকার কারণে একাধিক টাচ ইনপুট দেবার সুযোগও ছিল এই নতুন ফোনে, যাতে করে গেমিং ও টাইপিংয়ের মতো কাজগুলো আরো দ্রুত করা যায়। বলা যায়, আইফোনেই প্রথম প্রকৃতি টাচ স্ক্রিন যুক্ত করা হয়।

৩. সাবলীল টাচ কিবোর্ড

ব্ল্যাকবেরির মতো জনপ্রিয় ফোনগুলোতে কিবোর্ড থাকলেও আইফোনে এ ফিচার বাদ দেওয়া হয়। ছবি: সংগৃহীত
ব্ল্যাকবেরির মতো জনপ্রিয় ফোনগুলোতে কিবোর্ড থাকলেও আইফোনে এ ফিচার বাদ দেওয়া হয়। ছবি: সংগৃহীত

টাচ স্ক্রিনে ঝামেলা থাকার কারণে বেশিরভাগ ফোনেই ছিল আলাদা কিবোর্ড। কিন্তু আইফোনে সে সমস্যা ছিল না। প্রথম আইফোনে ছিল না কোনো কিবোর্ড। ব্যবহারকারীর জন্য বাড়তি ঝামেলা ছাড়া কিবোর্ডের মতোই কাজ করতো আইফোনের টাচ কিবোর্ড। কেউ চাইলে 'শিফট' বাটন ধরে রেখে ক্যাপিটাল হরফে লিখতে পারতো, আবার বড় কিবোর্ড চাইলে ফোন ঘুরিয়ে ল্যান্ডস্কেপ মোডে নিয়ে যাওয়া যেত। এখন সব ফোনে এ ফিচার পাওয়া গেলেও, সে আমলের জন্য এটি যুগান্তকারী ছিল, তাতে সন্দেহ নেই।

৪. মোবাইল ইন্টারনেট সেবার সফল প্রয়োগ

বাজারে আইফোন আসার আগেও ইন্টারনেট সেবাযুক্ত ফোন প্রচলিত ছিল। আইফোনই প্রথম ফোন হিসেবে স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের জন্য অনলাইন ব্রাউজিং অনেক বেশি সহজ করে তুলেছিল। এর আগে ফোনে দুয়েকটি রিংটোন ডাউনলোড ছাড়া তেমন একটা কাজ করা যেত না। অনলাইনে সম্পূর্ণ কোনো ওয়েবপেজে প্রবেশ করার সুযোগও আইফোনেই প্রথম পাওয়া যায়।

৫. ভালো মানের ক্যামেরা

আইফোনই ছিল প্রথম প্রকৃতি ক্যামেরা ফোন। ছবি: সংগৃহীত
আইফোনই ছিল প্রথম প্রকৃতি ক্যামেরা ফোন। ছবি: সংগৃহীত

এখনো ছবি তুলতে গেলে বন্ধুমহলে 'আইফোনের ক্যামেরা' সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পায়। সেসময়ও বিষয়টা খুব একটা আলাদা ছিল না। বর্তমান আইফোনের হিসেবে এই ফোনের ক্যামেরা তেমন কিছু না হলেও, সময়ের হিসেবে ২ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরাটি ছিল অনেক এগিয়ে। ফোনেও যে 'ভালো ছবি' তোলা যায়, এই ধারণার সঙ্গে পরিচয় ঘটায় আইফোন। এর আগে ফোনের অপর্যাপ্ত স্টোরেজ ও দুর্বল ক্যামেরার কারণে মানুষ ফোনে ছবি তুলতে খুব একটা আগ্রহী ছিল না। আইফোন ক্যামেরার আগমনে এ অভ্যাসে আসে আমূল পরিবর্তন।

আইফোনের আগে যেসব ফোনই আলাদা বা বিশেষ স্থান নিতে চেয়েছে, সেগুলোতে কিছু জাঁকজমকপূর্ণ ফিচার যুক্ত করা হত, যেমন– ফ্লিপ ফোন, স্লাইড ফোন, ১৮০ ডিগ্রি ঘোরানো ফোনের স্ক্রিন ইত্যাদি। আইফোনে এমন কোনো চটকদার বিষয় ছিল না, বরং এতে ছিল বেশ কিছু প্রয়োজনীয় ফিচার। হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারের চৌকস সমন্বয়ে তৈরি হয়েছিল এই ফোন।

আইফোনের সব মডেলের তুলনামূলক চিত্র। ছবি: সংগৃহীত
আইফোনের সব মডেলের তুলনামূলক চিত্র। ছবি: সংগৃহীত

প্রযুক্তির জগতে যত নিত্যনতুন বিকল্প আসুক না কেন, বিকল্পের শুরুটা যাদের মাধ্যমে হয়– তাদেরকেই উন্নতির যাত্রায় মনে করা হয় মশালধারী। আধুনিক স্মার্টফোনের দুনিয়ার ভিত্তিটা স্থাপন করে এমন মশালধারী হতে পেরেছিল প্রথম আইফোন।

মোবাইল ফোন প্রযুক্তির জগতে আইফোন সব সময়ই একটি বিশেষ স্থান অধিকার করে রাখবে। অসংখ্য যুগান্তকারী ফিচার ও ভবিষ্যৎ-মুখী চিন্তাধারার কারণে আইফোনের কাছ থেকে মানুষের প্রত্যাশাও অনেক বেড়েছে। পূর্ণ কিবোর্ড বাদ দিয়ে শুধু ১টি বাটন চেপে যেকোনো প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করে দেওয়ার দুঃসাহসিকতা থেকে শুরু করে পকেটে কম্পিউটার নিয়ে ঘুরে বেড়ানোর স্বপ্নকে বাস্তবে করতে পেরেছে অ্যাপলের আইফোন—এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়।

তথ্যসূত্র: মেকইউজঅফ ডট কম, বিজনেস ইনসাইডার, প্রযুক্তি ব্লগ

গ্রন্থনায়: অনিন্দিতা চৌধুরী

 

Comments