সরকারি নিয়োগ

তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগ যাচ্ছে পিএসসির অধীনে

সরকারি কর্মচারী নিয়োগের পদ্ধতি পরিবর্তনে বড় সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে সরকার। সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) মাধ্যমে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের (১৩ থেকে ২০ গ্রেড) নিয়োগের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে সরকার। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।
psc logo

সরকারি কর্মচারী নিয়োগের পদ্ধতি পরিবর্তনে বড় সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে সরকার। সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) মাধ্যমে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের (১৩ থেকে ২০ গ্রেড) নিয়োগের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে সরকার। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।

১৩তম থেকে ২০তম এই আটটি গ্রেডের কর্মচারীরা আগে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির হিসেবে পরিচিত। সরকারি চাকরিতে এ দুই শ্রেণির কর্মচারীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালরে 'স্ট্যাটিসটিকস অব সিভিল অফিসার্স এন্ড স্টাফস'-এর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে সরকারি পদ আছে ১৯ লাখ ১৫১টি। এর মধ্যে ১৩তম থেকে ২০তম গ্রেডের কর্মচারীদের জন্য অনুমোদিত পদ ১৩ লাখ ৫৩ হাজার ৫০৯টি। যা মোট সরকারি কর্মচারীর ৭১ শতাংশ। প্রথম গ্রেড থেকে নবম গ্রেডের কর্মচারীরা প্রথম শ্রেণির এবং এর পর ১২তম গ্রেড পর্যন্ত কর্মচারীরা দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে পরিচিত।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসবে। দুর্নীতি, দীর্ঘসূত্রিতার অভিযোগ থেকে মুক্তি এবং সরকারি নিয়োগে গতি আনতে পিএসসিকে যুক্ত করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। তবে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগ স্থানীয় প্রশাসনের হাতে রাখার পক্ষে মত দিয়েছে এ সংক্রান্ত কমিটি।

এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বিষয়টি আমাদের সক্রিয় বিবেচনায় আছে। এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত হয়েছে। কিন্তু বিষয়টি বাস্তবায়নে একটু সময় লাগবে।' তিনি বলেন, 'সরকারি চাকরিতে একই গ্রেডে বিভিন্ন ধরনের পদ আছে সেগুলোর জন্য আলাদা পরীক্ষা নিতে হয়। অন্যদিকে পিএসসিকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। তাই সব মিলিয়ে আমরা একটা প্রক্রিয়ার মধ্যে আছি।'

সংবিধানে সব পর্যায়ের কর্মচারী নিয়োগের দায়িত্ব সরকারি কর্ম কমিশনকে দেওয়া হয়েছে। সংবিধানের ১৪০(১)(ক) পিএসসির দায়িত্ব হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, 'প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগদানের জন্য উপযুক্ত ব্যক্তিদিগকে মনোনয়নের উদ্দেশ্যে যাচাই ও পরীক্ষা-পরিচালন।' কর্মচারী নিয়োগে একাধিক পিএসসি গঠনের সুযোগ রেখে সংবিধানের ১৩৭ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, 'আইনের দ্বারা বাংলাদেশের জন্য এক বা একাধিক সরকারী কর্ম কমিশন প্রতিষ্ঠার বিধান করা যাইবে এবং একজন সভাপতিকে ও আইনের দ্বারা যেরূপ নির্ধারিত হইবে, সেইরূপ অন্যান্য সদস্যকে লইয়া প্রত্যেক কমিশন গঠিত হইবে।'

বিদ্যমান পিএসসি নাকি নতুন পিএসসির মাধ্যমে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর নিয়োগ হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে ফরহাদ হোসেন বলেন, 'এটা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এমন হতে পারে পিএসসি-১ এর অধীনে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগ হবে। পিএসসি-২ এর অধীনে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির নিয়োগ হবে। আবার বিদ্যমান পিএসসির কলেবর বাড়িয়ে উদ্যোগ নেওয়া হতে পারে। আমাদের এ পরিকল্পনাটি বাস্তবায়ন পর্যায়ে গেলে এসব বিষয় নিশ্চিত হবে।'

এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন, সংবিধান অনুযায়ী সরকারি কর্মচারী নিয়োগের দায়িত্ব সরকারি কর্ম কমিশনের। স্বাধীনতার পরও পৃথক পিএসসির মাধ্যমে তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীদের নিয়োগ দেওয়া হতো। পরে সেটি সরকারের হাতে আসে। তাই সব দিক বিবেচনা করে পিএসসির কাছে নিয়োগের দায়িত্ব দেওয়াকে যুক্তিযুক্ত মনে করছেন তারা।

কমিটির সুপারিশে যা আছে

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় গঠিত ১৩-২০তম পদে সরকারি কর্মচারী নিয়োগের জন্য গঠিত কমিটির তাদের সুপারিশে পাঁচটি বিষয় উল্লেখ করেছে।

প্রথম সুপারিশে বলা হয়েছে, ১৩-২০তম পদে সরকারি কর্মচারী নিয়োগে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনকে দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে। এই কাজের জন্য প্রয়োজনীয় জনবল, লজিস্টিক, অবকাঠামোগত সুযোগ সুবিধাসহ প্রয়োজনীয় বিধি প্রণয়ন করতে হবে।

দ্বিতীয় সুপারিশে বলা হয়েছে, মন্ত্রণালয়/বিভাগ এবং এর অধীনস্থ দপ্তর/সংস্থার পদগুলোর মধ্যে কাজের প্রকৃতি, পদনাম ও বেতনগ্রেডের ভিন্নতার কারণে সকল পদকে একীভূত করে বেষ্টনী নিয়োগবিধি প্রণয়ন করা অত্যন্ত জটিল এবং সময় সাপেক্ষ। এক্ষেত্রে সমজাতীয় ও সমগ্রেডভুক্ত পদগুলো যেগুলোর নিয়োগযোগ্যতা অভিন্ন সে পদগুলোকে একত্রে গুচ্ছ করে একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নিয়োগ কার্যক্রম নেওয়া যায়। এছাড়া সমজাতীয় পদ যেগুলোর বেতনগ্রেড ও নিয়োগযোগ্যতায় ভিন্নতা আছে এবং সমজাতীয় নয় এমন পদগুলোর জন্য পৃথকভাবে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট নিয়োগবিধি বিধান সাপেক্ষে সরাসরি নিয়োগের কার্যক্রম নেওয়া যেতে পারে।'

তৃতীয় সুপারিশে বলা হয়েছে, ১৩-২০তম গ্রেডের সকল নিয়োগে জেলা কোটা অনুসরণ করা হয়। তাই সরাসরি নিয়োগ কার্যক্রম নেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের জেলা কোটার প্রাপ্যতা নির্ধারণ করতে হবে। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অধিযাচনের (রিকুইজিশন) আলোকে জেলা কোটার প্রাপ্যতা অনুসরণ করে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষকে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ ও নিয়োগের সুপারিশ প্রদান করতে হবে।

চতুর্থ সুপারিশ অনুযায়ী, বাংলাদেশ সরকারী কর্ম কমিশন আইন, ২০২৩ এর ৫ ধারায় বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের অফিসসমূহের নিয়োগের বিষয়টি কমিশন এর আওতা বহির্ভূত রাখায় এক্ষেত্রে বিদ্যমান বিভাগীয় সিলেকশন বোর্ড কিংবা জেলা অফিসের দপ্তর প্রধানের মাধ্যমে ১৩-২০তম গ্রেডের পদের সরাসরি নিয়োগের বিদ্যমান ব্যবস্থা অব্যাহত রাখা যেতে পারে।

পঞ্চম ও সর্বশেষ সুপারিশে বলা হয়েছে, বিভিন্ন দপ্তর কর্তৃক প্রেরিত অধিযাচন, জেলা কোটার প্রাপ্যতা, বেতন গ্রেড ও নিয়োগবিধি অনুযায়ী বিভিন্ন পদের নিয়োগ যোগ্যতার মধ্যে সামঞ্জস্য ও অসামঞ্জস্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে গুচ্ছভিত্তিক এবং ক্ষেত্র বিশেষে পৃথকভাবে নিয়োগের কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়টি পর্যালোচনার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষের একটি গবেষণা ইউনিট থাকতে হবে।

সরকারের এমন উদ্যোগের বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ও সাবেক অতিরিক্ত সচিব ফিরোজ মিয়া ডেইলি স্টারকে বলেন, 'স্বাধীনতার পর তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীদের নিয়োগ পিএসসির মাধ্যমে হতো, এটাই ভালো পদ্ধতি বলে মনে করি। তবে চতুর্থ শ্রেণির নিয়োগ বিভাগীয় পর্যায়ে রাখা যেতে পারে। আর পিএসসি যদি মনে করে তারা চতুর্থ শ্রেণির নিয়োগ দিতে সক্ষমতা তাহলে সমস্যা দেখি না।'

Comments